পতিতা বউ – পর্ব ৪২

0
271

#পতিতা_বউ

৪২তম পর্ব

ভেজা চুল দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ছে,গায়ে লাল টুকটুকে রঙের একটি শাড়ি জড়ানো,নাকে নাকফুল,দুই হাতে বালা সাথে হাত ভর্তি মেহেদীর রঙ।অপলক তাকিয়ে আছে রাফি অনুর দিকে।
বেশ স্নিগ্ধ লাগছে অনুকে।রাফির চোখে অনুকে এখন অপ্সরীর মতই লাগছে।
কত বছর পর দেখতে পেলো তার প্রিয়তা কে কে।

অনু এখনো একনজরে রাফির দিকে তাকিয়ে আছে।তার কাজলে লেপটে থাকা চোখ গুলোর কোণায় পানি জমতে শুরু করেছে।অনু স্বপ্নেও ভাবেনি কোনোদিন এভাবে দরজা খুলে রাফিকে দেখতে পাবে।

>>ভাবীর সাথে দেখা করা যাবে?

রাফির কথায় অনু বাস্তবে ফিরে আসে।গড়িয়ে পড়া চোখের পানি মুছে বলে,

>>ভেতরে এসে বসো আমি ডাকছি নুহাকে।

রাফি ভেতরে এসে বসে সোফায়। অনু অনেক কষ্টে নিজের কান্না চেপে রেখে উপরে যাই। রুমে গিয়ে হুট করেই নুহাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে দিয়ে বলে,

>>নুহা..ও

>>অনু কি হয়েছে এভাবে কাঁদছিস কেনো?এই মেয়ে?

>>ও এসেছে ওকে দেখলাম আমি মাত্রই।

>>কে এসেছে?

>>রা..রাফি এসেছে। এত বছর পরে দেখলাম ওকে।নুহারে আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।ও কেনো এলো এমন সময়ে আমার সামনে?

অঝোরে কাঁদতে থাকে অনু। নুহা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।অল্প হলেও অনু নিজেকে সামলে নিয়েছিলো। কিন্তু আজ হয়তো আর নিজেকে সামলাতে পারবেনা। নুহা অনুকে কোনোমতে শান্ত করে নিচে নেমে আসে।
রাফি নুহাকে দেখে উঠে দাঁড়াই পরে নুহা ওকে বসতে বলে সেও বসে,

>>দেশে কবে ফিরলে?

>>গত কাল রাতে।

>>ওহ তা ভালো আছো?

>>হুম আছি। কালকে তোমাকে কত গুলো কল দিলাম কিন্তু ফোন অফ ছিলো।

>>অফ করেই রেখেছি।

>>ভাইয়ার জন্য?

রাফির প্রশ্নে নুহা কিছুটা অবাক হলে রাফি বলে,

>>বাসাই ফিরেই সব জানতে পারি আমি।ভাই তোমাকে ভুল বুঝেছিলো মায়ের জন্যই। মা অনেক কৌশলে এসব করেছে যা দেখে ভাইয়ার ভুল বুঝা ছাড়া সত্যিই কোনো উপায় ছিলোনা। জানোই তো মা অলওয়েজ ভাই কে ম্যানুপিলেট করে আর ভাই ও মাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করে। আর মা এই সুযোগ টাই নিলো।

>>জানতাম আমি এমন কিছুই।কিন্তু আফিফ আমাকে একটু বোঝানোর সুযোগটাও দিলোনা জানো তো?
ও আমাকে যা যা বলেছে সবই আমার কানে বাজে। আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আজ অব্দি ওর বলা কথা গুলো। মানলাম ওর দোষ নেই আমি জানি আসলেই নেই কিন্তু ওর কি একটা বার ও উচিত ছিলোনা আমার কথা শোনার?

>>তুমিও তোমার জায়গায় ভুল নও কিন্তু আমি শুধু এটাই বলতে এসেছি ভাই এখন সম্পূর্ণ একা হয়ে যাবে তুমি প্লিজ ওকে ছেড়ে যেওনা। নাহয় আমার মনে হয়না ও বাঁচতে পারবে।

>>সম্পূর্ণ একা হয়ে যাবে মানে?

>>মা জেলে এখন আর আমি ফিরে যাব কালকেই। ভাই এর অবস্থা এখন পাগলের মত।মায়ের কাছ থেকে পাওয়া আঘাত ও সহ্য করতে পারছেনা। জেলে দেওয়ার কারণ আমি তোমার নাম্বারে মেসেজ করে দিয়েছি ভিডিও টা দেখে নিও।

রাফি উঠে দাঁড়ালো চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে এসে বললো,

>>ভাবি শেষবার এর মত অনুর সাথে কিছু কথা ছিলো। বলা যাবে কি?

>>হুম এসো আমার সাথে।

নুহা অনুর রুমে গিয়ে দেখলো সোহান অনুকে শান্তনা দিচ্ছে। নুহা সোহানকে বুঝিয়ে বলতেই ও আপত্তি করলোনা আর। এই কথা শুনে অনু ব্যাল্কুনি তে চলে গেলো। তার মনে এক রাশ অভিমান ভীড় করছে। সে পারছেনা রাফির মুখোমুখি হতে।

আফিফ এই মুহূর্তে শবনম বেগমের সামনে বসে আছে। শবনম বেগম ওকে এটা সেটা বলছেন। উনাকে বেশ হাসিখুশিই মনে হচ্ছে। আফিফ ও মেকি হাসি হেসে উনার কথায় তাল মেলাচ্ছে।এক পর্যায়ে আফিফ বললো,

>>মামুণি নুহাকে একটু ডেকে দিবেন প্লিজ?

>>নুহা ত এইহানে নাই তুমি জানোনা?

>>নুহা এইখানে নেই মানে নুহা কোথায়?
(বেশ অস্থির হয়েই বলে আফিফ)

আফিফের কথা শুনে শবনম বেগমের কপালে ভাজ পড়ে যাই,

>>সে কি বাবা নুহামা যে ওর বান্ধুবি
অনিমার বিয়াতে গেলো তোমারে কয় নাই?

>>না আসলে আমি যেখানে ছিলাম ওখানে ফোনের নেট ছিলোনা।হয়তো কল দিয়েছিলো আমি পাইনি। (স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলে বলে আফিফ)

>>ওহ এইটাই কঊ আমি ত ভয় পাইয়া গেছিলাম।নুহামা গতকাল সকালেই গেলো। তিন দিন অইখানেই থাকবো বললো।

>>আচ্ছা মামুণি আমি আসি তাহলে আমি অকেই নিতে এসেছিলাম আরকি। আমি আসি ভালো থাকবেন।

আফিফ সেখান থেকে বের হয়ে ঘরের জন্য রওনা হলো। সে খানিকটা রেডি হয়েই সোহানের বাসাই যাবে।

সোহানকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। সে রুমে এদিকে-সেদিকে পায়চারি করছে।নুহা ওদ অস্থিরতার কারণ বুঝতে পেরে বললো,

>>এত অস্থির হচ্ছো কেনো?

>>জানি না রে। ভালো লাগছেনা।আচ্ছা অনু আমার সাথে ভালো থাকতে পারবে তো?

>>আমি জানি অনুর মানিয়ে নিতে হয়তো একটু সময় লাগবে বাট ও মানিয়ে নিবেই।

>>আর ও যদি মুক্তি চাই?ও যদি রাফির কাছে চলে যেতে চাই?

>>এমন টা ও কখনোই চাইবে না। আর রাফিও কখনো ওকে ফিরিয়ে নেবেনা।

>>যদি অনু এমনটা চাই তবে আমি ওকে মুক্ত করে দেবো। আমি চাই না ও বাধ্য হয়ে থাকুক আমার সাথে।ওকে ভালোবাসি তার মানে এই না আমি নিজেকে ওর উপর চাপিয়ে দেবো। ও যদি মুক্তি চাই আমি নিঃসন্দেহে ওকে মুক্ত করে দেবো।

এইটুকু বলে সোহান দ্রুত পা চালিয়ে ব্যাল্কুনি তে চলে গেলো। সোহান ওর চোখে জমে আসা পানি গুলো নুহাকে দেখাতে চাইনি। আর এদিকে নুহা বেশ ভাবনায় পড়ে আছে যদি অনু এমনটা চাই তাহলে সত্যি সবকিছু বিগড়ে যাবে। এখন এখানে শুধু সোহান নয় ওর ফ্যামিলি ও জড়িত। নুহা সব আল্লাহর উপরেই ছেড়ে দিয়েছে।

রাফি ঠিক অনুর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। আর অনু অপর দিকে ফিরে। অনু নিজের চোখের পানি কিছুতেই আটকে রাখতে পারছেনা।

>>প্রিয়তা..

রাফির কাঁপা কাঁপা স্বরে এই ডাকটি শুনে অনুর বুকটা ধক করে উঠলো। কত বছর পরে তাকে এই নাম দেওয়া মানুষটি তাকে এই নামে ডেকেছে।

চলবে…

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here