সুখ – পর্ব ১৫

0
300

#সুখ
#Part_15
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
সাকিবের কথা শুনে নীলিমা নিচে গেলো কফি বানাতে। আর সাকিব নীলিমার বই ঘাটছে। সাকিব মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যে ও নীলিমাকে প্রাইভেট ভার্সিটি তে ভর্তি করাবে। পাবলিকে আর এক্সাম দেওয়াবেনা। নীলিমাকে এখনো বলেনি। বলবে আজকে। নীলিমা ১০ মিনিট পর কফি নিয়ে ঘরে এলো। সাকিব কফি খাচ্ছিলো আর নীলিমা ড্রেসিং টেবিল গুছাচ্ছিলো।
-নীলু তোমাকে ভাল একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করে দেই।
-প্রাইভেট কেন?
-পাবলিকের পরিবেশ আমার ভালো লাগেনা। ছেলেমেয়েদের উগ্রপন্থী আচরণ, সিনিয়র দের দ্বারা জুনিয়রদের র‍্যাগিং, মেয়েদের সাথে সিনিয়র দের টিজ। আনবিলিভেবল! প্রাইভেটে এসবের কোনো চিন্তাই নেই। এসব করলেই বের করে দেয় তাই কেউ সাহস পায় না।
-খরচ অনেক।
-মাসে ত্রিশ/ পয়ত্রিশ হাজার টাকা। ব্যাপার নাহ।
-এত টাকা খরচ করে পড়াশুনা করে কি হতে পারব? সেই খুন্তি নিয়েই তো থাকতে হবে।
-এই মেয়ে চুপ থাকো। যতসব ফালতু কথা। যে রাঁধে সে চুল ও বাঁধে।
-আমি এতকিছু পারব না।
-আচ্ছা পারতে হবেনা। তুমি পড়াশুনা করবা আর আমি রান্না করব। ঠিক আছে?
-তিনদিন করে হয়রান হয়ে যাবেন বুঝছেন।
-দেখি হয়রান হই কি না৷ এই সপ্তাহের মধ্যেই যে কোনো একদিন যাব তোমায় নিয়ে ভার্সিটিতে।
-আয়ান তো ঢাকা ভার্সিটি শিউর তাই না?
-হুম। ও এক্সাম দেওয়ার আগেই আমি শিওর।
-যাই হোক দুপুরে কি খাবেন?
-যা রান্না করবা।
-আচ্ছা আমি রান্না করতে যাই৷ আপনি আপনার বই আর অফিস নিয়ে থাকেন।
-হাহাহা বউ ও তো আছে। (নীলিমাকে নিজের কাছে টেনে)
-শো পিস হয়ে আছে বউ।
-হাহাহা।
নীলিমা রান্নাঘরে গেলো রান্না করতে। তুলি এসে নীলিমাকে বলল
-আম্মু কথা ছিল একটু।
-হ্যা তুলি বলো। (রান্না করতে করতেই নীলিমা)
-আগামীকাল পেরেন্টস ডে। স্কুলে ফাংশন আছে। আর আমার পেরেন্টসদের প্রেজেন্ট থাকতেই হবে প্রিন্সিপাল ম্যাম বলে দিয়েছে। বাট বাবাই কখনই যায়না। এইবার না গেলে ম্যামের বলা কথার কোনো দাম থাকবেনা। অন্তত তুমি কি যাবে আম্মু? তাহলে ম্যামকে ম্যানেজ করা যেতো।
-তুমি ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল তাই কি তোমার পেরেন্টস যাওয়া বাধ্যতামূলক?
-মনে হয়। এছাড়া আর কোনো কারণ তো আমি দেখছি না।
-তোমার বাবাইকে আমি বলব। তোমার বাবাই ও যাবে।
-থ্যাংক ইউ আম্মু। প্লিজ তুমি একটু বুঝিয়ো বাবাইকে।
-ওকে। তুমি এখন গিয়ে পড়তে বসো। কিছু খেতে চাইলে আমায় বলো।
-তিশা চকলেট কেক খাবে বলে বায়না করছে।
-পরশুদিন বানিয়েছিলাম। ফ্রিজে দেখো আছে। নিয় যাও ওর জন্য। আমি রান্নাটা শেষ করে আসছি।
-আচ্ছা।
নীলিমা রাঁধতে রাঁধতে ভাবতে লাগলো আহমেদ সাহেব যায় না কেন কোনো ফাংশনে? রান্না শেষ করে নীলিমা তিশা আর তুলির ঘরে গেলো। ওদেরকে খাইয়ে দিয়ে সবাইকে লাঞ্চে ডাকলো নীলিমা। সবাই লাঞ্চ শেষ করে আবার যে যার মতোই থাকলো। বিকেলে নীলিমা সাকিবকে বলল,
-আগামীকাল পেরেন্টস ডে। তুলির স্কুলে ফাংশন আছে। কি পরে যাবেন?
-আমি যাব না।
-কেন?
-ফাংশনে যাইনি কখনো বিকজ ভাল লাগেনা।
-এইবার যেতে হবে।
-তুমি যাও।
-আপনিও যাবেন আর যাবেন মানে যাবেন। আর কোনো কথা না।
-আমার এইগুলো ভাল লাগেনা নীলিমা।
-আচ্ছা শো অফ করার জন্য অন্তত যাবেন ঠিক আছে।
-কি আশ্চর্য!
-হ্যা আশ্চর্য। ব্লেজার আয়রন করছি৷ আর কোনো কথা আমি শুনতে চাইছি না আপাতত।
সাকিব রাগে বই রেখে দিল আর বলল,
-যা ইচ্ছা কর।
নীলিমাও সাকিবকে নিয়েই ছাড়বে। পরেরদিন নীলিমা শাড়ি পরলো ব্ল্যাক কালারের আর চুলগুলো পাফ করে খোঁপা করলো। গলায় একটা লকেট আর হাতে চিকন চুরি পরলো। কানে লম্বা দুল পরলো। চোখগুলো ভালভাবে সাজিয়েছে। সাকিব বিরক্ত হয়ে ওয়াশরুমে গেল চেঞ্জ করতে। চেঞ্জ করে এসে দেখে নীলিমা রেডি।
-ওয়াহহহহ! এত সুন্দর লাগছে কেন? মেকাপ কি বেশি করে ফেলেছো?
-না। ঠিকই আছে। কেমন লাগছে?
-ঐশরিয়া বলব নাকি ক্যাট্রিনা বলব ভাবছি।
-ছিঃ আমি বলিউডের কাউকেই লাইক করিনা আর আপনি আমাকে তাদের সাথে তুলনা করলেন? (শাড়ির আচল ঠিক করতে করতে নীলিমা)
-নাহ সত্যি অনেক সুন্দর লাগছে। আবার বিয়ে দেওয়া যাবে।
-বলছেন? তাহলে করেই ফেলি?
-হ্যা কর। বর এনে দিব?
-হ্যা অবশ্যই।
-সাকিব আহমেদ।
-যত্তসব। চলুন এখন।
-এক মিনিট!
-কি?
সাকিব নীলিমার কপালে চুমু দিল।
-এইবার চলো।
নীলিমা নিচে নেমে তুলি আর তিশাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে আম্মুকে দেখে গিয়েছে। স্কুলে নীলিমা আর সাকিবের জায়গা নির্দিষ্ট ছিল তাই সিট খুঁজতে হয়নি। প্রিন্সিপাল ম্যাম সাকিবকে দেখে এগিয়ে এলেন।
-মিস্টার আহমেদ ভালো আছেন?
-হ্যা ম্যাম। আপনি ভাল আছেন?
-আপনাকে তাহলে তুলি স্কুলে আনতে পারলো? মিসেস আহমেদ তাই না?
-হুম।
-থ্যাংক ইউ আসার জন্য। আসলে আজকে আমাদের স্কুলের টপারসদের পেরেন্টস দের জন্য কিছু সারপ্রাইজ গিফট রয়েছে তাই আপনাদের আসতে বলা।
-নো ম্যাম ইটস মাই প্লেজার।
ফাংশন শেষে তুলির ক্লাসমেইট দের পেরেন্টস রা সবাই সাকিবকে জিজ্ঞেস করছে সেকেন্ড বিয়ে কবে করলো? সাকিব জবাব দিতে দিতে অস্থির। সবাই বলছে বউ দিয়ে জিতেছেন। এই কথাতে সাকিব তখন রেগে যায়। রেগে গিয়েই সাকিব বলে,
-ও কি কোনো পণ্য নাকি যে জিতার কথা বলছেন? কি আশ্চর্য মেন্টালিটির লোক আপনারা।
-ভুল হলে মাফ করবেন ভাই। আসলে মজা করেই বলতে গিয়েছিলাম।
-শাট আপ! মজা করার কি আর কোনো জিনিস নেই? ভদ্র সমাজে এসে অভদ্রের মত আচরণ করছেন।
-আচ্ছা ভাই স্যরি।
সাকিব রেগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে এলো। নীলিমা পেছনে ছিল। হঠাৎ একজন টিচার এসে নীলিমাকে প্রপোজ করে বসে।
-How dare you? এনাউন্সমেন্টে শুনেন নি আমি মিসেস আহমেদ? (রেগে গিয়ে নীলিমা)
-শুনেছি। আপনাকে আমি বিয়ে করব যদি রাজি থাকেন। (স্যার)
-স্যার এসবের মানে কি? কেন বলছেন আপনি আমার আম্মুকে এমন? (তুলি)
-আমার মনে যা ছিল তাই বলেছি। আপনাকে আমার ভ্ল লেগেছে।
-আমি এক্ষুণি বাবাইকে ডেকে নিয়ে আসছি। বাবাই যদি আপনাকে না মেরেছে তো দেখবেন। (রেগে গিয়ে তুলি)
-না তুলি ওনাকে কিছু বলো না। জাস্ট ইগনোর কর এই লো মেন্টালিটির মানুষদের।
-চলো আম্মু।
-দাঁড়ান প্লিজ (নীলিমার হাত ধরে স্যার)
নীলিমা পেছনে ঘুরে একটা চড় মারে ওই টিচারকে। এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। গাড়িতে বসে নীলিমা রাঙালু হয়ে আছে। যে কোনো সময় ফাঁটবে। তুলি ওর বাবাইকে কিছু বলেনি কারণ নীলিমা না করেছে। সাকিব গাড়ি স্টার্ট করে সেখান থেকে বাসায় চলে আসে।
নীলিমা ওর হাত কতবার যে হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে ধুয়েছে কে জানে! সাকিব এসবের কিছুই জানেনা। জানলে ওই টিচারের যে কি হত! বিকেলের দিকে সাকিবের মনটা একটু ভাল হয়। বিকেলে নীলিমাকে নিজের কোলে বসিয়ে বারান্দায় গল্প করছিলো দুইজন। হঠাৎ সাকিবের চোখ নিচে যায়। সাকিব দেখে ইশতিয়াক স্যার ওর বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়ানো। নীলিমা বলে
-কি দেখেন?
-তুলির স্কুলের টিচার। তুলির ফিজিক্সের টিচার মিস্টার ইশতিয়াক। উনি এইখানে কি করছেন? কোনোদিন তো দেখিনি।
নীলিমা নিচে তাঁকিয়ে দেখে ওই টিচার টাই। নীলিমার তো তখন শরীর জ্বলছে। সাকিবের হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসে আর বারান্দার দরজা বন্ধ করে দেয়।
-কি হলো?
-গরম লাগছে বারান্দায়।
-ওহ!
-আপনি এমন কেন?
-কেমন?
-একটুও রোমান্টিক না। বউকে একটুও ভালবাসেন না আপনি।
-কে বলছে?
-আমি। অন্যকেউ নিয়ে গেলে বুঝবেন পরে।
-কে নিবে আমার প্রপার্টি?
-নিয়ে গেলে দেইখেন।
-সন্ধ্যে হতে অনেক দেরি। চলো একটু ঘুরে আসি।
-কোথায়?
-ওপেন প্লেসে। মেয়েদের ও নিয়ে যাই।
-হ্যা চলুন। ভাল লাগছেনা আর বাসায়।
-আজকে তোমার জন্য দুইটা সারপ্রাইজ আছে বাসায় আসার পর।
-কি কি?
-বাসায় আসার পর। সো এখন এইসব বাদ। ওদের রেডি করাও যাও।
-আজব মানুষ।
ওরা চারজন রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো। সাকিব গাড়ি বের করে দেখে স্যার তখন ও দাঁড়িয়ে আছে। সাকিব গাড়ির কাঁচ টেনে ওনাকে জিজ্ঞেস করে,
-স্যার আপনি এখানে? আমার বাড়ির নিচে?
-না আসলে মিস্টার আহমেদ এখানে একটা বাসা হারিয়ে ফেলেছি তাই। (নীলিমার দিকে তাঁকিয়ে কথা বলছে)
সাকিব একবার স্যারের দিকে তাঁকালো আবার নীলিমার দিকে তাঁকালো।
-আচ্ছা খুঁজুন।
সাকিব আবার কাঁচ টেনে বেরিয়ে যায়। নীলিমা তুলিকে ইশারা করে কিছু বলতে নিষেধ করেছে। একটা পার্কে গিয়ে বসে চারজন। তিশা আর তুলি দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে আর নীলিমা সাকিব বসে বসে কথা বলছে। অনেক কাপল আছে এখানে আর সবাই ওদের দিকে তাঁকিয়ে আছে। কারণ সাকিব বাদামের খোসা ছাড়িয়ে নীলিমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর অন্যসবাই গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড কে খাইয়ে দিচ্ছে। পার্কে হাঁটাহাঁটি করে ফুচকার দোকানে গেল তুলি।
-বাবাই ফুচকা খাব।
-তোমরা বস এইখানে। আমি বলে আসছি।
সাকিব ফুচকা অর্ডার করে ওদের তিনজনের জন্য। সাকিব ফুচকা খায় না তাই নিজের জন্য করেনি।
-আমার থেকে নিন। যদিও ফুচকার ভাগ আমি কাউকে দেইনা। (সাকিবকে ফুচকা সেধে নীলিমা)
-আমিও খাইনা মিসেস সাকিব। তাই দিয়েও লাভ নেই।
-আমি খাইয়ে দেই। হা করেন।
এরপর সাকিব তিনটা ফুচকা খেলো। নীলিমা তো সাকিবকে বলেই ফেলল
-খাবেন না বলেও তিনটা খেয়ে ফেললেন আমার ভাগের থেকে।
-তোমার কম পরে গেলো?
-জ্বি।
-আজকে পুরো ফুচকার দোকান তোমার। এইযে শুনে যান তো (ফুচকাওয়ালা কে ডেকে সাকিব)
-জ্বি সাহেব
-আর কাউকে আজ ফুচকা দিবেন না। আজকে আপনার কাছে যা ফুচকা আছে সব আমার বউয়ের জন্য। যদি ও খেতে না পারে তাহলেও আপনাকে পুরো বিল দিয়ে দিব।
-আপনি কি পাগল?
-খাও ফুচকা দেখি কত পারো।
-বাবাই ইউ আর গ্রেট (বাবাইয়ের সাথে হাত মিলিয়ে তুলি)
-বাবাই আম্মু এতগুলা খেতে পারবেনা তো। (তিশা)
-পারবে আম্মু পারবে। কি গো লিপস্টিক মুছে দিব খাওয়ার জন্য? (সাকিব নীলিমাকে পিঞ্চ মেরে কথাটা বলল)
-নো নিড। আমাকে নিয়ে মজা করছো তিনজন মিলে। পরে দেখে নিব। আমাকে রাক্ষস বানিয়ে দিল। (নীলিমা)
-আম্মু জেন্ডার চেইঞ্জ করছো কেন? ওইটা রাক্ষসী হবে। (হাসতে হাসতে তুলি)
-হাহাহাহা (সাকিব)
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here