#গোধূলি_লগ্ন
#Writer_Tabassum_Tajinm
#Part_17_18
লোকটা দৌড় দিলো,,কিন্তু তার আগেই কেউ পিছন থেকে মাঝারি টাইপের একটা ইট ছুড়ে মারলো,,তারপর লাঠি নিয়ে মাথায় একটা ঘা বসিয়ে দিলো। লোকটা বসে পড়লো রাস্তায়। তৃপ্তি পূন্যর দিকে রাগি চোখে তাকালো,, হাতে লাঠি,, ইচ্ছা করছে লাঠিটা দিয়ে বুবুনের মাথায় একটা বসিয়ে দিতে।
পূন্যর গলাটা হালকা জ্বালা করছে,, গলায় হাত চেঁপে এগিয়ে গেলো তৃপ্তির দিকে। তৃপ্তি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,,
— গলার চামড়া উঠে গেছে নাকি??
— মনে হয়,, আচ্ছা এখন চল।
— হুম,, বঙ্গ লালনা,, চলেন।
তৃপ্তি লোকটার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে হাটতে লাগলো। অনেকটা হেটে আসার পর একটা রিকশা পেলো।
বাসায় এসে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো পূন্য,, তৃপ্তি পাশে বসে বলতে লাগলো,,
— বুবুন,, সবসময় সব পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার ক্ষমতা নিজের মধ্যে রাখিস।
পূন্য উঠে বসলো,, তৃপ্তির দিকে তাকলো,,অনেকক্ষণ পর বললো,,
— তৃপ্তি,, তুই কি প্রেম করছিস???
তৃপ্তি হাসলো,, হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো,,অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো,,
–“ধূর,, এসব প্রেম টেমের পাল্লায় আমি নেই। কেমন করে নেকামো করে কথা বলে সবাই। আমার কাছে এসব বিরক্ত লাগে।”
তৃপ্তি উঠে চলে গেলো। পূন্য কিছুক্ষণ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো,, তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো,
শিউলি বেগম পূন্যর প্লেটে ভাত দিতে দিতে পূন্যর দিকে তাকালেন। তারপর বললেন,,
— কোথায় গিয়েছিলি দুজন,,?
তৃপ্তি বললো,,
— অরু দির শশুড়বাড়ি।
শিউলি বেগম অবাক হয়ে কিছু বলতে যাবেন,,তার আগেই তৃপ্তি আবার বললো,,
— অরু দি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে,, আঙ্কেল আন্টি মেনে নেয় নি। এখন বুবুন কে বলেছে একটু ট্রাই করতে যদি ওর কথায় রাজি হয়!
রুমে এসে মোবাইল টা হাতে নিলো পূন্য, চার্জ নেই, বন্ধ হয়ে গেছে। মোবাইলটা চার্জে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
নিবিড় বিছানায় বসে অফিসের কাগজ দেখছিলো,, মিতু আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল চিরুনি করছিলো। হঠাৎ নিবিড় বললো,,
— মিতু!!
— জ্বি বলেন..
— তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছো??
— না,, রাগ করবো কেনো??
— না,, তাহলে এমন চুপচাপ থাকো কেনো??
কথাটা বলতে বলতে নিবিড় উঠে দাড়ালো,, কাগজগুলো ফাইলে ভরে আলমারি তে রাখলো,, তারপর ঘুরে তাকালো মিতুর দিকে।
মিতু ততক্ষণে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। বিছানায় শুয়েই উত্তর দিলো,,
— আপনারা চুপচাপ থাকতে বলেন তাই চুপচাপ থাকি। আপনার যোগ্য হয়ে উঠছি, নইলে তো এই বাড়িতে থাকতে পারবো না।
নিবিড় মিতুর দিকে তাকালো,, মেয়েটা আজকাল সত্যিই পাল্টে গেছে,,আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম,, কিন্তু এখন কেনো ভালো লাগছে না। নিবিড় আবার মিতুর দিকে তাকালো,, ঘুমিয়ে পড়েছে। নিবিড় চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ইদানীং ছাদটা তার বেশি প্রিয় হয়ে গেছে।
সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠলো,,রূপন্তকে এইসময় ছাদে দেখে বেশ অবাক হলো,,
রূপন্তর পাশে দাড়িয়ে বললো,,
— এতো রাতে তুই ছাদে??
— হুম,, প্ল্যান করছি।
— কিসের প্ল্যান??
— কক্সবাজার যাবো কিন্তু তার আগে ভেবেছিলাম বান্দরবন যাবো এখন এটা পাল্টে আগে কক্সবাজার সিলেক্ট করলাম, একটু ঘুরে দেখতে চায় ঐ এলাকাটা।
— ও,, বেশ ভালো,, তো একা যাবি নাকি?
— দেখি,, তুই যাবি নাকি??
— ভাবছি,, যাবো।
রূপন্ত নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো,,সে জানতো নিবিড় যাবে,,তারপর আবার বললো,,
— মিতুকেও নিবি তো সাথে???
নিবিড় রূপন্তর দিকে তাকালো,, টাউজারের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে একটা সিগারেট বের করলো,,কিছুক্ষণ সিগারেট টার দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর বললো,,
— মিতু কে জিজ্ঞেস করে দেখি,,যাবে, না যাবে না।
–তোর বউ,,তুই যদি নিয়ে যেতে চাস তাহলে অবশ্যই যাবে। এতে মিতুকে জিজ্ঞেস করার কি আছে? আসলে আমার কি মনে হচ্ছে জানিস তোর ইচ্ছা নেই মিতুকে সাথে নেওয়ার।
–না,, ঠিক তা না,,
— তাহলে মিতুও যাচ্ছে আমাদের সাথে,,
নিবিড় কিছু বললো না,, অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিবিড় মাথা নাড়লো।
রূপন্ত হাসলো,, এবার প্ল্যান অনুযায়ী তিয়ান ভাইয়াকে ফোন দিতে হবে। সবকিছু প্ল্যান অনুযায়ীই হবে,,হতেই হবে। নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বললো,,
— তাহলে এই সপ্তাহের ভিতর চলে যাই??প্রস্তুতি নিতে থাকি,,
— হুম,,
— আমি গেলাম,, অনেক ঘুম পেয়েছে।
রূপন্ত হাসতে হাসতে নিজের রুমে এলো। সে যা প্ল্যান করেছে তা যেনো ঠিক মতো কাজ করে।
মোবাইলটা হাতে নিলো তিয়ানকে কল দেওয়ার জন্য। কিন্তু রাত সাড়ে এগারোটা বাজে দেখে আর কল দিলো না।
বালিশটা পিঠের নিচে দিয়ে বসলো তিয়ান,, কখন থেকে পূন্যকে কল দিয়ে যাচ্ছে,, কিন্তু সুইচড অফ বলছে। হঠাৎ করে আবার মোবাইল বন্ধ করলো কেনো?? আবার কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি! উফফ এতো টেনশনে রাখে না এই মেয়েটা। ইচ্ছা করছে এখন আবার ঐ বাড়ি যেতে,,কিন্তু এখন যাওয়া ঠিক হবে না,, কালকেই হঠাৎ করে যাওয়াতে সবাই বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলো। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ চোখটা দরজার দিকে পড়লো,, তিয়ান উঠে দাড়িয়ে বললো,,
— মা,, তুমি এতো রাতে??কিছু বলবে??
মোর্শেদা বেগম এতক্ষন বাইরেই দাড়িয়ে ছিলো,, এখন রুমে ঢুকলো,, তারপর তিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
— কাকে ফোন করছিলি এতো রাতে?? কাজের ফোন নাকি??
তিয়ান কি বলবে বুঝতে পারলো না। একটু থমকে থেকে মাথা নেড়ে হ্যা বললো। মোর্শেদা বেগম বললেন,,
— কালকে অফিসে গিয়ে গাড়িটা বাসায় পাঠিয়ে দিবি, অনন্যা গিয়ে বৌমা কে নিয়ে আসবে । বাড়ির বৌ বাড়িতে না থাকলে ভালো লাগে নাকি!! সকাল সকাল পাঠিয়ে দিস কিন্তু। আমি কথা বলে রাখবো ওদের সাথে।
তিয়ানের উত্তর শুনার জন্য তিনি আর দাড়ান নি। কথাটা শেষ করেই ওনি বেরিয়ে গেলেন।
তিয়ান কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো,, এতো বড় ছেলের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে!!তিয়ান বিছানায় শুয়ে পড়লো আরো কয়েকবার ট্রাই করলো,, রাগটা দাঁতে দাঁত চেপে কন্ট্রোল করলো, নিজেকে সাত পাঁচ বলে স্বান্তনা দিলো।
অনন্যা ডায়েরির একটা একটা করে পাতা উল্টাতে লাগলো,, কতো কিছুই না লেখা আছে এই ডায়েরিতে। তবে এই কয়েকটা দিন ডায়েরিতে শুধু পুলক পুলক পুলক,, একেবারে পুলকময় করে রেখেছে। অনন্যা হাসলো,, সে পুলককে ভালোবেসে ফেলেছে,,তার অনুপস্থিতি তো তাই জানান দিচ্ছে বারবার। পুলকের গাছের নিচে বসে থাকা,, বারবার বেলকুনির দিকে তাকানো, কোচিং প্রাইভেটে যাওয়ার সময় পিছন পিছন যাওয়া,, মাঝে মাঝে বকবক করাটা,, বড্ড মিস করছে অনন্যা। পুলকের পাগলামিগুলোতে আগে বিরক্ত হলেও এখন আর বিরক্ত হয় না,, বরং এখন ভালোই লাগে। কতোদিন হয়ে গেছে এখনো কেনো পুলক আসছে না। কি করছে এতোদিন ধরে,, ভাবতে ভাবতেই মোবাইলের মেসেজ টোন টা বেজে উঠলো,, অনন্যা নিশ্চিত এখন পুলক মেসেজ করছে এটা নিশ্চিত। প্রতিদিন তিনটা মেসেজ করবেই সে। অনন্যা প্রত্যেকদিন এই মেসেজগুলোর জন্য অপেক্ষা করে। মাঝে মাঝে মেসেজের রিপ্লাই লিখে,,কিন্তু আর সেন্ড করে না। অনন্যা মোবাইলটা নিয়ে মেসেজটা পড়তে লাগলো,, হঠাৎ মনে হলো পেট থেকে সবকিছু বেরিয়ে যাচ্ছে,, মোবাইল টা রেখে ওয়াশরুমে দৌড় দিলো,, সন্ধ্যার দিকে ফুচকা গুলো খাওয়ার পর থেকেই মনে হচ্ছিলো বমি হবে, ওগুলো খাওয়া ঠিক হয় নি তার, এমনিতেই প্রচন্ড গরম,, অবশ্য রুমে তো বুঝায় যায় না,, বমি করে ক্লান্ত হয়ে গেলো অনন্যা,, একটু পানি খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো,, এখন আর পুলকের পাঠানো মেসেজ পড়তে একদম ইচ্ছা করছে না। আর উল্টা- পাল্টা কিছু খাওয়া যাবে না। চোখ বন্ধ করতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো চোখে।
পূন্য জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে গাড়ি টা দেখলো,, তাকে নেয়ার জন্যই এসেছে,, কিন্তু তার যেতে একদম ইচ্ছা করছে না,,কিন্তু কি আর করা যেতেই হবে। রেডি হয়ে নিলো,, অনন্যা হাসি দিয়ে তৃপ্তির সাথে রুমে ঢুকলো। অনন্যা খুব সহজে সবার সাথে মিশে যায়। অনন্যা পূন্যর দিকে তাকিয়ে বললো,,
— ভাবি,, চলো এবার তো যাওয়া যাক,,আজকে সারাদিনের খাবার খেয়ে ফেলেছি।
পূন্য মাথা নেড়ে পা বাড়ালো। গাড়িতে উঠে বসলো,, পূন্যর মা এমনভাবে কাঁদছে,, দেখে ওর চোখেও পানি চলে আসছিলো,,কোনো মতে সামলে নিলো।
তিয়ান অফিসে বসে কাজ করছিলো,, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো,, তিয়ান মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো রূপন্ত,, পূন্যর কাজিন!! এর আগেও মাঝে দুই-তিন বার কল দিয়েছে। তিয়ান ফোনটা কানে ধরলো,,
— হ্যালো,,
— হুম,, তিয়ান ভাইয়া,, কেমন আছেন??
— ভালো,, তুমি??
–এইতো ভালো। আচ্ছা একটা কথা বলবো?
–কি কথা??
— না মানে,, বলছিলাম কি, আমরা মানে আমি, নিবিড় ভাইয়া আর ওর বউ কক্সবাজার ঘুরতে যাবো,, কয়েকদিন ঐখানে থেকে ঐ এলাকা ঘুরে দেখবো,, তো পূন্য আপু আর আপনি যদি যেতেন। পূন্য আপু রাজি হয়ে গেছে,,এখন আপনি যদি,,,,
তিয়ান কিছুক্ষণ ভাবলো,, পূন্য যখন হ্যা বলেছে তখন না বললে ও কষ্ট পাবে। আর পূন্যর যখন কোনো প্রবলেম নেই,, তখন না করাটা ঠিক হবে না।
তিয়ান ভেবে চিন্তে বললো,,
— ঠিক আছে। তো সবকিছু এরেঞ্জ করা হয়ে গেছে??
–না,, তবে হয়ে যাবে। আপনি টেনশন করবেন না। আমরা সব ঠিক করে আপনাকে জানাবো। আচ্ছা তাহলে রাখি।
রূপন্ত ফোনটা কেটে দিয়ে,, একটু হাসলো,,তারপর পূন্যর নাম্বার টা ডায়াল করলো,, পূন্য ব্যাগ থেকে শাড়ি গুলো বের করে আলমারি তে রাখছিলো,, হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠা তে,, গিয়ে মোবাইল টা হাতে নিলো। রূপন্ত কল করেছে!! পূন্য রিসিভ করে বললো,,
— কিরে?? কি খবর রূপু,,
— এই তুই আমাকে রূপু ডাকবি না,, অন্তু ডাক না হলে রূপন্ত ডাকবি,, বুঝলি।
— আচ্ছা ঠিক আছে। হঠাৎ করে আমাকে কল দিলি যে??
— বলছি শুন,,কক্সবাজার যাবি??
পূন্যর চোখ চকচক করে উঠলো,, আনন্দে,, কিন্তু মুহূর্তেই সেটা বিলিন হয়ে গেলো। মন খারাপ করে বললো,,
— কি করে যাবো??
— তিয়ান ভাইয়া আর তুই আমাদের সাথে যাচ্ছিস। একটু আগেই তিয়ান ভাইয়া কনফার্ম করলো।
–আমাদের সাথে মানে??
— নিবিড় ভাইয়া,, মিতু, আমি, তিয়ান ভাইয়া আর তুই।
— না,, যাবো না।
রূপন্ত জানতো পূন্য না করবে,,তাই আগে তিয়ানকে রাজি করিয়ে নিলো।এবার ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে হবে। রূপন্ত বললো,,
— দেখ, তিয়ান ভাইয়া হ্যা বলে দিয়েছে, এখন তুই যদি না করিস তাহলে তিয়ান ভাইয়ার খারাপ লাগবে না!!
পূন্য কিছুক্ষন ভাবলো,,রূপন্ত তো ঠিকি বলেছে। পূন্য বললো,,
— আচ্ছা,, সে দেখা যাবে। কিন্তু,,,
— আরে তুই আগের বিষয় নিয়ে কেনো ভাবছিস,, সব ভূলে যা। কোনো কিছুই হবে না। আচ্ছা রাখছি, তাহলে।
রূপন্ত মোবাইলটা রেখে কিছুক্ষণ বসে রইলো,, তারপর একটু হাসলো। খুব রহস্যময় একটা হাসি।
চলবে,,,,
#গোধূলি_লগ্ন
#Writer_Tabassum_Tajnim
#Part_18
ঠিকি বলেছে। পূন্য বললো,,
— আচ্ছা,, সে দেখা যাবে। কিন্তু,,,
— আরে তুই আগের বিষয় নিয়ে কেনো ভাবছিস,, সব ভূলে যা। কোনো কিছুই হবে না। আচ্ছা রাখছি, তাহলে।
রূপন্ত মোবাইলটা রেখে কিছুক্ষণ বসে রইলো,, তারপর রহস্যময় একটা হাসি দিলো।
কক্সবাজার যাওয়ার পর কারো মুখ দিয়ে কোনো কথায় বেরুই নি। রাস্তায় শুধু বকবক করে গেছে রূপন্ত আর মিতু।
নিবিড় গাড়িতে বসে একবার পূন্যর দিকে তাকিয়েছিলো,, আর তাকায় নি,, বুকের ভিতরটায় কেমন জানি ব্যাথা করে ওকে দেখলে। রূপন্ত কেনো করলো এটা!! কেনো ওদেরকে সাথে নিলো?? সে যে পূন্যর পাশে তিয়ানকে একদম সহ্য করতে পারছে না।
তিয়ান লক্ষ করলো, পূন্য সেই আগের মতোই অস্বাভাবিক হয়ে গেছে,, হাতে হাত রাখলেই চমকে উঠছে,, হাত সরিয়ে নিচ্ছে, কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে। একটু দূরে দূরে থাকতেই বেশি পছন্দ করছে এখন। তবে এ নিয়ে তিয়ানের তেমন কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তার নিজের উপর ভরসা আছে,, সে সব কিছু সামলে নিবে।
রয়েল টিউলিপে রুম বুকিং করা হয়েছে তিনটা। হোটেলে এসেই মিতু ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। এটা তার জীবনের সবচেয়ে লম্বা জার্নি। কিন্তু তার একটু ক্লান্তি লাগলো না। উঠে নিবিড়ের পাশে বসলো,, বললো,,
— একটু সমুদ্রে যাবো!!
নিবিড় কোনো উত্তর না দিয়ে মোবাইলে কি যেন করছিলো,, মিতু মাথায় একটা ঠুয়া মারলো,, নিবিড় তাকাতেই হাতের নখ কামড়াতে লাগলো।
সে একটা ভূল বারবার করে কেনো বুঝতে পারে না।
নিবিড় মিতুকে দেখলো,, মেয়েটা দুই দুইবার ওকে ঠুয়া মারলো!! কিছুক্ষণ মিতুকে দেখার পর বললো,
— কি কিছু বলছিলে নাকি??
মিতু চমকে গেলো,, লোকটা তাকে বকে নি!! উল্টো নরম গলায় বললো কিছু বলছিলে নাকি!!! মিতু আমতা আমতা করে বললো,,
— না মানে, একটু সমুদ্রে যাই?
— না, এখন যেতে হবে না। প্রচন্ড রোদ বাইরে,,, এখন একটু রেস্ট নাও বিকালে নিয়ে যাবো।
কথাটা বলে নিবিড় ওয়াশরুমে চলে গেলো। মিতু নিবিড়কে একবার দেখে গ্লাসটা সরিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো,, কখন নিজের অজান্তেই সে নিবিড়ের প্রেমে পড়ছে সে জানে না। নিবিড় তার আশেপাশে থাকলে কেমন যেন হার্টবিট বেড়ে যায়,, তাকে হারানোর ভয় চারপাশ থেকে আঁকড়ে ধরে মিতু কে, তাকে যে মিতু হারাতে চায় না,, বরং তার ভালোবাসার মধ্যে সে নিজেকে হারাতে চায়,, তার ভালোবাসায় নিজেকে পূর্ণ করতে চায়,, কিন্তু সে কেনো এতো দূরে থাকে! কেনো সে তার প্রথম ভালোবাসাকে ভূলতে পারে না! কেনো সে আমাকে আপন করে নিতে পারে না! আমি তো আর আগের মতো পাগলামো করি না,, পাল্টে গেছি,বড় হয়ে গেছি, ঠিক সে যেমন চাইতো! তাহলে সে কেনো কাছে আসছে না! সে তার প্রথম ভালোবাসা নিয়ে পড়ে আছে,, কিন্তু আমি কি করে থাকবো,, আমি তো আমার প্রথম ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়ছি। যখন নিবিড় আমাকে ইগনোর করে তখন মনে হয় এই বেঁচে থাকাটাই বৃথা। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে বলতে আমি আপনাকে ভালোবাসি,, খুব বেশি ভালোবাসি,।
নিবিড় ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে শুনতে পেলো মিতু বিড়বিড় করে কি যেনো বলছে,, হালকা এগিয়ে গেলো,,এখন স্পষ্ট শুনতে পেলো,,
“ভালোবাসি, ভালোবাসি” বলছে মিতু। নিবিড় বললো,,
— কি ভালোবাসো??
— আপনাকে ভালোবাসি, আপনার রাগটাকে ভালোবাসি,, আপনার হাসিটাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি, মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসি।
মিতু ঘুরে দাঁড়ালো,,স্তব্ধ হয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে রইলো,, সে কি বলতে কি বলে দিয়েছে,, এখন যদি তিনি বলেন, “আমি তোমাকে ভালোবাসি না,” তাহলে কি করবে সে?? ঘোরের মধ্যে বলে দিয়েছে,,, পরক্ষনেই আবার ভাবলো,, এটা আমাকে তো একদিন বলতেই হতো,, আজ নয়তো কাল,,তাই বলে দিয়েছে,, এখন শুধু নিবিড় কি বলবে তা শুনার পালা,,
নিবিড় কি বলবে বুঝতে পারছে না,, এই বাচ্চা মেয়েটাকে,, সে তাকে ভালোবাসে! কিন্তু কেনো?? ভালোবাসা তো আর বলে আসে না, মেয়েটা কেনো তাকে ভালোবাসে?? তাকে ভালোবেসে যে মেয়েটা কিছুই পাবে না। কিছুক্ষন চুপ থেকে নিবিড় বললো,,
— উল্টা পাল্টা কথা না বলে যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। তোমার এই সব পাগলের প্রলাপ শুনতে তোমাকে এইখানে নিয়ে আসি নি।।
মিতু নিবিড়ের দিকে তাকালো,, চোখটা ছলছল করে উঠলো, বুকের ভিতরটা ব্যাথা করছে,, চোখটা বন্ধ করলো মিতু,, দু গাল বেয়ে ঝরে পড়লো অশ্রু। কিন্তু সেদিকে নিবিড়ের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে,, হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে,, দূর থেকে বুঝা যাচ্ছে না।
মিতু ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ওয়াশরুমের দিকে,, শাওয়ার টা ছেড়ে কিছুক্ষণ দূরে দাড়িয়ে রইলো,, টপটপ করে পানি পড়ছে,,,ফ্লোরে,, মিতুর চোখ থেকেও পানি ঝরছে,, প্রথম ভালোবাসা ব্যক্ত করলো ভালোবাসার মানুষের কাছে,, আর সে কিনা বললো, এগুলো পাগলের প্রলাপ!! আচ্ছা রূপন্ত তো বলেছিলো এই মানুষটাও কাউকে ভালোবাসতো,,তাহলে সে কেনো জানে না ভালোবাসা মানেই তো মাতলামো,,পাগলামো,।
কিছুক্ষণ নিবিড়ের মুখের তাকিয়ে রইলো,,তারপর আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো, চোখ লাল করে ফেলেছে,, এতো কষ্ট জীবনে কখনো পায় নি মিতু। টাওয়াল দিয়ে মাথার চুল গুলো মুছতে থাকে, কয়েকটা দীর্ঘ নিশ্বাস ও বেরিয়ে এলো,,
রুপন্ত দরজায় নক করলো,, মিতু বারান্দায় বসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে,, একেকটা বিশাল আকারের ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে থাকা পাথরগুলোর উপর।
নিবিড় মিতুকে দেখে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। রূপন্ত নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো। রুমে ঢুকে একবার মিতুর দিকে তাকালো,, সমবয়সী হওয়ায় মেয়েটাকে কখনো ভাবি ডাকে নি রূপন্ত,,তবে মাঝে মাঝে মায়ের সামনে বাবার সামনে মিতু ভাবি বলতে হয়। তবে সামনাসামনি কখনো ভাবি ডাকা হয় নি।
নিবিড় রূপন্তকে বললো,,
— কি হয়েছে??কিছু বলবি??
–বলছি খানা পিনা হবে নাকি??
–হুম।
— আমি অর্ডার দিয়েছি,, আমার রুমে খাবার নিয়ে আসবে,, তুই আর মিতু চলে আয়। আমি পূন্য আপুকেও বলে আসি,,
নিবিড় বুঝতে পারছে না,,রূপন্ত কি চায়ছে??
মিতুকে অনেকবার বলেছে খাওয়ার জন্য,,কিন্তু মিতু আসলো না। তাই নিবিড় বাধ্য হয়ে একাই রূপন্তর রুমে গেলো। রূপন্তর চোখ মিতুকে খুজলো,,না পেয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বললো,,
— কিরে মিতু কোথায়,,??
–আসবে না।
— সে কি?? দেখ এখনো পূন্য আপুরাও আসে নি। আমি গিয়ে মিতু কে নিয়ে আসি। তুই একটু পূন্য আপুকে বলে আয় তো।
নিবিড় ভ্রু কুচকে বললো,,
— তুই গিয়ে বলে আয়,, আমি পারবো না,,
— আরে, আমি তো মিতুর কাছে যাচ্ছি,, একসাথে দুই জায়গায় যাবো কিভাবে?? তুই যা না,, দেখ খাবার কিন্তু কখন দিয়ে গেছে। যা,,,
রূপন্ত নিবিড়কে ঠেলে পাঠিয়ে দিলো। তারপর একটু হাসলো,,হেসে মিতুর কাছে গেলো,
অনেক্ষণ ধরে ভাবি ডাকার চেষ্টা করলো,,কিন্তু ভাবিটা পেটে আসলেও মুখে আসছে না,, বাধ্য হয়ে নাম ধরেই ডাকলো,,
— মিতু,, ভাইয়া বসে আছে,, খেতে চলো,,
— আমার ক্ষুধা নেই।
–ওহ,, ঠিক আছে তোমার খাবার টা রুমে পাঠিয়ে দিবো।
রূপন্ত রুম থেকে বেরিয়ে হাটতে লাগলো,কিছুক্ষন দেবদাসের মতো হাটলো,কি ভেবে একটা মুচকি হাসি দিলো।
পূন্য বারান্দার গ্লাসটা হালকা খুলে দাড়িয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালো, তিয়ান লক্ষ করলো পূন্যর কিছু একটাতে সমস্যা হচ্ছে। বিছানায় শুয়ে ছিলো, উঠে গিয়ে পূন্যর কোমর জড়িয়ে ধরলো,, কানে কানে বললো,
— দেখো, সব ভূলে যাও। আমি জানি যতো সহজে বলা যায়, ততো সহজে ভূলা যায় না। তবুও চেষ্টা করো।
পূন্য তিয়ানের দিকে ঘুরলো, চুল গুলো হালকা বাতাসে মুখের উপর পড়লো, তিয়ান কিছুক্ষণ পূন্যকে দেখে চুলগুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে কানের পাশে গুঁজে দিলো। পূন্যকে টেনে কাছে নিয়ে এলো। অনেক কাছে, যখন তাদের মধ্যে দূরত্ব কমে গেলো,, তিয়ানের নিশ্বাস গুলো পূন্যর মুখে আছড়ে পরছিলো,পূন্য চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো তখন দরজার সামনে দাড়িয়ে নিবিড় অবাক হয়ে দেখছিলো পূন্য কতোটা অবলীলায় তিয়ানের কাছে গিয়েছে,, কতোটা সুখে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে,
দরজা খুলা ছিলো, তাই নিবিড় একটু এগিয়ে দরজার সামনে আসতেই এই দৃশ্য দেখলো, ওর তখন কতোটা কষ্ট হচ্ছিল নিজই বুঝতে পারছে না, এতো সহজে পূন্য সবকিছু ভূলে গেলো! তবে সে কেনো ভূলতে পারছে না? নাহ্ সে কিছু ভাবতেই পারছে না, এলোমেলো পায়ে রূপন্তর রুমে এসে সোফায় বসে পড়লো, খাবার নিয়ে খেতে লাগলো, গলা দিয়ে খাবার নামছে না।
রূপন্ত নিবিড়ের মুখটা দেখলো, কেমন যেনো পাথুরে একটা ভাব নিয়ে বসে বসে খাচ্ছে। অনেক রাগ হলে রাগ চেঁপে রাখলে চেহারায় এমন একটা পাথুরে পাথুরে ভাব আসে নিবিড়ের। হয়তো নিবিড় এমন কিছু দেখেছে যার জন্য তার রাগ উঠে গেছে।
রূপন্ত ধীর গলায় বললো,
— পূন্য আপুকে ডাকতে যাস নি তুই?
কথাটা শুনে নিবিড়ের চোখ গুলো জ্বলে উঠলো, জোরে চিৎকার করে কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখনি তিয়ান রুমে ডুকলো,, কিছুক্ষণ পর হাসি মুখে পূন্য।
খাওয়ার সময় রূপন্ত, তিয়ান অনেক কথা বললো। অল্প কিছু মুখে দিয়েই উঠে গেলো পূন্য, কারন নিবিড়ের সামনে বসে খাওয়া টা তার পক্ষে সম্ভব না। নিবিড় যেভাবে তাকে দেখছিলো মনে হচ্ছিলো এখানেই পুড়িয়ে ভস্ম করে দিবে।
নিবিড় খেয়ে উঠে দাড়াতেই রূপন্ত বললো,,
— মিতুর খাবার টা!
–ও খাবে না।
কথাটা বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রূপন্ত আবার তিয়ানের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
তিয়ান ঘুমিয়ে আছে,, বিকাল হয়ে গেছে পূন্য কতোবার ডাকলো তবুও উঠলো না। একা একাই পূন্য বেরিয়ে গেলো,, সমুদ্র দেখবে বলে।
নিবিড় চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো,,এবার উঠে বসলো,, মিতু এখনো সেই আগের জায়গাতেই গ্লাসে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। নিবিড় মিতুকে বললো,,
— তুমি তো দুপুরে কিছু খাও নি,, এখন খাবে??
অনেক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো উত্তর পেলো না মিতুর কাছ থেকে। উঠে মিতুর কাছে গেলো,, একটু রাগি গলায় বললো,
— সমস্যা কি তোমার??
— আমার তো কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা টা আপনার,, আর এতোই যখন সমস্যা তখন আমায় কেনো বিয়ে করেছিলেন??
— কেনো এমন করছো?? কি চাও তুমি??
–আপনাকে,, আপনার ভালোবাসা!!!
মিতু নিবিড়ের দিকে তাকালো,, তারপর আবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে সমুদ্রের পানির দিকে আঙুল তুলে বললো,,
— দেখুন লিকুইয়িড গোল্ড। এই সময়টা কে কি বলে জানেন?? গোধূলি বেলা, আকাশটা তখন এক নতুন রূপ পায়, জগৎটা তখন এক আলাদা পূর্নতা পায়। আমি ও পূর্ণ হতে চাই,,
নিবিড় মিতুর কাছে এসে দাড়ালো,মিতুর মুখটা দেখলো,, চোখের পানিতে চুল গুলো গালে মিশে গেছে। নিবিড় হাত দিয়ে মুখের উপর আঁটকে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিলো,, মিতুর থুতনিতে হাত রেখে বললো,,
— বুঝো,, পূর্ণ হওয়ার মানে?? বুঝো ভালোবাসার মানে??
— আমার কাছে ভালোবাসা মানে আপনি,, শুধু আপনি।
কথাটা বলতেই হালকা বাতাসে মিতুর চুলগুলো আবার সামনে পড়লো,, চোখের পানিতে ভিজে লেপ্টে গেলো গালে,, সূর্যের ম্লান আলো এসে পড়লো মিতুর মুখে,, এই মুহূর্তে মিতুর চেয়ে বেশি সুন্দর কাউকেই মনে হচ্ছে না। কাঁচা হলুদ গায়ের রংয়ের উপর যদি সূর্যের ম্লান সোনালী আলো এসে পড়ে,,তাহলে যে কাউকে এতো সুন্দর লাগে নিবিড় জানতোই না। চুল গুলো সরিয়ে দিলো নিবিড়,, দু হাতে মিতুর গাল স্পর্শ করলো,,
গোলাপী ঠোঁটের উপর সোনালী আলো,, বড্ড আকৃষ্ট করছে নিবিড়কে,, রহস্যময় লাগছে,, কিছুক্ষণের মধ্যেই নিবিড় নিজের আওতায় নিয়ে এলো মিতুর ঠোঁট জোড়া,,
মিতুর বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লেগে গেলো,,কিছুক্ষণ ঠোঁট শক্ত করে রাখলো, তারপর নিবিড়ের কাছে ধরা দিলো,, নিজের শরীরের সমস্ত ভার নিবিড়ের উপর ছেড়ে দিলো।
চলবে,,,