পতিতা বউ – পর্ব ৪১

0
275

#পতিতা_বউ

৪১তম পর্ব

অনু আর সোহানকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে। সর্বপ্রথম ফাইজা বেগম হলুদ ছোঁয়ালেন তার পর সোহানের বাবা সুনাম সাহেব। এরপর নুহা লাগালো সাথে তারাও নুহাকে হলুদে রাঙিয়ে দিলো এরপর একে একে বাকিরা লাগানো শুরু করলো।

অনু কাঁচা হলুদ রঙের একটি শাড়ি পড়েছে আর সাথে সোহানও সেইম রঙের একটি পাঞ্জাবি পড়েছে। দু’জনকে পাশাপাশি বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। দু’জনেই বেশ খুশি। নুহা তাদের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে দোয়া করছে তাদের জন্যে।
নুহা শুধুমাত্র হালকা একটি হলুদ ও ব্লু কালারের কম্বেনেশনের থ্রি-পিস পড়েছে। তার ভারী কাপড়ে অস্বস্তি হচ্ছিলো বলেই ফাইজা বেগম এটি পড়তে বলেছেন।

আফিফ সকাল হতেই বেড়িয়ে পড়ে নুহার খোঁজে। কিন্তু অফিস থেকে জরুরি কল আসাই আপাতত অফিসে যেতে হলো। মাত্রই এসে বসেছে। তার পি.এ তাকে আসতে বলে নিজেই উধাও হয়ে গিয়েছে। বলেছে একটু অপেক্ষা করতে। আফিফের এই মুহূর্তে যা খুবই বিরক্ত লাগছে।
আফিফ নিজের লোকেদের লাগিয়ে দিয়েছে নুহাকে খোঁজার জন্যে। নুহার ফোন ও অফ।লাস্ট লোকেশন ছিলো মহুয়া পল্লী তে আফিফ এদিকের কাজ সেরে সেদিকেই যাবে।

হলুদ ছোঁয়ানোর পর্ব শেষে এখন মেহেদি লাগানোর পর্ব চলছে। অনুর দুই হাত ভর্তি করে মেহেদী লাগানো হচ্ছে বিয়ের কনে বলে কথা।নুহাকেও ফাইজা বেগম জোর করে ধরে মেহেদী লাগাতে বসিয়ে দিয়েছে। সে সিম্পল ভাবে লাগাচ্ছে। সে কেন যেনো হাসিখুশি ও থাকতে পারছে না। দূর থেকে সোহান লক্ষ্য করছে নুহাকে। ফাইজা বেগম এসে ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,

>>মেয়েটার অবস্থা দেখেছিস? কেমন যেন অন্যমনষ্ক হয়ে থাকে।আল্লাহই ভালো জানে সে কতটা কষ্ট চেপে রেখেছে নিজের মধ্যে। একবার ও মন খুলে হাসতে দেখলাম না আমার মেয়ে টাকে।

সোহানের মায়ের কোনো মেয়ে নেই বলে তিনি নুহাকে নিজের মেয়ের মতই আপন করে নিয়েছেন। নিজের সন্তান ভাবেন তাই উনার বেশ চিন্তা হচ্ছে। সোহান মা কে আশ্বস্ত করলো যে সে এই বিষয়ে নুহার সাথে কথা বলে নেবে।

দরজায় নক পড়তেই আফিফ কাম ইন বলে ভেতরে আসতে বলে।তার পি.এ কেবিনে ঢুকে বসে। আফিফ বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,

>>কাণ্ডজ্ঞান বলতে কি কিছুই নেই? সেই কবে থেকে বসে আছি আমি। জাস্ট রিডিকিউলাস..!

>সরি স্যার একচুয়ালি আমার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট ছিলো স্যার ওর লেবার পেইন উঠার পর ওকে হসপিটাল নিয়ে গিয়েছিলাম তাই দেরী হয়ে গেলো। স্যার আমার মেয়ে হয়েছে। নিন মিষ্টিমুখ করুন।

লোকটি তার একটি মিষ্টির প্যাকেট এগিয়ে দিলো।আফিফ এবার নিজের আচরণে থ হয়ে গেলো।সে অনুতপ্ত হয়ে বলে,

>>সরি ভাই আসলে মন-মেজাজ খুব খারাপ তোমার ভাবীর সাথে একটু ঝামেলা হয়েছে তাই আরকি।

>>আরে ভাই তাহলে ভাবিকে গিয়ে আজ মানিয়ে নিন আর আমাদের সবাইকেও মিষ্টিমুখ করান কারণ নিন মেডিকেল থেকে ভাবির রিপোর্ট আসছে।

পি.এর কথা শুনে আফিফের চোখ কপালে।পি.এ তার দিকে কিছু রিপোর্টস এগিয়ে দিয়ে বললো,
>>এইটা কাল আসছিলো অফিসে। আপনি তো আসেন না আজ অনেক দিন তাই আমিই নিয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম বাসাই যেয়ে দিয়ে আসবো কিন্তু সময় হলোনা তাই আপনাকে আসতে বললাম নিতে।আমি এখন যাই স্যার।

পি.এ চলে গেলে আফিফ রিপোর্টস গুলো হাতে নিয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। সে বাবা হতে যাচ্ছে। অথচ একবার জানলো ও না। নুহা ও তাকে বলেনি। বলবে কিভাবে সেদিন নুহাকে কিছু কি বলতে দিয়েছিলো সে।এখন এসব ভেবে কি লাভ আর। এখন নুহাকে খুঁজে বের করাটা ভীষণ প্রয়োজনীয়।
সে অফিস থেকে বেড়িয়ে মহুয়া পল্লীর উদ্দেশ্যে গাড়ি ঘুরালো।

অনু মাত্রই গোছল করে বের হলো। চুল গুলো মুছে টাওয়াল টা ব্যাল্কুনি তে দিতে গিয়ে দেখলো নুহা বসে আছে মন মরা হয়ে। সেও গিয়ে নুহার পাশে বসতে বসতে বললো,

>>কি হয়েছে তোর? এমন মন-মরা হয়ে থাকিস কেনো?

>>কই কিছুনা আমি ঠিকই আছি। আফিফকে মিস করছিলাম একটু ও তো সেমিনারে আজ কয়েকদিন ধরে এজন্য দেখিনি অনেকদিন।

>>তাহলে কল দিয়ে কথা বলে নিলেই তো পারিস।

>>কল দিয়েছিলাম একচুয়ালি ও পাহাড়ি এলাকাই আছে তাই নেটওয়ার্ক পাই না তেমন।

>>ওহ আচ্ছা। নুহা শোন?

>>হুম বল শুনছি?

অনু নুহাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

>>আমার লাইফটা যে এতটা সুন্দর হতে যাচ্ছে এসবে তোর অনেক অবদান। থ্যাংক দিয়ে ছোট করবোনা কিন্তু এভাবেই আমার পাশে থাকিস আজীবন। তুই আমার বেস্টি কম বোন বেশি।

>>বোন না ননদ বল ননদ।

দু’জনেই ফিক করে হেসে দিলো। অনু নুহাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,

>>তুই বোস আমি কফি নিয়ে আসছি বসে বসে গল্প করবো দু’জনে।

>>আচ্ছা।

অনু নিচে নেমে কিচেনের দিকে যেতে নিলেই কলিংবেল বেজে উঠলো আশেপাশে কেউ ছিলোনা বিধায় অনু গিয়ে দরজা টি খুলে দিলো।

চলবে….

#Razia_Binte_SuLtan

[আপনাদের জন্যেই আফিফকে বেশি কষ্ট দেবোনা। নুহা আর আফিফকে মিলিয়ে দিবো।পাশাপাশি রাফিকে নিয়েও অনেক বড় একটি সারপ্রাইজ ওয়েট করছে। এবার আপনারাই গেস করুন কি সারপ্রাইজ। আসসালামু আলাইকুম❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here