#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে-স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-১৩
– চিল্লাবো না তো কি করবো?তুমি জানো ওরা কি করেছে?
ফ্ল্যাসব্যাক___
ঘুম থেকে উঠে আদিবা আর রাবিয়া বেগমকে নিয়ে মর্নিং ওয়াক করতে যাওয়া গোধূলির রোজ সকালের ধরা-বাধা রুটিন।মর্নিং ওয়াক শেষ করে বাড়ি ফিরে এসে ব্যালকনিতে বসে সূর্য উদয় না দেখলে নাকি গোধূলির দিনটাই ভালো কাটে না!আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।প্রতিদিনের মতো আজও ফেভারিট দোলনাতে এক কাপ চা আর প্রিয় লেখিকার একটা বই নিয়ে বসে পড়েছিল।চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে যেই না কাপটা রাখতে যাবে ঠিক তখনই দেখতে ফেলো আহানের ব্যালকনি থেকে দঁড়ি দিয়ে কেউ নিচে নামছে!কপাল কুঁচকে আসে গোধূলির।চোর ভেবে চিল্লাতেই যাচ্ছিলো কিন্তু চিল্লানোর আগে একটু ভালো করে দেখে নেওয়া দরকার।এটা ভেবে ভালো করে তাকিয়ে দেখে চোর নয়!উক্ত ব্যক্তিটি হলেন স্বয়ং দীপ্ত!কিছুক্ষণ পর ইহানও ওই দঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে যায়।ঘটনাটা কি হলো কিছুই বুঝলো না গোধূলি।তাই গোধূলি ওর রুম থেকে নিচে নেমে দেখতে যাচ্ছিল।ড্রয়িংরুমে এসে দেখে আনোয়ার সাহেব দীপ্তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ! আর তখনই গোধূলির কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে যায়।
গোধূলি আহানকে সবটা বলার পর ফোঁস করে একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে শক্ত গলায় বললো,
– বড়দাভাই তুমি ভাবতে পারছো দাদাজানের সাথে কত বড় গাদ্দারি করা হচ্ছে।এটা কি অন্যায় করা হচ্ছে না? আমি তো এই অন্যায় মেনে নেব না।আমি এক্ষুনি দাদাজানকে সব বলে দিবো।দাদাজান যাদের এত প্রশংসা করেছেন ওরা আদৌ মর্নিং ওয়াক করতে যায়ই নি!বরং ঘরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল।আর এখন, ব্যালকনি দিয়ে নিচে নেমে বাড়ির মেইন দরজা দিয়ে ঢুকেছে যাতে দাদাজান এটা ভেবে নেয় যে ওরা মর্নিং ওয়াক করেই এসেছে।দাদাজানের বিশ্বাসের অমর্যাদা আমি হয়ে দেবো না।এই বিশ্বাসঘাতকতা তো আমি মেনে নিবো না।আমি দাঁড়াও, আমি দাদাজানকে বলে আসি।দাদাজাআআআ………
আহান তড়িঘড়ি করে ফের গোধূলির মুখ চেপে ধরেছে।আনোয়ার সাহেব যদি এখন এইসময় শুননে তাহলে, দীপ্ত আর ইহান যে রশ্মি দিয়ে নেমে এসেছে সেই রশ্মি দিয়েই ওদেরকে বেঁধে সারাদিন রৌদ্রের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখবে।এটাই হবে ওদের শাস্তি!আহান ওর দাদাজানকে খুব ভালো করে চেনে।গোধূলি ওর মুখ ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে।আহান চাপা স্বরে ফিসফিস করে বললো,
– আরে তোর কি হয়েছে? বার বার এইভাবে চিল্লাসছিস কেন?তোকে বললাম না অনেক আইসক্রিম আর চকলেট কিনে দেবো।তারপরেও কেন এমন করছিস?এইবারের মতো ওদের ছেড়ে দে।দীপ্ত তো আর দাদুর এই নিয়ম জানে না।এরপর থেকে ওর আর ভুল হবে না দেখিস তুই!
আহান গোধূলির মুখটা ছেড়ে দিয়ে করুণ স্বরে বললো,
– প্লীজ আর চিৎকার করিস না!
গোধূলি ভাব নিয়ে বললো,
– ঠিক আছে ঠিক আছে!এত রিকুয়েষ্ট করতে হবে না!আজকে প্রথম দিন বলে ছেড়ে দিচ্ছি।এরপর কিন্তু আমি আর ছাড় দিবো না বলে দিলাম বড়দাভাই!
– ওকে বোন!অনেক বকেছিস!এই হাত জোর করে বলছি আর করবে না।এবার তুই যা এখান থেকে।
– হুম হুম যাচ্ছি।আর শুনো,আমার আইসক্রিম আর চকলেট যেন ঠিক সময়ে আমি আমার রুমে পেয়ে যাই!
কথাটা অনেকটা জোরেশোরেই বলল গোধূলি।দীপ্ত শুনতে পেয়ে আহানকে এসে জিজ্ঞাস করে,
– আহান ওই বাচাল মেয়ে তোকে কিসের জন্য থ্রেট দিয়ে গেলো রে?
– তোদের জন্যে!
দীপ্ত কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে আশ্চর্য হয়ে বললো,
– মানে?
আহান হতাশার সুর টেনে বললো,
– মানে আর কি!তোমরা দুজনে মিলে যা করেছ তা গোধূলি দেখে নিয়েছে।এক্ষুনি দাদাজানকে সবটা বলতে যাচ্ছিলো।আমি ওকে বলতে দেয় নি।ও যদি দাদাজানকে তোদের কথা না বলে তাহল ওকে অনেক আইসক্রিম আর চকলেট দিবো বলেছি।সেটাই বলে গেলো।
দীপ্ত আহানের কথা শুনে কর্কশভাবে বললো,
– কি দরকার ছিল তোর আগ বাড়িয়ে এইসব বলতে যাওয়ার?নানাজানকে বলেই দিতো তারপর দেখতাম কি হতো।
– দেখবি কি হতো?
– কি দেখবো?
– ওই যে দেখ!
আহান ওর বাবাকে দেখিয়ে বলল।দীপ্ত আহসান সাহেবকে দেখে ফের আহানের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো,
– তুই মামুকে কেন দেখাচ্ছিস?আর মামু আজকে মুখটাকে ওমন বাংলার পাঁচ এর মতো করে রেখেছে কেন?
– হুম সেটাই তো তোকে দেখাবো বলে বলেছি!
– আহান!হেয়ালি না করে বল তো কি বলতে যাচ্ছিস!
– আব্বু আজকে মর্নিং ওয়াক করতে যায় নি বলে দাদাজান আব্বুকে সকালের নাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে!তাও আব্বুর পেট খারাপ বলে শাস্তিটা দুপুর পর্যন্ত! যদি সুস্থ শরীরে মিস করতো তাহলে শাস্তির পরিমাণ আরো বাড়তো।
দীপ্ত চোখ গোলগোল করে আহানের দিকে তাকায়।আশ্চর্য হয়ে বললো,
– সিরিয়াসলি!নানাজান এত স্ট্রিক্ট?
– এবার তো চলে এসেছিস,এখন আস্তে আস্তে তুইয়েই সব জেনে যাবি।চল এবার ফ্রেশ হয়ে নিবি!
বর্তমানে_____
এম্বুল্যান্স এর শব্দ কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই আঁতকে উঠলো দীপ্ত।অতীত থেকে বেড়িয়ে আসে।কপাল কুঁচকে আসে ওর।এই রাতের বেলায় বাড়িতে এম্বুল্যান্স কেন?ওর নানুজানের আবার কিছু হলো না তো?রাবিয়া বেগমের অসুস্থতার আশঙ্কা করে দীপ্ত আর একমুহূর্তও দেরি না করে দৌঁড়ে নিচে চলে যায়।এম্বুল্যান্স এর শব্দ শুনে দীপ্তের মাথায় রাবিয়া বেগমের কথাই আগে আসলো।কিছুদিন আগেও রাবিয়া বেগম স্ট্রোক করেছিলেন।দীপ্ত নিচে গিয়ে দেখতে পায় রাবিয়া বেগম সিঁড়ি বেয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে নামছে।দীপ্ত দ্রুত পায়ে রাবিয়া বেগমের কাছে গিয়ে উনার বাহু ধরে উৎকন্ঠিত স্বরে বললো,
– নানুজান তুমি ঠিক আছো তো?
– আমি ঠিক আছি দীপ্ত!কিন্তু….
রাবিয়া বেগম আর কিছু বলতে পারেন নি তার আগেই দীপ্তের কপাল আর হাত দেখে উনি আঁতকে উঠে বলেন,
– তোর কপাল কাটলো কি করে?
– আরে আমার কথা ছাড়ো।কিন্তু কি বলো?কার কি হয়েছে?বাড়িতে এম্বুল্যান্স কেন?আর বাড়িতে তুমি একা কেন বাকিরা কোথায়?
রাবিয়া বেগম আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না।দীপ্তকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন।দীপ্ত ভড়কে যায়।শুকনো একটা ঢোক গিলে ঠোঁট ভিজিয়ে ভীতু গলায় বললো,
– নানু তুমি এভাবে কেঁদছো কেন?আমাকে বলো কি হয়েছে?
রাবিয়া বেগম কাঁন্নারত অবস্থায়ই বললেন,
– সবাই হসপিটালে!সাজি……
গোধূলির নাম শুনেই দীপ্তের বুকের ভেতর কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠে।রাবিয়া বেগমের নীরবতা আর কান্নার তীব্রতা ওর উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে কাঁপা গলায় বললো,
– গোধূলি?গোধূলির কি হয়েছে আমাকে বলো নানু।কি হয়েছে আমার গোধূলির?
শেষের কথাটা শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে কথাটা বলে দীপ্ত।রাবিয়া বেগম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো,
– সাজি বাথরুমে পড়েছিল।কপাল ফেঁটে অনেক ব্লিডিং হয়েছে।কিভাবে পড়েছে কেউ জানে না।সবাই মিলে কত্ত ডাকাডাকি করলো কিন্তু কারোর ডাকেই কোনো সাড়া দিলো না।ওর পালস পাওয়া যাচ্ছে না।আমি আর কিছু জানি না দীপ্ত।আমাকে ওর কাছে নিয়ে যা তুই।
দীপ্ত সিঁড়িতেই ধপ করে বসে পড়ে।ওর চোখ দুটো অন্ধকার হয়ে এসেছে।মাথার নিউরন গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।বুকের ভেতর কেমন যেনো চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।নিঃশ্বাস আটকে বসে আছে দীপ্ত।
– এই দীপ্ত আমাকে নিয়ে চল না রে সাজির কাছে।এই দীপ্ত আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস তুই!
রাবিয়া বেগম দীপ্তের হাত ঝাকিয়ে বলছেন।দীপ্ত ওর নানুর দিকে নির্বাক চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ।মস্তিষ্ক সচল হত্রি তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ায় দীপ্ত।চোয়াল শক্ত করে জোর গলায় বললো,
– কিচ্ছু হবে না ওর!আমি হতে দেবো না।আমি থাকতে ওর কিচ্ছু হতেই পারে না।গোধূলিকে কোন হসপিটালে নেওয়া হয়েছে?
– লাইফকেয়ার হসপিটাল।
চলবে……
[শুভ নববর্ষ পাঠক-পাঠিকা গন🥰
১৪২৯ খুব ভালো কাটুক আপনাদের❤]