#ঘায়েল
#পর্ব_৯
#Saji_Afroz
.
.
.
ফুফুর বাসায় প্রবেশ করতেই বড় ভাই মাহিমের দেখা পেলো পুনম।
মাহিম গল্প করছিলো জাহারা ও তার ছেলের সাথে।
মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে পুনম বললো-
ভাইয়া তুমি!
.
পুনম কে দেখে ফুফাতো ভাই এর উদ্দেশ্যে মাহিম বললো-
তুমি একটু ভেতরে যাও।
.
সে ভেতরে যাবার পরেই পুনম বললো-
ওকে পাঠিয়ে দিলে কেনো? আর তুমিই বা কখন এলে? কেমন আছো?
-আমার কথা বাদ দে। তোকেই তো বেশি খুশিখুশি লাগছে। ব্যাপার টা কি?
-তোমাকে দেখে।
-আমাকে দেখে নাকি নতুন নতুন নতুন প্রেমে পড়ে?
.
মাহিমের কথা শুনে পুনম বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।
জাহারা মাহিমের উদ্দেশ্যে বললো-
এসব কি বলছিস মাহিম তুই?
-ঠিকই বলছি ফুফু। এই মেয়ে এক সপ্তাহ হয়নি ঢাকায় পা দিয়েছে, ওমনিতেই প্রেম শুরু করে দিয়েছে। বাবা জানতে পারলে কি হবে ভেবে দেখেছো!
.
ভ্রু জোড়া কুচকে পুনম বললো-
তুমি বললেই তো হয়ে গেলোনা!
এসব হাবিজাবি কথা বলছো কেনো?
.
পুনমের দিকে এগিয়ে এসে মাহিম বললো-
আজ ক্যাফে কার সাথে ডেইটে ছিলিস তুই? রানবী তোর কে হয়?
.
গলার স্বর নরম করে পুনম জিজ্ঞাসা করলো-
রানবী আমার বন্ধু! শুধুই বন্ধু।
-সেই জন্য সে ও তার বন্ধুরা মিলে তোকে ওর গফ বলে আমাকে পরিচয় দিচ্ছে তাইনা?
.
মাহিমের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো পুনম! সে রানবীর গফ! এটা রানবী বলেছে?
.
পুনম কে চুপ থাকতে দেখে মাহিম বললো-
কি হলো কথা বল?
-দেখো ভাইয়া, তুমি যেমনটা ভাবছো বিষয়টা তেমন নয়।
-তাহলে কেমন?
-ওরা কে কি বলেছে আমি জানিনা। কিন্তু কালই আমি প্রমাণ করবো, আমার সাথে রানবীর এমন কোনো সম্পর্ক নেই।
.
ফোন বেজে উঠলো মাহিমের।
মায়ের ফোন পেতেই মাহিম রিসিভ করে বললো-
কোনো চিন্তা করোনা আম্মু। এখানে এসে তোমার মেয়ে প্রেমিক বানিয়েছে। সেই খেয়াল রাখবে তোমার মেয়ের।
.
ভাই এর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো পুনম।
আর না দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলো সে নিজের রুমের দিকে।
.
.
নিজের রুমে এসে বিছানার উপরে কলেজ ব্যাগটা ছুড়ে ফেললো পুনম।
রাগে তার শরীরটা গিজগিজ করছে। রানবী কিভাবে বলতে পারলো, পুনম তার গফ!
এক ঘন্টা ফোনে কথা বলা, বসে এক কাপ কফি খাওয়াই কি প্রেম!
ফোন হাতে নিয়ে রানবীর নাম্বার টা ব্লক লিস্টে ফেলে দিলো পুনম।
ভাবতে লাগলো কি করা যায়।
কিভাবে প্রমাণ করবে মাহিমের কাছে, রানবী তার বফ নয়!
.
.
.
নুসাইবার মা ও বাবা ফুফুর বাসা থেকে চলে এসেছেন।
রানবীর কথা শুনে তারা খুশিই হয়েছেন।
নুসাইবার বাবা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা সম্পন্ন করতে চান।
তাই তিনি সাদ্দাম কে আয়োজন করতে বললেন।
কিন্তু সাদ্দাম জানায়, অন্তত রানবীর অর্নাস টা শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করতে।
সাদ্দামের কথা শুনে নুসাইবার বাবা বললেন-
সে তো অনেক দেরী! আমি ততদিন বেঁচে থাকলে আর কি।
-এসব কেনো বলেন বাবা! আপনার কিছু হবেনা।
-আচ্ছা সাদ্দাম একটা কাজ তো করা যায়?
-কি?
-কালই পারিবারিক ভাবে ওদের এনগেজমেন্ট টা সেরে রাখা যায়? এটা দেখে অন্তত শান্তি পেতাম।
.
শ্বশুড়ের কথা শুনে সাদ্দাম বললো-
আমি সবুজের স্ত্রীর সাথে এই বিষয়ে কথা বলে দেখছি।
.
.
সাদ্দামের ফোন পেয়ে সাবিনা রিসিভ করে বললো-
ভালো আছেন ভাই?
-জ্বী আপা। আপনি?
-আছি।
-আসলে নুসাইবার বাবার শরীর সম্পর্কে তো আপনি জানেনই।
-জ্বী। এখন কি আরো খারাপ হয়ে গিয়েছে?
-না। তবে তিনি চায়ছেন কালই পারিবারিক ভাবে এনগেজমেন্ট টা সেরে রাখতে। মানে পরিবারের সবাই মিলে যদি…
.
কোনো কিছু না ভেবেই সাবিনা বললো-
অবশ্যই অবশ্যই! কেনো নয়! কাল বিকেলেই ওদের এনগেজমেন্ট হবে।
-তাহলে আমরা আয়োজন করছি। আপনারা বিকেলে চলে আসবেন।
-জ্বী।
.
.
.
রানবী কলেজ শেষে বাসায় এখনো ফিরেনি।
বন্ধুদের নিয়ে সে প্লান করছে কিভাবে পুনম কে প্রপোজ করা যায়।
রানবী জেদ ধরেছে, কালই সে জীবনসঙ্গী করার প্রস্তাব দিবে পুনম কে।
তার হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে বন্ধুরা রাজি হলেও তাকে সাহায্য করবে জানায় তারা।
তবুও আকিব প্রশ্ন ছুড়লো-
হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেনো জানতে পারি?
-আর কেউ ওর উপর ঘায়েল হবার আগেই ওকে আমার মনের কথা জানিয়ে দিতে চাই। যদি হারিয়ে ফেলি ওকে!
.
.
.
কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পর সাবিনার মুখে এনগেজমেন্ট এর কথা শুনে চমকে গেলো রানবী।
কালই তার প্রপোজ করতে হবে পুনম কে আর কালই নুসাইবার সাথে তার এনগেজমেন্ট! কতোদিক সামলাবে সে!
.
.
.
রাতের খাবার খেলোনা পুনম।
মন মেজাজ ভালো নেই তার।
মায়ের ফোন আসতেই রিসিভ করে বললো-
আম্মু ভাইয়া ভুল বুঝছে আমাকে।
-জাহারা কি ভাবছে বল তো? এক সপ্তাহ হয়নি আর তুই কিনা… ছিঃ ছিঃ! তোর বাবা তো লজ্জায় জাহারার সাথে কথাও বলতে পারছেনা।
.
ফোনের লাইন কেটে দিলো পুনম।
না চাইতেও চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তার।
কি থেকে কি হয়ে গেলো!
রানবী কে ভালো ভেবেছিলো সে, আর সেই কিনা মিথ্যে বললো!
এটার জন্য সে কখনোই ক্ষমা করতে পারবেনা রানবী কে, কখনো না!
.
.
.
একটা দিন কেটে গেলো।
কাল সারাদিন পুনম কে ফোন করেও পেলোনা রানবী।
তবে আজ সে তাকে মনের কথা জানিয়েই ছাড়বে।
কলেজ গেইটের পাশে আকিব ও বাদশার সাথে দাঁড়িয়ে আছে রানবী।
রনি তার দিকে ছুটে এসে বললো-
সুইটির বললো, পুনম ভিক্টোরিয়া পার্কে আছে। তোকে ডাকছে সে।
.
মুচকি হেসে রানবি বললো-
আমি তার খোঁজ করছিলাম আর সেই কিনা আমাকে ডাকছে! এইটা সাইকোলজিকাল ফ্যাক্ট এবাউট লাভ দোস্ত।
.
.
রনিদের সাথে ভিক্টোরিয়া পার্কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রানবী।
হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠলো।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সাবিনা বললো-
আজ তাড়াতাড়ি বাসায় আসবি, আজ কিন্তু তোর এনগেজমেন্ট।
.
বোনের কথা শুনে হেসে দিলো রানবী।
সাবিনা বললো-
হাসছিস যে?
-কিছুনা। আসবো আমি।
.
.
পুনমের কাছে এগিয়ে আসতেই রানবী দেখলো, আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে তাকে।
নিজের মনে রানবী বললো-
আরো একবার ঘায়েল হয়ে গেলাম!
.
পুনম কে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রানবী বললো-
ফোনে কি হয়েছে তোমার?
অনেকবার ফোনে ট্রাই করেছিলাম তোমাকে।
.
তার কাছে এগিয়ে এসে আচমকা তার বাম গালে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো পুনম।
ঘটনার আকস্মিকতায় উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে গেলো।
পুনমের উদ্দেশ্যে রনি বললো-
এটা কি করলে তুমি?
.
পুনম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
যেটা করার উচিত সেটাই করেছি। আজ আমি এই মুখোশধারী রানবী সম্পর্কে খবর নিয়েছি কলেজে। মেয়ে পটানোই তার পেশা৷ আমাকে নিয়েও সে মজা করতে চেয়েছে!
-ও তোমাকে ভালোবাসে পুনম।
-ভালোবাসা! মাই ফুট! আমার সাথে তার কোনো সম্পর্কই নেই, সে কিনা মানুষ কে বলে বেড়াচ্ছে আমি তার গফ!
.
রানবীর দিকে তাকিয়ে পুনম বললো-
বলিস নি এটা? আমি তোর গফ?
.
মাথা উঠিয়ে রানবী দেখতে পেলো, আশেপাশে মানুষের ভিড় জমে গিয়েছে।
এতো মানুষের সামনে পুনম এটা করতে পারলো!
পুনমের উদ্দেশ্যে রানবী বললো-
শান্ত হও পুনম। আমি তোমাকে সবটা বলছি।
-কি বলবি তুই! তোর জন্য আমার ভাই আমাকে কতো কথা শুনিয়েছে! মা, বাবা, ফুফু সবার কাছেই আমি কালার হয়েছি। এসবের জন্য তুই দায়ী।
.
পুনম অনবরত কথা বলে যাচ্ছিলো।
আচমকা রানবী তার মুখটা চেপে ধরলো। কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান হারালো পুনম।
.
.
.
কতোক্ষণ কেটেছে জানেনা পুনম।
কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে আবিষ্কার করলো সে একটি বেঞ্চের উপরে।
উঠে বসে পুনম বুঝতে চেষ্টা করলো কোথায় সে।
.
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছে রানবী। তার ফোন বেজে উঠলো।
অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।
রিসিভ করে বললো-
হ্যালো?
-আমি নুসাইবা।
-ও আচ্ছা!
-তোমার নাম্বার টা অনেক কষ্টে জোগাড় করেছি।
-কেনো? মিস করছিলে আমাকে? নাকি আজকে এনগেজমেন্টে কি পরবে জিজ্ঞাসা করার জন্য?
-উফফ… তোমার সাথে জরুরী কথা আছে রানবী।
.
আকিব এসে রানবীর উদ্দেশ্যে বললো-
জ্ঞান ফিরেছে পুনমের।
.
নুসাইবাকে রানবী বললো-
আমি তোমাকে পরে ফোন দিচ্ছি নুসাইবা। এখন একটু ব্যস্ত।
-রানবী শুনো প্লিজ?
-ও হ্যাঁ! যা খুশি পরতে পারো এনগেজমেন্ট এর জন্য।
.
কথাটি বলেই ফোনের লাইন কেটে পুনমের কাছে এগিয়ে গেলো রানবী।
পুনম বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়িয়েছে।
চোখ বুলিয়ে দেখছে সে চারপাশে।
রানবী এসে বললো-
আমরা এখন কাজি অফিসে।
.
(চলবে)