#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৪০
রুদ্ধশ্বাসে শক্ত হয়ে বসে আছে গোধূলি।””আমার ডায়েরির পাতায় আর জীবনের পূর্ণতার খাতায় যদি কোনো প্রাপ্তি থেকে থাকে,তাহলে সেই একমাত্র প্রাপ্তির নাম তুই!আমার চড়াইপাখি”” এই দুটো লাইনের মানে বুঝা গোধূলির জন্য এতটাও সহজ নয়।পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আজকের জন্য এতটুকুই থাক!যতটুকু পড়েছে তাতেই গোধূলির মাথা বিগড়ে যাচ্ছে।গোধূলি ডায়েরিটা বন্ধ করে ডায়েরির ওই নেইম-প্লেটটার দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো।নিজের অজান্তেই বুক ছিড়ে বিষন্নতা মিশ্রিত এক দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে।গোধূলি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।ধীর পায়ে এগিয়ে যায় আলমারির দিকে।
– গোধূলি!
লাজুক এসেছে!লাজুকের কন্ঠটা শুনতেই গোধূলির বুকের ভেতর কেমন যেন করে উঠলো।পরমুহূর্তেই ফিচেল হাসে লাজুকের অগোচরেই।ডায়েরিটা আলমারিতে রেখে দরজাটা বন্ধ করে ক্ষুদ্র একটা নিঃশ্বাস ফেলে পেছন ফিরে গোধূলি।লাজুকের দিকে তাকিয়ে মলিন মুখে বললো,
– কখন এসেছো লাজুবু?
– মাত্রই আসলাম।সকালে বাসায় চলে গিয়েছিলাম।রাতে নানু একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।অনেকটা সময় চলে গেছে তোর সাথে দেখা করা নি।তাই নানুকে দেখে ও বাসা থেকে সোজা তোর কাছে চলে এসেছি।
– ওহ!নানু এখন কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ এখন আগের থেকে ভালো আছে!
– আসো ওইদিকে গিয়ে বসি।
গোধূলি এগিয়ে গিয়ে লাজুকের হাত ধরে ব্যালকনিতে নিয়ে গেলো।লাজুককে দোলনাটায় বসিয়ে দিয়ে ও ব্যালকনির রেলিংটায় হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে দাঁড়ালো।গোধূলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষণে ক্ষণে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।যতটা সম্ভব লুকিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় থাকলেও লাজুক প্রতিবারই সেই নিঃশ্বাস গুলোর শব্দ শুনতে পাচ্ছে!গোধূলিকে এই অবস্থায় দেখে বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস লাজুকও ফেলেছে।লাজুক দুজনের মধ্যকার নিরবতা ভেঙে মুখে মৃদু হাসি টেনে গলার স্বর উঁচু করে বললো,
– শুনলাম আজ ভার্সিটিতে গিয়েছিলি?
– হ্যাঁ।
– গোধূলি!
– হুম!
– দীপ্ত তো চলে গেছে!
– তো?
– তোর কষ্ট হচ্ছে না!
– মানে?
লাজুকের এমন কথায় গোধূলি যে বিরক্ত হয়েছে সেটা লাজুক বুঝতে পারছে।আসলে লাজুক একটু দেখতে চাইছিল দীপ্তের কথা শুনে গোধূলি কি রকম রিয়েক্ট করে।কিন্তু এখন বুঝতে পারছে দীপ্ত চলে যাওয়াতে ওর কিছু আসে যায় না।লাজুক মেকি হেসে বললো,
– না কিছু না!এয়ারপোর্টে চলে যাওয়ার আগে দীপ্ত রির্সোটেও গিয়েছিল।বলে গেছে কবে ফিরবে সঠিক সময়টা ঔ জানে না!তোকে কিছু বলে গেছে? মানে কবে ফিরবে টিরবে?
গোধূলি নির্বিকার চিত্তে দাঁড়িয়েই আছে।লাজুকের কোনো কথায় যেনো ওর কানে যাচ্ছে না।গোধূলিকে নীরব থাকতে দেখে লাজুক আঁড়চোখে গোধূলির দিকে তাকিয়ে বললো,
– তবে অবশ্য আমাদের এটা বলে গেছে যে,ওকে হয়তো মিনিমাম পাঁচ বছর থাকতে হতে পারে!
লাজুকের কথাটা শুনতেই অজানা কারণে অজানা ভয়ে গোধূলির বুকের ভেতরটায় কেমন যেন চ্যাৎ করে উঠলো।পর পরেই তাচ্ছিল্যে হাসে গোধূলি।আজব!ওকে কেন কারো জন্য পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে?আর ও অপেক্ষা করবেই বা কেন?কিসের টানে ওকে বাঁধা পড়ে থাকতে হবে?শুধু ওই একটা আংটি বদল হয়েছে বলে?কিন্তু সেটাও তো ও নিজের ইচ্ছেয় করে নি!
গোধূলি পরমুহূর্তেই ফের ভাবে,আচ্ছা ওর কি নিজের ইচ্ছেটাকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ?কিন্তু ও কি চায় সেটাই তো জানে না!যা হওয়ার সেটা হয়েই গেছে।তবে কি ওর মানিয়ে নেওয়া উচিৎ?নাকি এটা ভেবে ওর মেনে নেওয়া উচিৎ যে,যেটা হয়েছে সেটাই ওর ভবিতব্য!তাহলে চড়াইপাখির কি হবে?দীপ্তের জীবনে যদি অন্য কারোর অস্তিত্ব থেকেই থাকে তাহলে তার জীবনের সাথে ওকে কেন জড়ালো?
কথা গুলো ভাবতেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও গোধূলির মনে পাহাড় সমান অভিমান জমে গিয়েছে। তবে ও নিজেও জানে না আদৌ ওর এই অভিমান করাটা উচিৎ কিনা!যত ভাববে মন ততই বিষিয়ে যাবে।অভিমানের পাহাড় আরো ভারী হওয়ার আগেই গোধূলি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শক্ত গলায় বললো,
– নিচে চলো লাজুবু!
লাজুক একটু আশ্চর্য হলো।ওর কথা শেষ হওয়ার পর গোধূলি অনেকক্ষণ চুপ করে ছিল।”নিচে চলো লাজুবু” এই কথাটা বলতে এতটা সময় নিতে হলো?তবে গোধূলির চোখ মুখ দেখে লাজুক বুঝতে পেরেছে ও কিছু বলতে চায় না।তাই লাজুকও আর কথা না বাড়িয়ে গোধূলিকে নিয়ে নিচে চলে যায়।
______________
আদিবার বিয়ের ডেইট ফিক্সড হয়ে গেছে তাই বাড়িতে এখন অনেক কাজ।সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।গোধূলিও বোনের বিয়ে নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পাড় করছে।বিয়ের দিন যত কাছে চলে আসছে বিয়ের কাজের মাত্রাও ততই বেড়ে চলেছে।বিয়ে উপলক্ষে এতো আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে দীপ্তকে সবাই খুব মিস করছে।বিয়েতে সবাই উপস্থিত থাকবে অথচ দীপ্ত থাকবে না!এটা ঠিক মেনে নিতে পারছিলেন না আহসান সাহেব।তাই আহসান সাহেব দীপ্তকে আসার জন্য বলেছিলেন!কিন্তু দীপ্ত বলে দিয়েছে ও এখন আসতে পারবে না!সামনে বাকি আছে আর দুইটা দিন। দুইদিন পরেই আদিবার বিয়ে।
– আজ মেহেন্দি কাল হলুদ আর পরশু বিয়ে!বুবু তোমার ফিলিংস কেমন গো?
আদিবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে গোধূলি।আদিবা গোধূলির মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিলো।গোধূলির বাচ্চাসুলভ কথায় আঁতকে উঠে আদিবা!একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
– বাড়ির সবাইকে ছেড়ে অন্য একটা পরিবারে সারা জীবনের জন্য চলে যেতে হবে তার জন্য মনটা শক্তকে করছি!আচ্ছা সাজি,
– হুম।
– আমি তো কখনো তোদেরকে ছাড়া থাকি নি।তাহলে
ওই বাড়িতে আমি তোদেরকে ছাড়া কিভাবে থাকবো?
কাতর গলায় বললো আদিবা।গোধূলি মাথা উপরে তুলে আদিবার দিকে তাঁকিয়ে দেখে আদিবার চোখে পানি টলমল করছে।যেকোনো সময় কেঁদে ফেলতে পারে।গোধূলি উঠে বসে আদিবাকে জড়িয়ে ধরে।আদিবাও গোধূলিকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদেই দেয়।বোনের কান্না দেখে গোধূলিও আর নিজের কন্ট্রোল করতে পারলো না।এইদিকে দুই বোনের কান্না দেখে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জাকিয়া বেগমও কাঁদছেন।উনি হয়তো কোনো কারণে এইদিকে আসছিলেন।দুই বোনের আলাপচারিতা শুনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন।শিখা বেগম জাকিয়া বেগমকে ডাকতে এসে দেখেন উনি কাঁদছেন।শিখা বেগম উনাকে আদিবার ঘরে নিয়ে যান।আদিবা ওর মাকেও একহাতে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে।
অনেকক্ষণ হলো বড় জা আর মেজো জা কে নিচে দেখতে না পেয়ে তাঁদের খুঁজতে জ্যোতি বেগমও আদিবার ঘরে এসে উপস্থিত হন।আদিবা গোধূলির সাথে সবাইকে কান্না করতে দেখে তিনিও সেই কান্নায় যোগ দেন।এখন এই পাঁচ জনের কান্নার আওয়াজ মোটামুটি সারা বাড়িতেই ছড়িয়ে গিয়েছিল।ফলে বর্তমানে বাড়ির সবার অবস্থান এখন আদিবার ঘরে!তাঁদের কান্নাকাটি দেখে কেউই আর শক্ত থাকতে পারলো না!অতএব একে একে সবাই যোগ দিলো!
রংবেরঙের আলোক সজ্জায় সাজানো হয়েছে পুরো বাড়িটা।আদিবার বিয়ের অনুষ্ঠান সহ যাবতীয় কাজ বাড়িতেই করা হবে।তাই বাড়ির এই রূপ দেওয়া হয়েছে।যথা সময়ে আদিবার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।বিদায় বেলায় গোধূলি আদিবাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল।ওর কান্না দেখে উপস্থিত গেস্টরা অব্দি কান্না করতে বাধ্য হয়েছিল।
সময় বেঁয়ে চলেছে আপন মহিমায়।বনি,বহ্নি আদিবা আর রায়ানের বিয়ের পর দিনেই চলে গেছে।আদিবার বিয়ের এক সপ্তাহ কেটে গেছে।দ্বিরাগমন করতে এসে তিন দিন থেকে আজই ওরা চলে গেছে।কাল থেকে আবার গোধূলি প্রথম সেমিস্টার এক্সাম।রাত জেগে ওকে প্রচুর পড়তে হচ্ছে। প্রথমে ওর অসুস্থ হওয়া তারপর এনগেজমেন্ট আবার এনগেজমেন্টের পর বিয়ে!এইসবের চক্করে ও পড়াশোনায় একদম সময় দিতে পারে নি।এখন আবার আদিবারা দ্বিরাগমন করতে এসেছিল ওদেরকেও একটু সময় দিতে হয়েছে।
সব ব্যস্ততা মিলিয়ে এখন পড়ার ভীষণ চাপ হয়েছে গোধূলির উপর।
•
গোধূলির পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে রোজ আহান এসে ওকে দিয়ে যেতো আর ইহান এসে নিয়ে যেতো।কিন্তু আজকে গোধূলি একাই এসেছে।আজই ওদের এক্সাম শেষ ।তুলি আর গোধূলির সীট অনেক দূরে দূরে পড়েছে।প্রত্যেক দিন ওদের দেখা হয় নি।আজকে তুলির এক্সাম আগেই শেষ হয়ে গেছে আর যেহেতু আজকেই এক্সাম শেষ তাই ও বেড়িয়ে এসে গোধূলির জন্য অপেক্ষা করছে।কিছুক্ষণ পরে গোধূলিও চলে আসে।গোধূলি তুলিকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।তুলিও গোধূলিকে জড়িয়ে ধরলো। দুই বান্ধবীর এ কয়কদিক খুব একটা বেশি দেখা সাক্ষাৎ হয় নি।ওই যা ভিডিও কলেই কথা সাক্ষাৎ হতো।গোধূলি তুলিকে ওর আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে বললো,
– তোর এক্সাম কেমন হয়েছে?
– ভালো।তোর?
– মোটামুটি!বেশি ভালো হয় নি রে।আমি তো পড়াশোনা করার তো সময়ই পাই নি।
– ব্যাপার না!সামনের সেমিস্টারে ভালো করবি তাহলেই হবে।
– রেজাল্ট খারাপ হলে ভালো লাগে বল?
– হুম তা তো ঠিকই।আচ্ছা গোধূলি ডায়েরিটা পড়েছিলি?
দুজনে হাটতে হাটতে কথা বলছে।তুলির কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায় গোধূলি।নানান ব্যস্ততায় তুলিকে ডায়েরিটার কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিল।কিন্তু তুলিকে ও কি বলবে?ও নিজেই তো এখনো ডায়েরিটা পড়ে নি!ইনফ্যাক্ট ডায়েরির কথাটা তো গোধূলি ভুলেই গিয়েছিল!এই কয়েকদিনে একবারও ডায়েরিটার কথা মনেও পড়ে নি ওর।এখন তুলি বললো বলে ওর মনে পড়লো!
– কি হলো দাঁড়িয়ে গেলি কেন?
– দোস্ত তোর সাথে পড়ে কথা বলবো কেমন।
গোধূলি ওর কথাটা শেষ করেই ছুট লাগায়।তুলি বোকার মতো দাঁড়িয়ে গোধূলির যাওয়াটা দেখলো।হঠাৎ করে গোধূলির কি হয়ে গেলো?ডায়েরির কথা জিজ্ঞাস করতেই ওর কি এমন হলো যে এইভাবে ছূটে চলে গেলো?তুলি কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে তারপর ঔ বাসায় চলে যায়।এইদিকে গোধূলি বাসায় এসে জামা কাপড় চেঞ্জ না করেই ডায়েরিটা নিয়ে সোজা ব্যালকনিতে গিয়ে বসে।ডায়েরির ভাঁজে রাখা ফিতেটা সড়িয়ে ওইদিনের সমাপ্ত করা জায়গা থেকে আবার পড়তে শুরু করে,
– চড়াইপাখি এইভাবে হাসিস না!তোর এই হাসির কারণে কেউ একজন যে বারবার ঘায়েল হয় সেই খবর কি তুই রাখিস?নিজেকে কন্ট্রোল করতে বড্ড কষ্ট হয় রে!বাড়ির সামনে থাকা কৃষ্ণচূড়া গুলোও হয়তো আজ তোকে দেখে হিংসে করছিল!কমলা রঙের চুড়িদারে আজ নিজেকে সাজিয়েছিলি না?তাঁদের কম কৃষ্ণচূড়া ফুল আজ তোকে মনে হচ্ছিলো!শহরের সবচেয়ে বড় কৃষ্ণচূড়াটা মনে হয় আজই ফুটেছিল!কানে গুজা ওই কৃষ্ণচূড়ার উপর আমার কিন্তু বড্ড রাগ হয়েছে বলে দিলাম!এর মাশুল কিন্তু চড়াইপাখিকে দিতে হবে।তা এত হাসির কারণ কি ছিল শুনি?
লেখাগুলো পড়তেই আঁতকে উঠলো গোধূলি।ডায়েরির পাতায় তারিখটা উল্লেখ করাই আছে।তারিখ দেখে গোধূলির চোখের সামনে সেদিনের সবটা যেন ভাসছিল।ডায়েরির পাতার দিকে কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে আবার পড়া শুরু করে,
– চড়াইপাখি,আজ আমার বার্থ ডে।তোর থেকে উপহার স্বরূপ আমি তোর ওই উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে চাই! চড়াইপাখি আর ইউ রেডি ফর ডু ইট?আসছি আমি!
লেখাটি পড়তে পড়তেই গোধূলির গলা শুকিয়ে আসছে।এখানে তারিখটাও উল্লেখ।তবে এই তারিখের কোনো ঘটনাটাই গোধূলির মনে পড়ছে না।তবে কি এই চড়াইপাখি অন্যকেউ?কথাটা ভাবতেই গোধূলির বুকের ভেতরটা কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠলো।মনে হচ্ছে কান দিয়ে গরম হাওয়া বের হচ্ছে।হঠাৎ করেই বেশ গরম লাগতে শুরু করে।হাতের পিটে মুখ মুছে গোধূলি।শুকনো একটা ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা হাতে পরের পৃষ্ঠাটা উল্টে ফের পড়া শুরু করে,
– কোনো এক বর্ষার দিনে একগুচ্ছ কদম হাতে ভিজতে চাই তোর সাথে!একটা বার ভাব তো কি রোমান্টিক একটা সিন হবে তখন।ইশশ!আমার তো ভাবতেই কেমন যেনো অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছে।আমি কিন্তু আজকেও কিন্তু গিয়েছিলাম!কিন্তু নানা শ্বশুরের দৌড়ানি খেয়ে কোনো রকমে প্রান নিয়ে বাড়ি ফিরেছি।বুইড়া এতো কদম দিয়ে কি করবে রে?বউকে কি কদম ফুল দিয়ে কদমরানী বানিয়ে কদম গাছে বসিয়ে রাখবে!
ডায়েরি উপর থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে ফিক করে হেসে দেয় গোধূলি।সেদিন দৌড়ানি খেয়ে দীপ্তের অবস্থা ঠিক কি হয়েছিল ভেবেই খুব হাসি পাচ্ছে গোধূলির।গোধূলির নানাভাই রাশভারী লোক!তবে সেদিন তিনি গোধূলিকে অনেক গুলো কদম ফুল এনে দিয়েছিলেন।গোধূলির স্পষ্ট মনে আছে।নিজের হাসি সংবরণ করে আবার পড়ায় মন দেয় গোধূলি।
– নানু বাড়ি এত দিন থাকতে হয়?এতটা রাস্তা যেতে আমার বুঝি কষ্ট হয় না!যদিও আমার চড়াইপাখির জন্য আমি সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিতেও প্রস্তুত!কালকে শ্বশুরমশাই যাবে ও বাসায়,চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে বাড়ি চলে আসবি ঠিক আছে!
চোখ বড়বড় করে দিয়ে তাকায় ডায়েরির পাতায়।কটাক্ষের সুরে মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,
– নানু বাড়িতে যে কত ভালো লাগে সেটা আপনার মতো এলিয়েন কোনোদিনও বুঝবে না হু!
গোধূলি ফের একটা ভেংচি দিয়ে পড়া শুরু করে,
– গার্লস কলেজে ভর্তি হয়েছিস বলে কি মাথা কিনে নিয়েছিস হুম?তাও ছেলেদের থেকে একশো হাত দূরে থাকবি!আর ওই মিহিদানাকে বলিস ওর ওই যে ফ্রেন্ড কি যেন নাম!ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, নীল।ওই নীল যেন চড়াইপাখির আশেপাশে সবসময় এমন ঘুরঘুর না করে।আমি যদি আরেকদিন দেখি তাহলে ওই নীল কিন্তু আর নীল থাকবে না!তখন নাম আর চেহারা দুটোই লাল হয়ে যাবে!
– মিহির সবকিছু জানতো?নীলকে তো একদিন কেউ প্রচুর মেরেছিল ঠিকই।কিন্তু ওকে জিজ্ঞাস করার পর বলেছিল ও নাকি বাইকে এক্সিডেন্ট করেছে।আর ওই ঘটনার পর থেকে নিজের ইচ্ছায় নীল কোনো দিন আমার সামনে আসে নি।বরং আমি যদি ওকে ডাকতাম বা কথা বলতে চাইতাম তখন নীল এড়িয়ে চলে যেতো।
গোধূলি হতভম্ব হয়ে ডায়েরির দিকে তাকিয়ে থেকে অস্ফুটস্বরে বললো।গোধূলি ডায়েরির পাতায় তারিখটা চেক করে তাড়াতাড়ি।সঠিক তারিখটা মনে করতে না পারলেও মাস আর সালটা ঠিকই আছে।
চলবে…….