#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৪১
এই ভর সন্ধ্যা বেলায় গোধূলির রুমের দরজা বন্ধ দেখে ইমরুল সাহেব একটু অবাক হলেন।এমন সময় গোধূলি রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে কেন?সন্ধ্যা বেলায় তো ও রুমের দরজা বন্ধ রাখে না।তাহলে?গোধূলির ওইদিনের এক্সিডেন্টের পর থেকে সবাই গোধূলির প্রতি একটু বেশি কেয়ারফুল হয়ে গেছে।অসময়ে গোধূলির ঘরের দরজা বন্ধ দেখে সবার আগে দুশ্চিন্তাটাই মাথায় আসে ইমরুল সাহেবর।উনি দরজার কাছে গিয়ে হাতে ঠকঠক শব্দ করে ভারী কন্ঠে ডাকছেন।
– সাজি সাজি,এই সাজি!
…….
– সাজি,আরে এই সাজি!
এত ডাকার পরেও গোধূলি যখন কোনো সারা শব্দ করছে না তখন ইমরুল সাহেব উৎকন্ঠিত স্বরে বললো,
– সাজি!কি হলো দরজা খুলছিস না কেন?সাজি!সাজি
এবার ইমরুল সাহেবের সত্যি সত্যি দুশ্চিন্তা হচ্ছে।ঘরের ভিতরে ঢুকবেন বলে পিছিয়ে গিয়ে যেইনা দরজায় ধাক্কা দিতে যাবেন ওমনি গোধূলি দরজা খুলে হুড়মুড় করে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।গোধূলি ব্যালকনিতে বসে ছিল তাই ইমরুল সাহেবের ডাকগুলো শুনতে পায় নি।যখন শুনতে পায় তখন ডায়েরিটা তাড়াতাড়ি করে আলমারিতে রেখে দৌঁড়ে এসে দরজা খুলে দেয়।ইমরুল সাহেব গোধূলিকে দেখতে পেয়ে যেনো প্রান খুঁজে পেলেন।বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে গোধূলিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে উৎকন্ঠিত স্বরে বললেন,
– আমাকে তো ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলি তুই!এতক্ষণ ধরে ডাকছি সাড়া দিস নি কেন?
গোধূলিও ইমরুল সাহেবকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী সুরে বললো,
– ভয় পাইয়ে যদি আদর পাওয়া যায় তাহলে সেই আদর পাওয়ার লোভ কি হাত ছাড়া করা যায় বলো!
গোধূলির কথা শুনে ইমরুল সাহেব ওকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে ওর কান ধরে চোখ রাঙিয়ে বললেন,
– ওরে পাকা মেয়ে!খুব পেঁকে গেছিস না?
– আহ্ কাকাই ছাড়ো আমার ব্যাথা লাগছে।
ইমরুল সাহেব গোধূলির কান থেকে হাতটা সড়িয়ে অবাকের স্বরে বললেন,
– আমি শুধু কানটা ধরে ছিলাম!মোঁচড়ে তো আর দেই নি তাহলে তোর কিভাবে ব্যাথা লাগলো শুনি?
– মোঁচড়ে দিলে তো ব্যাথা পেতাম নাহ্!তাই আগেই বলে দিয়েছি!
গোধূলি ফোকলা হেসে বললো।কথাটা শেষ করেই গোধূলি এক দৌঁড়ে নিচে চলে যায়।ইমরুল সাহেব ভাইঝির কান্ড দেখে হেসে উঠেন।দিনকে দিন বড্ড পাজি হয়ে যাচ্ছে এই মেয়েটা।
★
গোধূলির এক্সাম শেষ যাওয়ার পর আবার রোজ ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করে।ভার্সিটিতে তুলি ছাড়াও ওর আরো ফ্রেন্ড হয়েছে।তবে তুলির সাথে ওর ঘনিষ্ঠতাটা বেশি।কারণ তুলি হলো ওর সেই ছোট্টবেলার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড।এখন অব্দি এই একজনই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।ভার্সিটিতে ক্লাস, গ্রুপ স্টাডি,সেমিনার শেষে বাসায় এসে পড়াশোনা আর সময় পেলে দীপ্তের ডায়েরি পড়তো।তবে আদিবা চলে যাওয়ার পর থেকেই ওকে খুব মিস করে।সারা বাড়িতে ও একা একটা মেয়ে।বোনের সাথে কাটানো দিনগুলো চোখে ভেসে উঠতেই সাথে সাথে কল করে বসতো আদিবার কাছে।যখন তখন কল করে বসতো।তবে মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেও করতো রায়ানকে জ্বালানোর জন্য।সময় পেলে গিয়ে লাজুকের সাথেও দেখা করে আসতো।লাজুকও সপ্তাহে এক’দু বার আসতো ওদের বাড়িতে।এইভাবেই কাটতে লাগলো গোধূলির দিন।ফাস্ট সেমিস্টারে গোধূলির রেজাল্ট খুব একটা ভালো হয় নি।তাই এখন পুরো দমে পড়াশোনা করেছে।সেকেন্ড সেমিস্টার এক্সামও শেষ।এই এক্সামটা খুব ভালো হয়েছে গোধূলির।
•
অনেকদিন পর আজ আবার দীপ্তের ডায়েরি নিয়ে ব্যালকনিতে এসে বসেছে গোধূলি।এই ডায়েরির পাতায় লেখা কথাগুলো এতটাই নেশালো যে ও আস্তে আস্তে এই ডায়েরির প্রতি আসক্ত হয়ে পরেছে।ছোট ছোট করে লেখা কথাগুলোর মায়ায় পড়ে গেছে ও।এক লাইনেই কিভাবে প্রিয় মানুষটিকে নিজের মনের ফিলিংস ইমোশন বুঝানো যায় সেটা এই ডায়েরি না পড়লে গোধূলি কোনোদিনও বুঝতে পারতো না।এক্সাম চলছিল তখন সময়ের অভাবে ডায়েরি পড়তে পারতো না বলে যখন একাডেমিক বই গুলো পড়তো তখন টেবিলে ওর চোখের সামনে ডায়েরিটা রেখে দিতো।এতে নাকি ওর আত্মতৃপ্তি মিলবে।আশ্চর্য!শুনতে আশ্চর্য মনে হলেও এইটাই সত্যি।দেখতে দেখতে কিভাবে যে একটা বছর চলে গেছে টেরই পায় নি।ডায়েরিটা বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় গোধূলি।ডায়েরিটায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি ঝুলিয়ে ডায়েরিটা খুললো।প্রত্যেক বারের মতো এবারো সেই অসমাপ্ত গল্পটা পড়া শুরু করে,
– নীল না লাল লিটমাসটা কি এখনো চড়াইপাখির আশেপাশের ঘুরঘুর করে?যে ডোজ খেয়েছে মনে হয় না এই জন্মে আর চড়াইপাখির ত্রিসীমানায়ো যাবে বলে!
– চাঁদ রাতে চড়াইপাখির হাত খালি ছিল কেন?আমার হাতে মেহেদী পড়বে বলে?সবাই মেহেদী পড়বে চড়াইপাখির হাত খালি থাকবে এটা তো আর আমি মেনে নিতে পারি না নাহ!আচ্ছা, তুই কি জানিস?তুই ঘুমের মধ্যেও বড্ড ছটফট করিস!স্বাদে কি আর চড়াইপাখি নামটা দিয়েছি!মেহেদী তো পড়িয়ে দিয়েই আসলাম সাথে ঈদের সালামিটাও রেখে আসলাম।এখন তোলা থাক সালামটা না হয় ওই দিনই নিবো!
– থাক,এখন বন্ধুদের সাথে ট্যুরে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।বাবা যেতে দেয় নি বলে রাগ করিস না।শ্বশুরকে শুধু বলেছিলাম,দরকার হলে আমি নিয়ে যাবো তাও বন্ধুদের সাথে চড়াইপাখি কোথাও যাবে না।ব্যাস!
– সূর্য ডুবার সময়টা যে আমার বড্ড প্রিয়।তখন তোমার যা খুশি চেয়ো।কভু ফেরাবো না কো তোমায়।
– মাঝে মাঝে তো নিখোঁজ মানুষটার খুঁজ নিতে পারিস চড়াইপাখি!পৃথিবীর কোন সংবিধানে লেখা আছে সব খোঁজ শুধু আমাকেই রাখতে হবে?দশ দিন হয়ে গেলো তোকে দেখি না,তোর চুলের ঘ্রাণ নেই না,!জানিস,এই দশ দিনের দশটা রাতই আমি নির্ঘুম কাটিয়েছি!একটু খোঁজ নিলে কি এমন হতো?আজ না হয় একটু অভিমান আমিই করি?আচ্ছা আমার মান ভাঙাতে তুই কি কি করবি?
– সেই যেতেই হলো!বরাবরের মতো আজো আমিই পরাস্ত!তবে অভিমানটা কিন্তু তোলা রইলো!
– আমার কোনো এক জন্মদিনে শ্বশুর আমাকে কথা দিয়েছিলো আমি যা চাই তাই দিবে।তখন আমার কাছে চাওয়ার মতো কোনো কিছুই ছিল না।তাই বলেছিলাম যখন আমার প্রয়োজন হবে তখন ঠিক চেয়ে নেবো।কিন্তু যখন আমি চাইলাম,তখন তো আমার শ্বশুর নির্বাক!অবশ্য ভদ্রলোক কথার বরখেলাফ করেন না।যখন বলেছেন দিবেন তখন দিবেনই।দিতে রাজি হলেও শ্বশুরমশাই দুইটা শর্ত দিয়ে বসেন।প্রথম শর্ত ছিল,তোর আঠারো না হওয়া অব্দি নাকি তোকে বিয়ে দিবে না!আর দ্বিতীয় শর্ত ছিল,তোর আঠারো না হওয়া অব্দি আমি নাকি আমার চড়াইপাখির সাথে দেখা করতে পারবো না।আচ্ছা এটা কোনো কথা বল তো চড়াইপাখি!নিকুচি করেছে তার শর্ত!তার কথা মানতে আমার বয়েই গেছে!প্রথমটা না হয় মানলামই।এদেশের সুনাগরিক হিসেবে দেশের আইন কানুন মেনে চলা আমাদের দায়িত্ব।তাই শ্বশুরের প্রথম শর্ত মেনে নিয়েছিলাম।তাও শ্বশুরের এই প্রথম শর্তের চক্করে আজ ছয়টা বছর হয়ে গেল!আবার নাকি দেখা করা যাবে না।এটা কোন আমলের নিয়ম!তাহলে তো কোনো সাধু সন্যাসীর সাথে মেয়ের বিয়ে দিলেই পারে!কষ্ট করে আর শর্ত দেওয়ার কি দরকার!এইসব অদ্ভুত শর্ত আমার পোষাবে না!আমি রোজ নিয়ম করে চড়াইপাখির কাছে যাই, যাবো!দেখি তার কোন বাপে ঠেকায়!
– চড়াইপাখি,আঠারো তো হলো!তুই কি বলিস?আমারই প্রাপ্যটা আমাকে দিয়ে দেওয়া উচিৎ নয় কি?
সম্রাজ্ঞী বিহীন রাজ্য কত দিন চলে বল তো?
– শুনলাম রেজাল্ট ভালো হয়েছে।মিষ্টি মুখ করাবি না?তুই তো করাবি না! প্রতিবারের মতো আমাকেই করিয়ে নিতে হবে?তবে তাই হোক!
– আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছিল রে চড়াইপাখি?শ্বশুরমশাই নিজে ফোন করে জামাইকে তার বাড়িতে ডাকছে?রেড়ি হও,আসছি আমি!
– চড়াইপাখি আমি তোর গায়ে হাত তুলেছিলাম!অনেক কষ্ট হয়েছিল তোর না রে?কি করতাম বল!এত বছর ধরে যত্নে রাখা পোষা পাখিটাকে আমার চোখের সামনে অন্য কারো হয়ে যেতে দেখতে পারতাম আমি?কেন বুঝিস না তুই?হারানোর শংকায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম তাই তখন রাগ কন্ট্রোল করতে পারি নি!মাঝে মাঝে তুই বড্ড ছেলেমানুষী করে ফেলিস!তোরই বা কি দোষ বল।আমিই একটু বেশি বেসামাল কিনা!
– তুই কাউকে কিছু বলিস নি কিন্তু আমি শ্বশুরকে সবটা বলে দিয়েছে!মেয়ে দিবে না বলে শ্বশুরমশাই তো প্রায় বেঁকেই বসেছিল।হাতে পায়ে ধরে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করতে হয়েছে,বাব্বাহ্!আচ্ছা চড়াইপাখি আমাকে একটা কথা বল তো,মেয়েদের বাবাদের কি একটু বেশিই জেদ থাকে?তোর উত্তরটা যদি হ্যাঁ হয়,তাহলে আমিও কিন্তু আগে মেয়ের বাপই হতে চাই হু!কান খুলে শুনে রাখ,ফাস্ট চান্সে যদি মেয়ে না হয় তাহলে সেকেন্ড চান্সে হলেও আমার মেয়ে চাই। আর এই চান্সেও যদি মেয়ে না হয় তাহলে কিন্তু ননস্টপ চান্স নিতেই থাকবো কথাটা ভালো করে মাথায় সেট করে নে।মেয়ের বাবা তো আমাকেই হতেই হবে!
– যার-তার বাইকে উঠার অন্যায় আবদার আর কখনো যেন না শুনি!তুই শুধু আমার পিটেই মাথা রাখবি!
– আকাশের ওই সূর্যটা পশ্চিমে হেলে পড়লে,ক্ষণিক আলো পাওয়ার আশায় যদি তোর দুয়ারে কড়া নারি! তুই কি ফিরিয়ে দিবি আমায়?প্লিজ এমনটা করিস না!
– ভুল ছিলাম আমি!আমার বুঝা উচিত ছিল,আমি যাকে চাই সে হয়তো আমাকে নাও চাইতে পারে!নিজের অজান্তেই অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি বোধহয় না রে?অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোকে।আঘাতটা মনে হয় বেশিই করে ফেলেছি।তুই আমার জন্য কারো সামনে অস্বস্তিতে পড় এটা আমি কখনই চাইবো না।বড্ড লোভী আমি না রে?দেখ না,তোর দিকটা না ভেবে শুধু নিজের দিকটাই ভাবলাম।তবে আমি তোকে না জানিয়ে কিছু করতে চাই নি রে চড়াইপাখি!শ্বশুরই বললো!আমি তাকে বলেছিলাম তোকে জানানোর জন্য।কিন্তু তিনি চান নি!তিনি কেন। এমনটা করেছেন সেটা কখনো উনার কাছে জানতে চাস না।সময় হলে উনি নিজ থেকেই বলবেন।আর তুই যত দ্রুত পারিস সবটা ভুলে যা।ওইদিন যারা সাক্ষী ছিল তারাও খুব তাড়াতাড়িই সবটা ভুলে যাবে।সবার জীবনের গল্প তো আর আমার মতো বিষাদে রূপান্তরিত হয় নি কিনা!অন্য কারোর উত্থান-পতনের ভীড়ে তারা আমাদের এই অনাদি সম্পর্কের কথা ভুলে যাবে!আমিও আমার বিষাদে ভরা এই জীবন নিয়ে চলে যাচ্ছি দূরের কোনো শহরে!সবটা গুছিয়ে নিতে হয়তো একটু সময় লাগবে তাও নিজেকে সামলে নিস।অবশ্য এই লেখাটা তুই যখন পড়ছিস ততদিনে হয়তো নিজেকে সামলেই নিয়েছিস!আমিও চেষ্টা করবো বেসামাল এই আমিটাকে একটু সামলানোর।মৃত্যুটা হলো ছোট গল্প আর বেঁচে থাকাটা উপন্যাস।তবে আমি তো সেই কবেই মরেছি!আমি মরেছি তোমাতে!আমি তোমাতে মরেছি বারংবার!এবার না হয় অচেনা ওই কংক্রিটের শহরের চিরচেনা সূর্যাস্তের সময়টাকেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকলাম!
ডায়েরি থেকে গোধূলির হাত আলগা হয়ে আসে। গোধূলির হাতের ছোঁয়া পেয়ে ডায়েরির পাতা গুলো যেনো নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছে দীপ্তের লেখা কথাগুলোকে আরো প্রানবন্ত চমৎকার করে ফুটিয়ে তোলোর।আজ গোধূলি পরাস্ত।ও প্রেমে পড়ে গেছে।এই ডায়েরিতে লেখা প্রত্যেকটা কথা ওকে বাধ্য করেছে প্রেমে পড়তে।শক্ত হয়ে বসে আছে গোধূলি।পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া সূর্যের তীর্যক আলোর ছটা এসে ওর চোখে মুখে পড়ছে।চোখে কোণে টলমল করা অশ্রু বিন্দু সেই আলোর স্পর্শে তাদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছে!গাল বেঁয়ে সেই জল গিয়ে পড়ছে মেঝেতে পড়ে থাকা ডায়েরির পাতায়।গোধূলি ডায়েরিটা তুলে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে কাতর স্বরে বলে উঠলো,
– দেখুন গোধূলির আলো ফুটেছে,আপনি শুধু একবার আসুন!কথা দিচ্ছি এবার আর ফিরিয়ে দেবো না!
___________________________
সময় নদীর স্রোতের মতোই আবহমান। দেখতে দেখতে তিনটা বছর চলে গেলো।এই তিন বছরে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে।গোধূলি এখন ফাইনাল ইয়ারে।আদিবা আর রায়ানের দু’বছরের এক ছেলে আছে।ছেলের নাম রেখেছে দিয়ান।লাজুকলতা আর আহানও দু’বছর আগেই বিয়ের কাজটা সেড়ে ফেলেছে।বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছে।ফুপি ডাক শুনার সৌভাগ্যও গোধূলির হয়ে গেছে।লাজুক ন’মাসের প্রেগন্যান্ট।খাইয়ে খাইয়ে বেচারির হালাত খারাপ করে দিচ্ছে আহান।চেক-আপ করাতে গিয়ে জানতে পারে বেবির ওজন কম।ব্যাস!এখন বাচ্চার ওজন বাড়ানোর দায়িত্ব আহানের।ইহান আর রাহাও এখন চুকিয়ে প্রেম করছে।অবশ্য এর পিছনে গোধূলির অবদানটাই বেশি।ইহান তো বরাবরই ভীতু!তাও একটুখানি সাহস জুগিয়ে রাহাকে প্রপোজ করেছিল।কিন্তু রাহা উল্টো থ্রেট দিয়ে বলেছিল ও নাকি এইসব আহানকে বলে দিবে।বেচারা ইহান ভয় পেয়ে গোধূলির কাছে গিয়ে সে কি কান্না।শেষ মেশ গোধূলিই দুজনের মিলন ঘটিয়েছে।
– জানো ফুপি,ইদানীং মিহিরকে নাকি তুলির আশেপাশে একটু বেশিই ঘুরঘুর করতে দেখা যাচ্ছে।অবশ্য শুধু যে মিহিরের একার দোষ তাও কিন্তু না।তুলিরো অনেকটাই দূর্বলতা তৈরি হয়েছে মিহিরের প্রতি।কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারছে না।ওরা হয়তো ভাবছে এই সবের চক্করে শেষে যদি আর বন্ধুত্বটাই না থাকে।তাই হয়তো কেউ কাউকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।জানো তো ফুপি,ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে প্রেম নিয়ে এই এক ঝামেলা।
রান্নাঘরে দীপ্তি বেগম রান্না করছিলেন আর গোধূলি তার পাশে সেলের উপর বসে আপেল খাচ্ছিলো আর তুলি মিহিরের কথাটা বলছিল।উনি শুধু চুপচাপ শুনছিলেন।ফোনে নোটিফিকেশন আসতেই ওটা চেক করে ফিক করে হেসে উঠে গোধূলি।দীপ্তি বেগম গোধূলির এমন হঠাৎ করে হাসার কারণ বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাস করেন,
– তোর আবার কি হলো?একা একা হাসছিস কেন?
– আমার সিধে-সাধা ইমোশনাল ভাইটাও নাকি প্রেম করছে।
– মানে?
– মানে তোমার ছোট ভাইপো।
– তুইয়েই তো সবটা করেছিস!তা ওদের মতো তুলি আর মিহিরেরো একটা হেস্তনেস্ত করে দে তাহলেই তো হয়!
দীপ্তি বেগম গা ছাড়া ভাব নিয়ে কথাটা বলে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।ফুপির কথায় বিষম খায় গোধূলি।গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে থেকে অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো,
– মানে?
– সব জেনে না জানার ভান করবি না।ওইদিন ইহান তোকে যা যা বলেছিল সব শুনেছি আমি।
– তুমি সবটা শুনেছো?
– হ্যাঁ।
– যাক ভালো হয়েছে।দেখো ছোটদাভাই ওদের ছবি পাঠিয়েছে আমায়।
– থাক আমাকে দেখতে হবে না।তুই বরং গিয়ে রেডি হয়ে আয় আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।ভার্সিটি আছে তো নাকি?
– হুম।
গোধূলি ব্রেকফাস্ট করে বাসা বেড়িয়ে আসে।কিন্তু মাঝরাস্তা পর্যন্ত এসে আবার কিছু একটা ভেবে বাসায় ফিরে যায়।গোধূলিকে এতো জলদি ফিরে আসতে দেখে রাবিয়া বেগম অবাক হয়ে বললো,
– সাজু!ভার্সিটি থেকে এতো তাড়াতাড়ি ফিরে আসলি কি করে?
– ভার্সিটি যাই নি দাদু!
– কেন?
– এমনি ভালো লাগছিল না।ভাবছিলাম আজকে একটু ও বাসায় যাবো।অনেকদিন যাওয়া হয় না।তুমি যাবে?
– ও বাসায় যাবি তাহলে আগে বলতি।একটু আগেই দীপ্তি চলে গেলো।আগে বললে তো একসাথেই যেতে পারতাম।
– সমস্যা নেই আমি রাস্তা চিনি তো নাকি?
★
– ফুপি আমি চলে যাচ্ছি।কালকে আমার ভার্সিটি আছে।দাদু এত রাতে তোমাকে যেতে হবে না।আর তুমি বরং কয়েকটা দিন এখানে থেকেই যাও না।পরে না হয় আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।
– দেখি সকাল হোক আগে।তুই সাবধানে যাস।
– সাজি শুন!
– কিছু বলবে ফুপি?
– দিনের আবহাওয়া বেশি ভালো না।রাতে একা একা ড্রাইভ করে যাবি সাবধানে যাস।
– ঠিক আছে,আসছি আমি।
গোধূলি বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে।সারাটা রাস্তায় গোধূলি কেমন যেন অস্থিরতা নিয়ে ড্রাইভ করছে।শরীর খারাপ হতে পারে ভেবে দ্রুত ড্রাইভ করে চলে এসেছে।গোধূলির গাড়ির হর্ন বাজতেই দাড়োয়ান এসে গেইট খুলে দেয়।গাড়িটা গ্যারেজে রেখে সদর দরজার কাছে যেতেই আঁতকে উঠে গোধূলি।
চলবে……..
[ বি.দ্র. আজকের পর্বটা বড় করেই দিয়েছি।সবাই একটু গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ।ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং🥰 ]