ঘায়েল – পর্ব ৬

0
163

#ঘায়েল
#পর্ব_৬
#Saji_Afroz
.
.
.
বিকেল বেলায় বাসার ছাদে হাঁটা পুনমের অভ্যেস।
কিন্তু এখানে আসার পরে এখনো অবধি সে ছাদে যায়নি।
খোলা চুলে সে এগিয়ে গেলো ছাদের দিকে।
ছাদে এসেই পুনম দেখতে পেলো, বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছে ভরা ছাদটি।
টবের মধ্যে সাজানো হরেক-রকমের ফুল গাছ।
পুনম মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে
ফুলগুলি।
নানা রকমের ফুল!
ছিড়তে ইচ্ছে করলেও ছিড়লোনা পুনম।
মৃদু হেসে বললো-
গাছের ফুল গাছেই মানায়।
.
-তোমার খোপাতেও মানাবে।
.
পেছনে ফিরে রানবী কে দেখে অবাক হলেও, ভ্রু জোড়া কুচকে পুনম বললো-
আমি তো খোঁপা করিনি।
-এলোচুল তো আছে। কানে একটা দিতেই পারো ফুল। মানাবে ভালোই। নাকি বাড়িওয়ালা কিছু বলবে বলেই ছিড়ছোনা?
-বাড়িওয়ালা আমার ফুফু৷ শুধু শুধুই ফুল নিয়ে কি করবো। ইচ্ছে করছেনা।
.
রানবী একটা ফুল ছিড়ে পুনমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো-
আমার ইচ্ছে করেছে তাই আমি ছিড়ে ফেলেছি! এখন এটা তুমি নিবে।
-আমার ফুফুর গাছ থেকে ফুল নিয়ে আমাকেই উপহার দেয়া হচ্ছে?
-উহু না! তোমার ছিড়তে কষ্ট হবে বলে আমি ছিড়ে দিলাম।
.
রানবীর হাত থেকে ফুলটা নিয়ে পুনম বললো-
ফুফুর গাছের বলেই নিলাম কিন্তু।
-হুম বুঝলাম। তাই তো কষ্ট করে বাইরে থেকে আনলাম না।
-বাই দ্যা ওয়ে আপনি এখানে কেনো?
.
আমতাআমতা করে রানবী বললো-
এই বাসায় আমার বন্ধু একটা ভাড়া থাকে। ওর বাসায় এসেছি। কিন্তু তোমাকে যে এখানে পাবো ভাবিনি।
-ও আচ্ছা।
-তুমি তো আমাকে বন্ধু বানিয়েছিলে। আপনি করে বলছো যে?
-ভাই বন্ধু বানিয়েছিলাম। বান্ধবী না যে তুই করে বলবো।
-তুমি করে তো বলতে পারো?
.
মুচকি হেসে পুনম বললো-
আমি আসছি।
.
পুনম দৌড়ে চলে গেলো।
এদিকে রানবী স্বস্তির একটা হাসি দিয়ে বললো-
যখন তাকে দেখতে ইচ্ছে করবে আর সে তোমার সামনে আপনা আপনি চলে আসবে, বুঝতে হবে তোমাদের মাঝে একটা কানেকশন আছে। এটা সাইকোলজিকাল ফ্যাক্ট এবাউট লাভ! কেনো যেনো মনে হয়েছিলো, ও আজ ছাদে উঠবেই।
.
.
পুনম তার রুমে এসে ড্রেসিংটেবিলের সামনে আসলো।
তার কানে গোলাপ ফুলটা গুজে দিয়ে, আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো-
কি? কেমন লাগছে তোকে?
.
.
.
রানবী সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে।
তার কোনো বন্ধু এই বাসায় থাকেনা।
শুধুমাত্রই পুনমের জন্যই এখানে আসা। তবে যে পুনমের দেখা পেয়ে যাবে ভাবেনি সে।
বাসার বাইরে বের হয়ে এসে বাড়িটার দিকে একবার তাকালো তাকালো রানবী।
বাড়ির দ্বিতীর তোলার বারান্দায় চোখ পড়তে দেখা পেলো পুনমের।
পুনমের কানে রয়েছে রানবীর দেয়া সেই ফুল।
এলোকেশে কানে ফুল গুজে কোনো হুরপরী, বাড়িটির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মতো লাগছে রানবীর কাছে।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রানবী বিড়বিড় করে বললো-
ইশ! আরো একবার ঘায়েল হয়ে গেলাম!
.
.
.
ট্যাক্সি থেকে নিজের ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ির সামনে নামতেই, খায়রুনের দেখা পেলো সাবিনা।
খায়রুন একজন বৃদ্ধ মানুষের দিকে কি যেনো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সাবিনা তার পাশে যেতেই খায়রুন জড়িয়ে ধরলো তাকে।
সাবিনা বললো-
কি করছো ভাবী?
.
খায়রুন বৃদ্ধ লোকটিকে বিদায় জানিয়ে সাবিনার উদ্দেশ্যে বললো-
উনার মেয়ে বিয়ে সামনে। গরীব মানুষ এতো খরচা করার সামর্থ্য কোথায়! তাই তার মেয়ের বিয়ের জন্য কিছু টাকা দিলাম। আর তাদের ঘরের সবার জন্য শপিং করে দিলাম।
-ও আচ্ছা। তোমার এমন উদার মানসিকতার প্রেমে পড়েই তো ভাইয়া বিয়ে করেছিলো তোমাকে।
-হয়েছে হয়েছে। এখন কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি?
-চলো ভেতরে।
.
.
.
বাইরে অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরির পরে বাসায় ফিরে এসে, বড় বোন সাবিনাকে দেখে চমকে গেলো রানবী।
সাবিনার সাথে বসে আড্ডায় মেতে উঠলো ভাই বোন সকলে।
খায়রুনের ছেলে মেয়ে ও সাবিনার ছেলে অন্য রুমে খেলায় মেতে আছে। তাদের সাথে আছেন আনোয়ারা ইসলাম।
একপর্যায়ে সাবিনা রানবীর বিয়ে নিয়ে কথা তুললো।
রানবীর বড় ভাই জাফর এই বিষয়ে সবটা রানবীর উপরে ছেড়ে দিলো।
কিন্তু রানবী এই প্রস্তাবে রাজী হতে পারেনা। কেননা সে ঘায়েল হয়েছে পুনমের প্রেমে। তাই অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকানোর প্রশ্নই উঠেনা।
কিছু না ভেবেই রানবী বললো-
আসলে স্টাডি শেষ না হবার আগেই আমি এসব নিয়ে ভাবতে চাইছিনা।
.
সাবিনা বললো-
বিয়ে তো এখন করতে বলছিনা। অন্তত আকদটা সেরে রাখতে পারিস।
-এসবে আমার ক্ষতি হতে পারে আপু। বিয়ের পরে পড়ালেখায় কি মন বসবে!
.
রানবীর পক্ষ নিয়ে খায়রুন বললো-
যুক্তি আছে রানবীর কথায়।
.
সাবিনা বললো-
একবার মেয়েটা দেখতে তো সমস্যা নেই। ভালো না লাগলে তখন নাহলে এসব বলিস।
.
সাবিনার পক্ষ নিয়ে জাফর বললো-
হু যুক্তি আছে তোর কথায়।
.
এদিকে রানবী পড়লো মহা ঝামেলায়। কেনো যে বাসায় সে এতো ভালো সেজে বসে থাকে! যার কারণে এমন পরিস্থিতি তে পড়তে হচ্ছে তাকে।
.
সাবিনা বললো-
তাহলে কালই আমরা মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। এখুনি মেয়ের বাসায় জানিয়ে দিচ্ছি আমি।
.
খায়রুন ভেবেছিলো তার স্বামী অন্তত এই প্রস্তাবে রাজী হবেনা।
এই লোকটার মাঝে মাঝে কি যে হয়না!
.
.
একটু পরেই খায়রুন ও রিমা কে নিজের রুমে নিয়ে আসলো রানবী।
তাদের উদ্দেশ্যে রানবী বললো-
এখন কি হবে? আমি তো পুনম কে ভালোবাসি।
.
খায়রুন বললো-
দেখতে যাবি রানবী। দেখলেই তো আর বিয়ে হয়ে গেলো না।
.
রানবী মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো-
কিন্তু এই দুচোখ যে পুনম কে ছাড়া কাউকেই দেখতে চায়না।
.
রিমা হেসে বলে উঠলো-
ওলে বাবালে! আমার ভাইটা দেখি সেইরকম ভাবে ঘায়েল হয়েছে।
.
খায়রুনের রানবীর ফ্যাকাসে মুখ দেখতে ভালো লাগেনা।
তার নিজের কোনো ভাই নেই। তাই সে রানবী কে নিজের ভাই করে নিয়েছে। তাই তো এতো ভালো বন্ধন দুজনের মাঝেই।
খায়রুন রানবীর উদ্দেশ্যে বললো-
তুই চিন্তা করিসনা ভাই। কাল তোর সাথে আমিও যাবো। ওই মেয়েকে বুঝাবো, এই বাড়িতে আসলে আমার অত্যাচারে তাকে বাড়ি ছাড়া হতে হবে। এই ভয়েও সেই এই বাড়ির বউ হবেনা, দেখিস তুই।
.
ভাবীর দিকে তাকিয়ে রানবী দেখলো, তিনি ভীষণ সিরিয়াস মুডে চলে গিয়েছেন।
রানবী মৃদু হেসে বললো-
এমন ভাবী থাকতে আর কিসের চিন্তা আমার! কাল তোমরা আমার সাথে থেকো। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্লান বানাতে হবে।
.
.
.
পরেরদিন সকাল ১১টাই নিজের রুমে বসে আছে ইপশিতা। রাগের বসে মাহিমের সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও তার মনটা মাহিমেই পড়ে রয়েছে।
পাত্র পক্ষ চলে এসেছে অথচ তার ইচ্ছেই করছেনা সামনে যেতে।
হঠাৎ ইপশিতার মা তার রুমে এসে বললেন-
পাত্র তোর রুমে আসবে এখন। মাথায় কাপড় দিয়ে নে।
.
ইপশিতা রাগে কটমট করে বললো-
রুমে আসবে মানেটা কি? দেখা দিতে রাজি হয়েছি বলে বেড রুমে দেখাতে আনবে?
-বেয়াদবি করবিনা ইপশিতা৷ বিয়েটা হবেই। তাই সে সোজা এখানেই আসতে পারে।
.
-আমি কখনো রাজি হবোনা এই বিয়েতে। এখুনি কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিবো ছেলেটাকে।
.
নিজের মনে কথাগুলো বললো ইপশিতা।
মাথায় উড়না টা টেনে দিলো সে।
এদিকে তার মা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই ভেতরে প্রবেশ করলো পাত্র।
ইপশিতা তাকে না দেখেই, পেছনে ঘুরে পাত্রের উদ্দেশ্যে বললো-
দেখুন, এসব বিয়ে ফিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি। আপনি আপনার ফ্যামিলি নিয়ে আসতে পারেন এখন।
.
এদিকে দাঁড়িয়ে থাকা পাত্রটি আর কেউ নয়। মাহিমই।
ইপশিতার কথা শুনে মুচকি হেসে মাহিম বললো-
আমাকে যে এতো ভালোবাসো তাতো আগে জানা ছিলোনা।
.
মাহিমের গলার আওয়াজ শুনতে ভুল করলোনা ইপশিতা। পেছনে ফিরে মাহিম কে দেখে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সে।
মাহিম তার পাশে এসে হাত জোড়া ধরে বললো-
এতো সহজে তোমার বিয়ে হতে দিবো নাকি অন্য কোথাও?
.
চোখের পানি মুছে মাহিমের
উদ্দেশ্যে ইপশিতা বললো-
তুমি এখানে?
-হু। এখনো চাকরী না পেলেও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টপ স্টুডেন্ট আমি। নিজের বাবা মাকে তোমার কথা জানিয়েছিলাম। আমার বাবাই তোমার বাবার সাথে কথা বলেছে। আমাদের সম্পর্কের কথাও বলেছে। তারা মেনে নিয়েছেন সহজেই। আজকের এই প্লানের কথা সবাই জানতো। তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য কিছু বলেনি কেউ।
.
মাহিমের বুকে কিল ঘুষি মারতে মারতে ইপশিতা বললো-
তুই সবটা প্লান করে রেখেছিস তাহলে। আমাকে জানালে কি হতো? আমি আরো বাসায় কিভাবে সবটা জানাবো সেই ভয়ে মরেই যাচ্ছিলাম।
.
ইপশিতাকে থামিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে মাহিম বললো-
ভয়ে নয়, এখন থেকে লজ্জায় মরতে ইচ্ছে করবে।
.
ইপশিতা মুচকি হেসে বললো-
যাহ দুষ্টু!
.
.
.
রানবী, রীমা, খায়রুন ও জাফর কে নিয়ে সাবিনা এসেছে তার স্বামীর বসের বাসায়।
সাবিনার স্বামী অফিসের একটা জরুরী কাজে বাইরে আছে ঢাকার। তাই তিনি আসতে পারেন নি।
অনেকক্ষণ যাবৎ বসে আছে তারা।
মেয়ের কোনো দেখা নেই।
রানবী বিরক্তিভরা কণ্ঠে সাবিনার উদ্দেশ্যে ফিসফিসিয়ে বললো-
আপু? নিশ্চয় মেয়ে সাজগোজে ব্যস্ত রয়েছে। আর এমন মেয়েকে তো আমি বিয়েই করবোনা। যে কিনা সাজে এতো সময় ব্যয় করে।
.
সাবিনা বললো-
এমনও হতে পারে, মেয়ে আমাদের জন্য কোনো খাবার তৈরী করছে। তুই চুপচাপ বস তো।
-বসলাম যাও। তোমার কথায় এখানে আসতে পেরেছি। বসতে আর কি।
.
কথাটি বলতেই রানবী এগিয়ে আসতে দেখলো একটি মেয়েকে।
মেয়েটিকে দেখে সে চোখ জোড়া কচলাতে লাগলো।
সে কি ঠিক দেখছে!
এই মেয়েতো নাতাশা। সে এখানে কিভাবে এলো!
তার না বিয়ে হয়ে গিয়েছে!
নাতাশাকে এগিয়ে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো রানবী।
রানবী কে দেখে নাতাশাও দাঁড়িয়ে পড়লো নিজের জায়গায়।
নিজেরমনে বললো সে-
এই ৪২০টা এখানে কি করছে!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here