সুখ – পর্ব ২১

0
410

#সুখ
#Part_21
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
সাকিব নীলিমাকে কোলে করে এনে বিছানায় শোয়ায়। নীলিমা বলে
-কেন এমন করছেন? কাটা গাঁয়ে নুনের ছিটা কেন দিচ্ছেন? (কাঁদতে কাঁদতে)
-আমি মোটেও কাটা গাঁয়ে নুনের ছিঁটা দিচ্ছিনা নীলু। আমি তোমার স্বামী। আমিই যা খুশি করতে পারি তোমার সাথে। সেই অধিকার আমি রাখি। এখন আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।
সাকিবের কথা শুনে নীলিমা উঠে যায় রাগে। সাকিব নীলিমার হাত ধরে আবার ওর কাছে নিয়ে আসে। একদম শক্ত করে ধরে রাখে নীলিমাকে। আর শান্ত গলায় সাকিব বলে
-এখনো কেন ভুলতে পারছো না ওইদিন? আমি তো ভুলে গেছি। সব ভুলে আমি তোমায় কাছে টেনে নিচ্ছি। তুমি কেন মানতে পারছো না সেইটা? কেন এইভাবে সরে সরে থাকছো আমার থেকে?
-আপনি অনেক ভাল জানেন? এতটা ভাল হয়ত আমার মা বাবা ও হত না ঠিক এই সময়ে। কিন্তু আপনি আমায় মেন্টালি অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। চির কৃতজ্ঞ আমি আপনার উপর। কিন্তু এইভাবে নিজেকে নিয়ে যেতে পারব না আপনার কাছে। নিজের কাছেই বাঁধছে। (চোখ থেকে পানি পরছেই)
-জীবনে উঠানামা থাকবেই তাই বলে কি আমরা আমাদের সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যাব নাকি? আমরা কেন আমাদের সম্পর্ক কে নষ্ট করব? যে তোমার ক্ষতি করেছে, আমার ক্ষতি করেছে সে শাস্তি পাবে কিন্তু সেই শাস্তি তুমি আমায় কেন দিচ্ছো? (নীলিমার হাত ধরে) যথেষ্ট বড় হয়েছো তুমি। এতটুকু বুঝার ক্ষমতা তো আছে যে চাইলেই একটা সম্পর্ক এই ইউজলেস বিষয় নিয়ে নষ্ট করা যায়না। তুমি এখন শুধু নীলিমা না। মিসেস আহম্মেদ, মাদার অফ টু ডটার, দুই ননদ, দেবরের ভাবি, কারো বউমা। একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে যদি এতগুলো সম্পর্ক কে আমি নষ্ট করি বা করতাম তাহলে সেইটা কি হাস্যকর হয়ে যেতো না? নাকি আমি নিজেকে মাফ করতে পারতাম?
নীলিমা আর কিছুই বলতে পারলো না। হোঁহোঁ করে কেঁদেই দিল। সাকিব নীলিমাকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। নীলিমা ও সাকিবের বুকে মাথা রেখে টি শার্ট খামচে ধরে কাঁদছে। সাকিব ভেবেছে কাঁদুক একটু। তাই ও আর আটকায় নি নীলিমাকে।
প্রায় ১০ মিনিট পর,
-এখনো কি কাঁদবে? কান্না হয়নাই? আমার টি শার্টের তো বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো চোখের পানি আর নাকের পানি দিয়ে।
-স্যরি। (চোখ মুছে নীলিমা মাথা তুলল)
-বাহ! তোমার ভারী কন্ঠটা তো অনেক মিষ্টি। খাই একটু?
-কি খাবেন?
-ওই কন্ঠটা।
-কন্ঠ খায় কিভাবে? (হাসি দিয়ে নীলিমা আর চোখে পানির ঝিলিক)
-দেখাবো কিভাবে খায়? তার আগে টি শার্ট টা খুলতে হবে। কি করছো দেখো। মনে হচ্ছে আইলা হয়ে গেছে আমার বুকের উপর দিয়ে। (টি শার্ট খুলতে খুলতে সাকিব)
-নীলিমা এইবার জোরেই হেসে দিল। নীলিমা খাট থেকে উঠে যেতে নেয় তখন সাকিব বলে,
-কোথায় যাচ্ছো?
-আপনার জন্য টি শার্ট নিয়ে আসি।
-না লাগবেনা। এইভাবেই ভাল লাগছে।
-এত্ত লোম কেন বুকে?
-এই প্রশ্নটা আমারো জানো? এত্ত লোম কেন বুকে?
-কি আজব। (নীলিমা এইবার খাটে বসলো)
সাকিব গিয়ে নীলিমার পায়ের উপর শুয়ে পরলো। নীলিমার হাত নিয়ে চুমু দিল। নীলিমা বলল,
-আচ্ছা তুলির আব্বু আপনি এত ভাল কেন? এত ভাল কি মানুষ হয়?
-এই তুমি কি বললা? রিপিট কর। (নীলিমার দিকে তাঁকিয়ে সাকিব)
-বলেছি আপনি এত ভাল কেন?
-না কি বলে সম্বোধন করলা?
-তুলির আব্বু বলেছি।
-কখনই শুনিনি কেউ তুলির আব্বু বলেছে। নারী তুমি আর কতভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করবা বল? তোমার প্রেজেন্টেশন তো একটার থেকে আরেকটা জোশ।
-নারী হইনি এখনো। মেয়ে ই আছি।
-মেয়ে তো হয় তারা যাদের বিয়ে হয়না। তুমি এখন বউ আছো। আর বউ নারীই হয়। বুঝেনা কিছু।
-বুঝানোর জন্য আপনি আছেন তো!
-তা আর বলতে। তোমার ওড়নাটা তো বারান্দায় ফালায় দিয়া আসছি। হিহিহি। (হাসতে হাসতে সাকিব)
-এখন নিয়ে আসেন যান। (মুখ বাঁকিয়ে নীলিমা)
-না এখন আর এনে লাভ নেই। আনলেও পড়তে তো আর পারবানা। (শয়তানি হাসি দিয়ে সাকিব)
-বদ লোক।
-একটু আগে না বললা আমি ভালো মানুষ!
-একটু আগের ঘটনার জন্য বলেছি আপনি ভাল মানুষ। এখন কার ঘটনার জন্য বলছি বদ মানুষ। দুই ঘটনার প্রেক্ষিতে আপনি দুই রকম। যাইহোক শেইভ করেন না কেন? কেমন দেখা যায়? যখন কিস করতাছিলেন তখন তো খোঁচা খেয়েছি।
– বিরহে ছিলাম নারী! বিরহ থেকে আমায় বের করে নিয়ে আসো আবার শেইভ করব। (আবার হাসতে হাসতে সাকিব)
-এই যে ভন্ড কবি আমি কিভাবে আপনাকে বিরহ থেকে বের করে আনতে পারি?
-ভন্ড কবি? 😱😱 আমি অবাক! কি নিকনেইম বাহ! আর তুমি কি জানো না কিভাবে আমাকে বিরহ থেকে বের করে নিয়া আসবা?
-জানলেও করব না। (মুখ বাঁকিয়ে নীলিমা)
-আমিই করে নিচ্ছি।
সাকিব বালিশের উপর শুয়ে নীলিমাকে টান দিয়ে ওর বুকের উপর ফেলে। নীলিমার চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়। এরপর নীলিমার কানে কিস করে। সাকিবের আদর নিতে নিতে নীলিমা ভাবছিলো
-ও মানুষ হতেই পারেনা। ও ফেরেশতা আমার জন্য। এত কিছুর পরেও যে আমার সাথে মজা করে আমার মন ভাল করার জন্যে তার সাথে চোখ বন্ধ করে সাগরে ডুব দেওয়া যায় বিশ্বাস রেখে।
পরেরদিন সকালে,
সাকিবের ঘুম ভেঙে যায় কাঁচ ভেদ করে আসা আলোর জন্য। চোখ ডলতে ডলতে সাকিব তাঁকায়। নীলিমা ওর বুকের উপর শুয়ে আছে। কি ঘুম ঘুমাচ্ছে যে এই আলোতেও ওর ঘুম ভাঙছে না! ঠোঁটের মিষ্টি কালারটা আর নীলিমার নাকটাই ভাল লাগে সাকিবের কাছে। রোদের আলোতে ওর নাকফুলটা চিকচিক করছে। আর ঠোঁট গুলোও সুন্দর লাগছে। ভয়ঙ্কর রকমের সুন্দর যাকে বলে! সাকিব ওর হাত নীলিমার পেছনে নিয়ে ওকে আরো কাছে নিয়ে আসে। এক চাদরের নিচেই দুইজন।
-নীলু?
-নো রেসপন্স।
-নীলু? উঠবানা?
-একটু ঘুমাই না প্লিজ। অনেক ঘুম পেয়েছে।
-আটটা বাজে জানো? আরো ঘুমাবা? (নীলিমার গালে চুমু দিয়ে)
-হ্যা আরো ঘুমাবো। (চাদর টান দিয়ে পুরোটাই নিজে গায়ে দিল নীলিমা)
-আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। জাস্ট ১৫ মিনিট ঘুমাতে দিয়ে গেলাম।
-হুম।
সাকিব যাওয়ার সময় কাঁচের দেয়ালের পর্দা টেনে দেয় যাতে রোদ না আসে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তখনো উঠেনি নীলিমা। সাকিব নীলিমাকে ডাকলো কিন্তু উহুম উহুম করতে করতেই আরো দশ মিনিট শেষ। শেষে সাকিব চাদর গায়ের থেকে সরিয়ে নীলিমাকে কোলে নিয়ে বাথরুমে ঢুকালো। বাথরুমের ফ্লোরের উপর দাঁড় করিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিল। নীলিমা এইবার ভালভাবে চোখ খুলল।
-এইটা কি করলেন আপনি? (ভিজতে ভিজতে নীলিমা)
-ভালই করেছি। উঠছিলে না তো।
-ভ্যাএএএএএএ। আপনি অনেক খারাপ।
-এই যে তোমার জন্য আমাকে দুইবার গোসল করতে হচ্ছে।
-ভালই হয়েছে। একদম ঠিক হয়েছে। দাঁড়ান বাকিটা আমি দেখছি।
নীলিমা একটা শ্যাম্পুর বোতল নিয়ে পুরোটা সাকিবের মাথায় ঢেলে দিল। সাকিব তো অনেক লম্বা তাই নীলিমার সুবিধার্থে সাকিব নীলিমাকে উঁচু করে যাতে ওর ঢালতে সুবিধা হয়। সাকিবের মাথায় শ্যাম্পু ঢেলে দিয়ে নীলিমা বলে
-হয়ে গেছে এখন আমাকে নামান।
-এখন চুলে ঘষো এই শ্যাম্পু। নাইলে নামাবো না।
-পারবো না আমি ঘষতে। নিজের টা নিজে করে নিন।
-তুমি পারবে সাথে তোমার ঘাড় ও পারবে।
সাকিব নীলিমাকে নামিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল বাথরুমের। এরপর একটা বডি ওয়াশের বোতল নিয়ে নীলিমার শরীরে মাখিয়ে দিল। কি পিচ্ছিল রে বাবা! নীলিমা সাকিবকে শেইভ করিয়ে দিল। সাকিব তো ভয়ে শেষ যদি ওর গাল কেটে দেয়। কিন্তু ভালভাবেই সাকিবকে শেইভ করিয়ে দিল। একফোটা কাটেও নি কোথাও। সাকিব বলে
-দোয়া করি পরের জন্মে নাপিত হয়ে জন্ম নাও। (হাসতে হাসতে সাকিব)
এইটা শুনে নীলিমা শ্যাম্পুর বোতল দিয়ে ইচ্ছেমতো পিটায় সাকিবকে আর বলে
-পরের জন্ম থাকলে আপনারই বউ হব।
-যাতে আমার দাঁড়ি কাটতে পারো। হাহাহা
ফাইজলামি করতে করতে এক ঘন্টা পর দুইজন বেরিয়ে এলো। এর মাঝে রোম্যান্স ও চলেছে দ্বিগুন। দুইজন রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে গেলো। ব্রেকফাস্ট করে লনে গিয়ে বসলো দুইজন। নীলিমা সাকিবের হাত জড়িয়ে রেখেছে নিজের হাত দিয়ে। সাকিব বলে
-কালকে এসে বিচে গোসল করব।
-আমি সাঁতার জানিনা।
-আমি তো জানি। আমি ধরে রাখবো তোমায়।
-আচ্ছা।
-ডাব খাবা?
-হ্যা।
সাকিব উঠে গিয়ে দুইটা ডাব নিয়ে আসে। একটা নীলিমাকে দেয় আরেকটা ও নেয়। দুইজন মিলে ডাব খাচ্ছিলো আর কতগল্প করছিলো।
-এখানে সব কাপল ই আসে? (নীলিমা)
-হ্যা। এত সুন্দর জায়গায় একা এসে কি করবে?
-আসলেই জায়গা টা সুন্দর।
-বিকেলে ঘুরতে বের হব। তানহার প্রিয় জায়গা ছিল কক্সবাজার।
-ও! কোথায় কোথায় ঘুরেছেন আপুকে নিয়ে।
-মোটামোটি সব জায়গায়।
-ও।
-আমাকে এখন যেমন নিরামিষ দেখছো এতটা নিরামিষ আমি ছিলাম না। রোম্যান্স, স্টাইল, বাঁদড়ামি, ছ্যাচড়ামি সব কিছুর হেড ছিলাম আমি। ফ্রেন্ড সার্কেলে সবাই আমায় শয়তানের লিডার বলে ডাকত।
-তাহলে এখন নিরামিষ কেন? নাকি এখন বউ নেই? (মুখ বাঁকিয়ে নীলিমা)
-হাহাহা! না এখন আবার আমিষ হয়ে যাব।
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here