পতিতা বউ – পর্ব ৪০

0
295

#পতিতা_বউ

৪০তম পর্ব

রাশুখালা নাস্তা নিয়ে আসার পর রাফি তাকে জিজ্ঞেস করলো,

>>খালা ভাবি কেন ঘর ছেড়ে গেসে কিছু জানেন?

>>মূল কারণ তো জানিনা ছোটবাবা তবে বড় বাবা যেইদিন বাসাই ফেরত আইলো ছোট বেগম উনারে কি কি বলতাসিলো বউমণির নামে। হের পরেরদিনই বউ মণি দুপুরে চইলা গেলো কাঁদতে কাঁদতে বড় বাবা ও আর আইনতো যাই নো।

>>আচ্ছা খালা তুমি যাও পারলে এককাপ কফি দিও আমার মাথা ধরেছে খুব।

রাফির কাছে এখন বিষয়টা ক্লিয়ার সব তার মা ই করেছে। রাফি খাওয়া শেষে ফ্রেশ হয়ে নিলো হাতে কফিটা নিয়ে নাহিদার ঘরের দিকে হাটা দিলো। নাহিদা তখন হিসাব লিখতে ব্যস্ত,

>>আসসালামু আলাইকুম মিসেস আফসার।আসবো?

নাহিদা মাথা তুলে তাকিয়ে সালামের জবাব দিয়ে ইশারায় রাফিকে বসতে বললো। রাফি সোফায় বসে হাতে ফোনটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নাহিদা তার কাজ শেষ করে বসতে বসতে বললো,

>>তা তুমি আমার রুমের পথ মাড়ালে কিভাবে?

রাফি স্মিত হেসে উত্তর দিলো,
>>তেমন কিছুনা খবরাখবর নিতেই আসলাম। তা কেমন আছো?

>>আমি কি কখনোই খারাপ থাকি?

>>তা ঠিক ভাবি চলে যাওয়াতে তো তোমার ঈদ ঈদ অবস্থা তাই না?

ছেলের কথা শুনে নাহিদা উচ্চস্বরে হেসে বললো,
>>তুই যে আমারই রক্ত তার বার বার প্রমাণ হয়ে যাই। যাই বলিস না কেনো তাড়ানো টা খুবই সহজ ছিলো। একদম পানি ভাতের মতই।

>>তাই নাকি এত কিছু কিভাবে করলে?

নাহিদা ভ্রু কুঁচকে বললো,
>>তোর এত আগ্রহ কেন জানার?

>>ইউ নো হুয়াট মম আমি এখন আমার স্বার্থ নিয়ে ভাবা শুরু করেছি। এতদিনে বুঝলাম তুমি আমার ভালোটাই চাচ্ছো। তাই দেখছোনা তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি। সব শুনতে ভালোই লাগছে।

ছেলের কথা শুনে নাহিদা খুশিতে গদগদ করতে করতে বললো,

>>যাক এতদিনে বুঝলি তোর মা শুধুই তোর ভালোটা চাই। বুঝেছিস এইটাই অনেক। এখন তুই আর আমি মিলে আফিফকে সরিয়ে দিবো তাহলেই সব আমাদের।

>>সরানোর কম চেষ্টা তো করোনি বলো?

>>তা অবশ্য ঠিক বলছিস। আফিফকে কতবার মারতে চেয়েছি তার হিসেব নেই। তোর মনে আছে রাশুর মেয়ে যে শকে মারা গিয়েছিলো তারে পা লেগে সেই ফাঁদ টিও ওর জন্যই ছিলো। এরপর গাড়ির ব্রেকফেইল করলাম তাতেও লাভ হলোনা। বিষাক্ত পিঁপড়ে ছাড়লাম তার কামড় তুই খেয়েছিলি। জানিস কত কান্না করেছিলাম সেদিন ভাগ্যিস বেঁচে গিয়েছিস। এরপর সিঁড়ি থেকে ফেলতে গেলাম পড়লো নুহা। এই ছেলে যেনো জমের দুয়োরে কাটা দিয়ে এসেছে। ঠিক বাপের মতই।

>>বাপের মতই মানে?

>>আরেহ ওর বাপ মানে তোদের বাপকে মারতেও কম চেষ্টা করিনি। পরে বুড়ো প্যারালাইজড হয়ে নিজে নিজেই মরে গেলো। তবে ওর মা কে মারা টা সহজ ছিলো খুব। জানিস এই সম্পত্তির জন্য আর তোর জন্য কত কিছু করেছি কত লাশের উপর হেটেছি কিন্তু তুই ত আমাকেই ভুল বুঝতিস।

রাফি মায়ের কথাগুলো খুব মনযোগ সহকারে শুনছে। তার সারা শরীর যেন রাগে জ্বলে যাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে রাগলে চলবে না কৌশলে চলতে হবে। রাফি মোবাইল টেপার ছলে ফোনে নাহিদার বলা সবকিছু ভিডিও করে নিচ্ছে।

>>তো ভাবীকে কিভাবে দূর করলে বললে না যে?

>>সেটা মনে হয় আল্লাহই আমাকে সুযোগ করে দিয়েছিলো জানিস আফিফের পুরোনো বন্ধু সোহানের সাথে নুহার কয়েকদিন বেশ সখ্যতা হয়েছিলো। এসে ড্রপ করে দিয়ে যেত। সেদিন ওই ছেলের বাসাই গিয়ে অজ্ঞান হয়েছিলো বোধ হয় ওই ছেলে কোলে তুলে ওইসব বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ছবি তুলে ফেললাম টুক করে তারপর আফিফকে দেখিয়ে কান ভারী করলাম তুই তো জানিসই আফিফ আমার কথা সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে ব্যাস হয়ে গেলো।

>>বাহ ভালোই তো আচ্ছা তুমি এবার ঘুমিয়ে পড়ো আমি আসছি জার্নি করে আসলাম টায়ার্ড খুব।

নাহিদা ছেলের কপালে একটি চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। রাফি চলে আসে কিছু না বলে। মায়ের ছোঁয়া গুলোই রাফির ঘেন্না লাগছে। রাফি সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলো এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। সে দরজা খুলে দেখে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি রাফির হাতে একটি ইনভাইটেশন কার্ড দিয়ে চলে গেলো। কার্ডটি খুলতেই নামের দিকে চোখ পড়তেই রাফির বুকটা ধক করে উঠলো। চোখ দিয়ে পানিও গড়িয়ে পড়লো।

নুহা সোহানের মা ফাইজা বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। একটু আগেই প্রচন্ড বমি করে নেতিয়ে পড়েছে সে। ফাইজা বেগম নুহাকে ঔষধ খাইয়ে তার মাথায় তেল মালিশ করে দিলেন এখন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। তার কাছে নুহা এখন তার মেয়েই বটে।। নুহা নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। ফাইজা বেগমের যত্নগুলো তার কাছে অনেক কিছুই।
দরজায় দাঁড়িয়ে অনু আর সোহান নুহার দিকে তাকিয়ে আছে। মাত্র একদিনেই মেয়েটার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে।
নুহার অবস্থা দেখে সোহান অনুকে বললো,

>>আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আফিফ আর নুহার মধ্যে কোনো প্রবলেম হয়েছে।

>>আমারো তাই মনে হচ্ছে। নুহা একবার ও ওর নাম নেইনি সারাদিনে। হাসিখুশি থেকেও যেন অন্য জগতে হারিয়ে থাকতো।

>>জানিনা আমার বোনটার কি হলো বাট আই হোপ সো আফিফ যাতে আমার কারণে কোন ঝামেলা না করে নুহার সাথে। অন্যথা আমি নিজেকে মাফ করতে পারবোনা কখনো।

অনু সোহানের কাঁধে হাত রেখে তাকে শান্তনা দেয়। অনুর চোখেও পানি যা দেখে সোহানের বেশ অস্বস্তি লাগে। ফাইজা বেগম দরজায় অনুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওকে কাছে ডেকে নিয়ে বলে,

>>দেখি আমার কোলের এই খালি জায়গায় তুই মাথা রেখে শুয়ে পড় আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

কথাটি শুনে অনুর মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো সেই সাথে ঝরঝর করে চোখের পানি পড়তে লাগলো।সেও শুয়ে পড়লো ফাইজা বেগমের কোলে।

আফিফের হাত অনবরত কাঁপছে। তাও সে ফোনটা শক্ত করে ধরে আছে। ভিডিও তে বলা নাহিদার প্রত্যেকটি কথা আফিফের বুকে গিয়ে বিঁধছে। ভিডিও টি শেষে আফিফ রাফির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাই। রাফি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করে,

>>যে মায়ের উপর তোর এত বিশ্বাস আর ভালোবাসা ছিলো সেই মা আসলে তোকে কোনোদিন ভালোই বাসেনি। আমি তোকে বার বার বলতাম কিন্তু তুই কখনোই ট্রাস্ট করিসনি আমাকে।
মা সেই তোর নাবালক হওয়ার পর থেকেই সম্পত্তি পাওয়ার লোভে তোকে মারার চেষ্টা করতে থাকে।
ইলেক্ট্রিক শকে যে রাশুখালার মেয়ে নয়না মারা গিয়েছিলো আসলে সেদিন তার টা তোর জন্যে রাখা ছিলো।
গাড়ির ব্রেকফেইল হয়ে যে রাজু কাকা আহত হয়েছিলো সেই প্ল্যানটিও তোর জন্যই ছিলো। তোর রুমে বিষাক্ত পিপড়া ছেড়ে ছিলো যার কামড় আমি খেয়েছিলাম সেটিও তোর জন্যই ছিলো।
আর ওইদিন যে ভাবি সিঁড়ি থেকে পড়লো সেইদিন এর ফাঁদটিও তোর জন্যে ছিলো কিন্তু বেচারি ভাবি আমার পড়ে গেলো সেই সাথে তোদের সন্তানটাও।

আর আজ যে তুই ভাবিকে ভুল বুঝেছিস সোহান ভাইয়ের সাথে আসলে সোহান ভাই অনিমাকে ভালোবাসে। অনিমার বাবা-মাকে ওর ফুফি ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলার পর অনিমাকে প্রোটেক্ট করতে সোহান ভাই অনুকে সেদিনই বিয়ে করে নেন।সব দিকে ভাবি সাপোর্ট করেছিলো তাদের আর দিনশেষে তুই তোর সো কল্ড মায়ের কথা ধরেই ভাবিকে অবিশ্বাস করলি।সোহান ভাই আর অনুর হয়তো আবারো বড় করে বিয়ে করবে। এই দেখ ওদের বিয়ের কার্ড।

রাফি আফিফের দিকে কার্ড টা বাড়িয়ে দিলো। আফিফ কাঁপা কাঁপা হাতে কার্ডটা হাতে নিয়ে খুলে দেখে মেঝেতে বসে পড়লো। চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। রাফি ভাই এর এমন অবস্থা দেখে তাকে আর সামলাইনি। তার নিজের ও বুক ফেটে কান্না আসছে। আফিফকে নিজের মত ছেড়ে দিয়ে সে নিজের রুমে গিয়ে সিগারেট ধরালো। এরপর ব্যাল্কুনিতে গিয়ে মনের কষ্ট গুলো পোড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। তার চোখ দিয়েও জল গড়িয়ে পড়ছে। তার ও বেশ কাঁদতে ইচ্ছে করছে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কিন্তু পারছে না। তাই নিঃশব্দেই কেঁদে নেওয়া টাই তার শ্রেয় মনে হলো।

চলবে….

#Razia_Binte_SuLtan

[নুহাকে কি আফিফের কাছে ফিরিয়ে দেবো নাকি শাস্তি দেবো? সেটা আপনারাই বলুন। আগামী কয়েক পর্বের মধ্যেই শেষ করে দেবো গল্পটা তো নেক্সট নেক্সট না করে আজকে নাহয় আপনাদের মন্তব্য জানান।মন খুলে বলবেন ত্রুটি আর ভালোলাগা গুলো।
আসসালামু আলাইকুম❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here