সুখ – পর্ব ২০

0
301

#সুখ
#Part_20
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

নীলিমা আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে সাকিবের জন্য কফি নিয়ে গেলো। সাকিব তখন চুপচাপ বসেছিলো খাটের উপর। আজ সাকিব বই ও পড়ছে না। নীলিমা এসে সাকিবকে কফি দিলো।

-ঘাড়ে মলম লাগাও। বাজে লাগছে দেখতে। (সাকিব)

নীলিমা কিছু না বলেই ঘাড়ে মলম লাগালো। খুব বেশি বিরক্তের ছাপ নীলিমার মনে। সকালে আম্মুকে ওষুধ খাওয়াতে যাবে কিন্তু আম্মু খায়নি নীলিমার হাতে ওষুধ। সাকিব জানেনা সেইটা। কফি খেয়ে সাকিব ড্রইংরুমে যায়। আয়ান ও বসে সাকিবের সাথে। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলো দুই ভাই। আয়ান বিজনেস করতে চায় সেই বিষয়েই কথা বলছিলো দুইজন। এমন সময় সুহানা প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য বের হয়। আয়ান সুহানাকে আটকায়।

-সুহা দাঁড়া। কোথায় যাচ্ছিস তুই? (আয়ান)
-প্রাইভেটে।
-ড্রেস টা পালটে আয়। জিন্স আর এই শার্ট পরে যে যাচ্ছিস কেমন লাগছে নিজেকে দেখছিস? স্যরি তোর বিষয়ে কথা বলার জন্য। বাট ভাই হিসেবে দায়িত্ব আছে আমার। ড্রেস পালটে আয় আমি নিজে দিয়ে আসছি তোকে।
-কিন্তু আয়ান আমি তো এই ড্রেসই পরি।
-আজ থেকে পরবিনা।
-সুহা আয়ান ঠিকই বলেছে। সাবধানে থাকো কেউ চাইলেও ক্ষতি করতে পারবেনা। আয়ান দিয়ে আসবে তোমাকে যাও। (সাকিব)
-আচ্ছা ভাইয়া।

সুহা ড্রেস চেঞ্জ করে গেলো কোচিং এ। আয়ান নিজে দিয়ে আসলো বাইকে করে সুহানাকে। সুহানা ও খুশি হলো ভাইয়াদের এমন কেয়ারিং দেখে। কোচিং শেষ হলে আবার আয়ান গিয়ে নিয়ে আসবে। নীলিমা সেইদিন আর ঘর থেকে বের হয়নি। কাজের মেয়েই সব রান্না করেছে। নীলিমার মা বাবা ও চলে যায় সেদিন। বিকেলের দিকে নীলিমার ঘাড়ের দাগগুলো চলে যায়। দুপুরে সাকিব থানায় যায় ইশতিয়াকের সাথে দেখা করতে। সাকিব ইশতিয়াককে বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে নীলিমাকে রেইপ করার জন্য। সাকিব একজন নামকরা উকিল ঠিক করে ইশতিয়াকের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য। সেই কেইস লড়বে ইশতিয়াকের এগেইনস্ট এ। ইশতিয়াকের সাথে দেখা করে আসার পর মাথা ঠিক নেই সাকিবের। এইদিকে স্কুলের প্রত্যেকটা বাচ্চা জানে ইশতিয়াকের স্যার এর নামে কিন্তু কেউ জানেনা কাকে রেইপ করেছে। প্রিন্সিপাল ম্যাম ইশতিয়াক স্যারকে ধিক্কার জানিয়েছেন। কিন্তু এতে তো আর নীলিমা যা হারিয়েছে তা ফিরে পাবেনা। সাকিব যত চাইছে ব্যাপারটা ঘোলাটে না করতে কিন্তু ব্যাপারটা ততই ঘোলাটে হচ্ছে। আস্তে আস্তে সবাই জেনে যাচ্ছে। কয়জনের মুখ বন্ধ করবে সাকিব? মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওর। ইদানীং যা নয় তা ব্যবহার করে ও মেয়েদের সাথে। নীলিমা ও এখন খুব কমই যায় সাকিবের সামনে। কারণ সাকিব ইদানীং খুবই বিরক্ত থাকে। এর মাঝে নীলিমা একদিন বাধ্য হয়ে সুইসাইড করতে গিয়েছিলো। সুহানা দেখে আটকায়। সেদিন সাকিব নীলিমাকে থাপ্পর মারে। শুধু থাপ্পর না খুব জোরেই মারে। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে সাকিব বলে

-কার জন্য আমি লড়ছি পুরো দুনিয়ার সাথে? সাহস হয় কি করে তোমার সুইসাইড করতে যাও?

নীলিমা সেদিন আর কিছু বলতে পারেনি। নিজেকে পুরোপুরি ঘরের মধ্যে গুটিয়ে নিয়েছে নীলিমা। মেয়েদের সাথেও ঠিক করে কথা বলেনা। প্রায় দুইমাস কেটে যায়। ইশতিয়াক তখনো জেইল এ। ওর কেইসের রায় হয়নি। একদিন সাকিব অফিস থেকে বাসায় এসে নীলিমাকে ড্রইংরুমে ডাকে। সবাই আসে তখন ড্রইংরুমে। সাকিব সবার সামনে বলে

-আগামীকাল আমি নীলিমাকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাব। কক্সবাজার যাব এক সপ্তাহ এর জন্য। রিফ্রেশমেন্ট দরকার আমারো আর ওর ও। আয়ান আর সুহানা তুলি আর তিশার দায়িত্ব কিন্তু তোদের উপর। দেখিস তোরা। আর আম্মু(মেয়েদের উদ্দেশ্য করে) তোমরা ভালভাবে থেকো। আম্মু তুমিও সাবধানে থেকো।
-কর তোমার যা ইচ্ছা। (সাকিবের আম্মু)

নীলিমাকে নিয়ে আবার তখনি সাকিব ঘরে চলে আসে।

-সবকিছু গুছিয়ে নাও। কালকে সকাল সকাল ই বের হব। আমার গাড়িতে যাব না। এতদূর গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা আমার নেই। বাসে যেতে হবে। এই নাও বাসের টিকিট। এসি বাস সমস্যা হবেনা।

গত দুইমাস দুইজন কেউ কারো সাথে ঠিক করে কথাও বলেনি। নীলিমা খাটের এক কোণায় পরেছিলো আর সাকিব আরেক কোনায়। বেশিরভাগ সময়ই মেঝেতে বসেছিলো সাকিব। রাতগুলো যে কতটা কষ্টে কেটেছে দুইজনের তা দুইজনের মন ই জানে। নীলিমা সবকিছু গুছিয়ে নিলো কিন্তু সাকিব কি নিবে সেইটাই তো জানেনা। সাকিব তখন ওর জামাকাপড় এনে নীলিমাকে দিল। নীলিমা সেইগুলো ভাঁজ করে ট্রলিতে ঢুকালো। সব গোছানো শেষ করে নীলিমা সাকিবকে খাবার এনে দেয়। কোনোরকম খেয়েই সাকিব শুয়ে পরে। এখন আর বই পড়ুয়া ছেলেটা বই ধরেও দেখেনা। নীলিমা বুঝে ওর কষ্ট টা। শত হলেও ওর বউ। আর কোনো স্বামীই ধর্ষিতা বউকে তার পাশে দেখতে চায়না। কিন্তু সাকিব যে কেন এমন করছে তা সাকিব ই জানে! ঘরে বাইরে সবকিছু তো এখন ওকে শুনতে হয়। আর কত মাথা ঠিক রাখবে? সারারাত ঘুমায়নি দুইজনের এক জন ও। টুকটাক কথা হয়েছে দুইজনের।

পরেরদিন সকালবেলা নীলিমাকে শাড়ি পরতে বললো সাকিব কিন্তু এক ফোটা ও সাজতে নিষেধ করলো। শুধু মুখে একটু পাউডার লাগালো নীলিমা আর কিছুইনা। চুলগুলো নিচু করে খোঁপা করলো। শাড়ির আচল ঘাড়ে উঠিয়ে দিল সাকিব যাতে পিঠ দেখা না যায়। ব্লাউজের হাতা চুরিদার তাই আর শরীরের কোনো অংশ দেখার চান্স নাই। সবাইকে বাই বলে ওরা চলে গেলো। তুলি তিশার মন খারাপ ছিল কিন্তু খুশিও হয়েছে যে বাবা মা কোথাও যাচ্ছে একসাথে সময় কাটাতে। অনেকটা দূরত্ব হয়ে গিয়েছে যে! সাতটায় বাস ছাড়বে। আয়ান গাড়ি করে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে ছেড়ে দিয়ে আসে ওদের। বাস ছাড়া না অবদি আয়ান সেখানেই ছিল। বাস ছাড়ার পর চলে গেলো আয়ান।

-আমি জানালার পাশে বসি? (নীলিমা)
-আসো।

সাকিব জায়গা চেঞ্জ করে নীলিমাকে জানালার পাশে দিল। ভেবেছিলো রাতে যাবে কিন্তু রাতে যাওয়াটা রিস্কি। আর কোনো রিস্ক সাকিব নিতে চায় না নীলিমাকে নিয়ে। সেদিন সন্ধ্যার পরে ওরা গিয়ে কক্সবাজার নামে। সারারাস্তা সাকিবের কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়েছে নীলিমা। না ঘুমাতে ঘুমাতে চোখে কালি পরে গেছে একদম। কক্সবাজার নেমে একটা সিএনজি নিয়ে হোটেলে আসে ওরা। একটা রুম বুক করেছিলো সাকিব। সেই ঘরেই এসে উঠলো ওরা। ঘরটা বেশ সুন্দর। এসি ও আছে। সাকিব দরজা লাগিয়ে দিয়ে নীলিমাকে বলল ফ্রেশ হয়ে আসতে। নীলিমা ফ্রেশ হয়ে এসে একটা লং ড্রেস পরে চুরিহাতার। সাকিব ও চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসে। এরপর দুইজন মিলে ডিনার করে আসে। ডিনার শেষ করতে করতে রাত ১০ টা বেজে যায়। ঘরে এসে দরজা লক করে খাটে বসে পরে নীলিমা। সাকিব ও নীলিমার পাশে বসে। সাকিব নীলিমার একহাতের উপর নিজের হাত রাখে। নীলিমা চমকে গিয়েই তাঁকায় সাকিবের দিকে। নীলিমার হাত নিজের হাতে নিয়ে হাতের আংটিগুলো নাড়ছিলো আর বলছিলো

-স্যরি! এই দুইটা মাস অনেক কিছু সহ্য করেছো তুমি। আমিও তোমায় সময় দেইনি। তোমায় নিয়ে ভাবিনি। আসলে আমিও খুব ভেঙে পরছিলাম। চারপাশের মানুষের এত বাজে কথা জাস্ট নিতে পারছিলাম না। প্রচন্ড মানসিক চাপে ছিলাম। (সাকিব)
-বুঝেছি সেইটা আমি। কি করবেন বলেন ধর্ষিতা তো! সত্যি তো এইটাই।
-নিজেকে আমার সামনে এইভাবে ধর্ষিতা বলছো? এতটুকু সাহস তোমার আছে?
-ছিল না, হয়েছে।

নীলিমা সাকিবের থেকে হাত ছাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। বারান্দাটা খোলা। বেশ সুন্দর। সাকিব নীলিমার পিঠে হাত রেখে দাঁড়ায়। এরপর নীলিমাকে নিজের সামনে এনে জিজ্ঞেস করে

-চলে এলে কেন?
-ভাল লাগছেনা কিছু।
-তোমায় তো ভার্সিটিতে এডমিট করানোর কথা ছিল। আয়ান কালকে করে দিবে। (কথা ঘুরিয়ে সাকিব)
-ও!
-আমার একটা কথা রাখবা?
-কি?
-আমায় একটা বেবি দিবা?

সাকিবের এই কথাশুনে নীলিমা পারছেনা মরে যেতে! কি বলল ও! ও কিভাবে নীলিমার কাছ থেকে বেবি চায়? ওর কি মনে নেই যে আমি ধর্ষিতা?

-কি হলো দিবা না? (সাকিব)
-আপনি ভুল করছেন। কার কাছে বেবি চাইছেন আপনি?
-আমার বউয়ের কাছে। আর কার কাছে বেবি চাইবো?

এই কথা শুনার পর কিছুক্ষণ নীলিমা চুপ ছিল। সাকিব তখন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নীলিমার শরীর থেকে ওড়না টা সরিয়ে নিচে ফেলে দিল। নীলিমার গালে আর ঘাড়ে কিস করে পাগল করে ফেলছিলো নীলিমাকে। নীলিমা আটকাতে চাইছে ওকে কিন্তু পারছেনা। সাকিব নীলিমাকে বলে

-আটকিয়ো না আমায় প্লিজ।

নীলিমাকে কোলে নিয়ে ঘরে চলে আসে সাকিব।

-কেন করছেন এমন? কেন কাটা গাঁয়ে নুনের ছিটা দিচ্ছেন? (চোখ দিয়ে পানি পরছে নীলিমার)
-আমি মোটেও নুনের ছিটা দিচ্ছিনা নীলু। আমি তোমার স্বামী। যা ইচ্ছা আমিই করতে পারি তোমার সাথে। জাস্ট চুপ। আর কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here