#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে-স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-২৮
– হাই মিস গোধূলি!
টেবিলে একা একা ব্রেকফাস্ট করছিল গোধূলি।আচমকায় পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে চটজলদি মাথা তুলে তাকায় গোধূলি।পরমুহূর্তেই উৎকন্ঠিত স্বরে বলে উঠলো ,
– ইফতি ভাইয়া!তুমি?
ইফতি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বাম পাশের ভ্রু টা একটু উঁচিয়ে বলে,
– হুম আমি!তো?
– তুমি আমাদের বাসায়?
– কেন আমি কি আসতে পারি না?
অবাক হয়ে বললো ইফতি।গোধূলি স্মিত হেসে বললো,
– কেন নয়।কিন্তু আমি সেটা বলি নি।তুমি তো বললে আসবে না!
– আমার বেস্টির বিয়ে আর আমি আসবো না!
– তাহলে বললে কেন যে আসবে না?
– ওটা আদিবার জন্য সারপ্রাইজ ছিল!
– ওহ্!এই ব্যাপার!
সুর টেনে কথাটা বলল গোধূলি।ইফতি ভাব নিয়ে বললো,
– হুম।আর আমিই কিন্তু সবার আগে এসেছি!
ইফতির কথায় গোধূলি কপালে ভাঁজ ফেলে আশ্চর্য হয়ে বললো,
– তাই?কখন এলে তুমি?
– কাল বিকালে!
– কি!
– হুম, তো কি হয়েছে?এইভাবে চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে আছো কেন?
– তুমি কাল বিকালে এসেছ?তাহলে আমি কোথায় ছিলাম!
– মন খারাপের দেশে!
ইফতির কথায় গোধূলি মুখ গোমড়া করে বললো,
– সরি ভাইয়া!
হঠাৎ গোধূলির সরি বলার কারণ ইফতির ঠিক বোধগম্য হলো না।অবাক হয়ে বললো,
– তুমি সরি বলছো কেন?
– না,তোমরা আমাদের বাসায় এসেছো অথচ আমি তোমাদের খোঁজ খবর নেই নি!ব্যাপারটা একটু কেমন অড দেখায় না?
গোধূলি কথা শুনে ইফতি মৃদু হেসে বললো,
– সো হোয়াট!ইটস ওকে।
– আসলে আমি একটু অসুস্থ ছিলাম তাই বিকালে একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম।আর আমি অসুস্থ বলে হয়তো আমাকে কেউ ডাকেও নি।
– আরে ধুর পাগলি!এতে এত প্যানিক হওয়ার কি আছে।আদিবা আমাদের সবটা বলেছে।সো ডোন্ট বি সরি ওকে।জাস্ট চিল
– ওকে!তা বাকি সবাই কোথায়?
– শপিং করতে বের হবে বলে রেডি হচ্ছে।তুমি তো লেইট করে ঘুম থেকে উঠলে তাই ওদের সাথে এইখানে দেখা হলো না।আমি একটু কফি নেওয়ার জন্য এসেছিলাম আর তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল।কাল রাতে অবশ্য তোমার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম সবাই। কিন্তু তোমাদের ফিরতে দেরি হয়ে গিয়েছিল তাই সবাই ঘুমিয়ে পরেছিল।আমি অবশ্য সজাগই ছিলাম!
– তাহলে আমাকে ডাকলে না কেন?
– আমার কাছে মনে হয়েছিল ওই মুহূর্তে তোমাকে ডিস্টার্ব না করাই ভালো।
– এইভাবেই কেন বলছো ইফতি ভাইয়া।তুমিও তো আমার আরেকটা ভাইয়া বলো।
– হুম তো!ভাই হয়েছি বলে কি বোনকে ডিস্টার্ব করতে হবে।ভাইয়ের মনে কি দয়া মায়া নাই।
– ভাইয়া তুমিও নাহ!
গোধূলিকে ইফতির সাথে এই ভাবে সাবলীলভাবে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে আরেক জনের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।যদিও ওদের মধ্যে কি নিয়ে এত কথা হচ্ছে শুনা যাচ্ছে না তবুও যতটুকু দেখতে পাচ্ছে তাতেই অবস্থার চিত্র পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে!
– আচ্ছা এখন তাড়াতাড়ি যাও গিয়ে রেডি আসো।
– ঠিক আছে।
গোধূলি কোনো রকমে খাওয়া শেষ করে রুমের উদ্দেশ্যে দৌঁড় লাগায়।গোধূলির কান্ড দেখে ইফতি হাসতে হাসতে রান্নাঘরে চলে যায় কফি বানাতে।ইফতি জাকিয়া বেগমের বেস্ট ফ্রেন্ড এর ছেলে।আর আদিবারও বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার সুবাদে ইফতির এই বাড়িতে ঘরের ছেলের মতোই যাতায়াত।নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করে ইফতি।আর এই বাড়ির সবাই ওকে খুব আদরও করে।ইনফ্যাক্ট আদিবার সব বন্ধুদেরকেই তারা আদর স্নেহ করেন।
– আরে ইফতি তুই কেন কফি করছিস?আমাকে বলতি আমি করে দিতাম।
– আরে আন্টি!আসো আসো এখানে বসো!তুমি বলো কি খাবে?
– হা হা হা!
– আন্টি তুমি হাসছো কেন?
– হাসবো না তো কি করবো!তোকে দেখে মনে হচ্ছে তুই না আমি তোদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি।
– ওই একই হলো।নাও কফিটা খেয়ে বলো কেমন হয়েছে?
জাকিয়া বেগম কফির মগে চুমুক দিয়ে বললেন,
– বাহ!অসাধারণ হয়েছে রে।
– থ্যাংক ইউ।
★
– বুবু রায়ান ভাইয়ারা কখন থেকে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।একটু তাড়াতাড়ি আয় তো।
আহান আদিবাকে তাগিদ দিয়ে নিচে চলে যায়।
– ওই তো সবাই চলে এসেছে!
ইহানের কথায় দীপ্ত তাকিয়ে দেখ সবাই চলে এলেও ইফতি আর গোধূলি এখনো আসে নি।দীপ্তের মাথা গরম হয়ে যায়।হাতে থাকা গাড়ির চাবিটার শক্ত করে চেপে ধরলো যখন ইফতি আর গোধূলিকে একসাথে আসতে দেখলো।ওরা গাড়ির কাছে আসতেই গোধূলি বলে উঠলো,
– আমি ইফতি ভাইয়ার সাথে বাইকে করে যাবো!
দীপ্ত ঘটনার মোড় ঘুরাতে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
– আরে না তুই ইফতি ভাইয়ার বাইকে করে কিভাবে যাবি!ইফতি ভাইয়ার বাইক তো নষ্ট।
– আরে না…..
ইফতি কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু আহান ওকে চোখে ইশারা করে বোঝালো চুপ থাকতে।
গোধূলি একটু অবাক চোখে বাইকটার দিকে তাকিয়ে বলে,
– তাহলে এটা এখানে কেন?
– মেরামত করতে নিয়ে যাবে বলে।
গোধূলি মন খারাপ করে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে।দীপ্ত বিশ্বজয়ের তৃপ্তিতে মুচকি হেসে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো।
– আরে আরে আপনি কেন এখানে বসছেন?
দীপ্ত গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,
– তো?এখানে কারোর বসার সাহস আছে?
– মানে?
দীপ্ত একটু থতমত খেয়ে গিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
– না মানে ড্রাইভ করার কথা বলছিলাম আরকি।আহান তো আদিবাপুর সব ফ্রেন্ডের নিয়ে গেলো।আর ইহান তো বাড়ির বড়দের নিয়ে যাচ্ছে।বাকি রইলো তুই আমি আর….
– আর?
দীপ্ত চোখের ইশারায় পিছনে দেখিয়ে বলল,
– ওই যে দুইটা বিচ্ছু!
– বিচ্ছু!
– দীপ্ত ভাইয়া তুমি আমাদের বিচ্ছু কেন বললে?
দীপ্তের কথা শুনে পিছনের সিট থেকে আলিফ আলবী রেগে আগুন হয়ে সমস্বরে কথাটা বলল।দুই ভাই মার দেওয়ার ভঙ্গিমায় দীপ্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন দীপ্ত ওদের থামিয়ে দিয়ে বলে,
– আরে আরে এতে তোরা এত রাগ করছিস কেন।বিচ্ছুদের কত পাওয়ার হয় তোরা জানিস!বিচ্ছুদেরকে সবাই অনেক ভয় পায়।
– তাই দীপ্ত ভাইয়া?
– হে তো।কেন তোরা জানিস না?এ বাবা তোদের আজও কেউ এটা বলে নি!
মুখ গোমড়া করে আলিফ আলবী সমস্বরে বলল,
– না!
– দেখেছিস কান্ড!তোদের যে এত পাওয়ার আছে সেটা তোদের কেউই বলেই নি।দিস ইজ নট ফেয়ার গোধূলি! তুই না ওদের এত ভালোবাসিস তুইও ওদের বলিস নি!
দীপ্তের কথা শুনে অবাকের উপর অবাক হচ্ছে গোধূলি।গোধূলি দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলল,
– আপনি ওদের এইসব কি বলছেন?
– তুই চুপ থাক।তো বিচ্ছু বাহিনী যাওয়া যাক!
– দীপ্ত ভাইয়া তাও তুমি আমাদের বিচ্ছু ডেকে না।এই নামটার মধ্যে কেমন জানি ভিলেন ভিলেন গন্ধ লাগে!
– তোরা তো দেখছি আসলেই বিচ্ছু রে!
– দীপ্ত ভাইয়া আবার!
দুই ভাই আবার সমস্বরে চিৎকার করে উঠলো।দীপ্ত ওদের রাগ দেখে মুখ টিপে হেসে বললো,
– আচ্ছা যা আর বলবো না।তা এবার যাওয়া যাক গাইস?
– তাড়াতাড়ি চলুন।বাকিরা হয়তো এতক্ষণে শপিংমলে চলে গেছে।
গোধূলি কিছুটা ঝাঝালো গলায় বলল কথাটা।দীপ্ত গোধূলির দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে মুখ ভার করে বললো,
– যাচ্ছি তো।এইভাবে বলার কি আছে।একটু ভালো করে তো বলবি!
– আপনি…
দীপ্ত গোধূলির উত্তরের অপেক্ষা না করেই গাড়ি স্টার্ট দেয়।গোধূলি আঙ্গুল উঁচিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু না বলেই থেকে যায়।বেকার এই লোকের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।তার থেকে নীরব থাকাই শ্রেয়।
চলবে……