পতিতা বউ – পর্ব ১৫

0
334

#পতিতা_বউ

১৫তম পর্ব

নুহার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে নিজেকে একটি রুমে চেয়ারের সাথে নিজেকে বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করলো। তার সামনে সোহান বসে আছে। সোহানের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট। নুহার ভীষণ ভয় হচ্ছে। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সে বললো,

>>আ..আমাকে এখানে কে..কেন এনেছেন?

সোহান রাগে চিল্লিয়ে উঠলো।

>>কেন এনেছি মানে? তুমি আর তোমার বয়ফ্রেন্ড মিলে তো বেশ মিথ্যা কথা বলে বেড়াও তাই না। আমি রেগিং করেছিলাম তোমাদের তাইনা? তোমার সাথে আমার কোন শত্রুতা ছিলোনা। নিজেই সেধে এসে শত্রু হলে আমার। তোমাকে আর তোমার বয়ফ্রেন্ড কে কি আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো ভেবেছো?তোমাদেরকে শাস্তি তো পেতেই হবে।

নুহা মনে মনে আল্লাহ কে স্মরণ করছে। কান্নার কারণে তার নিকাব একদম ভিজে নাক আর মুখের সাথে লেপ্টে গিয়েছে এতে নুহার নিঃশ্বাস নিতে অনেক অসুবিধা হচ্ছিলো। নুহার এমন অবস্থা দেখে সোহানের কেন জানি একটু মায়া হচ্ছিলো। আর যাই হোক সোহান এতটাও খারাপ না যে সে কারো ক্ষতি করতে পারে। শুধুমাত্র নুহা আর আফিফকে ভয় দেখানোর জন্যই নুহাকে তুলে আনা আর বাকিটা জাইরা বললো নুহার সাথে তার নাকি কি বোঝাপড়া আছে।

সোহান সেই না নুহার নিকাবে হাত দেওয়া মাত্রই নুহা একটু লাফিয়ে উঠলো,

>>এ…একি করছেন? নিকায়াবে কে..ন হাত দিচ্ছেন?

>>তোমার নিকাবের কারণে তোমার নিঃশ্বাস আটকে আসছে। তাই সরিয়ে দিচ্ছিলাম।

সোহানের নরম স্বরে কথা বলা দেখে নুহা কিছুটা অবাক হলো।

>>না দরকার নেই। আমি ঠিক আছি। আর আপনি না আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এনেছেন তাহলে এত দয়া দেখাচ্ছেন কেনো?

সোহান এই কথায় খুব বিরক্ত হলো। সে নুহাকে রেখে বাহিরে বেড়িয়ে আসলো। বাহির থেকে দরজা লক করে দিয়ে ফোন বের করে জাইরাকে কল দিলো। কিন্তু জাইরা ফোন ধরছেনা। আবারো রুমটাই ঢুকলো সে। নুহার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে আবারো বেড়িয়ে গেলো দরজা লক করে।। নুহা ভাবছে “কেমন আজিব মানুষ তো। নিজেই এনে বেধে রেখেছে আবার নিজেই কেয়ার করছে। আস্ত শয়তান একটা। ”

জাইরা সেই জায়গাতেই আসছিলো যেখানে নুহাকে রাখা হয়েছে। রাফি জাইরার কারের পিছু পিছু আসছিলো। আরো অনেক্ষণ ড্রাইভ করার পর জাইরা একটি ফার্ম হাউসের সামনে এসে গাড়ি থামালো। রাফি জাইরা থেকে কিছুদূরে গাড়ি থামালো। সাথে সাথে ফোন বের করে আফিফ কে টেক্সট করে দিলো। আফিফ ও দ্রুতবেগে বাইক চালিয়ে ছুটে আসতে লাগলো।

জাইরা গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ঘরে ঢুকলো। সোহান সোফাতেই বসে ছিলো। জাইরা কে দেখে উঠে দাঁড়ালো।

>>অই সস্তা মেয়েটা কোথায়?

>>ভেতরেই আছে।

>>ওকে।

জাইরা তার ব্যাগ থেকে একটি গান বেড় করলো। গানটি দেখে সোহান আতকে উঠলো।

>>ওয়াট দ্যা হেল জাইরা! এটা কেনো?

জাইরা রাগে গজগজ করতে করতে উত্তর দিলো।
>>আই উইল কিল হার।

>>নো জাইরা কথা এটা ছিলো। আমরা জাস্ট ওকে ভয় দেখানোর জন্যই এনেছি দ্যাটস ইট।

>>চুপ থাকো প্লিজ। তোমার ভয় দেখানোর ছিলো তুমি দেখিয়ে ফেলেছো। আমি ভয় দেখিয়ে সময় নষ্ট করতে চাই না। ওই মেয়ে যদি থাকে তাহলে আমি কখনোই আফিফ কে পাবোনা। ওই মেয়েকে তো মরতেই হবে।

>>নো জাইরা আমি তোমাকে এমন কিছুই করতে দেবোনা।

জাইরা সোহানের কথায় কান না দিয়ে হুরমুরিয়ে সেই রুমটি তে ঢুকে পড়লো জাইরার পিছে পিছে সোহান ও ঢুকলো। নুহা তখন নিকাব খুলে ভালোভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো। জাইরা আর সোহান ঢুকেই নুহা কে এই অবস্থায় দেখে ফেলে। সোহান তো নুহার সেই মায়াময় মুখ দেখেই থ। নুহাকে দেখে যে কেউই তার প্রেমে পড়তে বাধ্য। কিন্তু জাইরার রাগে হিংসায় গা জ্বলছে। নুহা তার চেয়ে বেশি সুন্দরি এটা সে যেন মানতেই পারছেনা। নুহা তাদেরকে দেখে আরো ভয় পেয়ে গেলো। জাইরার হাতে গান দেখে সে আরো বেশি ভয় পাচ্ছিলো। নুহা ভেবেই নিয়েছিল যে আজকে তার শেষদিন।
জাইরা নুহার দিকে গান পয়েন্ট করতেই সোহান এসে জাইরার সামনে দাঁড়ালো।

>>নো জাইরা আমি তোমাকে এটা করতে দেবোনা।

>>সোহান আমার সামনে থেকে সরো প্লিজ। অর আই উইল শুট ইউ টু।

>>ওকে শুট মি তারপরেও আমি ওর ক্ষতি করতে দেবোনা তোমাকে।

নুহা চেয়ারে বসে নির্বাক হয়ে এসব দেখছে। সোহানের প্রতি যে তার এত রাগ হচ্ছিলো এই মুহূর্তের সোহান কে দেখে তা যেন নিমিষেই দূর হয়ে গেলো। জাইরার রাগ যেন আরো বাড়ছে।

>>এই পতিতা মেয়ের জন্য নিজের জান দিতেও রাজী হয়ে গেলে কি এমন যাদু করেছে মেয়েটা তোমাদেরকে? প্রথমে আফিফ আর এখন তুমি।

জাইরা রাগে নুহার দিকে গান পয়েন্ট করে শুট করে দিলো। নুহা দু’হাত দিয়ে নিজের কান চেপে ধরলো। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখলো সোহান একহাত দিয়ে জাইরার গান টা উঁচিয়ে রেখেছে। সোহান এক ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে নুহার হাত ধরে তাকে টেনে বের করে দিলো। তারপর মাটি থেকে গান টি নিয়ে জাইরাকে সেই রুমে বাহির থেকে লক করে দিলো। সেই মুহূর্তেই আফিফ আর রাফি গানের আওয়াজে ফার্ম হাউজের ভেতর ঢুকলো। ঢুকে দেখলো নুহা সোফায় বসে আছে আর সোহানের হাতে গান। আফিফের তা দেখে মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে সোহানের কলার চেপে ধরে তাকে যেই না ঘুসি দিতে যাবে নুহা আফিফ কে আটকালো।

>>আফিফ ছাড়ো ওকে সোহান কিছুই করে নি ছাড়ো। উলটা আমাকে জাইরার হাত থেকে বাঁচিয়েছে আফিফ লিভ হিম।

নুহার কথা শুনে আফিফ সোহান কে ছেড়ে দিলো। সোহান বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিলো। আফিফ সোহানকে জড়িয়ে ধরলো হঠাৎ,

>>আই এম সরি। থ্যাংকস রে আমার নুহাকে বাঁচানোর জন্য।

সোহান ও আফিফকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিলো। আফিফ সোহান কে ছেড়ে দিয়ে হুট করে নুহা কে জড়িয়ে ধরলো। নুহা একটু লজ্জা পেলো।

>>সরি নুহা আই এম সো সরি। প্লিজ মাফ করে দাও আমাকে খুব ভালোবাসি তোমাকে। তোমাকে মেনে নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।

আফিফের কথা শুনে নুহার দু’চোখ ভরে আসে। সে ও আফিফ কে জড়িয়ে।

হঠাৎ জাইরার চেঁচামেচি তে তাদের ঘোর কাটলো। সোহান আর রাফি তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিলো। আফিফ আর নুহা কেমন যেন লজ্জায় পড়ে গেলো।

জাইরা তখনো দরজা ধাক্কাচ্ছে আর চিৎকার করেই যাচ্ছে। সোহান গিয়ে দরজা খুলতেই জাইরা বের হয়ে তার কলার চেপে ধরলো। সোহান রাগের মাথায় এক থাপ্পড় দিলো জাইরা কে। তারপর তাকে টানতে টানতে নিয়ে বেড় হয়ে গেলো। তাদের পিছে পিছে আফিফ, নুহা, আর রাফি ও বেড় হলো। সোহান জাইরা কে তার কারে নিয়ে বসে ড্রাইভ করে চলে গেলো।

রাফি তার বাইক নিয়ে রওনা হলো আর আফিফ নুহাকে বাইকে করে নিয়ে।

চলবে…

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here