#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৫
– আমারও বিয়ে মানে?সাজি এইসব কি বলছে লাজুক? আর ও এইভাবে কাঁদছেই বা কেন?
আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাস করলো আদিবা।লাজুক স্মিত হেসে বললো,
– আপু আর বলো না। আমি যেই বলেছি ছেলেপক্ষ আসছে ওমনি ও কান্না শুরু করে দিয়েছে।আরো কি সব বলছে জানো?ও নাকি বিয়ে করবে না।ভাবা যায়?দেখছো মেয়ে কত এডভান্স!
– ও তো ভুল কিছু বলে নি লাজুক!ঠিকই তো বলেছে!ছেলেপক্ষ আসলে তো বিয়েই হয়!
আদিবার কথা শুনে লাজুক হতবাক।ও কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে।গোধূলি ঝটপট চোখ মুখ মুছে আদিবার কথায় সায় দিয়ে সুর টেনে বললো,
– হুম তাই তো বুবু!আমি কি কিছু ভুল বলেছি বলো?দেখো,লাজুবু আমাকে একদম বউ এর মতো করে সাজিয়ে দিয়েছে।আর এখন দেখছি তুমিও বউ এর মতো করেই সেজেছো।তাই তো আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমারও বিয়ে কিনা।
– হুম বিয়েই তো।আমারও আর তোরও!
কথাটা বলেই মিটিমিটি হাসছে আদিবা।গোধূলি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
– আমি বিয়ে করবো না।আমার কত আশা ছিল আমার ভাই-বোনদের বিয়েতে কত্ত আনন্দ করবো।ও বুবু তুমি সবাইকে বলে দাও আমি কিন্তু বিয়ে করবো না।আমার কথা না শুনলে আমি কিন্তু কারো সাথে কথা বলবো না আর কিছু খাবোও না বলে দিলাম।
– সে তুই যা কিছুই করিস না কেন আজকে তোকে বিয়ে দিয়ে দিলে পরে তুই কারো সাথে কথা না বললেও কারো কিছু এসে যাবে না।কারণ তখন তুই থাকবি শ্বশুর বাড়িতে। আর রইলো বাকি খাওয়ার কথা? ও তো আর আমরা দেখতে যাবো না।তুমি না খেলে আমরা না খেয়ে বসে থাকবো নাকি?খাবি, না খাবি না সেটা তোর পেট তোর মাথা ব্যাথা আমাদের কি!না কিরে লাজুক?
আদিবা কথাটা বলে লাজুকের দিকে চোখ মারে।লাজুক মুচকি হেসে সায় দিয়ে বলে,
– হুম সেটাই তো!
গোধূলির চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে।দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে।গোধূলির এই অবস্থা দেখে আদিবা দৌড়ে এসে সাজিকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো,
– একদম না! একদম কাঁদবি না।সাজটা নষ্ট হয়ে যাবে তো!
গোধূলি অভিমানী স্বরে বললো,
– যাক নষ্ট হয়ে!তাতে আমার কি?আমার কথা কেউ ভাবে না।আমাকে কেউ ভালোবাসে না।সবাই আমাকে পর করে দিতে চাচ্ছে!
– হয়েছে? তোর বলা শেষ?এবার থাম!এখন আমি বলছি তুই শুনবি!
আদিবা চোখ রাঙিয়ে বলে।গোধূলি ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আদিবা ফের বলে,
– আজকে সকালে তুই ভার্সিটিতে চলে যাওয়ার পর পরেই আব্বুর ছোট বেলার বন্ধু রনিত আঙ্কেল ফোন করে বললেন তারা নাকি আজকে দেশে ফিরছেন।আর আজকেই নাকি আমাকে দেখতে আসবেন।আব্বু আর আঙ্কেল যখন ভার্সিটিতে পড়তেন তখন ঠিক করেছিলেন যে, রনিত আঙ্কেল এর যদি ছেলে অথবা মেয়ে হয় তাহলে আব্বুর ছেলে অথবা মেয়ের সাথে উনার ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দিবেন।ভার্সিটি শেষ করার পর আঙ্কেল পারিবারিক ভাবেই বিয়ে করে তাদের নিজেদের বিজনেস এ জয়েন করেন।অন্যদিকে আব্বুকেও দাদু বিয়ে করিয়ে বিজনেস এ ঢুকিয়ে দেয়।তারপর রনিত আঙ্কেল এর এক ছেলে হয়।তার নাম রায়ান চৌধুরী।পরে এক মেয়েও হয় তার নাম রাহা।
রায়ান ভাইয়া আমার থেকে চার বছরের বড়।ছোট বেলায় আমাদের বাড়িতে কত এসেছে।তুই তখন অনেক ছোট দেখলেও তোর মনে থাকার কথা না।এখন তারা সবাই সিঙ্গাপুর থাকে।রনিত আঙ্কেল ছেলেমেয়ের পড়াশোনা জন্য সিঙ্গাপুর চলে গিয়েছিল স্বপরিবারে।অনেক বছর পর তারা আবার দেশে ফিরছে।পড়াশোনা শেষ করে রায়ান ভাইয়া এখন তার বাবার বিজনেস সামলাচ্ছে আর রাহা সবে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করলো।আঙ্কেল দেশে এসে ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়ে এইখানেই বাকি জীবনটা কাটাতে চান।বিদেশের জীবন নাকি উনার আর ভালো লাগে না তার।আমাদের আগের বাসা থেকে এখানে চলে আসার পর তারা কখনো আমাদের এই বাসায় আসে নি।কারণ তারা বিদেশে চলে যাওয়ার পর আমরা এখানে এসেছি।তখন শুনলাম আব্বু ফোন করলো দীপ্তকে।তাদের এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতেই আহান আর দীপ্ত গেছে।
ওহ্!তারমানে তখন বাবাই ফোন করেছিল।তাই ওই শয়তান দীপ্ত ওকে ওইরকম টানতে টানতে নিয়ে চলে এসেছিল?কেমন ফাজিল! বদ শয়তান লোক!এলিয়েন!তো ওকে বললে কি হতো?গোধূলি মনে মনে আওড়ালো কথাগুলো।
– বুদ্ধু!এবার বুঝলি?কাউকে শাড়ি পড়িয়ে সাজালেই কি তার বিয়ে হয়ে যায়?
আদিবা গোধূলির মাথায় আলতো করে চাপড় দিয়ে বললো।গোধূলি খুশিতে আদিবাকে জড়িয়ে ধরলো।বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে গলার স্বর উঁচু করে বললো,
– তারমানে শুধু তোমার বিয়ে?আমার কোনো বিয়ে টিয়ে হচ্ছে না।
– নারে পাগলি।
ওর বুবুর বিয়ে।ওর যে কি আনন্দ হচ্ছে তা বলার বাহিরে।গোধূলি তো খুশিতে এক্কেবারে পাগলপ্রায় অবস্থা!সারা ঘর জুড়ে নেচে চলেছে।বিছানায় উঠে লাফালাফি করছে!গোধূলির এইসব কান্ড দেখে আদিবা আর লাজুকের হাঁসতে হাঁসতে এখন পেট ব্যাথা করছে।অবশেষে লাজুক বলল,
– হয়েছে হয়েছে বোন আমার, এবার থাম।
বিছানা থেকে নাম এবার।অনেক লাফালাফি করেছিস আর না।
লাজুকের কথা মেনে লাফালাফি বন্ধ করে চুপ করে বিছানার ঠিক মাঝখানে বসে গোধূলি।কোলে উপরে একটা বালিশ নিয়ে তাতে কনুইয়ে ভর দিয়ে দুই হাত ঠেকালো থুতনিতে।ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো,
– হুম হুম, ঠিক আছে।যদিও তোমার কথায় আমার লাফালাফি থামালাম,কিন্তু এখন তো অন্য কেউ লাফাবে!আর তার ব্যবস্থা করবো আমি।এতক্ষণ তো সবাই মিলে আমাকে খুব ভয় আর টেনশনে রেখেছিলে না?আব আয়েগা মাজা!আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া!
আদিবা আর লাজুক কপাল কুচকে তাকায় গোধূলির দিকে।লাজুক বললো,
– মানে?কি করবি তুই?
– উহু, তা তো এখন বলা যাবে না।ক্রমশ প্রকাশ্য!
আগে সময় হোক তারপর বলবো।
গোধূলির কথার উত্তরে লাজুক ফের বললো,
– তোর যা খুশি কর। কিন্তু উল্টা-পাল্টা কিছু করিস না বলে দিলাম!
– আচ্ছা। তোমরা এখন যাও তো।আমাকে একা ছেড়ে দাও।আমার এখন অনেক প্ল্যান করতে হবে।অনেক হিসাব নিকাশ করতে হবে!
গোধূলির কথা শুনে আদিবা হেঁসে দিয়ে টেবিল থেকে ক্যালকুলেটরটা সাজিকে দিয়ে বলল,
– এই নে, তোর সব হিসাব-নিকেশ শেষ হলে পরে আমার রুমে চলে আসিস।
লাজুক আর আদিবা দুজনেই চলে গেলো।বোকা বনে গেল গোধূলি।ক্যালকুলেটর!ওকে কি হিসাব করতে হলে ক্যালকুলেটর লাগবে?আর এই ক্যালকুলেটর দিয়ে ও কি হিসেব করবে?
বুবু বলে চিল্লাতে শুনা গেলো গোধূলিকে!নিচ থেকে শুনলো গোধূলির মা।লাজুককে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে দেখে জিজ্ঞাসা করলো,
– কি হলো রে লাজুক?সাজি এইভাবে আদিবাকে ডাকছে কেন?
– ডাকছে না ফুপি!সারপ্রাইজ পাওয়ার পর তোমার মেয়ে হিসাব-নিকাশ করতে বসেছে!
– কিসের হিসাব?
– তা তোমার মেয়েই জানে!আল্লাহ জানে তোমার মেয়ে কি করে!
– মানে?
– কিছু না।ও তুমি বুঝবে না।আচ্ছা ফুপি কাকিয়া কোথায় গো?
– রান্না ঘরে।কিন্তু লাজুক…..
গোধূলির মায়ের মাথায় কিছুই ঢুকলো না।এইদিকে উনার কথা না শুনেই লাজুক চলে গেল।বোকার মতো লাজুকের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো গোধূলির মা।ওইদিকে কলিং বেল বেজেই যাচ্ছে।গোধূলির মায়ের কোনো খবর নাই।জাকিয়া বেগম (আদিবার মা)সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন।শিখা বেগমকে(গোধূলির মা)ওইভাবে ধ্যানমগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আশ্চর্য হয়ে গলার স্বর উঁচু করে বললেন,
– কিরে মেজো কখন থেকে কলিং বেলটা বেজে যাচ্ছে শুনতে পাস নি?যা গিয়ে দেখ কে এলো?
জাকিয়া বেগমের ডাকে হুশ ফিরে শিখা বেগমের।জাকিয়া বেগমের দিকে তাকান।উনি ফের বললো,
– কোথায় হারিয়ে গেলি তুই।কলিং বেল বাজছে তো দেখ গিয়ে কে এলো!
– যাচ্ছি!
চলবে………