দীপ্ত গোধূলি – পর্ব ৩৯

0
479

#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৩৯

তুলি ডায়েরি দেখবে বলে গোধূলির সাথেই ওদের বাসায় চলে এসেছে।গোধূলিদের বাসায় তুলির সেই ছোট্টবেলা থেকেই যাতায়াত।সবাই ওকে গোধূলির মতোই আদর করে।গোধূলি আর তুলি বাসায় এসে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে নেয়।তারপর সবার সাথেই লাঞ্চটা করে নেয়।লাঞ্চ শেষ করে তুলি সবার আগে চলে আসে।খাটের ঠিক মাঝখানটায় বসে ছটফট করছে আর উঁকিঝুঁকি মারছে।কারণ গোধূলি এখনো রুমে আসে নি।গোধূলি আসতে দেরি হচ্ছে বলে যেই তুলি ডাক দিতে যাবে ঠিক তখনই দেখতে পেলো গোধূলি সর্পিল গতিতে হেঁটে হেঁটে আসছে।তুলি চোখ রাঙিয়ে বলে,

– নিচ থেকে আসতে এত সময় লাগে?নে এবার ডায়েরিটা বের কর

গোধূলি নিজের মতো করে এসে তুলির পাশে বসেছে ঠিকই কিন্তু তুলি যে ওকে কিছু বলছে সেটা যেন ওর কানেই যাচ্ছে না।তুলি গোধূলির বাহু ধরে একটু ঝাকি দিয়ে গলার স্বর উঁচু করে বললো,

– আরে এই গোধূলি!কোথায় হারিয়ে গেলি।
– হুম!
– হুম কি?
– কি?
– তোকে যে বললাম ডায়েরিটা বের করতে তুই শুনিস নি?

কর্কশভাবে বললো তুলি।তুলির কথায় গোধূলি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো,

– কখন বললি?
– লে!এ আমি কাকে কি বলছি।এ তো দেখছি বরের শোকে পুরাই দেবদাসীনী হয়ে গেছে!
– তুলি!
– আচ্ছা এখন তো শুনলি!যা এবার গিয়ে নিয়ে আয়।
– যাচ্ছি!

বলে গোধূলি তখনও বসেই রয়েছে।কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে গেছে।তার সেটা তুলি দেখে খুব রেগে যায়।বিরক্ত হয়ে বাজখাঁই গলায় বলল,

– ওমা গোধূলি,এখনো বসে রইলি যে!

তুলির উচ্চস্বরে চমকে উঠে গোধূলি।মূহুর্তেই চকিত দৃষ্টিতে তাকায় তুলির দিকে।তুলি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাস করে,কি?গোধূলি কপালে চিন্তার ভাঁজ করে বললো,

– আসলে আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না।
– কি?
– সকালে যখন আমি ভার্সিটিতে গেলাম তখন আমার সাথে কারোরই দেখা হয় নি।শুধু আম্মু আর ছোটদাভাই ছাড়া।
– তো?
– তো!এখন সবার সাথেই আমার দেখা হলো।কেউ তো কিছু বলে নি।

তুলি অবাক স্বরে বলল,

– মানে!তোকে কি বলবে?

– আমি যে কালকে কাউকে কিছু না বলে রিসোর্ট থেকে বেড়িয়ে আসলাম তার জন্য তো আমাকে কেউ কিছু বলে নি।কোনো কটুকথাও শোনাই নি!বরং তাঁদের ব্যবহার দেখে মনে হলো কাল কিছু হয়ই নি!ইনফ্যাক্ট আব্বুও কিচ্ছু বললো না!

– তা ভালোই তো হয়েছে।বেঁচে গেলি তুই!তা না হলে কাল যা করেছিস তুই বাবা!আমার পাপা হলে তো আমাকে বাসাতেই ঢুকতে দিতো না।যাকগে যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।এখন যা মেরি দোস্ত ডায়েরিটা বের করে আন।

– এই নে।

– ওয়াও!খুব সুন্দর তো ডায়েরিটা!

আসলেই ডায়েরিটা খুব সুন্দর।তুলি ডায়েরিটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল।হঠাৎ করেই ডায়েরির ভেতর থেকে কাগজের মতো কিছু একটা নিচে পড়লো।গোধূলি নিচ থেকে ওটা তুলে দেখার জন্য মুখের সামনে ধরতেই ওর চোখ ছানাবড়া!গোধূলিকে হা করে থাকতে দেখে তুলি গোধূলির হাত থেকে নিয়ে দেখে ওটা একটা ছবি!কোনো এক পড়ন্ত বিকেল গড়িয়ে গোধূলি লগ্নে তোলা।খোলা চুলে কোনো কিশোরী ছাদের কিনার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে।ছবিটা পিছন থেকে তোলা।তুলি চিনতে না পেরে গোধূলিকে জিজ্ঞাস করলো,

– এটা আবার কার ছবি?
– আমার!
– হোয়াট?তোর ছবি?
– হ্যাঁ।

এই ছবিটা দেখে তুলি না যতটা অবাক হয়েছে তার থেকে হাজার গুণ বেশি অবাক হয়েছে গোধূলি।দীপ্তের ডায়েরিতে ওর এই ছবি কোথা থেকে কিভাবে আসলো বুঝতে পারছে না।তুলি চোখ ছোট ছোট করে গোধূলির দিকে তাকিয়ে বললো,

– এটা দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক আগের ছবি।বয়স আর কত হবে মেবি এগারো কি বারো।তাহলে তোর ছবি এই ডায়েরিতে এলো কি করে?

– আমিও তো সেটাই ভাবছি।

তুলি গোধূলির দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে,

– গোধূলি কি ব্যাপার হুম?তলে তলে কি চলছে?
– মানে?
তুলির কথায় গোধূলি ভ্রুকুটি করে বললো।তুলি ভ্রু নাচিয়ে বললো,
– লাভ কেইস মনে হচ্ছে!

তুলির বলা কথাটায় গোধূলি চমকে উঠে।লাভ!শব্দটা বহুল আলোচিত হলেও গোধূলির ক্ষেত্রে এটা নিতান্তই একটা শব্দ মাত্র!লাভ বিশ্লেষণের সুযোগ এখন অব্দি ওর হয় নি!গোধূলি গলার স্বর উঁচু করে বলল,

– হোয়াট!কি যা-তা বলছিস।
– ওকে রিল্যাক্স!এত হাইপার হোস না।
গোধূলি তেতে গিয়ে বলল,
– হাইপার হওয়ার মতো কথা বললে তো হাইপার হওয়াটাই স্বাভাবিক!
– ওকে রিল্যাক্স বেবি!আচ্ছা আমাকে একটা কথা বল তো।আমি তোর কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি তাতে বুঝলাম তোর এনগেজমেন্ট পারিবারিক ভাবেই হয়েছে।কিন্তু তুই জানতি না যে তোর এনগেজমেন্ট হবে ইনফ্যাক্ট তুই এটাও জানতি না তোর বর কে!

– হ্যাঁ তো?

কর্কশভাবে বললো গোধূলি।তুলি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মেকি হেসে বললো,

– তো!তুই যদি এই ছবিটা না দিয়ে থাকিস তাহলে তোর ছবি এই ডায়েরিতে এলো কি করে?

– সিরিয়াসলি তুলি!তোর মনে হয় এই ছবিটা আমি উনাকে দিয়েছি!আমি কেন কাউকে আমার ছবি দিতে যাবো?আমি এই পোজে ছবিই তুলি নি কখনো!ইনফ্যাক্ট আমি এটাও জানি না কে এই ছবিটা তুলেছে!আর এটা উনার কাছেই বা কি করে গেল।

তুলি হতভম্ব হয়ে গোধূলির দিকে তাকিয়ে আছে।গোধূলি বলছে এই পোজে ছবি তুলে নি।ও এই ছবিটা দেয়ও নি।তাহলে এই ছবিটা কে তুলেছে?আর সেটা ডায়েরিতেই বা কি করে এসেছে?রহস্য!তুলি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে।তুলি ধীর কন্ঠে বলল,

– সেটা তো ডায়েরিটা খুললেই বুঝতে পারবো।

– তোকে ডায়েরি দিয়েছি কি হাতে নিয়ে বসে থাকার জন্য?এটার ভেতরে কি আছে সেটা জানার জন্য না এত উতলা হয়ে গিয়েছিলি!তো এখন বসে আছিস কেন?দেখ কি আছে এই ডায়েরির ভেতরে।

গোধূলির ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলা প্রত্যেকটা কথায় তুলি কেঁপে কেঁপে উঠছিল।কথাগুলো যেনো সারাঘর জুড়ে ঝংকার তুলছিল।তুলি ফোকলা হেসে বললো,

– দোস্ত!
– কি?
– আমার না কেমন আনইজি লাগছে।এটা নিশ্চয় ভাইয়ার পার্সোনাল ডায়েরি!আমার খোলাটা কি ঠিক হবে?
– কারো পার্সোনাল ডায়েরি কেউ আমাকে দিতে যাবে কেন?এই তুই এত কথা কেন বলিস বল তো?আমি না বললাম তোকে বললাম এটা খোলার জন্য।

গোধূলির ভ্রুক্ষেপহীন কথা শুনে তুলি হতবাক।এই মেয়ে কি বলে,কারোর?তুলি গোধূলির মাথা আলতোভাবে গাড্ডা মেরে বললো,

– আরে গবেট!কোনো জামাই কি তার উডবি ওয়াইফকে প্লে নার্সারির ডায়েরি দিবে যে ওটা সবাই খুলে খুলে দেখবে!অবশ্যই এই ডায়েরিটাতে স্পেশাল কিছু আগে বলেই উনি তোকে দিয়েছেন।নাহ দোস্ত ডায়েরি তুইয়েই খোল!

– আরে আমি বলছি তো তোকে!তুই খোল।

– না ডায়েরিটা বরং তুইয়েই পড়িস!আমার যতোটুকু মনে হচ্ছে এর ভেতর থেকে যেহেতু তোর ছবি পাওয়া গেছে সো এই ডায়েরিতে ডেফিনেটলি তোকে নিয়েই কিছু লেখা থাকবে!

গোধূলি তুলির কথা শুনে টাশকি খেয়ে যায়।তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,

– তুই এত জোর গলায় কিভাবে বলছিস?তুই যেমনটা ভাবছিস তেমটা তো নাও হতে পারে।
– দেখিস তুই।
– দেখছি হু!
গোধূলি তুলিকে মুখ ভেংচি কাটে।তুলি জোর গলায় ফের বললো,
– মিলিয়ে নে আমার কথাটা।পরে যদি আমার কথাই সত্যি হয় নাহ তখন দেখবি আমি কি করি হুম!আরে দোস্ত এটা কি?

তুলি কথা বলতে বলতে ডায়েরিটার কভারের উপর কিছু একটা দেখতে পায়।তুমি গোধূলিকে কথাটা বলে ডায়েরিটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে।ডায়েরির একদম মধ্যস্থলে গোল্ডেন কালার দিয়ে খুবই নিখুঁত ভাবে কিছু একটা লেখা!তুলি এক্সাইটমেন্টে এতক্ষণ খেয়ালই করে নি যে ডায়েরির কভারে কিছু লেখা রয়েছে।যদিও তুলি প্রথমে ভেবেছিল ওটা হয়তো কোনো কারুকাজ হবে।কিন্তু খেয়াল করে দেখার পর বুঝতে পারছে ওটা কোনো কারুকাজ নয়!দক্ষ হাতে সূক্ষ্ম ভাবে কিছু একটা লেখা রয়েছে এটাতে।অনেকক্ষণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেও তুলি বুঝতেই পারলো না এখানে ঠিক কি লেখা আছে।শেষমেশ অপারগ হয়ে গোধূলিকে দেখিয়ে বলল,

– গোধূলি দেখ তো এখানে কি লেখা।
– তুই আবার এর লেখা নিয়ে পড়লি কেন?
বিরক্ত হয়ে বললো গোধূলি।তুলি কৌতূহলী স্বরে বললো,
– আহা!তুই দেখ না কি লেখা আছে।আমি ঠিক ধরতে পারছি না।
গোধূলি ডায়েরিটা হাতে নিয়ে একটু দেখে তারপর বলে,

– চড়াই…..

গোধূলি ওর পুরো কথা শেষ করতে পারলো না।তুলির ফোনে কল আসায় গোধূলি থেমে যায়।তুলি কলটা রিসিভ করে ব্যালকনিতে চলে যায়।কথা বলা শেষ করে এসে করুণ স্বরে বললো,

– গোধূলি!
– হুম।
– আম্মু কল দিয়েছিল।
– তো?
– বলল আমাকে এক্ষুনি বাসায় যেতে হবে।
– আর্জেন্ট?
– হ্যাঁ।সরি ইয়ার!
– তো এতে সরি বলার কি আছে।
– তোকে সময় দিতে পারলাম না বলে!আজ যাই অন্যদিন এসে তোকে সময় দেবো কেমন।
– আচ্ছা,সাবধানে যাস!
– ওকে,বাই।

তুলি তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে যায়।তুলির আর ডায়েরি পড়া হলো না!গোধূলি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ডায়েরিটা বিছানায় রেখে দেয়।গোধূলিরো খুব নার্ভাসনেস কাজ করছে।ও ঠিক বুঝতে পারছে না কি করবে।এই ডায়েরিতে ও ঠিক কোন প্রশ্নের কোন উত্তরের সম্মুখীন হবে!

ডায়েরির কভারে চড়াইপাখি নামটা পড়ার পর থেকে বুকের ভেতর কেমন যেন ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে।যদিও নামটার সাথে গোধূলি পরিচিত না।তবুও ওর কেমন যেন ফিল হচ্ছে।অবশেষে নিজের মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিলো যে,হয়তো ডায়েরির কভারে এমনিতেই এইরকম একটা নাম দেওয়া হয়েছে।
সাত পাঁচ না ভেবে বিছানার উপর থেকে আবার ডায়েরিটা হাতে নেয় গোধূলি।ডায়েরির প্রথম পেইজ খুলতেই থমকে যায় ও।কারণ ডায়েরির প্রথম পেইজটাতে স্কেচ করা একটা মেয়ের ছবি!গোধূলি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে স্কেচটার দিকে।
ছবিটার নিচে ঠিক ডানপাশে ছোট্ট করে লেখা চড়াইপাখি!তবে গোধূলির ছবি বা নাম নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।সমস্যা হলো তো স্কেচ করা ছবির মেয়েটাকে নিয়ে!কারণ স্কেচ করা ছবিটা আর কারোর না স্বয়ং গোধূলিরই স্কেচ!গোধূলি এখন বুঝতে পারছে এটা স্টল থেকে কিনে আনা কোনো সাধারণ ডায়েরি নয়!আর ডায়েরির কভারে চড়াইপাখি নামটাও এমনি এমনি নয়!এই ডায়েরিটা স্পেশাল ভাবেই তৈরি করা হয়েছে।

গোধূলির হাত কাঁপছে।ডায়েরিটা ঠিকঠাক ভাবে ধরেই রাখতে পারছে না।হঠাৎ করেই কেমন যেন গরম লাগছে ওর।কপালে নাকের আগায় ঠোঁটের উপরের অংশে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে এক নিমিষেই।ডায়েরিটা কোলের উপর রেখে কাঁপাকাঁপা হাতে ওড়না দিয়ে মুখটা মুছে নিলো।হাত বাড়িয়ে বেডের সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিলো।রূদ্ধশ্বাসে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে শেষ করে ফেললো।মুখ ফুলিয়ে বড় বড় শ্বাস ছাড়ে বার কয়েক।একটু শান্ত হয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে আবার ডায়েরিটা হাতে তুলে নিয়ে ডায়েরির মূল পাতায় দৃষ্টি স্থির করে,

– জানিস চড়াইপাখি,যেদিন রাস্তায় প্রথম তোর হাসির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম সেদিন কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার পুরো পৃথিবী থমকে গিয়েছিল।নেশালো সেই হাসি বার বার আমার কানে বাজছিল।চোখ বন্ধ করতেই সেই হাসির ঝংকার তীরের মতো এসে আমার বুকে বিঁধত!যত বারই সেই হাসির আওয়াজ অনুভব করতাম ততবারই নিজেকে উন্মাদ বলে মনে হতো।আমার অদেখা সেই চড়াইপাখিকে না দেখেই তার নাম দিয়েছিলাম চড়াইপাখি!কি করতাম বল?দিবা নিশী সে আমার মাথায় চড়াও হয়ে বসে থাকতো!নামটা বেশ মানিয়েছে তাই না রে?চড়াইপাখি!আহ্!সারাক্ষণ মাথায় চড়ে থাকতো অথচ কোথায় যে উড়াল দিলো খুঁজেই পাচ্ছিলাম না।তাই তো এই নামটা দিয়েছি!আচ্ছা চড়াইপাখি নামটা কি তোর পছন্দ হয়েছে?নামটা শুনে কি তোর রাগ হচ্ছে?হলে হোক!তোর রাগ দিয়ে হলেও তাতে আমার কিছু আসে যায় না!আমি তো তোকে এই নামেই ডাকবো!তবে নামটা কিন্তু একান্তই আমার!খবরদার!কাউকে ভুলেও এই নাম বলবি না!তুই শুধুই আমার চড়াইপাখি!

ঠাস করে ডায়েরিটা বন্ধ করে ফেলে গোধূলি।ডায়েরির প্রথম পাতার এই কয়েকটি লাইন পড়েই ওর গলা শুকিয়ে আসছে।বুকের ভেতর ধুকপুকানিটা রীতিমতো বেড়েই চলেছে।আবার রাগও যে হচ্ছে না সেটাও নয়।গোধূলির প্রচুর রাগ হচ্ছে। রাগে গজগজ করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বললো,

– উনার চড়াইপাখির গল্প পড়তে কি এই ডায়েরি উনি আমাকে দিয়ে গেছেন?

ফোঁস করে শ্বাস ফেলে গোধূলি।পরমুহূর্তেই আবার ভাবে, চড়াই পাখিটাই বা কে?আচ্ছ স্কেচটা যেহেতু ওর, তাহলে কি ওই দীপ্তের চড়াইপাখি?

গোধূলির মনে হাজারো প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি মারছে।কিছুই ওর বোধগম্য হচ্ছে না।বুকের ভেতর তপ্ত হাওয়া বইছে!কৌতূহলী অশান্ত মনকে শান্ত করতে গোধূলি আবার পড়ায় মন দেয়।

– অবাক হচ্ছিস?হ্যাঁ অবাক তো হওয়াই কথা!ওকে রিল্যাক্স,শান্ত হো।আমি সবটা এক্সপ্লেইন করছি।

– লন্ডন থেকে ফিরে আমরা নানুদের বাসায় যাচ্ছিলাম। তখন আমরা ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়ে যাই।জ্যাম ছাড়ছে কিনা দেখার জন্য আমি যখন গাড়ির জানালা খুলে দেখে আবার যখন ভেতরে বসতে যাবো ঠিক তখনই কারো খিলখিল করে হেসে উঠার শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু সামহাউ তাকে আমি দেখতে পারি নি।তাকে দেখার আগেই আমার চোখে ধূলো দিয়ে ট্রাফিক জ্যাম তাকে নিয়ে যায়!তাকে একটা বার দেখার জন্য মনটা বড্ড আঞ্চান আঞ্চান করছিল।আম্মু বলেছিল,আমরা যদি মন থেকে কিছু চাই তাহলে সৃষ্টিকর্তা সেটা আমাদের দেন।তো আমিও হয়তো আমার চড়াইপাখিকে মন থেকে চেয়েছিলাম বলেই হয়তো তাকে খুঁজে পেয়েছি।

“”আমার ডায়েরির পাতায় আর জীবনের পূর্ণতার খাতায় যদি কোনো প্রাপ্তি থেকে থাকে,তাহলে সেই একমাত্র প্রাপ্তির নাম তুই!আমার চড়াইপাখি””

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here