পতিতা বউ – পর্ব ১৩

0
275

#পতিতা_বউ

১৩তম পর্ব

নুহা সারারাত ভেবেছে কিভাবে আফিফ কে এই কথা গুলো বলবে।বলা কি আদৌ উচিত কিনা। সব শেষে সে ভেবেই নিলো যে সে আর সাত পাঁচ না ভেবে সব বলেই দিবে।

পরেরদিন সকালে নুহার ঘুম থেকে উঠতে দেরী হলো। তাই সে মোড়ে একটু দেরীতে পৌছালো। আফিফ আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। নুহা এসে চুপচাপ বাইকের পেছনে বসে পড়লো।

>>আজ দেরী হলো যে?

>>সরি ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গিয়েছিলো।

>>আরেহ সরি বলার কি আছে এমন টা হতেই পারে।

নুহা বুঝতে পারলো আফিফ আজ খোশমেজাজ এ আছে। সে ভাবছে সব জানার পর আফিফের কি অবস্থা হতে পারে। আফিফ বাইক স্টার্ট দিয়ে সোজা ভার্সিটি তে গিয়ে বাইক থামালো। নুহা ক্লাসে চলে গেলো কিছু না বলেই। ওর মধ্যে কেমন যেন জড়তা কাজ করছে।

ক’দিন বাদেই আফিফের ফাইনাল এক্সাম ছিলো। সে এর পেপারওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত ছিলো আর নুহা ক্লাসে। ক্লাস শেষ করেই নুহা বের হয়ে দেখলো আফিফ দাঁড়িয়ে আছে। ওকে কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে আর চাহনি তে একরকমের অদ্ভুত মায়া আর মুখে একটি হাসি। নুহা সেই মায়ায় হারাতে চাই নিজেকে কিন্তু নিজের পরিচয় এর সামনে সে বার বার বাধাপ্রাপ্ত। আফিফ মনে মনে অনেক খুশি তার আজ তর সইছেনা। কিন্তু সে এটা জানেনা কি ঘটতে চলেছে। নুহা আফিফের হাত ধরে তাকে টেনে চার তলার একটি ক্লাসরুমে নিয়ে গেলো। নুহা যখন আফিফ কে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো পাশ থেকে জাইরা দেখে ফেললো। সে ও তাদের পিছু পিছু গেলো।
নুহা আফিফ কে ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে ভেতর হতে দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপর গিয়ে আফিফের সামনে দাঁড়ালো। নুহার কেন যেন খুব কান্না পাচ্ছে। নুহা মাথা তুলে আফিফের দিকে তাকাতেই সে দেখে নুহা কাঁদছে। নুহার চোখের পানিতে তার নিকাব ভিজে যাচ্ছে। আফিফের জন্য এই দৃশ্যটা সত্যিই কষ্টের ছিলো। সে নুহার দুই গালে হাত দিয়ে তার কান্না মুছে দিচ্ছে,

>>এই পাগলি কি হলো কাঁদছো কেন?

নুহার নিশ্চুপ হয়ে আছে। তার মনে অনেক চিন্তা-ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। যদি আফিফ তাকে মেনে না নেয় তাহলে কি হবে? সে তো আফিফকে ভালোবাসে খুব। তার পক্ষে সম্ভব না আফিফ কে ছাড়া থাকা।

>>নুহা প্লিজ কেঁদোনা। আমার সত্যি সহ্য হচ্ছেনা তোমার কান্না।

নুহা আফিফ কে ঝাপটে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠলো। আফিফ নুহার এমন আচরণে শুধুই অবাক হচ্ছে।

>>আফিফ প..প্লিজ আমাকে এ..কটু জড়িয়ে ধরবা শক্ত করে.?

কাপা কাপা গলায় নুহা আফিফ কে বললো। আফিফ নুহাকে তার দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

>>একটু নয় সারাজীবন জড়িয়ে ধরে রাখতে চাই তোমাকে।

এটা শুনে যেন নুহার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।

>>নুহা প্লিজ বলোনা কি হয়েছে এমন কেন করছো?

>>কি…কিছুক্ষণ এভাবে থ..থাকোনা প্লিজ।

>>আচ্ছা।

জাইরা নুহা আর আফিফের পিছু নিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু তারা কোনদিক দিয়ে গিয়েছে সে তা খুঁজে পাচ্ছেনা। সে প্রত্যেক তলায় পায়চারি করে করে আফিফ আর নুহা কে খুঁজছে। অবশেষে চার তলার সেই ক্লাসরুমটির সামনে এসে দাঁড়ালো সে। ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে। দরজা দিয়ে একটু উঁকিঝুঁকি করতেই সে দেখে আফিফ নুহা কে জড়িয়ে ধরে আছে আর নুহা কান্না করছে। জাইরার রাগে যেন আগুন ধরে যাচ্ছে গায়ে।

প্রায় অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পর নুহা আফিফ কে ছেড়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। তারপর বললো,

>>আফিফ খুব ভালোবাসো আমাকে তাই না?

নুহার এমন প্রশ্নে আফিফের কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। নুহা আবারো প্রশ্ন করলো,

>>কি হলো উত্তর দাওনা। খুব ভালোবাসো বুঝি আমাকে?

>>হ..হ্যাঁ খুব ভালোবাসি।

>>আমি যেমনি হয় আমাকে মেনে নিতে পারবে?

>>হ্যাঁ পারবো। কিন্তু এমন অদ্ভুত প্রশ্ন কেনো করছো নুহা?

>>সেটা জানানোর জন্যই তো তোমাকে ডেকেছি। তোমার জানা খুব প্রয়োজন আমার পরিচয়টা কি।

নুহা নিকাব খুলে আফিফের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।

চলবে…..

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here