#পতিতা_বউ
১৪র্থ পর্ব
নুহা নিকাব খুলে আফিফের দিকে ফিরে দাঁড়ালো। নুহার চেহেরা দেখার পর আফিফের যেন পুরো দুনিয়া থমকে গেলো। তার পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেলো।
>>ত..তুমি?
>>হুম আমি। পরশুদিন রাতে আমার সাথেই ছিলে। বাকিটা তুমিই ভালো জানো আমি কি।
আমার এই পরিচয় কে আমি বড্ড ভয় পাই আফিফ। সেই ছোট কাল থেকেই এই পেশায় আমি। অনেক কষ্টে পড়ালেখার অনুমতি টুকু পেয়েছি। কিন্তু কাউকে ভালোবাসার অনুমতি যে আমার নেই। শুনতে খারাপ লাগলেও পতিতাদের ভালোবাসতে নেই কাউকে। তুমিই বলো এখনো কি তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসা আছে? ঘৃণা হচ্ছে আমার প্রতি তাই না? কত পুরুষের সাথে আমি রাত কাটিয়েছি তার হিসেব নেই। রোজ কতবার ধর্ষিত হয় সেটা আমিই জানি।যদি আল্লাহ চান তবে হয়তো কোন একদিন আমি মুক্তি পাবো কিন্তু আমার অতীত আমাকে সুস্থ জীবন-যাপন করতে দিবেনা কখনোই। খুবই বাজে একটা পরিচয় আছে আমার আফিফ। আমার সাথে যদি তুমি জড়াও তাহলে তোমার জিবনটিও অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। বলো এখনো কি তুমি আমাকে মেনে নিবে? তবুও কি ভালোবাসবে আমাকে?বলো।
আফিফ কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। এই মুহূর্তে তার কি বলা উচিত? নুহাকে কি সে মেনে নিবে?
আফিফের মৌনতা নুহাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো।
>>বুঝেছি আফিফ তোমার আর কিছু বলতে হবেনা। জানতাম এমনটাই হবে আগে পড়ে তাই জানিয়ে দিলাম তোমাকে।
নুহা নিকাব বেধে ক্লাসরুম হতে বের হয়ে চলে এলো। জাইরা ক্লাসের বাহির থেকে সব কথা শুনছিলো। নুহার পরিচয় জানার পর তার যেন পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। যখন নুহা বের হয়ে আসছিলো জাইরে সরে গিয়েছিলো। নুহাকে একা যেতে দেখে সে সোহান কে কল দিলো।
>>হেলো। অবশেষে সেই সুযোগ টা আজ এসেছে। কিল দ্যাট ব্লাডি গার্ল।
জাইরা ফোন টা রেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।
নুহা আর অনিমা গেট হতে বেড় হলো।
নুহা যেই না রিকশা খুঁজতে যাবে একটি কার এসে তাকে তুলে নিলো জোর করে। সে যেই না চিৎকার করতে যাবে তার মুখে রুমাল চেপে ধরা হলো। নুহা জ্ঞান হারালো।
আফিফ তখনো ক্লাস রুমে নির্বাক দাঁড়িয়ে ছিলো। জাইরা তালি দিতে দিতে ক্লাসরুমে ঢুকলো। সেই সাথে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।
>>সত্যিই আফিফ তুমি ঠিকই বলেছিলে আমি ওর মত হতে পারবোনা। কারণ আমি যেমনি হয় পতিতা তো নয়।
কথাটি শোনামাত্রই আফিফের রাগ চেপে গেলো। সে জাইরার গলা চেপে তাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
>>আরেকবার এই কথাটি বলে দেখিস। ও যেমনি হোক তোর থেকে ভালোই আছে।
>>আফিফ লিভ মি।
>>জাস্ট শাট আপ।
>>আই কান্ট ব্রে..থ।
আফিফ জাইরার গলা ছেড়ে দিলো। জাইরা কাশছে।
>>কি এমন আছে ওই মেয়ের মধ্যে? হ্যা ওই সস্তা মেয়েটা কি যাদু করেছে তোমাকে?
>>জাইরা খারাপ কিছু করে ফেলবো কিন্তু আমি শাট আপ।
জাইরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
>>তুমি আর খারাপ কিছু লল। খারাপ কিছু হবে ঠিকই কিন্তু ওই মেয়েটার সাথে। ওকে আজকে নিজের হাতে খুন করবো আমি। তুমি শুধু আমার আর আমারই। ওই মেয়ের আজকে শেষদিন দেখে নিও।
আফিফ আবারো জাইরার গলা চেপে ধরলো।
>>তোকে আজ আমি খুন করবো। নুহাকে মারার চিন্তা তোর মাথায় এলো কিভাবে? ওর কিছু হলে তোকে আমি জিন্দা মাটিতে পুতে দেবো কিন্তু।
তখনি আফিফের ফোন বেজে উঠলো। আফিফ জাইরা কে ছেড়ে দিয়ে ফোন কানে তুলে নিলো। রাফির কল,
>>ব্রো কোথায় তুই?
>>আমি ভার্সিটিতেই আছি।
>>ব্রো নুহাকে কারা যেন তুলে নিয়ে গিয়েছে।
>>ওহ শিট। আমি আসছি।
জাইরা আবারো হাসতে হাসতে বললো,
>>যাও যাও তোমার পতিতাকে বাঁচাও।
আফিফ এই কথাটি শোনামাত্রই জাইরাকে সজোরে একটি থাপ্পড় দিলো।
>>নুহা কোথায়?
>>আমি জানিনা।
>>জাইরা প্লিজ নুহা কোথায় বলো।
>>উফফ কি সুন্দর করে মিনতি করছো। সরি জান তুমি কখনোই জানবেনা নুহা কোথায়। ওর লাশ দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকো।
আফিফ জাইরা কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বেড়িয়ে এলো। ভার্সিটির গেটে অনিমা আর রাফি দাঁড়িয়ে ছিলো। আফিফ ওদের কাছে আসতেই অনিমা ওকে সব বললো। আফিফের রাগে গা জ্বলছে। সে জানে এটা সোহানের কাজ আর কোথাও না কোথাও জাইরা ও জড়িত আছে। আফিফ বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেলো কিন্তু আফিফ নুহা কে খুঁজবে কোথায়। একবার ভাবলো জাইরার উপর নজরদারি রাখা দরকার। আফিফ বাইক থামিয়ে রাফিকে কল দিলো।
>>হ্যালো?
>>হ্যা ব্রো বল।
>>তুই কোথায় ভার্সিটিতে নাকি?
>>হ্যাঁ। কেনো?
>>জাইরা যদি ভার্সিটি তে থাকে তাহলে ওর উপরে নজর রাখ।
>>জাইরা তো মাত্রই গেইট দিয়ে বের হলো।
>>তাড়াতাড়ি ওর পিছু নে। ও কোথায় যায় দেখ। আমাকে জানা।
>>ওকে ব্রো।
রাফি বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। জাইরা তার কারে উঠে বসলো। তার রাগে গা জ্বলছে। সে তার সব রাগ নুহার উপর ঝাড়বে। রাফি জাইরার পিছু নিয়েছে সে এসব খেয়ালই করছেনা।
চলবে…….
#Razia_Binte_SuLtan