#সুখ
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
এইত কিছুক্ষণ আগেই আমার ওনার সাথে বিয়ে হলো। আসলে এইটা কোনো সুখের বিয়ে ছিল না। দ্বিতীয় পক্ষের বউ আমি। ওনার দুইটা মেয়ে আছে। একটা মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে আর একজন পঞ্চম শ্রেনিতে। আমি নীলিমা। সবে মাত্র ইন্টার পাস করেছি golden result নিয়ে। আমি ওনার ছোট বোনের সাথে বসে আছি। পাশে বসে আছেন আমার চাচি শ্বাশুরি। উনি ঘরে নেই। রাত বাজে সাড়ে দশটা। কিছুক্ষণ পর তুলি (ওনার বড় মেয়ে) আসলো ঘরে।
-ফুপ্পি? বাবাই কোথায়? দেখছি না যে! (সুহানাকে (ওনার ছোট বোন) জিজ্ঞেস করলো আর আমার দিকে আঁড় চোখে তাঁকালো)
-ভাইয়া হয়ত ছাদে হবে। কেন কোনো দরকার আম্মু? (তুলির মাথায় হাত দিয়ে)
-না দরকার নেই তেমন। তিশা (তুলির ছোট বোন) খুঁজছিলো বাবাইকে। আমাকে পড়তে দিচ্ছিলো না।
-আচ্ছা তুমি তোমাদের ঘরে যাও আমি আসছি। (সুহানা)
নীলিমা অবাক চোখে তাঁকিয়ে রইল তুলির দিকে। এতটা সুন্দর ও যে চোখ ফেরাতে পারছিলো না নীলিমা। একটু পর সাকিব (নীলিমার বর) ঘরে ঢুকলো। ওর চাচির সাথে কথা বলল আর পা ধরে সালাম করলো। সাকিবকে দেখে নীলিমা উঠে নিচে দাঁড়ালো। সাকিব একবার শুধু আঁড় চোখে তাঁকালো নীলিমার দিকে। এরপর সাকিব আস্তে করে বেরিয়ে নিজের বেডরুমে গেল। লাইট অন করতেই সাকিব দেখলো খাট ফুল দিয়ে সাজানো। সাকিব ভাবতে লাগলো নিশ্চই এইটা আয়ানের (সাকিবের ছোট ভাই) কাজ। সাকিব রাগতে গিয়েও রাগলো না। আর্ম চেয়ারের উপর বসে দুল খাচ্ছিলো আর তানহার (সাকিবের প্রথম স্ত্রী) ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ছিলো। আর নীরবে চোখের পানি ফেলছে।
-ভাইয়া আসবো? (দরজায় নক করে আয়ান)
-হ্যা আয়। (চোখ মুছে সাকিব)
-তিশা তোমাকে খুঁজছে। আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করছে চাচ্চু বাবাই কোথায়! একটু আসো ওদের ঘরে। (আয়ান)
-তুই যা আমি আসছি।
এরপর সাকিব মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে তিশা আর তুলির ঘরে গেলো।
-মামনি তুমি নাকি আমায় খুঁজছিলে? ঘুমাও নি তুমি? (তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে সাকিব)
-তুমি ঘুম না পাড়িয়ে দিলে আমার কি ঘুম আসে বাবাই? (সাকিবের হাত জড়িয়ে ধরে তিশা)
-আচ্ছা আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি তুমি ঘুমাও আম্মু। (তিশাকে চুমু দিয়ে সাকিব)
এইদিকে সুহানা নীলিমাকে সাকিবের ঘরে রেখে এলো। আয়ান ও সাথে ছিল।
-জানো বড় ভাবি আমার ভাইয়া টা না অনেক ইন্ট্রুভার্ট স্বভাবের। ভাইয়া সহজে কাউকে কিছু বলে না। তানহা ভাবি ভাইয়ার সব চাওয়া নিজ থেকে বুঝে নিত। ভাবি তুমি শুধুমাত্র ভাইয়ার দিকে খেয়াল রেখো। জোর করেই কিন্তু আমরা ভাইয়াকে বিয়ে করিয়েছি। আম্মু অসুস্থ তাই আম্মু উপরে আসতে পারেনি। আম্মুর কথাগুলো আমরা বলছি। যদিও সম্পর্কে তোমার ছোট আমরা। তুলি আর তিশা এই দুইজন আমাদের সবার প্রাণ। কোনোদিন ওদের মনে কষ্ট দিওনা। এতটুকু রিকোয়েস্ট। (আয়ান)
-চিন্তা করো না। (নীলিমা)
নীলিমাকে খাটে বসিয়ে দিয়ে সুহানা আর আয়ান দরজা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আধা ঘন্টা পর সাকিব ঘরে ঢুকলো। দরজা চাপিয়ে দিল শুধু। এরপর সোফার উপর মাথা নিচু করে বসলো সাকিব। নীলিমা উঠে গিয়ে সাকিবের পা ধরতে যাবে এমন সময় সাকিব সরে গেলো।
-আমার পা ধরছেন কেন? (রাগীস্বরে সাকিব)
-সালাম করছি। সরে গেলেন যে! (আস্তে করে নীলিমা)
-আপনাকে একটা কথা বলে দেই শুনুন। আপনাকে শুধুমাত্র বিয়ে করার হেতু হচ্ছে আমার তিশা আর তুলি। ওদের ছাড়া দুই সেকেন্ডের জন্য ও আমার সামনে আসবেন না। আমার কোনো ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করবেন না। আমাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার আকাঙখা ও ত্যাগ করতে হবে। কথাটা আপনাকে বিয়ের আগেও বলেছিলাম। সো আপনি আপনার জায়গায় থাকুন আর আমি আমার। ঘরটাও আজকের পর থেকে আলাদাই হবে। তিশা আর তুলির সাথে থাকবেন আপনি আগামীকাল থেকে। That’s it. (পকেটে হাত দিয়ে পেছনে ঘুরে সাকিব)
-তাহলে আজ কেন বাদ দিলেন? আজই চলে যাই। (গলাস্বর নিচু করে নীলিমা)
-পরিবারের মন রক্ষার জন্য আজ থাকুন। প্রায় দেড়টা বাজে (ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে সাকিব) ঘুমিয়ে পরুন যান।
-আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
-সোফাতেই।
এইটুকু বলে সাকিব টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো আর ব্লেজার চেঞ্জ করে টি শার্ট আর শর্ট ট্রাউজার পরলো। নীলিমার সাথে সাকিবের বয়সের গ্যাপ 10 বছর। এতটা গ্যাপ হলেও বোঝার কোনো উপায় নেই যে সাকিব দুইটা মেয়ের বাবা। ২৫ বছরের যুবকের মতই লাগে সাকিবকে। নীলিমা বিয়ের শাড়িটা পরেই আস্তে করে বিছানায় শুয়ে পরলো। কাত হয়ে ঘুমালো নীলিমা৷ সাকিবের চোখে বিন্দুমাত্র ঘুম নেই। তানহাকে আজ অনেক মনে পরছে। ভালবাসার বিয়ে ছিল সাকিব আর তানহার। এই কারণে আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছে সাকিব। সাকিব সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বছরের অর্ধেকটা সময় সে বাহিরেই কাটায় অফিসিয়াল কাজে। দেশের সেরা সফটওয়্যার ফার্মে কাজ করে সাকিব। আর আয়ান নীলিমার বয়সী। সে ও এইবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সুহানা ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে।
সাকিব ফোন হাতে নিয়ে তানহার ফটো দেখে। ওদের চারজন মিলে খুব সুন্দর একটা সংসার ছিলো। কিন্তু এইভাবে হঠাৎ করে যে তানহা ওদের কাছ থেকে চলে যাবে তা সাকিব ভাবতেও পারেনি। ফোন ঘাটছে আর চোখ দিয়ে পানি পরছে। কতটা কষ্ট পেলে একটা ছেলে কাঁদে? তানহার সাথে সাকিব যেই বিছানায় ঘুমাতো আজ সেই বিছানায় অন্য মেয়ে! ভাবতেই সাকিবের হু হু করে কান্না পাচ্ছে। সারারাত একফোটা ঘুমায়নি সাকিব। সকালে ঘুম থেকে উঠে নীলিমা শাড়িটা পালটে নিচে রান্নাঘরে যায়। কাজের লোকের সাহায্যে তুলি আর তিশার জন্য টিফিন রেডি করে। এরপর ওদের ঘরে যায়।
-তুলি? তিশা? স্কুলে যাবেনা? সাতটা বাজে তো! স্কুল বাস এসে পড়বে উঠো। (নীলিমা ডাকছে ওদের)
-আপনি এই ঘরে কি করছেন? (রেগে গিয়ে তুলি)
-স্কুলে যাবেনা উঠো।
-আপনার ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই। যান আপনি এই ঘর থেকে। (ধমক দিয়ে তুলি)
-আপু উনি কি আমাদের নতুন মা? (ঘুম থেকে উঠে তিশা)
-খবরদার তিশা ওনাকে মা বলবি না। আমাদের মা একজন ই ছিলেন আর সে তানহা আহম্মেদ। (তুলি)
-দেখো আপু উনি কি সুন্দর। আমাদের মায়ের মতই সুন্দর। (নীলিমার গালে হাত দিয়ে তিশা)
-কি বলছিস এসব তুই তিশা? কাকে মা বলছিস তুই? (রেগে গিয়ে তুলি)
-তুলি ও তো বাচ্চা। এভাবে বকো না ওকে। আর আজ থেকে তো আমি তোমাদেরই মা। আমাকে তো মা ডাকবেই। (তুলির গালে হাত দিয়ে নীলিমা)
-কোনো প্রয়োজন নেই।
-কি ব্যাপার তুলি? এভাবে কথা বলছো কেন তুমি? (সুহানা ঘরে এসে)
-তো কিভাবে কথা বলব ফুপ্পি ওনার সাথে? উনি নাকি আমাদের মা হবেন! (মুখ বাঁকা করে তুলি)
-তুলি যাও ফ্রেশ হও। তিশা তুমিও যাও। (ওরা চলে গেলো) ভাবি তুমি কিছু মনে করনা। মা হারিয়েছো তো তাই মানতে পারছেনা। তুমি ওদের কথা একটু সহ্য করো।
-সুহানা তোমায় ভাবতে হবেনা। আমি জানি আর আমি মোটেও কষ্ট পাইনি। (হাসিমুখে নীলিমা)
-চলো এখন নিচে যাই। তিশা আর তুলির টিফিন রেডি করতে হবে।
-করে ফেলেছি আমি।
-তাই?
-হ্যা।
-ভাইয়াকে ডেকে দাও। ভাইয়ার অফিস আছে তো।
-যাচ্ছি।
নীলিমা বেডরুমে গিয়ে দেখলো সাকিব সোফার উপর ঘুমাচ্ছে এক হাত ফ্লোরে ঠেকিয়ে।
চলবে
এই প্রথম এমন ধরনের গল্প লিখলাম। আশা করি গঠনমূলক মন্তব্য জানাবেন☺। তাহলেই বুঝতে পারবো কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে😍