পতিতা বউ – পর্ব ১২

0
286

#পতিতা_বউ

১২তম পর্ব

আফিফ বের হতেই দেখলো যে ড্রাইভার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। আফিফ ড্রাইভার এর হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বললো,

>>এখানে এসেছি এই ব্যাপার টা যেন কেউ না জানে।

>>জী স্যার কেউ জানবে না।

আফিফ গাড়িতে উঠে বসলো। আজকে ভার্সিটি অফ তাই নুহাকে নিয়ে যাওয়ার টেনশন নেই। আফিফ গাড়িতে বসে কালকের কথা ভাবছে। তার চোখের সামনে কেন জানি ঘুমন্ত মেয়েটার মুখ আসছে বার বার। আফিফ ঘরে পৌছে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো নাহিদা ড্রয়িং এ বসে আছে। আফিফ সিড়ি দিয়ে উপরে যাচ্ছিলো তখনি নাহিদা আফিফকে ডাকলো,

>>জি ছোটমা।

>>কাল কোথায় ছিলে সারারাত?

>>এক ফ্রেন্ড এর বাসাই পার্টি ছিলো ওখানেই ছিলাম।

>>তাই বলে সারারাত ওখানে থাকবে কেন গাড়ি ছিলো চলে আসতে পারতে।

আফিফের তখন মাথা ভারী হয়ে ছিলো। নাহিদার কথা গুলো তার বিরক্ত লাগছিলো খুব।

>>উফফহ সব কিছুর কৈফিয়ত চাও কেন এত বলোতো? আমাকে কি বাচ্চা মনে হয়? আমার যখন ইচ্ছা হবে আসবো যখন ইচ্ছা হবে যাবো তাতে তোমার কি? নেক্সট টাইম যাতে এমন না করো।

আফিফ হনহন করে উপরে চলে গেলো। নাহিদা তো অবাক আফিফ আজ তার সাথে এভাবে উচ্চস্বরে কথা বলেছে। নাহিদা বেগম রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলেন।

শবনম বেগম নুহার জ্বর মেপে দেখলেন ১০৩° জ্বর। জ্বরের ঘোরে নুহা গোংগাচ্ছে। বিড়বিড় করে আফিফ এর কথা বলছে শুধু। শবনম বেগম শুনেও কিছু বুঝতে পারছিলেন না।

আফিফ বাসাই এসে ফ্রেশ হয়ে বের হলো।মাথা মুছতে মুছতে ফোনের দিকে চোখ পড়তেই ভাবলো নুহা কে একবার কল দেওয়ার কথা। কিন্তু পরক্ষণে গতকাল এর কথা মনে পড়ে গেলো তার। ফোন রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো। আফিফ নুহার কথা ভাবছে। তার দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কখন যে সে ঘুমিয়ে গেলো টেরই পাইনি।

নুহার যখন সেন্স ফিরলো তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছিলো। আফিফের কথা মনে পড়তেই সে উঠে বসলো। শবনম বেগম নুহার পাশেই ছিলেন।

>>দেখি মা জ্বর কমছেনি তোর?

>>জ্বর এসেছিলো বুঝি আমার? কখন?

>>হ মা তোর অনেক জ্বর আসছিলো। সকালে অই সাহেব টা যাওয়ার সময় কইয়া গেলো যে তোর গায়ে অনেক জ্বর ট্যাকা ও দিয়া গেলো ঔষধপত্র কেনার লাগি।

>>ওহ আচ্ছা। মামুণি আমি এখন ঠিক আছি। তুমি নিচে যাও একটু আরাম করো গিয়ে আমি জানি তুমি সকাল থেকে এক পা ও নড়োনি আমার পাশ থেকে এমন কি কিছু খাও ও নি তাইনা?

শবনম বেগম ছলছল চোখে নুহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

>>হ রে মা আমার কলিজার টুকরা ডা এইভাবে অসুস্থ হইয়া পইড়া থাকলে আমার বুঝি খাওন গলা দিয়া নামবো? তুই কেমনে সব বুইঝা নেস ক তো।

>>মনের মিল মামুণি। আমি জানতাম এমন টাই করবে তুমি। এখন যাও নিজের জন্য ও খাবার নাও আর আমার জন্য ও। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আসছি।

>>আইচ্ছা মা।

শবনম বেগম নিচে চলে গেলেন। নুহার মনে পড়ে গেলো কাল রাতের কথা। আফিফের কথা। সে ফোন হাতে নিয়ে আফিফের নাম্বার ডায়াল করলো। আফিফ ঘুমে ছিলো। নুহার কল আসতেই ঘুমের ঘোরে ফোন টা ধরলো,
ফোনের অপাশ হতে নুহা বললো,

>>হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

আফিফ নুহা কণ্ঠ শুনেই উঠে বসে পড়লো। তার বিশ্বাস হচ্ছে না এত কিছুর পরেও নুহা কল দিতে পারে।

>>হ্যালো আফিফ!

>>হ্যাঁ হ্যাঁ বলো। কেমন আছো?

>>ভালো আছি তুমি?

>>আমি আর কেমন থাকতে পারি তোমার কি মনে হয়?

>>আচ্ছা যেমনই থাকো কালকে কি একটু দেখা করতে পারবে আমার সাথে? অনেক কথা ছিলো।

আফিফ তো মহাখুশি।

>>হ্যাঁ কে..কেনো নয়। আমি আসবোই তো তোমাকে পিক করতে আর ড্রপ করতেও।

>>ঠিক আছে।ক্লাস শেষে নাহয় কথা বললাম।

>>আচ্ছা ঠিক আছে।

>>হুম এখন রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।

নুহা কল কেটে দিতেই আফিফ নাচা শুরু করলো। রাফি দরজায় দাঁড়িয়ে ভাইয়ের তামাশা দেখে হাঁসতে হাঁসতে শেষ। আফিফ এসে রাফিকে জড়িয়ে ধরলো।

>>ফাইনালি ব্রো ফাইনালি আই এম গোয়িং টু গেট হার।

>>আই এম হ্যাপি ফর ইউ ব্রো।বেস্ট অফ লাক। তবে কালকে কি হলো বললি না যে।

>>হ্যাঁ বলছি শোন।

আফিফ রাফিকে সব খুঁলে বললো।

>>আচ্ছা তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু কালকে সারারাত তুই ছিলি কোথায়? আমি তোর সব ফ্রেন্ড কে কল করেছিলাম সো প্লিজ এটা মোটেও বলবিনা যে তুই কোন ফ্রেন্ডের বাসাই পার্টিতে ছিলি।

আফিফ মাথা চুলকাতে চুলকাতে রাফিকে সব খুলে বললো।আফিফ রাফির কাছ থেকে কিছুই লুকোয়না কখনো। ভাইয়ের কথা শুনে তো রাফি অবাক।

>>সিরিয়াসলি ব্রো একজন ওয়েটার এর কথায় তুই এমন একটা জায়গায় চলে গেলি? পাগল হয়ে গিয়েছিলি নাকি তুই?

>>আই ডোন্ট নো। কি যে করেছিলাম নিজেও জানিনা। বাট ট্রাস্ট মি আমি উল্টাপাল্টা কিছুতেই জড়ায়নি।

>>তাই ভালো। আচ্ছা চল আজ আমি আর তুই পার্টি করতে যায়। এস এ সেলেব্রেশন।

>>ওকে বেহাফ অফ মি।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here