ঘায়েল – পর্ব ৫

0
157

#ঘায়েল
#পর্ব_৫
#Saji_Afroz
.
.
.
আকিব রা তাদের দিকে এগিয়ে যেতে চায়লে বাধা দিলো রানবী।
মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো-
কিচ্ছু হবেনা। দূর থেকে শুন কি বলছে।
.
তারা একটু পাশে গিয়েই শুনতে পেলো, নুসাইবা পুনমের উদ্দেশ্যে বলছে-
রানবী ভাইয়ার মতো কলেজে দুটো ছেলে নেই আর।
.
কথাটি শুনেই রনি বললো-
শুরু হয়ে যাচ্ছে তোর বদনাম।
.
রানবী বললো-
শুন পরের লাইন টা কি বলে নুসাইবা।
.
এদিকে নুসাইবা আরো বললো-
অনেক ভালো ছেলে সে। যে তার ভালোবাসার মানুষ হবে সে অনেক ভাগ্যবতী হবে।
.
পুনম বললো-
আমাকে এসব বলছেন কেনো?
-তোমাকে রানবী ভাইয়ার সাথে কয়েকবার দেখেছি। তাই জানিয়ে রাখলাম। ছেলেটা ভালোই।
.
নুসাইবার কথা শুনে রানবীর বন্ধুরা তাকে একটু দূরে টেনে নিয়ে এলো।
বাদশা জিজ্ঞাসা করলো-
নুসাইবা তোর নামে বদনাম না করে সুনাম করছে কেনো?
.
দুষ্টু একটা দিয়ে রানবী বললো-
বেশি কিছু বলিনি নুসাইবা কে। শুধু বলেছি, আমার ব্যাপারে যদি সবটা পুনম জানতে পারে তবে তার ব্যাপারেও সবটা তার বাবা জানতে পারবে।
-মানে?
-মানে সে যে লুকিয়ে প্রেম করছে এই খবরটি তার বাবার কাছে পাঠানোর দায়িত্ব নিবো বলেছি।
.
রানবীর কথা শুনে সকলের চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো।
এতো বুদ্ধি ছেলেটার মাথায়!
.
.
-এই যে?
.
পুনমের ডাকে চমকে গেলো রানবী।
রানবীর কাছে এসে পুনম বললো-
নুসাইবা আপুকে আপনি পাঠিয়েছেন আমার কাছে?
-নাতো!
-তাহলে সে শুধু শুধুই কেনো আপনার নামে প্রশংসা করে গেলো?
-সেটা তাকেই জিজ্ঞাসা করলে পারতে।
-যাক, নুসাইবা আপু আপনার সম্পর্কে বলে আমাকে আরো চিন্তা মুক্ত করলো।
-কেমন?
-এমন ভালো একটা বড় ভাই পেয়ে সত্যিই ধন্য আমি।
.
.
.
বাসায় আসতেই বাবার ডাকে তার পাশে এসে বসলো মাহিম।
মাহফুজ ইসলাম তার উদ্দেশ্যে বললেন-
আজ দেখা হয়েছে সালাউদ্দিনের সাথে।
.
চিন্তিত স্বরে মাহিম বললো-
পুনমের সম্পর্কে জানতে চেয়েছে কিছু?
-সে যে চট্রগ্রামে নেই তা আঁচ করতে পারেনি।
-ওহ!
-পুনম যদি সেলিমের প্রস্তাবে রাজি হতো তাও ভালো ছিলো।
-তাকেও কতোটুক চিনতাম আমরা আব্বু?
-যতোটুক দেখেছি, ভালো মানুষই মনে হয়েছে। অন্তত সালাউদ্দিনের মতো নয়।
-তা ঠিক। কিন্তু সব সত্যিটা না জানলে তোমার মেয়ে বিয়েতে রাজি হবেনা।
-জানলেও হবে বলে মনে করিস তুই? হবেনা। প্রচুর সাহস মেয়েটার। তাই তো এতো চিন্তা হয়। মেয়েদের এতো সাহস থাকা ভালোনা!
.
.
.
-সারাদিন বাইরে টইটই করবি এসব আমরা মেনে নিবো কি করে ভাবলি তুই?
.
মায়ের কথার পিঠে কোনো জবাব না দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ইপশিতা।
কথায় কথা বাড়ে। তার চেয়ে কিছু না বলাই শ্রেয়।
তার মা আরো বলতে শুরু করলেন-
কতো ভালো ভালো প্রস্তাব আসছে। না, সে বিয়ে করবেনা! বয়সই নাকি হয়নি। কাল তোকে দেখতে আসবে। এবার আর কোনো ঝামেলা চাইনা। ছেলে ভালো হলেই বিয়ে দিয়ে দিবো।
.
.
ইপশিতা নিজের রুমে এসে ফোন দিলো মাহিম কে।
মাহিম তার বাবার পাশ থেকে উঠে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।
-আম্মু যে অবস্থা শুরু করলো, মনেহচ্ছেনা তোমার চাকরী পাওয়া অবধি আমি টিকতে পারবো বাসায়।
-কি হয়েছে ইপশু?
-কি হয়নি তাই বলো! কাল আমাকে দেখতে আসবে পাত্র পক্ষ। আর এবার নাকি ভালো লাগলেই দিয়ে ফেলবে বিয়ে।
-ওহ! করে ফেলো।
.
আবার মাহিমের সেই ভাবলেশহীন আচরণ!
ইপশিতা দাঁতে দাঁত চেপে বললো-
তাই করবো খাচ্চোর কোথাকার। তোর কোনো টেনশন নেই! সব আমার সামলাতে হবে কেনো! বিয়েটা করেই ফেলবো এবার।
-ঠিক আছে। দাওয়াত দিতে ভুলোনা।
.
ফোনের লাইন কেটে দিলো ইপশিতা।
মাহিম হেসে চলেছে নিজের মনে। ইপশিতা যে তাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা, এটা তার অজানা নয়।
.
মাহফুজ ইসলাম তার ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন-
এবার তোর ব্যাপার টা নিয়ে কথা বলি, এদিকে আয়।
.
.
.
ঘরের টুকিটাকি কাজ সেরে মায়ের ফোন নাম্বার ডায়েল করে কল দিলো সাবিনা।
সাবিনা…
রানবীর বড় বোন। তবে পরিবারের মেজো মেয়ে সে।
৩বছর আগেই তার বিয়ে হয়েছে।
.
বড় মেয়ের ফোন পেতেই তার মা রিসিভ করে বললেন-
ভালো আছিস রে মা?
-হ্যাঁ। তোমরা ভালো আছো?
-আছি।
-রানবীর জন্য একটা প্রস্তাব এনেছে ওর দুলাভাই।
-ছেলের জন্য প্রস্তাব!
-আসলে আমাদের রানবীর মতো তো ভালো ছেলে সহজে পাওয়া যায়না। তো ওর দুলাভাই অফিসে এতো এতো সুনাম করে ওর, এসব শুনেই চলে এসেছে প্রস্তাব। ওর অফিসের বসের শালিকার জন্য এসেছে।
-কি বলিস!
-হুম মা।
-আচ্ছা আমি রানবীর সাথে কথা বলে জানাবো। তবে মনেহয় না জাফর ওর মাস্টার্স শেষ হবার আগেই বিয়ে দিতে রাজি হবে ওর।
-তুমি বলে দেখিও। মেয়েও কিন্তু সুন্দরী।
-তুই বাসায় আয়। তুই বল কথাটা তোর ভাইকে সাবিনা।
-ঠিক আছে মা।
.
মায়ের সাথে কথা বলা শেষ করে সাবিনা এগুলো রান্নাঘরের দিকে।
কতো কাজ বাকি রয়েছে এখনো!
.
.
.
রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে পুনম।
হঠাৎ একটু দূর থেকে শোরগোলের শব্দ ভেসে আসলো।
ভালো করে তাকাতেই দেখতে পেলো, একটা ছোট বাচ্চাকে কয়েকজন মারধর করছে।
দ্রুতপায়ে পুনম এগিয়ে গেলো সেদিকে।
বাচ্চা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো-
কি করেছো তুমি? যার কারণে এরা তোমাকে মারছে?
.
একজন লোক বলে উঠলো –
দোকান থেকে চুরি করে খাবার নিয়ে পালায় যাচ্ছিলো। শিক্ষা না দিলে পরে এমন কাজ আবার করবে।
.
পুনম শান্ত গলায় বললো-
ওর হয়ে টাকা টা আমি দিচ্ছি। পেটের দায়ে পড়ে এমন করেছে নিশ্চয়।
.
লোকটি বললো-
আপনি কেনো মাঝখানে এসে কথা বলতেছেন? এদের লিডার নাকি আপনি? যান তো নিজের কাজে।
.
-মেয়ে মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানেন না?
.
রানবীর কথা শুনে সকলে চুপ হয়ে গেলো।
কলেজের পাশে এসে, কলেজের ছাত্রদের সাথে ঝামেলা করে লাভ নেই বুঝতে পেরে লোকটি বললো-
আমরা বাচ্চাটাকে আসলে বুঝাচ্ছিলাম যে…
-অন্যের বাচ্চাকে মারার অধিকার কে দিয়েছে? হোক সে চোর। কিন্তু এতোটুক একটা বাচ্চা মানুষের গায়ে হাত তুলতে বিবেকে বাধা দেয়না?
.
লোকটি পুনমের দিকে তাকিয়ে বললো-
১০০টাকা দেন। আমরা চলে যাচ্ছি।
.
পুনম টাকা বের করতে চায়লে রানবী তাকে বাধা দিলো।
নিজের পকেট থেকে ১০টাকার নোট বের করে লোকটির হাতে দিয়ে বললো-
ছেলেটির হাতে চুরির খাবার টি এখনো আছে। একটা সিঙ্গারা! একটা সিঙ্গারার দাম ৫টাকা। বেশি হলেও ৮টাকা। আরো ২টাকা বেশি দিলাম আপনাকে। আসুন এখন।
.
আর কোনো কথা না বলে লোকগুলো যে যার মতো চলে গেলো।
ছেলেটির দিকে তাকিয়ে রানবী বললো-
চল, আজ তোকে আমি খাওয়াবো।
.
পুনম মৃদু হেসে রানবীর উদ্দেশ্যে বললো-
ধন্যবাদ।
.
রানবী বললো-
তোমার ধন্যবাদ নিবোনা আমি।
-কেনো?
-সারাক্ষণ শুধু ভাই ভাই করো।
-তাহলে কি বলবো?
-বন্ধু তো হওয়া যায়?
.
খানিকক্ষণ চুপ থেকে পুনম বললো-
হু যায়। তবে ভাই বন্ধু।
-ভাই বন্ধু কেমন?
-মানে ভাইও আবার বন্ধুও! এতো বড় একটা ছেলেকে তো আর এমনিতেই বন্ধু বানাতে পারিনা।
.
শার্টের কলার ঠিক করতে করতে রানবী বললো-
চলবে। ভাই বন্ধুই নাহয় হলাম তোমার।
.
মুচকি হেসে পুনম চলে যেতে লাগলো। আর মনে মনে বললো-
নুসাইবা রানবীর সম্পর্কে তাহলে সবটা সত্যিই বলেছে।
.
এদিকে রানবীর বন্ধু রনি তার উদ্দেশ্যে বললো-
শেষ পর্যন্ত ভাই বন্ধু!
.
তার কাধে হাত রেখে রানবী বললো-
সরাসরি প্রেমের সম্পর্কে চলে গেলে হারানোর সম্ভাবনাও বেশি। তাই আগে বন্ধু হওয়াটা জরুরী।
এতে সম্পর্ক মজবুত হয়।
এইটা সাইকোলজিকাল ফ্যাক্ট এবাউট লাভ। আমি না হয় এখন পুনমের ভাই বন্ধুই হলাম। আশিক হতে আর কতক্ষণ!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here