ঘায়েল – পর্ব ১৩

0
221

#ঘায়েল
#পর্ব_১৩
#Saji_Afroz
.
.
.
পুনমের উদ্দেশ্যে রানবী বলে উঠলো-
চলে এসেছো! আসো।
.
পুনম ভেতরে এসে মা বাবার উদ্দেশ্যে বললো-
এই ছেলেটা এখানে কি করছে?
.
আফরোজা ইসলাম বললেন-
সে তোকে নিয়ে যেতে এসেছে।
.
পুনম অবাক হয়ে বললো-
নিয়ে যেতে এসেছে মানে টা কি! আমি তো যাবোনা কোথাও।
.
-প্রেম করার সময় সেটা মনে ছিলোনা?
.
বাবার কথা শুনে পুনম বললো-
আমি ওর সাথে প্রেম করিনি আব্বু! কোনো সম্পর্ক আমার ওর সাথে ছিলোনা।
-ও তাই! তা প্রমাণ আনতে পেরেছিস সেটার? সেতো যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছে তোদের সম্পর্কের। ফোনে কথা বলা, দেখা করা, ছবি তোলা। কয়েকদিনেই এতোকিছু! মাহিমও বললো, তোদের একসাথে দেখেছে সে।
.
মাহিমের দিকে তাকিয়ে পুনম বললো-
ভাইয়া তুমি তো পার্কে ছিলে সেদিন? আর তোমাকে জিম্মি করে রানবী আমাকে বিয়েটা করেছে। এটা অস্বীকার করবে?
.
মাহিম শান্ত গলায় বললো-
না করবো না। তবে এটাও অস্বীকার করা যাবেনা যে তোদের সম্পর্ক ছিলো। তুই আমার কাছে ধরা খেয়ে রানবী কে রাগের বসে থাপ্পড় মেরে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চেয়েছিস। আর তাই রানবী জেদের বসে বিয়েটা করে ফেলেছে এভাবে। অন্যায় তো তোরই! সবটা স্বীকার করলেই পারতি।
-ভাইয়া!
-নুসাইবা নামের একটা মেয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বললাম এখন। সে নাকি তোর সিনিয়র আপু হয়। তোর বান্ধবী সুইটির সাথেও কথা বলেছি। রানবীর বন্ধুরা নাহয় মিথ্যে বলছে কিন্তু এই মেয়ে দুটো? তারাও কি মিথ্যে বলছে? তারা বলেছে তোদের মাঝে সম্পর্ক ছিলো।
.
কথাটি শুনে পুনম পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে রানবীর দিকে।
নুসাইবা ও সুইটি কে দিয়ে মিথ্যে বলতে বাধ্য করেছে এই ছেলে।
পুরো পরিবারের কাছে তাকে ছোট বানিয়ে দিলো রানবী।
জাহারা ফিসফিসিয়ে বললো-
ভাবিস না। আমি কোনো না কোনো উপায় নিশ্চয় বের করবো। তুই না চায়লে কেউ তোকে জোর করে রাখতে পারবেনা। ডিভোর্স হবেই তোদের।
.
রানবী পুনমের সামনে এসে বললো-
হতে পারে অনেক দিনের সম্পর্ক না আমাদের টা। কিন্তু এই কয়েকদিনেই তো দুজনে অনেক ভালোছিলাম তাইনা? আর রাগ করোনা। চলো বাসায়।
.
মাহাফুজ ইসলাম বললেন-
কেনো যাবেনা! নিশ্চয় যাবে। এতো নাটকের কোনো মানে হয়!
.
.
.
বাসায় পুনম কে নিয়ে ফিরে এলো রানবী।
নিজের রুমে তাকে এনে বিছানার উপর বসিয়ে বললো-
আমি না বলা পর্যন্ত এখান থেকে উঠবে না।
.
কথাটি বলেই রুমের বাইরে বেরিয়ে গেলো রানবী।
যাবার সময় দরজা টা ঠাশ করে বন্ধ করে দিলো।
.
পুনম চেঁচিয়ে বললো-
দরজা কেনো বন্ধ করলি তুই? আমি কি আসামী!
.
পুনমের চেঁচানোর শব্দে বাসার সকলেই তার রুমের সামনে চলে এলো।
খায়রুন রানবীর উদ্দেশ্যে বললো-
মেয়েটাকে এভাবে বন্ধ করে রেখেছিস কেনো?
-এখন থেকে এভাবেই থাকবে ও। যেনো আর পালাতে না পারে। ওসব ছাড়ো। আমাকে নাস্তা দাও ওর জন্য। কাল থেকে কিছু খায়নি সে।
.
.
খায়রুন খাবার দিতেই প্লেট নিয়ে ভেতরে আসলো রানবী।
সে দেখলো, পুনম রুমটা পুরো অগোছালো করে ফেলেছে।
বাচ্চার মতো রুমের এক কোণায় বসে নিজেনিজে বিড়বিড়িয়ে কি যেনো বলছে।
রানবী তার পাশে এসে বসলো।
কানটা তার মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে, বোঝার চেষ্টা করলো সে কি বলতে চায়ছে।
পুনম রাগে গিজগিজ করে বললো-
কানটা সরা, নাহলে কামড় বসিয়ে দিবো।
.
রানবী দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বললো-
ইশ! দাওনা প্লিজ একটা কামড়।
.
পুনম উঠে যেতে চাইলে রানবী তাকে উঠতে দিলোনা।
শান্ত স্বরে বললো-
উঠবেনা এখান থেকে। বসে খাবার খাবে এখন। উঠলে কিন্তু ক্ষতি তোমারই হবে।
-কি ক্ষতি?
-কামড় কিন্তু আমিও দিতে জানি।
.
চুপ হয়ে গেলো পুনম।
রানবী এক টুকরো রুটিতে কিছু ভাজি নিয়ে, পুনমের মুখের দিকে এগিয়ে নিলো।
সে চুপচাপ খেয়ে নিলো।
রানবী বললো-
ভালো মেয়ে!
.
এভাবে কয়েকটুকরো খাবার পরেই আচমকা রানবীর হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে, মেঝেতে সেটি ছুড়ে ফেললো পুনম।
রানবী হতাশ কণ্ঠে বললো-
এটা কি করলে! কাল থেকে কিচ্ছু খাচ্ছোনা। এমন হলে শরীর খারাপ হবেনা?
-আমি মরে গেলেও তোর কি?
-আমার অনেক কিছু।
-প্লিজ যা এখন এখান থেকে। আমি একটু একা থাকতে চাই।
.
.
.
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেলো।
রানবী রুমে এসে রুমটা গুছিয়ে দিলো। পুনম তখন ওয়াশরুমে ছিলো।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে রুমটা আবার এলোমেলো করে দিলো সে।
রানবী কোনো কথা না বলে চুপচাপ চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
পুনমের ফোনটা বেজে উঠলো।
স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো তার চট্রগ্রামের বান্ধবীর ফোন।
একটু আগেও তার সাথে কথা হয়েছিলো।
পুনম রিসিভ করে বললো-
হ্যালো।
.
ওপাশ থেকে বললো-
তোর লাই কইলজ্জা পুরের, এতাল্লাই আবার ফোন গইজ্জি। (তোর জন্য কলিজা পুড়ছে, তাই আবার ফোন দিয়েছি)
-বুইজ্জি। তোরেও মিস গরির। ( বুঝেছি। তোকেও মিস করছি)
-তোর জামাই ইবে কন্ডে? (তোর স্বামী টা কোথায়?)
-ইতের কথা আর নো হইস! আরে জ্বালায় শেষ গরি ফেলার শয়তান ইতে। (ওর কথা আর বলিস না! আমাকে জ্বালিয়ে মারছে শয়তান টা)
.
শয়তান!
এতোক্ষণ কিছু না বুঝলেও এটি রানবী ভালোভাবেই বুঝেছে।
পুনমের কাছে এসে রানবী বললো-
হাবিজাবি ভাষায় কাকে আমার নামে বাজে কথা শুনাচ্ছো?
.
পুনম তার বান্ধবীর উদ্দেশ্যে বললো-
তোরে পরে ফোন গইরজ্জুম। (তোকে পরে ফোন দিবো)
.
ফোনের লাইন কেটে রানবীর দিকে তাকিয়ে পুনম বললো-
এটা কোনো হাবিজাবি ভাষা নয়। আমাদের চট্রগ্রামের ভাষা। আর
তোর নামে বাজে কথা বলছি মানে?
-হুম বলছো। শয়তান বলেছো আমাকে।
-চট্রগ্রামের ভাষা বুঝিস তুই?
.
মাথাটা চুলকিয়ে রানবী বললো-
নাহ।
-তাহলে কিভাবে সিউর হলি! যত্তসব। উফফ কেনো যে তোর চোখে পড়েছিলাম আমি! দূর হয়ে যেতে পারছিস না কেনো তুই? আমি তোকে সহ্য করতে পারছিনা।
.
খানিকক্ষণ চুপ থেকে পুনমের অনেকটা কাছে এসে, রানবী একটু গম্ভীরভাবেই বললো-
তোরে পুরি ফেলাবার চেলেও পুরি ফেলে নপারং। বানা তোরে হোচপাং।
.
কথাগুলো বলে রানবী বেরিয়ে গেলো রুম ছেড়ে।
পুনম নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে, বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো কি বলে গেলো রানবী।
‘পুরি ফেলাবার’ মানে? রানবী কি তাকে পুড়ে ফেলবে বলতে চায়লো ঢাকাইয়া ভাষায়!
এইজন্যই বুঝি রুমের বাইরে যেতে দিচ্ছেনা তাকে?
.
.
.
বেশকিছুক্ষণ পরে পুনমের কাছে খায়রুন এসে, রুমের অবস্থা দেখে রুমটা গোছাতে শুরু করলো।
পুনম তার উদ্দেশ্যে বললো-
আচ্ছা ভাবী? তুমি ঢাকার মেয়ে তো?
-হুম, কেনো বলছো?
-না মানে ঢাকার ভাষা জানো কিনা…
-খাটি ঢাকাইয়া আমি। তুমি শিখবে নাকি?
-নাহ। তবে একটা কথার অর্থ জানতে চাই।
-কি বলো?
-আমি তোমাকে পুড়িয়ে মারবো। এটা তোমাদের ভাষাতে কিভাবে বলে?
.
বিছানার চাদর ঠিক করতে করতে খায়রুন বললো-
আমি তোমারে পুড়াইয়া মারবো বলে।
.
পুনম নিজের মনে বললো-
কই মিললো নাতো! তবে রানবী তার সাথে কোন ভাষায় কথাটা বললো? চাইনিজ ভাষা? নাকি হাবিজাবি ইচ্ছেমতো বলে দিয়েছে?
.
খায়রুন তার দিকে এগিয়ে এসে বললো-
হঠাৎ এটা জানতে চাইছো?
-না এমনিতেই।
-যাই হোক, রুম আর অগোছালো করিওনা। রানবীর অগোছালো রুম পছন্দ নয় একেবারে।
.
.
রুম থেকে বেরিয়ে খায়রুন ড্রয়িংরুমে আসলো।
সকলে আড্ডায় মেতে ছিলো।
খায়রুন রানবীর দিকে তাকিয়ে বললো-
পুনম আমার কাছে জানতে চায়লো, ঢাকাইয়া ভাষাতে ‘আমি তোমাকে পুড়িয়ে মারবো’ কে কিভাবে বলে। এটা জানতে চায়লো কেনো সে?
.
খায়রুনের কথা শুনে খানিকক্ষণ চুপ থেকে, আচমকা হো হো শব্দে হেসে উঠলো রানবী।
তার ছোট বোন রিমা বললো-
কি হয়েছে রে ভাইয়া?
.
রানবী হাসতে হাসতেই বললো-
আমি এক চাকমা বন্ধুর কাছ থেকে চাকমা ভাষায় কিছু কথা শিখেছিলাম। আর আজকে পুনমকে বলেছি চাকমা ভাষায়,
তোরে পুরি ফেলাবার চেলেও পুরি ফেলে নপারং। বানা তোরে হোচপাং।
.
সাবিনা বললো-
এসবের মানে কি?
-মানে হলো, তোমাকে ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারিনি। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।
.
হাসতে হাসতেই রানবী আরো বললো-
পুনম এসব ঢাকাইয়া ভাষা মনে করেছে। আর তাই ভাবীর কাছে এসব জিজ্ঞাসা করেছে।
.
কথাটি শুনে রানবীর মা সহ সকলে হাসতে লাগলো।
.
এদিকে আড়াল থেকে তাদের কথাপোকথন শুনে রুমে ফিরে এলো পুনম।
খায়রুন বেরুনোর সময় দরজা বন্ধ করেনি। তাই সহজে সে বের হতে পেরেছে। বড্ড পানির পিপাসা পেয়েছিলো।
কিন্তু রানবীর কথা শুনে যেনো পিপাসাও চলে গেলো।
এতো বড় বোকা বানালো রানবী তাকে!
.
বিছানার উপর বসে পড়লো পুনম।
রাগে তার শরীর কাঁপছে। যেমন রানবী অদ্ভুত তেমন তার পরিবারও।
আচ্ছা, সেদিন রানবী তাদের ভেতরে নিয়ে এমন কি বললো?
যাতে সবাই রানবীর উপর রাগ না করে ওর পাগলামো মেনে নিচ্ছে? এতে কি লুকিয়ে রয়েছে কোনো রহস্য?
.
.
.
রাত ৮টা…
রানবী রুমের ভেতর আসতেই পুনম তার পাশে এসে বললো-
মুই তোরে বিষ দেগং। (আমি তোমাকে ঘৃণা করি)
.
রানবীর কথাটি বুঝতে অসুবিধে হলোনা।
পুনমের কথা শুনে হাসতে হাসতে রানবী জিজ্ঞাসা-
কিভাবে জানলে এটা?
-গুগোলের কামাল।
-শিখেছোই যখন ভালো কিছু শিখতে।
-বয়েই গেলো আমার।
-যাই হোক, তোমার বাড়ির লোক এসেছেন দেখা করতে।
.
দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলেন পুনমের ফুফু জাহারা।
তাকে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো পুনমের
তিনি তখন বলেছিলেন, ডিভোর্সের কোনো উপায় নিশ্চয় তিনি বের করবেন।
তবে কি উপায় পেয়েছেন বলেই পুনমের কাছে এসেছেন তিনি?
.
(চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here