সুখ – পর্ব ১৪

0
278

#সুখ
#Part_14
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
নীলিমাকে এই প্রথম এইভাবে দেখে সাকিব নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না। পুরোপুরি বউয়ের অধিকার পেলো নীলিমা আর সাকিব পেলো স্বামীর অধিকার। নীলিমার এখন আর বাঁধা নেই৷ ও সব পেয়ে গেছে। সেইদিন খুশিতে আর আনন্দে মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো নীলিমার। কিন্তু না এখন মরলে চলবে না। এইরকম হাজার আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে নীলিমার। সাকিবের জন্য বেঁচে থাকতে হবে আর ওর পরিবারের জন্য ও বেঁচে থাকতে হবে।
পরেরদিন সকালে….
চারিদিকে স্নিগ্ধ আলো। এত সুন্দর সকাল হয়ত এর আগে হয়নি, এত সুন্দর করে পাখি হয়ত আর ডাকেনি যেইটা নীলিমার কাছে মনে হচ্ছে। নীলিমা ঘুম থেকে উঠে একহাত গালের নিচে রেখে সাকিবের দিকে পলক হারা দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। সাকিব ঘুমুচ্ছে। নীলিমা আস্তে করে উঠে শাড়ির আচলটা কোনোমতে পেঁচিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো আর নিজেকে আরো একবার চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলো। নিজের অজান্তেই ঠোঁটে হাত দিল নীলিমা। এই প্রথম কোনো ছেলে ওর ঠোঁট ছুঁইয়েছে। ভাবতেই নীলিমা শিউরে উঠছে। নীলিমা আবার পেছনে তাঁকিয়ে দেখে সাকিব কম্বল গায়ে দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। নীলিমা টাওয়েল টা নিয়ে বাথরুমে চলে যায়। অনেকক্ষণ শাওয়ার নিয়ে নীলিমা বেরিয়ে আসে। সাকিব তখনো ঘুম। নীলিমা চুলগুলো টাওয়েল দিয়ে পেঁচিয়ে আর গোলাপি রঙের শাড়িটা সুন্দর করে পরে বেরিয়ে আসে। একদম নতুন বউ লাগছে আজকে নীলিমাকে। ঘরের জানালাগুলো খুলে দিল নীলিমা। এসিটা বন্ধ করে দিল। পর্দা টেনে দেওয়ার সাথে সাথেই সাকিব চোখ কুঁচকে মাথা উপরের দিকে তুলে বলল,
-উহু! পর্দা টেনে দাও প্লিজ। রোদ লাগছে।
-এই যে কয়টা বাজে জানেন? আপনাকে তো আবার অফিসে যেতে হয়না। তাই বলে উঠবেন না নাকি?
সাকিব নীলিমার গলা পেয়ে এইবার ভালভাবে তাঁকালো। ঠিক করে শুয়ে মাথার নিচে হাত দিয়ে নীলিমার দিকে তাঁকিয়ে ওকে ইশারা দিয়ে কাছে আসতে বলল। নীলিমা তো লজ্জায় শেষ। ও দূরেই দাঁড়িয়ে শাড়ির আচল পেচাচ্ছে আঙুলে। বাধ্য হয়ে সাকিব ই উঠে গেলো। উঠে দাঁড়িয়ে সাকিব টি শার্ট টান দিল এরপর হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে নীলিমার সামনে গেলো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত নীলিমাকে একবার দেখলো এরপর টান দিয়ে নীলিমার মাথা থেকে টাওয়েলটা খুলে ফেলল সাকিব। নীলিমার শ্যাম্পু করা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে গেলো আর চুলের থেকে বিন্দু বিন্দু পানি ঝরছে। সাকিব একহাত নীলিমার কোমড়ে রাখলো আরেক হাত আলমারির সাথে রেখে নীলিমার গালে কিস করলো। নীলিমা তো পারছেনা লজ্জায় আলমারির ভেতর ঢুকে যায়। এত লজ্জা ওর আগে লাগেনি কখনো সাকিবকে দেখে।
অস্পষ্ট স্বরে নীলিমা বলল,
-কি করছেন? ফ্রেশ হয়ে আসেন যান। (নিজেকে সরিয়ে নেয় নীলিমা)
-এত মাতাল লাগছে কেন তোমাকে দেখে? এত মাতাল তো কখনো হইনি এর আগেও হইনি। তানহা কে দেখেও এতটা মাতলামো করিনি। কেন এত নেশা নেশা লাগছে আমার? (নীলিমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে সাকিব)
-আমি কি নেশাবস্তু নাকি যে নেশা লাগবে? (সাকিবের চোখের দিকে তাঁকিয়ে নীলিমা)
-নাহলে এত কেন নেশা লাগছে আমার? (নীলিমাকে আবার আলমারির সাথে ঠেকিয়ে ফেলল সাকিব)
-ছাড়ুন না! ব্রেকফাস্ট করবেন না? বানাতে হবে তো। ৭ টা বেজে গেছে। (ক্ষীণ কন্ঠে নীলিমা)
-এই এত ঘর ঘর কর কেন? আমার কাছে থাকতে ভাল লাগেনা? (নীলিমার ঘাড়ে হাত দিয়ে সাকিব)
-জানিনা।
সাকিবের হাত সরিয়ে ওকে ধাক্কা মেরে এক দৌঁড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল নীলিমা। সাকিব খাটে বসে পরে বলে
-এই আস্তে যাও।
এই কথা বলে সাকিব হাসতে শুরু করে। আর ওয়াশরুমে চলে যায় গোসল করতে। ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে নীলিমার শাড়ি আর অন্যান্য জামাকাপড় ভেজানো। হয়ত নীলিমা ই ভিজিয়েছে! সাকিব গোসলের আগে সব ধুয়ে দিয়ে বারান্দায় রোদ দিয়ে যায়। এরপর নিজে গোসল করে বিছানা গুছিয়ে রেখে নিচে নেমে আসে। নীলিমা তখন চুলে কাটা লাগিয়ে আর শাড়ির আচল গুঁজে কাজ করছিলো আর ওকে হেল্প করছিলো সুহা আর কাজের মহিলা। সাকিবকে নীলিমা দেখে হালকা হাসে আর সাকিব তুলি তিশার ঘরে যায়। গিয়ে দেখে ওরা ঘুমুচ্ছে। আজ স্কুলে যায়নি। সাকিব গার্ডেনে গিয়ে দেখে আয়ান গাছে পানি দিচ্ছে। সাকিব কাচি হাতে নিয়ে যায় আয়ানের সামনে গাছের পাতা কাটবে বলে। সাকিবকে দেখে আয়ান বলে,
-গুড মর্নিং ভাইয়া। কেমন আছো?
-মর্নিং। ভালই আছি। তুই আজ পানি দিচ্ছিস? সূর্য কোন দিকে উঠেছিলো আজকে?
-কেন দেই না নাকি?
-কচু দিস। (পাতা কাটতে কাটতে সাকিব)
দুইভাই গল্প করছিলো আর কাজ করছিলো। আধা ঘন্টা পর দুইজন বাসায় ঢুকলো। বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে বসলো দুইজন। তিশা আর তুলিও আছে। সাকিবের আম্মুও আছে আজকে। সবাই মিলে কথা বলছিলো আর হঠাৎ আম্মু সাকিবকে বলল,
-খাবারের পর তুই একটু আমার ঘরে আসিস। কথা আছে।
-আচ্ছা আম্মু।
নীলিমা খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে সবাইকে। সাকিব বলল,
-এই পিচ্চি তুমিও বসো।
-পিচ্চি? কিরে ভাইয়া তুই ভাবিকে পিচ্চি বলিস কবে থেকে? (আয়ান)
-কালকে থেকে। (খেতে খেতেই সাকিব)
-কেন কালকে কি করেছে?
-এসব শুনে তোর কি কাজ? খা চুপ চাপ। (ধমক দিয়ে সাকিব) নীলু তুমি বসো।
-না আপনারা খেয়ে যান এরপর খাচ্ছি।
-বসতে বলেছি না? (চোখ রাঙিয়ে সাকিব)
-বউমা বসোই না। বসো তো! (নীলিমাকে টেনে সাকিবের পাশের চেয়ারে বসালেন আম্মু)
নীলিমা বাধ্য হয়েই খেতে বসলো। খাওয়ার জন্য হাত উঠাতে গেলো যখন তখন নীলিমার কোমড় স্পষ্ট দেখাচ্ছিলো। সাকিব আড়চোখে দেখছিলো কিন্তু নীলিমা বুঝেনি। খাওয়া শেষ করে উঠে গিয়ে সব গোছালো নীলিমা। আর সাকিব মেয়েদের কে পড়তে বসালো। আয়ান আর সাকিবের ঘরটাই দোতালায় আর সুহা, তুলি তিশার ঘর নিচে। মায়ের ঘরটাও নিচে। নীলিমা সব গোছানোর পর নিজের ঘরে গেলো সকালের ভেজানো কাপড়গুলো ধুয়ে দিবে বলে। নীলিমা বাথরুমে গিয়ে দেখলো কাপড় নেই! বাথরুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় চোখ পরতেই দেখলো ওর কাপড়গুলো সব শুকাতে দেওয়া! নীলিমা তো এইবার লজ্জায় পুরো শেষ। সাকিব ধুয়েছে ওর এইসব কাপড়গুলো! বুঝলো না কেন যে মেয়েটা লজ্জা পাবে! কে বলেছিলো ধুতে? নীলিমা ধুম করেই বারান্দা থেকে বেরিয়ে আসে আর সাকিব ও তখনি ঘরে ঢুকে। বারান্দা থেকে এইভাবে আসতে দেখে সাকিব নীলিমাকে বলে
-এসবে লজ্জা পেয়ে লাভ নাই। বউয়ের ব্যক্তিগত সব কিছুতেই আমার হক আছে।
-তাই বলে আপনি! কে বলেছে ওইগুলো ধুয়ে দিতে? আমার তো হাত ছিল নাকি?
-এই মেয়ে ধুয়েছি তো কি হয়েছে? তুমিও একদিন আমার আন্ডার ওয়ার ধুয়ে শোধ করে দিও। ব্যাস হয়ে গেলো।
-ছিঃ এইবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।
-তাইলে চুপ কর। এখন আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আসো।
-যাচ্ছি।
-আর হ্যা এই কোমড় দেখা যায় কেন? (শাড়ি টান দিয়ে সাকিব)
-কোথায় দেখা যায়?
-ডায়নিং এ দেখেছি। যদি সামনে আয়ান থাকতো আমার জায়গায়? সাবধানে চলাফেরা করবে কিন্তু। ঘরে আয়ান আছে।
-ও তো আমার দেবর ই। আর অনেক ভাল ছেলে।
-জানি আমি। কিন্তু তুমি সাবধানে চলবে। শাড়ি পরতে প্রবলেম হলে দরকার নেই কিন্তু এইভাবে শরীর যাতে দেখা না যায়। মনে যেন থাকে!
-আচ্ছা।
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here