#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_9
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অর্নীলের জেদের কাছে মিম আর কিছুই বলল না। অর্নীল যেহেতু বলেছে কালকে বাসায় ব্যাক করবে তো অর্নীল বাসায় কাল ই যাবে এইটা মিম খুব ভাল করেই জানে। রাত ৪ টা বেজে গেছে। অবশ্য তখন রাত না প্রায় ভোর হয়ে গিয়েছে। অর্নীল আনমনে হয়ে নিজের চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছিলো। মিম নীরবে শুধু চেয়ে দেখছে। সামনে যাওয়ার সাহস হচ্ছেনা মিমের। কিছুক্ষণ পর মিম অর্নীলের কোলে গিয়ে বসলো আর গলা জড়িয়ে ধরলো। অর্নীল ও মিমকে জড়িয়ে নিলো।
-কি হয়েছে আপনার?
-কি হবে? (মিমের দিকে তাঁকিয়ে অর্নীল)
-আম্মুকে নিয়ে চিন্তা করছেন?
-হুম।
-আম্মুর কিচ্ছু হবেনা। আপনি একটু ঘুমান। খাটে আসুন৷
-ভাল লাগছেনা। (মিমের বুকে মাথা রেখে অর্নীল)
-আপনি এইভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে? শান্ত হন প্লিজ। ঘুমাতে আসেন।
-আমি আম্মুকে যতই যাই বলিনা কেন বাট আম্মুর জন্য আমার ভালবাসার কোনো কমতি নেই সেইটা আম্মু খুব ভাল করেই জানে। তাও আম্মু এমন কেন করছে? আজকে উনি সিক তাই আগে আমায় ডেকেছে। একবার আমার কোনো কথা শোনার প্রয়োজন ও মনে করেনা উনি।
-আমার জন্যই তো হয়েছে সব। (দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিম)
-অন্তত তুমি এখন আমার রাগ উঠিয়ে দিওনা। (মিমের চোখের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে অর্নীল)
-আচ্ছা চলেন ঘুমাবেন। এক সেকেন্ড ও এখানে বসবেন না। (অর্নীলের হাত ধরে মিম খাটে নিয়ে এলো)
মিম অর্নীলকে বালিশ ঠিক করে দিল কিন্তু অর্নীল মিমের হাত ধরে মিমকে শোয়ালো এরপর নিজে মিমের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো। কিন্তু এত সহজে যে অর্নীলের ঘুম আসছেনা। খুব বিরক্ত লাগছে অর্নীলের। বিরক্ত নাকি অস্থিরতা সেইটা মিম ভালভাবেই বুঝে গেছে!! মিম চুপ করেই ছিল। অর্নীলের চুলগুলো নেড়ে দিচ্ছিলো মিম আর অর্নীল মিমের আরেকহাত নিজের বুকে জড়িয়ে আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে যায়। অর্নীল ঘুমিয়ে যাওয়ার পর মিম অর্নীলের হাতে একটা চুমু দেয়। নিজের গালে অর্নীলের হাত লাগিয়ে দিয়ে বলে
-ভাগ্যবান আপনার মা যে আপনাকে সন্তান হিসেবে পেয়েছে। আর ভাগ্যবতী আমি যে নাকি আপনাকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি। না জানি কত ভাগ্য করেই আপনাকে পেয়েছিলাম। (মিমের চোখ থেকে এক ফোটা পানি পরলো অর্নীলের টি শার্ট এ)
সেদিন খুব সকালেই মিম উঠে যায়। ঘুম থেকে উঠে মিম সোজা অর্নীলের আম্মুর ঘরে যায়।
-আম্মু আসব?
-হ্যা আসো। অর্নীল কোথায়?
-ঘুমাচ্ছেন। কালকে ঘুমাননি তো তাই আর ডাকিনি। সকালেই ঘুমিয়েছেন।
-ভাল করেছো।
-কেমন আছেন এখন?
-একটু ভাল। এখন ডক্টর রয় আসবেন।
-Indian cardiologist?
-হুম। অনু ওনাকেই আসতে বলল। মেয়ের উপর ভরসা করেই বেঁচে আছি। ছেলে তো মাসে একবার খোঁজ ও নেয়না। (মিমের দিকে কটু দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে)
-না আম্মু। উনি সবসময় আপনার খোঁজ নেন। আপনার আর দি এর খবর রাখেন৷ এইটা উনি কোনোদিন ভুলেন না।
-বউ নিয়ে অনেক সুখেই আছে আমার ছেলে। কি এমন পেয়েছে ও তোমার মধ্যে? যার কারণে ও আমাকে কষ্ট দিল? অরুনিমাকে কষ্ট দিল?
-আম্মু সেসব কথা এখন থাক। ওনাকে ভুল বুঝবেন না। সব দোষ আমারই।
-তাহলে ছেড়ে দিচ্ছো না কেন ওকে?
-আম্মু বিয়ের বাঁধন থেকে কোনোদিন কোনো মেয়ে মুক্ত হতে পারেনা।
-আম্মু কি শুরু করলা? (ঘরে চা নিয়ে প্রবেশ করলো অনু) ভাই তো সুখে আছে এর থেকে বড় আর কি হতে পারে? মিম ভাই কই? (মিমকে উদ্দেশ্য করে অনু)
-ঘুমাচ্ছে।
-এত সকালে উঠলে কেন তুমি?
-ঘুম আসছিলো না।
-নাও চা খাও।
-না দি। চা খাইনা আমি। আমি একটু কিচেন থেকে আসি।
-কেন?
-আম্মুর জন্য নাস্তা বানাবো।
-শেফরা করছে। সেসব তোমায় করতে হবেনা। তুমি এখানেই বসো।
-তাও আমি আসছি।
মিম কথা না শুনেই নিচে রান্নাঘরে চলে এলো। অর্নীলের আম্মু ভীষণ ক্ষ্যাপা কিন্তু ছেলের কানে যাবে বলে কিছুই বলল না। অনু কোনোদিন এই বিয়েতে আপত্তি করেনি বরং ভাইয়ের সুখ চেয়েছে। অর্নীলের প্রতি অনুর বিশ্বাস এতটা যে অনু নিজের আম্মুকে বলে ভাই যা করে ঠিকই করে। মিম ব্রেকফাস্ট রেডি করে আম্মুর ঘরে নিয়ে আসলো৷ রান্নাঘর থেকে এসে দেখে অর্নীল ওর আম্মুর পাশে বসে আছে৷ মিমের হাতে এসব দেখে অর্নীল কোনো রিয়েকশন দিলনা উলটো চেহারা দেখে মনে হলো খুশি হয়েছে। অনু মিমের হাত থেকে খাবার গুলো নিয়ে আম্মুকে খাইয়ে দিতে যাবে তখনি অর্নীল বলে
-আমাকে দে। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
-নে। (অনু খুশি হয়ে দিয়ে দিল সাথে অর্নীলের আম্মুও ভীষণ খুশি হলো)
অর্নীলের আম্মু ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও মিমের রান্না খেলো। কিন্তু খাবার খেয়ে উনি মিমের প্রশংসা করতে ভুললেন না। আম্মুর মুখে মিমের প্রশংসা শুনে অর্নীল হাল্কা হাসলো। মিম ও হেসে দিল।
-দি ব্রেকফাস্ট করবেন চলুন। আর আপনিও আসুন। (অর্নীলকে উদ্দেশ্য করে)
-হ্যা যা খেয়ে আয়। এক রাতেই চেহারা শুকনো হয়ে গেছে। (অর্নীলের আম্মু অর্নীলের গালে হাত দিয়ে)
অর্নীল ওর আম্মুর হাতটা ধরলো। এরপর আম্মুর হাতে চুমু দিল। অর্নীলের মা কেঁদে দিল। কতদিন পর অর্নীল ওনাকে স্পর্শ করলো!! কতদিন পর মা ছেলে আবার একসাথে!!! যতই যাই হোক না কেন মাতৃত্ববোধ কখনো ভুলা যায়না। অনু হাসছে আর চোখের পানি মুচছে। আর অর্নীল ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে আছে।
-কি হচ্ছে ভাই? আমি কোথায়? (চোখের পানি মুছে অনু ওর আম্মু আর অর্নীলকে জড়িয়ে ধরলো)
মিম মনে মনে বলছে এইটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত।
কিছুক্ষণ পর অর্নীল স্বাভাবিক হলে অনু অর্নীলকে বলে
-নিচে আয়। (অনু চলে যায়)
অর্নীল নিচে চলে আসে। মিম ব্রেকফাস্ট সার্ভ করছিলো। দুই ভাই বোন পাশাপাশি চেয়ারে বসে। মিম অর্নীলের বিপরীতে বসে। একজন শেফ বলছিলো
-এই বাড়িতে আজ অনেকদিন পর ব্ল্যাক কফি আর জুস বানানো হলো স্যার।(অর্নীলকে উদ্দেশ্য করে) আপনি চলে যাওয়ার পর এসব কেউ খায়নি। আজ ম্যাডাম ই করলেন এসব। অনেক না করেছি কিন্তু শোনেননি।
-অর্নীল কিছু বলল না।
ব্রেকফাস্ট শেষ করে অর্নীল আম্মুর ঘরে যায়। তখন ডক্টর চেকাপ করছিলেন। অর্নীল পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
-মিস্টার চৌধুরী how are you? (হ্যান্ডশেক করে ডক্টর)
-Well. আম্মুর কি অবস্থা ডক্টর?
-এমনিতে অলরাইট বাট অতিরিক্ত টেনশন থেকেই হার্টের প্রবলেম হয়েছে। কম্পলিট রেস্ট নিলে সেরে যাবে। খেয়াল রাখার কথা আপনাকে বলব না কারণ আমি জানি আপনি এর চেয়ে বেশিই করবেন। মেডিসিন গুলো আমি আমার ফার্মেসিস্ট দিয়ে 2 ঘন্টার মধ্যে পাঠিয়ে দিব। এখন আসছি।
-ওকে ডক্টর।
অর্নীল ডক্টরকে বাই বলার পর অর্নীলের ফোনে ফোন আসে। মিম ফোনটা নিয়ে অর্নীলের কাছে আসে।
-Good morning, Sir অফিসে আসবেন না? (শৈলি)
-না।
-ওকেহ স্যার। মিটিং কি ক্যান্সেল করব?
-obviously
-Ok sir.
অর্নীল ফোন কেটে দিয়ে মিমকে বলল ওর ঘরে যেতে। মিম বুঝতে পেরেছে অর্নীল চায়না ও এখানে থাকুক। মিম আম্মুর ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
-দি তোর আর আম্মুর সাথে আমার কথা আছে।
-হ্যা ভাই বল।
-আম্মুর এত টেনশন কিসের?(অনুকে জিজ্ঞেস করলো অর্নীল)
-তুই চলে যাওয়ার পর থেকেই আম্মু এমন হয়ে গিয়েছে। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া ও করেনা।
-তুই কি করিস তাহলে? আম্মুর দায়িত্ব তোর নেওয়া উচিৎ ছিল না?
-ওর কোনো দোষ নেই আব্বু। তুই আবার বাড়িতে ফিরে আয় দেখবি আমি আবার সুস্থ হয়ে গেছি। (অর্নীলের আম্মু)
-আমি কেন বাসায় আসিনা সেইটা তোমার থেকে ভাল আর কেউ কিন্তু জানেনা আম্মু।
-আমি জানি। কিন্তু তুই তোর আম্মুকে কষ্টে রাখবি ওই মেয়েটার জন্য? (অর্নীলের আম্মু)
-তুমি তো কষ্টে নেই আম্মু। যদি তোমার এতটাই কষ্ট হত তাহলে আমার কথা একবার হলেও তুমি শুনতে। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার কষ্ট হয় এইটা যেমন ট্রু তেমনি মিমকে ছাড়াও আমি নিশ্চল আম্মু। কিন্তু তুমি আমার সেই প্রাণটাকেই কেড়ে নিতে চাইছো। এরপরেও কি বলবে তুমি কষ্ট পাচ্ছো?
অর্নীলের কথা শুনে আম্মু চুপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর অর্নীল বলল
-বাসায় চলে যাব। নিজের খেয়াল রেখো। দি, আম্মুকে দেখিস।
অর্নীল এ কথা বলেই মিমকে নিয়ে নিজের বাসায় চলে এলো। সারারাস্তা মন খারাপ ছিল অর্নীলের। একদম চুপচাপ ড্রাইভ করছিলো শুধু। মিম আর অর্নীলকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না। অনু আর আম্মু মিলে অর্নীলকে আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলো অবশ্য। বাসায় এসে অর্নীল অফিসের পেপারস নিয়ে বসলো। মিম অর্নীলের পাশেই বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেছে। মিমের চুল এসে পরছে অর্নীলের পেপারস গুলোর উপর। অর্নীল মিমকে কোলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দেয় আর চুলগুলো ঠিক করে দেয়। কিছুক্ষণ পর সার্ভেন্টস এসে জিজ্ঞেস করে
-স্যার দুপুরে কি রান্না করব? ম্যাম তো ঘুমাচ্ছে আজ।
-কেন? প্রতিদিন কি ও রান্না করে নাকি? (পেপারস রেখে অর্নীল দাঁড়িয়ে গেলো)
-হ্যা। আপনার পছন্দের খাবার ম্যাম আমাদের বানাতে দেয়না। আপনাকে লুকিয়েই কিচেনে যায়।
-ওহ আই সি!!! এই কারনেই তো…..! তুমি মাটান আর ফিশ বল কর আজকে।
-ওকে স্যার।
অর্নীল মিমের দিকে তাঁকিয়ে আছে। রেগে যাবে নাকি শান্তি পাবে সেইটাই অর্নীল বুঝতেছেনা। যথেষ্ট সময় অর্নীল মিমকে দিতে পারেনা বিজনেস এর জন্য। তবে যতটুকু সময় পায় তা পুরোটাই মিমের জন্য। অর্নীল ভাবছে আজকে বিকেলে কোথাও বের হবে যেহেতু বাসায় আছে। কিছুক্ষণ পর মিমের ফোনে কল আসে। কাজ করতে করতেই অর্নীল রিসিভ করে।
-Who is speaking?
-মিম নেই?
-কেন? আর আপনি কে? (কোনো ছেলের গলা শুনে অর্নীল অনেকটাই অবাক হলো)
-ওর বন্ধু আকাশ।
-বাট আপনি কেন মিমকে ফোন করেছেন ?
-অসম্পুর্ন কথা সম্পুর্ণ করতে। আপনি নিশ্চই আরাফাত ভাইয়া? আপনি তো সবটাই জানেন। তাহলে আজ এত প্রশ্ন করছেন যে!!!
-অসম্পুর্ন কথা মানে? (অর্নীল মিমের দিকে তাঁকালো)
-আরাফাত ভাইয়া প্লিজ মজা করবেন না। আজ আমি প্রতিষ্ঠিত। আর দেরি না করেই আমি মিমকে আমার করে পেতে চাই!
-Whattttttttt? (অর্নীল খুব জোরে চেঁচিয়ে উঠলো) I just kill you. কাকে কি বলছিস তুই তোর কোনো ধারণা আছে? (অর্নীল সম্পুর্ণ রেগে গেছে) আর আমি অর্নীল চৌধুরী কোনো আরাফাত না Damn it.
অর্নীল এইটা বলে ফোন আঁছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলল। ফোনের শব্দে মিম চোখ খুলে দেখলো অর্নীল রক্তবর্ণ হয়ে আছে রাগে। মিম দ্রুত উঠে বসলো। ভয়ে ভয়ে অর্নীলকে জিজ্ঞেস করলো
-কি হয়েছে আপনার?
অর্নীল লাল চোখ নিয়ে মিমের দিকে তাঁকালো। মিম ভয় পেয়ে গেলো। অর্নীল মিমের হাতের উপরের অংশে খুব শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করলো
-Who is আকাশ?
-কোন আকাশ? (মিম কাঁপছে)
-কোন আকাশ মানে? তোমার ফ্রেন্ড আকাশ। ও তোমায় ওর করে পেতে চায়। আজ এসব আমায় শুনতে হলো মিম? (রাগে অর্নীল টি টেবিলে থাকা গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেছে)
মিম বুঝতে পেরেছে ওই সাইকোটা আবার ফোন করেছিলো। মিম এখন সত্যটা কিভাবে বলবে আর অর্নীলের এই রাগই বা কিভাবে কমাবে??
-আপনি মাথা ঠান্ডা করুন। আমি আপনাকে সব বলছি।
-কবে থেকে এসব? আজ ৩ বছর ২ মাস হয়ে গেলো আমাদের রিলেশনসহ বিয়ের। কোনোদিন তো এই নাম শুনিনি। মিম সত্যি করে বলো কি আছে এর পেছনে? নয়ত তুমি কিন্তু আমাকে চিনো!! ওকে ডিরেক্ট খুন করে ফেলবো আমি। (অর্নীল কিছুতেই শান্ত হতে পারছেনা)
চলবে#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#part_10
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অর্নীল মিমকে খুব শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করলো
-এসবের মানে কি? সত্যিটা বল আমায়😡😡 (অর্নীল এতটাই রেগে গেছে যে কান দিয়ে গরম হাওয়া বইছে)
-মিম খুব কাঁপাকাপি শুরু করলো। তবে সত্যিটা বলার ভয়ে নয়। অর্নীলের এত রাগ দেখে৷ যে কোনো মুহূর্তে অর্নীল কিছু একটা করে ফেলতে পারে। তাই মিম কাঁপতে কাঁপতেই বলতে শুরু করলো
-আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট এ পড়ি। ইয়ার চেঞ্জ এক্সামে আমাদের ব্রাঞ্চ কলেজ এসেছিল আমাদের সাথে এক্সাম দিতে। আকাশের সাথে আমার সিট পড়েছিলো। প্রথম দেখাতেই আকাশ আমায় ভালবাসে ফেলে। কিন্তু আমি জানতাম না। জানত আমার চাচাত ভাই আরাফাত। আরাফাতের সাথে আকাশ ক্লোজ হয়ে যায় আর আরাফাত আকাশকে শর্ত দিয়েছিল যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে যেন আমায় কিছু না জানায়। গত ৩ বছর ধরে আকাশ এভাবে কল করে আমায় ভালবাসি বলত আর বিয়ে করতে চাইতো কারণ আজ ও প্রতিষ্ঠিত। (মিম খাটে বসে কান্না করে দিল)
-3 years right?? 3 years?? (দাঁত কটমট করতে করতে অর্নীল) আচ্ছা এই ৩ বছরে আমি কেন একবার এই কথা জানলাম না? (মিমের থুতুনি ধরে অর্নীলের দিকে চোখ মিলিয়ে)
-কারণ এর প্রয়োজন পরেনি। আমিই তো চাইতাম না আকাশকে।
-এক্সিলেন্ট। (সোফায় বসে পরলো অর্নীল) আচ্ছা আর কি কি জানিনা আমি? Can you give me a list??
-এতটুকুই।
-এইটা এতটুকু?? তোমায় চেয়েছে ও তোমায়?? Have you any idea ও আমার কোথায় আঘাত করেছে??(অর্নীল আরো একটা গ্লাস ভাংলো)
অর্নীল নিজেকে কোনো ভাবেই শান্ত করতে পারছেনা। টি শার্ট আর ট্রাউজার পরেই অর্নীল বেরিয়ে যায়। মিম পিছু ডাকে কিন্তু অর্নীল শোনেনি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল আর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায় কিন্তু অর্নীল এখনো বাসায় ফেরেনি। বাড়ির ল্যান্ডলাইন থেকে মিম হাজারবার অর্নীলকে কল দিল কিন্তু ফোন সুইচড অফ। বাসার সার্ভেন্টগুলো মিমকে খাওয়ানোর জন্য অনেক জোর করলো কিন্তু মিম সারাদিনে কিছুই খেলো না। উলটো ঘরে কাঁচের টুকরো তে নিজের পা অনেকখানি কেটে ফেলেছে মিম। এতে মিমের কোনো কষ্ট হচ্ছেনা। কষ্ট এতটুকুই যে অর্নীল ভুল বুঝলো মিমকে!!! সার্ভেন্টরা বারবার খাবার সাধছিল বলে মিম দরজা লক করে কান্না করতে থাকে। সন্ধ্যার পর প্রচুর বৃষ্টি নামে। মিম বেডরুমের জানালা বন্ধ করার শক্তি পাচ্ছেনা। সারাদিনে না খাওয়ায় আর কান্নাকাটি করায় শরীর পুরো ভেঙ্গে গেছে। পায়ের কাটা জায়গা থেকে রক্ত বেরিয়ে টাইলস লাল হয়ে গেছে আর মিম টাইলসের উপর শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানি এসে মিমকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ বাইরে প্রচন্ড বজ্রপাত শুরু হয়। মিমের কলিজা কেঁপে উঠে। মিম নিজের শাড়ি মুঠোবন্দি করে ধরে জোরে চিৎকার করে। বাইরে এত বৃষ্টি যে সার্ভেন্টরা মিমের চিৎকার শুনতে পায়নি। শুনতে পেলেও হয়ত ভেতরে ঢুকতে পারতো না কারণ দরজা লাগানো।
ওইদিকে অর্নীল পুরো পাগল হয়ে গেছে। বাইরে এত ঝড় আর বজ্রপাত না জানি আমার মিম কেমন আছে? ও তো এসব অনেক ভয় পায়! কেন আমি বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম? (গাড়ির স্টেয়ারিং এ খুব জোরে আঘাত করলো অর্নীল) প্রচুর বৃষ্টির কারনে রাস্তায় জ্যাম লেগে গেছে যে কারণে অর্নীল বাসায় যেতে পারছেনা। ফোন অন করে অর্নীল দেখে ৮৯৫ টা মিসড কল!!! সব বাড়ির ল্যান্ডলাইন থেকে! অর্নীল সাথে সাথে বাসায় কল করলো। একটা সার্ভেন্ট ফোন রিসিভ করে বলল
-ম্যাম দুপুর থেকে ঘরে দরজা বন্ধ করে আছে। কোনো আওয়াজ পাচ্ছিনা ম্যামের। সারাদিন একগ্লাস পানিও খায়নি ম্যাম।
অর্নীল ফোন কেটে দিয়ে গাড়ি ঘুরালো। এইবার অর্নীল সম্পূর্ন বেহুশ হয়ে গেছে। এখন ও কি করবে ও নিজেও জানেনা!! বাইরোড দিয়ে অর্নীল গাড়ি ড্রাইভ করে বাসায় আসলো। এসে দেখে ওদের বেডরুম ভেতর থেকে লক করা!! অর্নীল মিম মিম বলে চিৎকার করে ডাকে কিন্তু মিম কোনো সাড়া দেয়নি। অর্নীল সম্পুর্ন হেল্পলেস হয়ে গেলো। ফোঁটায় ফোঁটায় চোখ দিয়ে পানি পরছিলো অর্নীলের। এরপর অর্নীল দৌঁড়ে তিনতলায় নিজের অফিস রুমে যায়। সেখানে গিয়ে ঘরের ডুপ্লিকেট চাবি খোঁজে। খুঁজতে খুঁজতে অর্নীল সেইটা পায়। দৌঁড়ে গিয়ে ঘরের দরজা খুলে অর্নীল। দরজা খুলে অর্নীল যেন নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা!! অর্নীল দৌড়ে মিমের কাছে যায়। সার্ভেন্টরা ঘরের সব জানালা আর করিডোর বন্ধ করে দেয়। মিম অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পরেছিলো আর ফ্লোরে রক্ত ছড়ানো। মিম বৃষ্টির পানিতে পুরোপুরি ভিজে গেছে৷ শরীর ও প্রচন্ড ঠান্ডা মিমের। অর্নীল তারাতারি মিমকে কোলে নিয়ে খাটে শোয়ালো। মিমের গাল ধরে মিমকে বারবার ডাকছিলো কিন্তু মিম কোনো রেসপন্স করছেনা। সার্ভেন্টরা তখন ঘর থেকে বেরিয়ে যায় দরজা টান দিয়ে৷ অর্নীল আলমারি থেকে একটা নাইট ড্রেস বের করে মিমের জন্য। খুব তারাতারি অর্নীল মিমের ড্রেস চেঞ্জ করে দেয় আর চোখ থেকে অর্নীলের ননস্টপ পানি পরছে। মিমের তখন জ্ঞান ফেরে। মিম তাঁকিয়ে অর্নীলের হাত ধরে। অর্নীল তখন মিমের পায়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিচ্ছিলো। রীতিমতো জ্বরে কাঁপছিলো মিম। অর্নীল মিমকে জড়িয়ে ধরলো শোয়া অবস্থাতেই। তখন একজন সার্ভেন্ট এসে অর্নীলকে বলল
-স্যরি স্যার আপনাকে কিছু বলার জন্য কিন্তু আজকে তো এইঘরে আপনারা ঘুমাতে পারবেন না। পাশের ঘর সুন্দর করে রেডি করে দিয়েছি। আজ রাতে ওইঘরে থাকলেই স্যার ভালো হত অন্তত ম্যামের জন্য। আর এই যে স্যুপ ম্যামের জন্য।
-পাশের ঘরে দিয়ে এসো। আমি আসছি। (ভাংগা গলায় অর্নীল)
ওকে স্যার। আমি তাহলে এই ঘরটা পরিস্কার করে দিচ্ছি।
অর্নীল মিমকে কোলে নিয়ে পাশের ঘরে গেলো। মিমকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মিমকে অর্নীল খাইয়ে দিচ্ছে আর বারবার শরীরের টেম্পারেচার দেখছে। কোনো কথা বলতে দিচ্ছেনা অর্নীল মিমকে আর নিজেও কিছু বলছেনা শুধুই চোখ দিয়ে পানি পরছে । মিম মুগ্ধ দৃষ্টিতে অর্নীলকে দেখছিলো আর খাচ্ছিলো। খাবার অর্ধেকটা শেষ করে মিম অর্নীলকে বলল
-আপনিও কিছুই খাননি। আমাকে একা কেন খাওয়াচ্ছেন? (ছলছল দৃষ্টিতে মিম)
-পায়ে কি অনেক ব্যাথা করছে? (মিমের পায়ে হাত দিয়ে অর্নীল)
-হ্যা।
অর্নীল ব্যর্থ মানুষের মত তাঁকিয়ে রইলো মিমের দিকে। সার্ভেন্টকে দিয়ে পাশের ঘর থেকে নিজের ফোন আনালো অর্নীল। এরপর ডক্টরকে কল করলো।
-যেভাবেই হোক এক্ষুনি আপনাকে আমার বাসায় আসতে হবে। হ্যা বাইরের ওয়েদার ভালনা তবুও আপনাকে আসতেই হবে। ২০ মিনিটে চলে আসুন।
ডক্টরকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অর্নীল ফোন কেটে দিয়ে বিছানার উপর ফোন ছুঁড়ে মারে। মিমের পাশে বসে মিমের জ্বর মেপে দেখলো ১০৩ জ্বর। মিমের গায়ে কম্বল ভালভাবে জড়িয়ে দিল অর্নীল। মিমের হাত ধরে ফ্লোরে বসে অর্নীল বলল
-I am sorry!! আমার তোমাকে এইভাবে কষ্ট দেওয়া একদম উচিৎ হয়নি। অনেক কস্ট হয়েছে তোমার? (এখনো অর্নীল কাঁদছেই)
-আপনি আমায় স্যরি বললেন??
-প্লিজ আমায় মাফ করে দাও। আর কোনোদিন আমি এমন কিছু করব না। (মিমের হাত জড়িয়ে ধরে অর্নীল)
-জ্বর তো আমার এসেছে। তাহলে আপনি কেন উলটা পালটা কথা বলছেন? (মিম পুরোপুরি অবাক) শায়লাকে(কাজের মেয়ে) ডাকুন একটু।
-কি দরকার আমাকে বলো। আমি করে দিচ্ছি।
-ওকেই ডাকুন।
অর্নীল শায়লাকে আসতে বলল ঘরে। শায়লা আসার পর মিম বলল
-ব্ল্যাক কফি করে নিয়ে আসো এক কাপ আর চিনি দিওনা একটুও সাথে ডিনার নিয়ে এসো। আমার ঘরে টি টেবিলের উপরে গ্রিন কালার ওষুধ আছে। একটা নিয়ে এসো। (অর্নীলের শ্যুগারের ওষুধ)
-ওকে ম্যাম। এক্ষুনি আনছি। (শায়লা চলে গেলো)
-এসব কেন আনতে বললে? (অর্নীল) আমি খাব না। ভাল লাগছেনা খেতে।
-আপনি খাবেন।
অর্নীল একটু ভাত আর কফি খেলো মিমের জোরাজুরিতে। সাথে ওষুধটাও খেলো। ডাক্তার কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসে। মিমকে দেখে ডাক্তার ওষুধ দিয়ে যায় সাথে পেইন কিলার। ডাক্তার থাকা অবস্থাতেই অর্নীল মিমকে ওষুধগুলো খাইয়ে দেয়। ডাক্তার চলে যাওয়ার পর অর্নীল চেঞ্জ করে দরজা লক করে দিয়ে মিমের কাছে গিয়ে শুয়ে পরে। মিমকে উঠিয়ে বুকের বাম পাশে মিমকে শোয়ায় অর্নীল। মিমের শরীর ভীষণ গরম। মিম অর্নীলকে জড়িয়ে ধরে। অর্নীল এসি অফ করে দেয় আর মিমকে কম্বল দিয়ে সম্পুর্ন ঢেকে দেয়। মিমের কপালে আর মাথায় চুমু দেয় অর্নীল এরপর মিমকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
মাঝরাতে……
চলবে#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_11
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অর্নীল মিমকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে চুপ করে রইলো। কেন চুপ করে রইলো সেইটা অর্নীল ই ভাল জানে। মাঝরাতে হঠাৎ অর্নীল শিউরে উঠে যদিও সে ঘুমায়নি। মিম গোঙাচ্ছে আর অর্নীলের বুক দিয়ে আগুনের মত তাপ বইছে যা সহ্য করা যাচ্ছেনা। অর্নীল সাথে সাথে মিমের কপালে ও বুকে হাত দেয়। এত বেশি গরম মিমের শরীর!!!! অর্নীল তারাতারি উঠে মিমকে বালিশে শোয়ায়৷ অর্নীল কি করবে বুঝতে পারছেনা। মাথা পুরো অসার হয়ে গেছে অর্নীলের। অর্নীল টি টেবিলে পানি দেখলো। অর্নীল নিচে নেমে পানি একটা বাটিতে ঢাললো আর নিজের রুমাল দিয়ে মিমের মাথায় জলপট্টি দিতে লাগলো। মিম অনেক বেশি গোঙাচ্ছে। অর্নীল মিমের হাত পা মাসাজ করে দিচ্ছে আর কান্না করছে। অর্নীলের চোখের পানি সব মিমের হাতে গিয়ে পরছে। কিছুক্ষণ পর অর্নীল ডক্টরকে কল করে।
-মিস্টার চ্যাটার্জি মিমের অবস্থা তো ভাল না৷ লিমিটের বাইরে চলে গেছে ওর বডি টেম্পারেচার। (কাঁদছে)
-ও মাই গড!! মিস্টার চৌধুরী জ্বর মেপেছেন?
-না আমি ভয়ে মাপিনি।
-এক্ষুণি ম্যাডামের মাথায় পানি দিন। আর আমি একটা ইঞ্জেকশন দিয়েছি দেখুন। ওইটা ম্যামের হাতে পুশ করে দিন। অতিরিক্ত জ্বর হলে ওইটা নেওয়া যায়।
অর্নীল সাথে সাথে ফোন কেটে দিল। শায়লাকে ডাকলো খুব জোরে। ঘুম থেকে উঠে এক দৌড়ে শায়লা উপরে চলে এলো।
-স্যার ম্যামের কি হয়েছে? জ্বর কি অনেক বেশি?
-এক্ষুণি পানি নিয়ে আসো৷ হারি আপ!!
-জ্বি স্যার।
অর্নীল ইঞ্জেকশন বের করে ওষুধটা ঢুকালো। মিমের হাত ধরে আস্তে করে ইঞ্জেকশনটা পুশ করে দিল নিজের চোখ বন্ধ করে। শায়লা বালতি দিয়ে পানি এনে মিমের মাথায় ঢালছিলো। আর অর্নীল মিমের হাত মাসাজ করছিলো।
আধা ঘন্টা পর মিমের শরীরের তাপমাত্রা একদম কমে যায়। অর্নীল শুধু মিমের শরীরের টেম্পারেচার চেক করছিলো৷ শায়লা মিমের কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর অনেকটাই কমে গেছে। এরপর পানি দেওয়া অফ করে দিলো। শায়লা মিমের চুল মুছতে যাবে তখন অর্নীল বলে
-তুমি এগুলো নিয়ে যাও। টাওয়েলটা আমার হাতে দাও।
-জ্বি স্যার। (টাওয়েলটা অর্নীলের হাতে দিয়ে)
অর্নীল মিমকে পায়ের উপর শুইয়ে চুল মুছে দিচ্ছিলো। তখন মিম বেহুশের মত ঘুমাচ্ছিলো। মিমের চুল মুছে দিয়ে খাটে হেলান দিয়ে আধ শোয়া অবস্থায় বসলো অর্নীল। মিমকে একদম নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বসেছিলো অর্নীল। বারবার মিমের মাথায় কিস করছিলো।
সকাল ৮ টায় মিমের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর মিম অনেক অবাক হলো অর্নীলকে এমন অবস্থায় দেখে আর নিজেকে এইভাবে অর্নীলের উপরে দেখে। রাতে কি হয়েছে এসব কিছুই জানেনা মিম। অর্নীলের হাত সরিয়ে মিম উঠতে যাবে তখন অর্নীলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। খুব দ্রুত উঠে বসে অর্নীল। সাথে সাথে মিমের কপালে হাত দেয়।
-কি হয়েছে? এভাবে ঘুমাচ্ছিলেন কেন? (মিম)
-তুমি জানো কালকে তুমি আমায় মেরে ফেলছিলে? (রেগে গিয়ে অর্নীল)
-আমি আপনাকে কেন মারবো? আর কালকে না নীল নাইটি পরে ছিলাম। এখন ব্ল্যাক কেন? (নিজের ড্রেসের দিকে তাঁকিয়ে মিম)
-খুশিতে (চিল্লিয়ে অর্নীল)
-কি হয়েছে আমায় বলেন? আর আপনি এত টেনসড কেন?
-চলো ফ্রেশ হবে। এরপর ব্রেকফাস্ট করবে। (খাট থেকে নেমে অর্নীল মিমকে কোলে নিল)
-কোলে নিলেন যে!!
-পা তো আমার কাটা তাই! (নরমালি বলল কথাটা অর্নীল)
-ব্রাশ নাও। (ওয়াশরুমে গিয়ে অর্নীল)
-নিয়েছি।
-ব্রাশ ইউর টিথ।
-এভাবে কোলে উঠে কেউ কিভাবে ব্রাশ করে? (বাচ্চার মত কথা বলল মিম)
-আমাকে তুমি কোলে উঠাও এরপর আমি দেখিয়ে দিচ্ছি😡😡😡😡
-এভাবে তাঁকাবেন না মরে যাব। (ঢোক গিলে মিম)
-তারাতারি ব্রাশ কর।
-হু
এরপর মিম ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে অর্নীলকে বলল
-আমার না হিসু পেয়েছে। আপনার কোলেই করব?😜
-অর্নীল এখন জবাব দিবে নাকি মিমকে আছাড় মারবে সেইটাই ভাবছে।
-একদম আপনাকে রাগাতে বলিনি। আজকে শরীরটা অনেক ভাল তো তাই আর কি😁😁😁
-হ্যা ভালো তো হবেই। সারারাত স্বামীর সেবা পেয়েছো যে😡😡😡(দাঁত কটমট করে অর্নীল)
-কেন সারারাত আপনাকে জ্বালিয়েছি নাকি আমি?
-মিম আমি কিন্তু এইবার সত্যি সত্যি রেগে যাচ্ছি👿👿
-আচ্ছা। এখন আপনি ওয়াশরুম থেকে বের হোন। আমার কাজ আছে।
-যা কাজ আমার সামনেই করবে আর তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে বের হতে বলার??? (চোখ রাঙিয়ে অর্নীল)
-আমি তো মজা করছিলাম। আমার তো সাহসই নেই ভুলে গেছিলাম😁😁😁😁😁
এরপর অর্নীল আর মিম দুজনেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। শায়লা এসে ওদের ব্রেকফাস্ট ঘরে দিয়ে যায়। মিমের চুল ছাড়া। শ্যাম্পুর ঘ্রাণ টা পর্যন্ত অর্নীল পাচ্ছে। হাল্কা ব্রাউন করা চুলগুলো তে অনন্য লাগে মিমকে। নাকফুলটায় আরো বেশি অনিন্দ লাগে। প্রতিদিন সকালেই অর্নীল মিমের সাথে প্রেম করে অফিসে যায়। কিন্তু আজকের সকালটা কেন জানি আরো রোমান্টিক মনে হচ্ছে অর্নীলের কাছে। হঠাৎ মিম বলল
-আপনার চোখ সেই সকাল থেকে দেখছি লাল৷ কিন্তু কেন?
-লাল কেন হবে?
-এমনিতে তো আপনার চোখ লাল হয়না। কি হয়েছে? সকাল থেকেই লুকিয়ে লুকিয়ে আসছেন আমার কাছে।
-কালকে রাতে তোমার জ্বর বেড়ে গিয়েছিলো। অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
-এই কারণে চোখ লাল? কেঁদেছেন কেন? মরে গেলেই ভাল হত। আপনাকে জ্বালানোর কেউ থাকতো না আর ওই শাকচুন্নিটাকে (অরুনিমাকে) বিয়ে করে নিতেন।
-Just keep your mouth shut (মিমকে ধমক দিয়ে অর্নীল) একদিন না বলেছি ওর কথা বলবেনা। আর মরার কথা কিভাবে আসলো তোমার মুখ দিয়ে? (মিমের মুখের সামনে মুখ রেখে অর্নীল)
মিমের জবাবের আগেই অর্নীলের ফোন বাজলো। অর্নীল মিমকে ছেড়ে দিয়ে ফোন রিসিভ করলো।
-অরুনিমা বলছি।
-হুম।
-আজকে অফিসে আসবিনা? আর কত ওয়েট করব? (রেগে গেছে অরুনিমা)
-আসবিনা মানে? মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ! আর আমি কি আপনাকে বলেছিলাম ওয়েট করতে মিস খান?
-ও আপনার অরুনিমা ফোন দিয়েছে😑😑😑😑(মাঝখানে মিম কথা বলে উঠলো)
-অর্নীল মিমকে চোখ রাঙালো। আর অরুনিমা বলল
-তা আপনি কি আজ আসবেন না?
-না। নেক্সট তিনদিন অফিসে আসব না।
-কেন?
-সেই জবাব কি আপনাকে দিতে হবে?
-ওয়েল। রাখছি। আপনার ইগোর সাথে কেউ কোনোদিন পারেনি আর ভবিষ্যতে ও পারবেনা।
অর্নীল আর কোনো কথা না শুনে ফোন কেটে দিল।
-এই মেয়ে আমার অরুনিমা মানে? 😡😡😡😡
-একটা কথা বলি?
-বল
-আমায় ৩০০/৪০০ টাকার একটা ড্রেস কিনে দিবেন? (অসহায়ের মত অর্নীলের দিকে তাঁকিয়ে মিম)
-Whatt the ………. !!! কি বললে তুমি?😡😡😡
-জানি রাগ করবেন তবুও চাইছি আর সেইটা আপনাকে দিতেই হবে।
-বাট হোয়াই? অর্নীল চৌধুরীর বউ ৩০০/৪০০ টাকার ড্রেস কেন পরবে? তোমার সবচেয়ে কমদামী ড্রেসটার দাম ও ২০ হাজার টাকা।
-সেইটা আমি জানি। কিন্তু প্লিজ কিনে দেন না প্লিজ।
-এইটা আমি কখনোই পারব না। ফালতু রিকুয়েষ্ট আমায় কোনোদিন ও করবেনা তুমি।
-হুররেএএএএএ!! আমি জিতে গেছি। (মিম খুশিতে লাফাতে শুরু করলো)
-জিতে গেছি মানে? (মিমকে থামিয়ে অর্নীল)
-আপনি আমায় বলেছিলেন আমার কোনো চাওয়া অপূর্ন রাখবেন না। এই প্রথম কিছু চাইলাম আর সেইটাই না করলেন।
-তুমি এত প্যাম্পার্ড কেন মিম? এত ছেলে মানুষি কোথায় পাও? (অর্নীল সোফায় বসে পরলো)
-রাগী সাহেব আজকে বাইরে লাঞ্চ করবো। যাবেন তো?
-না।
-কিন্তু কেন?
-তোমার পা ঠিক নেই।
-সমস্যা কি কোলে নিবেন।
-বাইরে গিয়ে? 🙄
-হ্যা।
-এই প্রথম তোমার মাথা থেকে কোনো ভাল বুদ্ধি আসলো।
-এখন লাভ ইউ বলেন😁😁
-তুমি ওইখানেই বসে থাকো আসছি লাভ ইউ বলতে😉
-এই না আমার কোনো লাভ ইউ লাগবেনা। আপনি ওইখানেই বসে থাকেন। 😧😧
-I love you more than my life. (মিমের গালে চুমু দিয়ে অর্নীল)
-I love you too more than your life😛😛😛
-তুমি ফাইজলামি ছাড়বানা?
-ধরিই তো নি। ছাড়ব কিভাবে? (হাত দেখিয়ে মিম)
এরপর অর্নীল কি করলো তা আর বলা যাবেনা🙈🙈🙊🙊
এরপর ওরা লাঞ্চ বাইরে করলো। মিমকে কোলে নিয়েই অনেক জায়গায় ঘুরলো অর্নীল। এইটা অরুনিমা কোনোভাবে জেনে গেছে।
কয়েকমাস পর……..
-স্যার আপনি বাসায় আসেন। ম্যামের অবস্থা ভাল না। (শায়লা)
-কেন? কি হয়েছে ওর? (হাইপার হয়ে অর্নীল)
-দুপুর থেকে বমি করছে আর বারবার পরে যাচ্ছে।
-What? আমি আসছি।
অর্নীল তারাহুরো করে বেরিয়ে আসে আর নিজের সেল ফোনটাও ফেলে আসে ভুলে।
চলবে….#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_12
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অর্নীল দৌঁড়ে অফিস থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলো। তাড়াহুড়ায় অর্নীল নিজের ফোনটা অফিসে ফেলে আসে। আধা ঘন্টায় অর্নীল বাসায় এলো। এসে দেখে মিম খাটে শুয়ে আছে আর সার্ভেন্টরা মিমের সেবা করছে৷ অর্নীল দ্রুত খাটে বসে মিমের হাত ধরলো। মিমের মাথায় চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-এখন কেমন লাগছে?
-ভাল না। (গোঙাতে গোঙাতে মিম)
-ডক্টরকে কল করেছো? (শায়লাকে জিজ্ঞেস করলো অর্নীল)
-হ্যা স্যার আসছেন৷
-কি হয়েছিলো ওর? (অর্নীল)
-স্যার ম্যাম ব্রেকফাস্ট করে উপরে উঠছিলেন আর আমি ম্যামের সাথে কথা বলছিলাম হঠাৎ তিনি দৌড়ে ওয়াশরুমে গেলেন আর গিয়ে দেখি বমি করছেন। এরপরেই আমি আপনাকে কল দিলাম।
-বাইরে যাও তো তুমি। (শায়লাকে বলল অর্নীল)
-জ্বি স্যার।
শায়লা চলে যাওয়ার পর অর্নীল মিমের হাত ধরলো শক্ত করে। অর্নীল মিমকে বলল
-May be আমি কিছু গেস করতে পারছি। তুমি কয়েকদিন আগে বলছিলেনা তোমার পিরিয়ড অফ?
-হ্যা বলেছিলাম তো!!
-ওকে ডক্টর চ্যাটার্জি আসুক তারপর পুরো শিউর হয়ে যাব৷ (মিমের হাতে চুমু দিয়ে অর্নীল)
-মানে কি? কি ভেবেছেন আপনি?
-কিছুইনা। Let’s check. (অর্নীলের ঠোঁটের কোনে একটু হাসি)
মিম বারবার অর্নীলকে জিজ্ঞেস করছে ব্যাপার কি? কিন্তু অর্নীল বলছেনা। কিছুক্ষণ পর ডক্টর চ্যাটার্জি আসলেন আর মিমকে চেকাপ করছিলেন আর অর্নীলের দিকে তাঁকাচ্ছিলেন। প্রায় কিছু সময় পর ডক্টর চ্যাটার্জি হেসে দিলেন আর অর্নীলকে বললেন
-মিস্টার চৌধুরী কিভাবে বললে খুশি হবেন বলেন? (হাসছে ডক্টর চ্যাটার্জি)
-I know আপনি কি বলবেন! I am gonna be a father 😍😍😍😍 এইটাই তো?
-ইয়েস মিস্টার চৌধুরী! কংগ্রেটস! আসলেই আপনি ইউনিক৷ ম্যাডামের টেক কেয়ারের ব্যাপারে আমি আপনাকে কিছু বলব না কারণ আমি জানি আপনাকে বলা যা আর না বলা তাই ই।
-থ্যাংকইউ মিস্টার চ্যাটার্জি ! (হ্যান্ডশেক করে অর্নীল)
এরপর ডক্টর চলে গেলেন আর মিম উঠে বসলো।
-এর মানে কি? আপনি আমায় আগেই জানালেন না কেন ? এই কারনেই কি আপনি এতক্ষণ ভনীতা করছিলেন? ঠিক করেন নি আপনি? (অর্নীলকে মারতে মারতে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই দিল মিম)
-এই পাগলি কাঁদছো কেন? তুমি না আমার প্রিন্সেসের মা!! পিচ্চি চৌধুরীর মা এতটা কাঁদতে পারে নাকি? (অর্নীল ও মিমকে জড়িয়ে ধরলো)
-এই খুশি আমি কিভাবে বুঝাবো? I have no option without cry. এইটা কি স্বপ্ন?
-একদম না মাই কুইন। এইটা বাস্তব আর এইটাও বাস্তব যে অর্নীল চৌধুরী পাপা হচ্ছে আর তুমি মাম্মাম হচ্ছো। আজকে তুমি যা চাইবা তোমায় তাই দিব। কি চাই বল?
-আম্মু আর দি কে (অর্নীলের দিকে তাঁকিয়ে মিম)
-এইটা সম্ভব নয়। ওরা আবার তোমার ক্ষতি করবে। আর সেইটা আমি বেঁচে থাকতে কোনোদিন সম্ভব না।
-আপনি আমায় কথা দিয়েছেন কিন্তু
-আমি পারব না।
-আসলেই কি পারবেন না? (অসহায়ের মত তাঁকিয়ে মিম)
-না। (কঠোর গলায় অর্নীল)
-আচ্ছা। (মিম আবার অর্নীলের বুকে মাথা রাখলো)
ওইদিন অর্নীল সারাটাদিন ই মিমকে দিয়েছে। বাসায় কোনো অফিসের কাজ করেনি৷ শুধু মিমকে খাইয়ে দিয়েছে আর মিমের যত্ন করেছে। সারাক্ষণ মিম অর্নীলের কোলে বসেছিল।
পরেরদিন সকালবেলা অর্নীল চৌধুরী প্যালেসে যায় মিমকে না জানিয়ে। অর্নীলের আম্মু অর্নীলকে দেখে সোজা গিয়ে জড়িয়ে ধরেছেন আর অনু অর্নীলকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে।
-কেমন আছিস আব্বু?
-অনেক বেশি well. একটা নিউজ দিতে এলাম
-কি?
-তুমি দিম্মা হচ্ছো। কালকেই মিমের এই নিউজ পেলাম।
-কিহ? আমি দিম্মা হচ্ছি?? (খুশিতে আত্মহারা মিসেস চৌধুরী)
-আর মিম এখন তোমাদের সাথে থাকতে চায়। আমি এইটা কোনোদিন চাইনি আর চাইবো না যে মিম এই অবস্থাতেই কোনো ভাবে কোনো কষ্ট পাক। অন্তত এই কয়েকটামাস মিম তোমাদের সাথে থাকতে চায়। So, accept করা আর না করা সম্পূর্ন তোমার ব্যাপার।
-এইটা তুই কি বলছিস আব্বু? আজকেই তুই বউমা কে নিয়ে আসবি। এখন থেকে আমরা এক সাথেই থাকব। (অর্নীলের গালে হাত দিয়ে অর্নীলের আম্মু)
অর্নীল বাড়ি থেকে চলে এলো আর কোনো কথা না বলে। বাসায় গিয়ে মিমকে সারপ্রাইজ দিবে বলে চোখ বেধে নিয়ে গিয়েছিল চৌধুরী প্যালেসে। অর্নীল তো এখন মিমের পাশেই থাকবে তাই অর্নীল অনুকে অফিস যেতে বলল৷ কিন্তু অনু গেলো না কারণ ভাইয়ের উপরেই সব তাই সে আর কোনো দায়ভার নিতে চায়না। বাধ্য হয়ে অর্নীল ঘরে বসেই সব করছে।
হঠাৎ একদিন……..
মিম ঘুমাচ্ছিলো তখন মিমের ফোনে একটা মেসেজ আসে। ভাইব্রেশনে মিমের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অর্নীল তখন ওয়াশরুমে গোসল করছিলো। মেসেজ ওপেন করে মিম একটু চমকে গেলো। হঠাৎ করে কে বলবে মিমকে যাতে অর্নীলের ফোন চেক করে। মিম কষ্ট করে উঠে বসলো এরপর টি টেবিলের ওপর থেকে অর্নীলের ফোনটা নিলো। অর্নীলের ফোন লক মিমের জানা তাই খুলতে সমস্যা হলো না। মিম অনেকক্ষণ ফোন ঘাটাঘাটি করলো কিন্তু কিছুই পেলো না। যখন ফোনটা রেখে দিবে মিম তখনি মনে হলো গ্যালারি দেখেনি মিম। এরপর গ্যালারি চেক করতে গিয়ে মিমের মাথা পুরো খারাপ হয়ে গেলো। সব অরুনিমা আর অর্নীলের ফাইল!!!! আর ওদের ছবিগুলো এত ক্লোজলি তোলা কেন?? অনেক প্রশ্ন জাগছে মিমের মনে। মিম ফোনটা খাটের উপর ছুঁড়ে ফেলে দিলো। অর্নীল তখন ওয়াশরুম থেকে বের হলো।
-কখন জাগলে? এই মাত্রই না ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে গেলাম! (টি শার্ট পরে অর্নীল)
-মিম কথা বলল না। স্রেফ মাথা নিচু করে আছে।
-কথা বলছো না কেন?
-কতদিন ধরে ঠকাচ্ছেন আপনি আমাকে? (অর্নীলের দিকে তাঁকিয়ে মিম)
-মানে? (অর্নীল চুল মোছা অফ করে মিমের দিকে তাঁকালো)
-মানে কি আসলেই বুঝছেন না নাকি বুঝতে চাইছেন না? (মিম আস্তে করে নিচে দাঁড়ালো)
-মিম যা বলার ডিরেক্ট বল। আর ওখানেই বস তুমি।
-অরুনিমা খান আপনার জাস্ট ফ্রেন্ড,,বিজনেস পার্টনার,,রুম পার্টনার আর কি?
-How dare you??? কাকে কি বলছো তুমি? রুম পার্টনার মানে? (অর্নীল পুরো রেগে গেলো)
-রুম পার্টনার মানে রুম পার্টনার যে কিনা বউয়ের জায়গা নিতে পারে।
-মিম??? জাস্ট শাট আপ! What’s wrong with you? আর কিসের ভিত্তিতে তুমি বলছো এসব? (অর্নীল মিমের হাতের উপরের অংশে ধরে)
-মিম অর্নীলের হাত সরিয়ে দিল। অর্নীল পুরোপুরি শক খেলো। ধরবেন না আমাকে! (শান্ত গলায় বলল মিম) খুব বেশি অসুখী রেখেছিলাম আমি আপনাকে তাইনা? বোঝা হয়ে গেছি আমি আপনার তাইনা?
-যদি তুমি একা থাকতে তাহলে এতক্ষণে তোমার গালে আমার আঙুলের ছাপ বসে যেত। (অর্নীল অনেক রেগে গেছে)
-আগে নিজের দোষ দেখেন মিস্টার অর্নীল চৌধুরী।
চলবে
সারাটাদিনে ২ সেকেন্ড সময় পাইনা নিজের জন্যে তাই লিখতে লেইট করলাম। স্যরি 🤒🤒🤒
,
,