#পতিতা_বউ
৪৪তম পর্ব
শাওয়ার শেষে টাওয়াল পেচিয়ে বের হয় রাফি। একটি ওয়াইন এর বোতল এর ঢাকনা খুলে চুমুক দিতে থাকে সে। হঠাৎ ফোনের রিং কানে আসে। ফোন খুঁজে হাতে নিতে নিতে কলটা কেটে যায়। স্ক্রীনে ২১টা মিসড কল ভেসে উঠেছে। সে কল ব্যাক করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতে আবারো কল আসে। আয়ুশির নাম সহ একটি মেয়ের হাসি মাখানো ছবি ভেসে উঠে স্ক্রীনে। রাফি কল টা পিক করে নেয়,
>>হ্যালো?
>>ইডিয়েট হাউ মেনি টাইমস আই কল্ড ইউ? হুয়ের ওয়ের ইউ? (বেশ রাগি কন্ঠে বলে আয়ুশি)
>>ডোন্ট ইউ থিংক ইউ আর ওভার রিয়েক্টিং মিস.আয়ুশি?(বেশ গম্ভীর গলায় বলে রাফি)
রাফির ভয়েস শুনে কিছুটা খটকা লাগে আয়ুশির। সে চিন্তিত গলায় বলে,
>>নট এট অল। বাট আর ইউ ওকে? ইস এভ্রিথিঙ অলরাইট?
রাফি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হৃদয়ের গহীন হতে আসা দীর্ঘশ্বাস এটি। শত চাঁপা কষ্ট জড়ানো সাথে। এরপর বলে,
>>আজকে ওর বিয়ে মিস.আয়ুশি। নিজ চোখে ওকে বধুবেশে দেখে এসেছি। আই কান্ট ডিস্ক্রাইব ইউ হাউ এম আই ফিলিং।রাইট নাও।
আয়ুশি রাফির সাইকাইট্রিস্ট। ভেনিসে যাওয়ার পর থেকে যখন রাফি পুরোপুরি মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়ে তখন কাউন্সিলিং শুরু করে আয়ুশির সাথে। সেই সুবাদে আয়ুশির রাফির ফ্যামিলি রিলেশন সব ব্যাপারেই জানা।
এছাড়া ভেনিসে যাওয়ার পর আয়ুশিই প্রথম কেউ যার সাথে রাফির সখ্যতা গড়ে ওঠে। দু’জনেই বাঙালি হওয়াই আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও বেশ ভালো ছিলো।
কিন্তু ধীরেধীরে আয়ুশি রাফির প্রতি দূর্বল হতে শুরু করে যা পরবর্তীতে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে।
ভেনিসে রাফির খারাপ সময় গুলোতে আয়ুশি সবসময়ই রাফির পাশে থেকেছে। আয়ুশিকে জড়িয়ে ধরে রাফি কতবার কেঁদেছে তার হিসেব নেই। রাফির জন্য আয়ুশি শুধু ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও আয়ুশির জন্য রাফি ওর ভালোবাসা।
রাফির কথা মনযোগ দিয়ে শুনে আয়ুশি বলে,
>>হুম বুঝলাম। এক্স এর বিয়ে তাহলে নিশ্চয় কেঁদেছ। আর আমি যদি ভুল না হয় তাহলে তোমার হাতে এখন ওয়াইনের বোতল।যা হয়তো কয়েক সিপ খেয়েও নিয়েছো। এম আই রাইট?
>>..না আমার হাতে কোনো ওয়াইনের বোতল নেই। ডোন্ট একিউজ মি।
>>মি: রাফি আই নো ইউ বেস্ট দ্যান এনি ওয়ান। এক্ষুনি ওয়াইনের বোতল টা ফেলো কুইক।
>>এত দামি ওয়াইন টা ফেলতে কষ্ট হবে। এক্স এর বিয়ে উপলক্ষে এইটুকু তো চলেই?
>>ওহ হো এক্স এর বিয়ে উপলক্ষে জনাব সেলেব্রেশন করছেন। ওকে এটাই লাস্ট কিন্তু। তোমার এসিডিটির প্রবলেম আছে সো..
>>ওকে ওকে মনে থাকবে আমার মা।
কথাটি শুনে আয়ুশি বিরক্ত হয় বেশ।তারপর বিড়বিড় করে বলে,
“তোমার মা না তোমার বাচ্চার মা”
>>কিছু বলেছো আয়ুশি?
>>কই ন.নাহ তো।
>>উহু কিছু তো একটা শুনলাম বাচ্চার মা টাইপ?
>>তোমার মাথা শুনেছো। আচ্ছা শুনোনা।
>>হুম বলো শুনছি।
>>মিস ইউ কবে আসছো?
>>কালকেই।
>>ওয়াও গ্রেট পড়শু “Imagination Dragon’s ” এর একটা কন্সার্ট আছে। উই উইল এঞ্জয় টুগেদার।
>>হুম লেটস সি।
>>রাফি শুনো?
>>হ্যাঁ।
>>লাভ ইউ। (শান্ত স্বরে)
>>আই নো আয়ুশি বাট ইউ আর মাই বেস্ট ফ্রেন্ড এন্ড মাই সাইকাইট্রিস্ট নাথিং এলস মোর দেম।
>>জানি রাফি বাট কি করবো? ভালোবাসা টা যে এমনই হয়। সরি আমি রাখছি। ভালো থেকো এন্ড কাম ব্যাক সুন। বাই। (কান্না জড়িত কন্ঠে)
আয়ুশির বেশ কান্না আসছে রাফির কথা শুনে। যতবারই আয়ুশি তাকে ভালোবাসার কথা বলে তখনি রাফি এই উত্তর টা দেয়। এখন আয়ুশি খুব কাঁদবে তাই ফোন টা হুট করেই রেখে দিয়েছে। এমনিতেই একটা ছিঁচকাঁদুনী মেয়ে সে তার উপর রাফি শুধুই কান্না করাই ওকে। সাইকাইট্রিস্ট রা হয় গম্ভীর আর ইমোশনালি স্ট্রং কিন্তু আয়ুশির বেলায় পুরো উলটা যেন ভুল করেই এই পেশায় ঢুকে পড়েছে সে। সে নিজেই ভাবে এত বড় সাইকাইট্রিস্ট হয়ে ওর লাভ কি যদি কারো মনে জায়গাই করতে না পারে সে। আয়ুশি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াই তারপর ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দেয়। আয়না দেখে কাঁদতে তার খুবই ভালো লাগে তাই আয়নার সামনে দাড়িয়েই কাদে সে।
রাফির মনে খচখচ করছে। সে জানে আয়ুশি ওকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু তার মন প্রাণ জুড়ে যে শুধুই অনু।
আবারো একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাফি। নিজের মন কে বোঝায় অনু এখন অন্যের স্ত্রী।
তাই অনুকে নিয়ে তার না ভাবাই উচিত।
আচ্ছা আয়ুশি কে কেন সে এত কষ্ট দিচ্ছে। মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই। পাগলি মেয়েটা তো শুধু তাকে ভালোবেসেই গিয়েছে। ভেনিসে যাওয়ার পর আয়ুশির সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই আয়ুশি খুঁটি হয়ে ছিলো তার সাথে। আয়ুশির সাথে কাটানো মেমোরি গুলো চোখে ভাসছে তার। মুহূর্তেই ঠোঁটে হাসির রেখা ফুঁটে ওঠে রাফির। ফোন হাতে নিয়ে আয়ুশির নাম্বার ডায়াল করে সে।
আয়ুশি কাঁদতে কাঁদতে নাক টানছে। একদম আয়নার সামনে বসে পড়েছিলো সে। ফোন বাজতেই ফোন টা হাতে নিয়ে রাফির নাম দেখে মন টা নেচে ওঠে ওর।
রিসিভ করেই বলে,
>>লাইফে ফার্স্ট আমি কল কাটার পর কল দিয়েছো তুমি।
আয়ুশির আহ্লাদী গলায় কথাটি শুনে হেসে ফেলে রাফি। আয়ুশি মনযোগ দিয়ে সেই হাসি শুনতে থাকে। ইশ এই হাসিটা সে চোখে দেখতে পাচ্ছেনা কেনো? ইচ্ছে করছে ফোনের ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়তে।
হাসি থামিয়ে রাফি বলে,
>>তো শুনুন মিস. সাইকাইট্রিস্ট,
যেহেতু আমার এক্স এর বিয়ে হয়ে গিয়েছে সেহেতু আমি এখন ডেইলি ডেইলি ডিপ্রেশন এ পড়বো। আর আমার ডেইলি ডেইলি কাউন্সিলিং করা লাগবে কিন্তু আপনি তো সপ্তাহে মাত্র দু’বার কাউন্সিলিং করেন।একটু কি বাড়ানো যাই?
>>সপ্তাহে চারদিন এর বেশি বাড়ানো যাবেনা।
>>কেনো যাবেনা শুনি?
>>কারণ আমার পেশেন্ট আরো আছে শুধু আপনি একা নাহ।
>>তাহলে একটা কাজ করতে পারি যাতে সারাজীবন আপনার থেকে বিনা এপয়েন্টমেন্ট এ সময়ে-অসময়ে, দিন হোক বা রাত যখনই আমার ইচ্ছা হয় তখনই কাউন্সিলিং নেওয়া যাই।
>>মানে কিভাবে?
>>সিম্পল আপনাকে মিস থেকে মিসেস সাইকাইট্রিস্ট বানিয়ে।
রাফির কথা শুনে আয়ুশির চোখ কপালে। অবাকের সপ্তম পর্যায়ে সে এখন।
>>হুয়াট হ্যাপেন্ড মিস আয়ুশি? উইল ইউ বি মিসেস রাফি আফসার?
আয়ুশির খুশিতে গলায় কথা আটকে আসছে। তার মন চাচ্ছে এখন লাফাতে।
>>ওকে বুঝলাম তুমি রাজিনা রাখছি।
>>অই না কে বললো আমি রাজি না? একদম মাথা ফাটিয়ে দেবো কিন্তু মিসেস রাফি আফসার একমাত্র আমিই হবো বুঝলে। এভাবে হুট করে বললে একটু অবাক তো হবোই তাই কথা বেরুচ্ছিলো না।
>>আমি তো ভাবলাম তুমি ভাব নিচ্ছো।
>>আমি মোটেও ভাব নেই নাহ।
>>তা তো জানি আমি। আচ্ছা শুনো আয়ুশি?
>>হুম শুনছি।
>>আমি নিজেকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দিতে চাই। অনুকে ভুলতে পারবোনা জানি কিন্তু আমি চাই যে তুমি আমাকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে আগলে ধরো। আমাকে দ্বিগুণ ভালোবাসো। আমাকে বাধ্য করো তোমাকে ভালোবাসতে। কি পারবে তো?
আয়ুশি নাক টেনে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে,
>>একবার ফিরে আসো মিঃ আফসার তোমাকে আমার প্রেমের জালে এমন ভাবে ফাঁসাবো যে তুমি আজীবন চাইলেও ছুটতে পারবেনা।
আর এইটা আয়ুশি এহসান এর প্রমিস।
>>উঁহু মিসেস আয়ুশি আফসার এর প্রমিস বলো।
>>উঁহু আগে মিস আয়ুশির প্রেমে ফেলবো তারপর মিসেস আফসার হবো।
>>ঠিক আছে মহারানী দেখে নেবো।
>>হু দেখে নিয়েন।
চলবে…
#Razia_Binte_SuLtan
[প্রথমে ভাবলাম রাফির এক্সিডেন্ট করিয়ে তাকে মেরে ফেলি। কিন্তু পরক্ষণে রাফি লাভারদের কথা মনে পড়ে গেলো। যাই হোক এবার আপনারা খুশি তো? সারপ্রাইজ কেমন লাগলো😁? আর আগামী পার্টেই টাটা গুড বাই জানিয়ে দেবো। ততক্ষণে অপেক্ষাই থাকুন। আসসালামু আলাইকুম❤]