পতিতা বউ – পর্ব ৪৩

0
280

#পতিতা_বউ

৪৩তম পর্ব

অনুর চোখের জলরাশি রাফির হৃদয় কে ক্রমাগত ক্ষতবিক্ষত করছে। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে ওর। রাফি অনুর একদম সামনে এসে দাঁড়ায়।অনু মাথা নিচু করে আছে।

>>কি দেখতে এসেছো এখানে? আমি মরে আছি কিনা বেঁচে আছি তা দেখতে এসেছো তাই না? আমি বেঁচেই আছি দেখো। কিন্তু আমার মা-বাবা আর নেই। ওদেরকে বেছে নেওয়াই তুমি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ছিলে, সব শেষ করে দিয়েছিলে না দেখো ওরাও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
এইটুকু বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে অনু এরপর রাফি বলতে শুরু করে,

>>জানো অনু একটা সময় খুব একা হয়ে গিয়েছিলাম।মা তো কখনোই আমার ছিলোনা। মায়ের কারণে ভাই ও দূরে চলে গিয়েছিলো। ছিলে তো শুধু তুমি।তুমিই আমাকে নিজ হাতে সেই সময় গুলোতে সামলিয়েছিলে। ইতালি যাওয়ার সময় তোমাকেও বিয়ে করে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম সাথে করে। কিন্তু তোমার বাবা ফ্যামিলির জন্যই আমার হাতে তোমাকে দেয়নি। তাদের উপর সেদিন বেশ রাগ হয়েছিলো আর তুমিও সেদিন মা-বাবাকে বেছে নিয়েছিলে। তাই খুব রাগ হয়েছিলো তোমার উপর। আসলে রাগ না অভিমান। দিনশেষে তুমিও আমার হাতটা ছেড়ে দিলে। তাই রাগে,অভিমানে,জেদে আমি সব শেষ করে দেয় আমাদের মাঝে। আমার জন্যে সব কিছু সেদিনই শেষ হয়ে গিয়েছিলো অনু। কিন্তু তুমি পারোনি। আমি জানি তুমি খুবই কষ্ট পেয়েছো। পারলে আমাকে মাফ করে দিও সব কিছুর জন্যে।
জানো অনু সোহান ভাই খুব ভালো। উনি তোমাকে খুব ভালো রাখবে। তুমি উনাকে ভালোবাসার চেষ্টা করিও।
আমি চলে যাচ্ছি আজকে।হয়তো আর কোনোদিনও ফিরবো না। আর কখনোই আমার চেহারা তোমাকে দেখাবো না।

এইটুকু বলে রাফি যেতে নেয়। আবার থেমে এসে বলে,

>>আমার শেষ একটা আবদার পূরণ করবে প্রিয়তা?

অনু মাথা তুলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে তাকাই,
>>ক..কি আব..দার?

>>শেষবার এর মত একটি ভালোবাসার পরশ দিতে চাই তোমার কপালে। অনুমতি দেবে?

অনু বুঝতে পারেনা তার অনুমতি দেওয়া উচিত কি উচিত না। কিন্তু তার ভালোবাসার শেষ আবদার রক্ষা করতে সে মাথা নেড়ে সায় দেয়।
এরপর রাফি অনুর একদম সামনে এসে দাঁড়ায়। নিজ হাতে অনুর আঁচল টা তার মাথায় টেনে দিয়ে বলে,

>>তোমাকে নিজের জন্যই এমন সাজে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা আর হলোনা। মাফ করে দিও প্রিয়তা।

রাফি হালকা করে অনুর কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়। অনুর রাগ,অভিমান,জেদ সব চোখের পানিতে গলিয়ে পড়ে যেতে থাকে। রাফি আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়াই না। চলে আসতে থাকে অনুকে রেখে।অনু সেখানেই বসে পড়ে। হাটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে। রাফির চাপা কান্না গুলো আজ উপচে পড়ছে। তাও বহু কষ্টে নিজেকে দমিয়ে নেয় সে। রুম থেকে বেড়িয়েই নুহার দেখা পায়।

>>ভাবি সোহান ভাই কোথায়?

>>ওই রুমের ব্যাল্কুনিতে।

রাফি সেই রুম এর ব্যাল্কুনির দিকে এগিয়ে যায়। সোহান সিগারেট টানছিলো।রাফিকে দেখে তা ফেলে দিয়ে বলে,

>>ভালো আছো রাফি?

>>জী ভাই আপনে?

>>হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ।

>>ভাই কি সিগারেট খান সবসময়?

>>হ্যাঁ একটু আধটু টেনশনে পড়লে এই আরকি।

রাফি মুচকি হেসে বলে,
>>তাহলে বর্জন করে ফেলুন। অনু সহ্য করতে পারেনা।

>>ওহ আচ্ছা করে ফেলবো ইন শাহ আল্লাহ।

রাফি এবার সোহানের কাঁধে হাত রেখে বলে,

>>এবার আমি নিশ্চিত আপনি অনুকে নিঃসন্দেহে ভালো রাখবেন। আপনার কাছে একটা প্রমিজ চাই ভাই
মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে লাইফে ওকে সবসময়ই হ্যাপি রাখবেন প্লিজ। আর এতটা ভালোবাসবেন যাতে আমার ভালোবাসা ও ভুলে যায়। এমনকি আমার নাম ও। সবসময় ওর পাশে থাকবেন প্লিজ।

>>প্রমিজ করছি রাফি তোমার অনুকে খুব ভালো রাখবো আমি।।

>>এবার গিয়ে ওকে সামলাম। শি নীডস ইউ।

এইটুকু বলে রাফি বেড় হয়ে আসে। দরজায় নুহাকে দেখলে ওকে হালকা জড়িয়ে ধরে বলে,

>>চলে যাচ্ছি ভাবি।দোয়া করিও যাতে আমিও ভালো থাকতে পারি। তোমাকে আর ভাইকে খুব মিস করবো। নিজেদের খেয়াল রাখিও। আসি।

রাফি সোজা নিচে নেমে বেড়িয়ে যায় দরজা খুলে। নুহা এক দৃষ্টে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।

সোহান গিয়ে দেখে অনু সেখানেই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। সোহান অনুকে কোলে নিয়ে বেড এ শুইয়ে দেয়। গায়ে চাদর টেনে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে আসে।

রাফি ঘরে ঢুকেই নিজেকে রুমে বন্ধী করে নেয়। একগাদা মদের বোতল ও সিগারেট ও নিয়ে আসে সাথে করে। সেগুলো বেড ওএ রেখে ওয়াশরুম এ ঢুকে শাওয়ার অন করে দিয়ে ভিজতে থাকে।
বেশ কিছুক্ষণ ভেজার পর নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেনা। যতটুক পারা যায় চিৎকার করে কাঁদতে থাকে সে। তার আর সহ্য হচ্ছেনা। এতদিন অনেক চাপিয়েছে সে।কিন্তু আজ আর পারছে নাহ।
ওর আর্তনাদ গুলো আজ চার দেওয়ালের ভেতরেই গুঞ্জিত হতে থাকে।

পার্লারের মেয়েরা অনুকে সাজিয়ে দিচ্ছে। অনু পড়েছে ডার্ক গ্রীন কালারের একটা লেহেঙা সাথে ব্ল্যাক স্টোনের কাজ।
নুহা ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে আর মেয়েরা ওকে সাজিয়ে দিচ্ছে। অনু মনমরা হয়ে বসে আছে। ওর চোখ-মুখ অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে আছে।আশেপাশের কিছুই তার মাথায় ঢুকছেনা।
সাজ শেষ হয়েছে কিনা দেখতে ফাইজা বেগম আসলেন,

>>নুহা শেষ হলোকি?

>>নাহ মা এখনো ওর চুল করা বাকি। নিকাহ অনুষ্ঠান এর এখনো অনেক সময় বাকি। তুমি চিন্তা করোনা।

>>আরেহ সেজন্য চিন্তা করছি না ওর সাজ কম্পলিট হলে ওরে কালোটিপ লাগাতে হবে নাহয় যদি নজর লাগে আমার মেয়েটার।

>>আচ্ছা আচ্ছা লাগাতে পারবে তো। এখন তুমিও রেডি হয়ে নাও যাও।

>>আমার কথা বাদ দে তুই রেডি হসনি কেনো এখনো। এই যে আপনারা অকেও রেডি করিয়ে দিন।

>>না মা আমার ইচ্ছে করছে না প্লিজ।

>>চুপ একদম কোনো কথা না। বোস আর রেডি হয়ে নে।

ফাইজা বেগম জোর করে নুহাকেও বসিয়ে দিলেন সাজাতে। নুহা ও বাধ্য হয়ে বসলো। সে খুবই সিম্পল ভাবে সাজানোর ইন্সট্রাকশন দিলো। সেই অনুসারে ওকে সাজাতে শুরু করা হলো।

চলবে..

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here