জীবনসঙ্গী
পর্ব ১১
writer- Tanishq Tani
শশী মুগ্ধ হয়ে অনিকেতের গান শোনে,,,এতো সুন্দর মোহমুগ্ধতা ওর কন্ঠে যে কেউ বিভোর হয়ে রবে গান শুনতে শুনতে,,,
শশীও ঠিক তাই হয়ে আছে,,
ভাবি,,,শশীর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে
হুম,, হুমমম,,, গানের মধ্যে এতোটায় বিভোর ছিলো ফারিহার ডাকে হকচকিয়ে যায়,,
গানের মধ্যে ডুবে গেছো তাই না?
আরে তেমন কিছু না,,,সরো রান্নাঘরে যাবো আমি,,
আরে কিসের রান্নাঘর,,চুপ করে বসো তো এখানে,,,শশীর হাত টেনে বসিয়ে দেয়,,,
তুমি জানো ভাই এতো সুন্দর করে গান কেন গায়,,
না জানি না,,মুখ ছোট করে বলে,,,
তোমার জন্য,,
আমার ভাই তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে যেখানে ওকে পাবার জন্য বাংলাদেশের মেয়েরা পাগল,,আর তুমি আমার ভাইকে গুনো ই না,,আর কতো কষ্ট দিবা আমার ভাইটাকে,,
তোমার ভাইকে এতো কষ্ট করতে বলেছে কে শুনি,,বাংলাদেশের যেসব মেয়েরা তার জন্য পাগল তাদেরকে ভালোবাসলেই পারে,,,
মুখ ভেংচি দিয়ে,,,
আমি হইলে তোমাকে জোর করে,,,, থাক কমু না,,,
কি করতা,,
ভাগ্য ভালো তোমার আমি অনি ভাইয়া না,,,
না হলে এতো অহংকার কিসের তোমার,, জোর করে হলেও নিজের করে নিতাম তোমাকে,,,
জোর করলেই সব পাওয়া যায় না ফারিহা,,
মানুষের ব্যবহার কর্ম সৎ চরিত্রই তাকে অন্যের কাছে আকৃষ্ট করে,,
তুমি কি মনে করো আমার ভাইয়ের মধ্যে এসব গুনাগুন নেই?
আমি তো তা বলি নাই,,আমি বলেছি একটা মানুষের ব্যবহার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কারনে অন্য কে আপনাআপনিই ভালোবাসতে বাধ্য করাবে,,এরজন্য জোর বা বার বার ভিক্ষা চাওয়া লাগবে না,,
একদিন তুমিও আমার ভাইয়ের মতো কাঁদবে দেখো সেদিন আজকের এই গোয়ার্তুমির জন্য আফসোস হবে,,,
অভিশাপ দিচ্ছ,,
অভিশাপ না ভাবি,,যে যা করে তার ফল সে ভোগ করবেই,,, এটাই প্রকৃতির নিয়ম,,
ফারিহা ভাবিকে নিয়ে খেতে আয়,,
আসছি মা,,,
চলো ভাবি,,
তুমি যাও আমার ক্ষেতে ইচ্ছা করছে না,,
রাগ করেছ ভাবি আমার উপর,,,রাগ করো না প্লিজ আমার মিষ্টি ভাবি,,আসলে আমি কিন্তু কষ্ট দেওয়ার জন্য কিছু বলিনি তোমাকে,,ভাইয়ের কষ্ট আমাকে কষ্ট দেয় খুব তাই,,,
চলো না গুলুগুলু ভাবিটা আমার,,শশীকে জোর করে সোফা থেকে উঠিয়ে নিয়ে ডাইনিং এ নিয়ে যায়,,,
ছোট মা একটা কথা বলো তো,,,
কি বল,,,
ভাবিকে কোন হিরোইনটার মতো লাগে বলো তো,,,
উমমম,শশীর দিকে তাকিয়ে,,,
ও হ্যাঁ মনে পড়েছে,,,তামিল নায়িকা হানসিকার মতো,,,
ঠিক না,,
হ্যাঁ তাই,,শুধু হাইট টা একটু কম,,
শশী চুপচাপ ওদের কথা শুনে মনে মনে হাসে,,
ওর মতো একটা পেত্নিকে এরা হানসিকা বানাই দিলো,,
ফারিহা ভাবির প্লেটে খাবার তুলে দেয়,,
ভাবি শুরু করো,,,
হুমম,,
অরুনা চৌধুরীর নামাজ পড়ে রুম থেকে ডাইনিং এর দিকে আসতেই অনি কল দেয়,,
হ্যাঁ অনি বল,,তোর আসতে লেট হবে,,রাত ১ বাজতে পারে,,,আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে আসিস,,
হ্যাঁ,,বউমা ঠিক আছে,,হ্যাঁ হ্যাঁ সবাই খেতে বসেছে,,
আচ্ছা ঠিক আছে,,,
কি হয়েছে মা,,
তোর ভাই কল করেছিলো,,শো লেট নাইট পর্যন্ত হবে তাই আসতে আসতে ১/২ বাজতে পারে,,,,
এই মিনু অনি আসলে খাবার গরম করে খেতে দিস,,কি অবস্থা করেছে ছেলেটা নিজের ওর ডায়েটিশিয়ান আমাকে কাল কল করে বলছে ম্যাডাম স্যার কে একটু বোঝান,,অতিরিক্ত অ্যালকোহল আর ডায়েট অনিয়মের জন্য দিনদিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে,, ঠিকমতো পারফমেন্স করতে পারছে না শো তে,,,এভাবে চলতে থাকলে অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে,,,
কি যে করি এই ছেলেটাকে নিয়ে আমি,,আমার চিন্তায় ঘুম হয় না,,,
শশী মন খারাপ করে শাশুড়ির কথা শোনে,,,
তোমরা না খেয়ে চুপ করে বসে আছ কেন,,
খাওয়া শুরু করো,,আমি অনি বাড়ি ফিরলে খাবো,,,
কিন্তু আপা তোমার তো ডায়াবেটিস তুমি খাবারে অনিয়ম করলে সমস্যা,, অনি আসলে আমি খাবার দিয়ে দিবো তুমি খেয়ে নাও,,,
ছোট মা,,মা,,আপনারা কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলি,,,
বলো বউ মা,,
মা আপনারা খেয়ে শুয়ে পড়ুন,,উনি আসলে আমিই খাবার দেবো,,,
না না,,তুমি নতুন বউ,,আবার তুমি অসুস্থও তুমি বরং খেয়ে শুয়ে পড়,,
না মা,,আমার সমস্যা হবে না,,আমি পারবো,,উনি আসলে একবারে খাবো
ভাতের প্লেট সরিয়ে,,,
আরে মা,,ভাবি যখন পারবে বলছে তুমি না না করছ কেন,,,স্বামীকে রেখে স্ত্রীর খাওয়া ঠিক না,,ভাবি তুমি ভাইয়ার সাথে খেয়ো,,,
কিরে ফারিহা এদানিং দেখছি খুব বুঝতে শিখেছিস,,,আপা ফারিহা তো আর ঘরে রাখা যাবে না,,এবার পরের ঘরে বিদায় করতে করতে হবে,,,
ছোট মা তুমি না,,,লজ্জা পায়,,
বাড়ির সবাই খেয়ে শুয়ে পড়ে,, শশীকে শ্বাশুড়ি মা অনেকবার বলে রাতের খাবার খেয়ে অনির জন্য অপেক্ষা করতে কিন্তু শশী অনির সাথে খাবে বলে আর খাই না,,,
ঘড়িতে রাত ১ টার কাটা ছুঁই ছুঁই,,
শশী বিছানায় বসে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে,,,
ঘারটায় অনেক ব্যথা করছে,,,সারাদিন এই ঘার আর হাতটার ব্যথা খুব পিড়া দিয়েছে,,,
পরের বাড়ি দেখে কাওকে কিছু বলে নি শশী,,
তখন খাবার না খাওয়ার আরো একটা কারন হলো শশীর হাত দিয়ে খাবার খেতে পারবে না শশী,,কারন ডান হাতের কাটা শিরাতে টান লাগে ডান হাতে কোনো কাজ করলে,,,
তাছাড়া অনিকেত সকালে না খেয়ে যাওয়ায় শশীর খাবার খেতে ইচ্ছা করে না অনিকেত ছাড়া,,,
হঠাৎ রুমের দরজা খোলার আওয়াজে শশী দরজার দিকে তাকায়,,,
অনিকেত এসেছে,,
শশী তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে দাড়াতে গিয়ে ঘারে টান লাগে,,আহ্ শব্দ বের হয় মুখ থেকে,,,
শশীকে এভাবে এতোরাতে জেগে থাকতে দেখে অনিকেতের চিন্তা হয়,,,
অনিকেত ভেবেছিল শশী ঘুমিয়ে পড়েছে,,, সারাদিন প্রেয়সীর মুখটা দেখতে না পেয়ে অনিকেতের মন টা ছটফট করছিলো,, তাই ঘুমন্ত শশীকে একনজর দেখার জন্য রুমে এসেছিলো,,,
কি হয়েছে কোনো সমস্যা,, এখনো ঘুমাও নাই যে,,,খারাপ লাগছে,,কেউ কিছু বলেছে,,,
শশীর কাছে এসে ওর দিকে তাকিয়ে অনর্গল বলে যায় কথাগুলো,,,
না কিছু হয় নি আমার,,,আপনার বাড়ি ফেরার প্রতিক্ষা করছিলাম,,,
কি বললে,,আবার বলো,,,অনিকেত শশীর কথা শুনে আশ্চর্য হয়,,যে মেয়ে ওকে স্বামী হিসেবে মানে না পছন্দ করে না,,সে কিনা ওর জন্য এতো রাত করে জেগে আছে,,,
ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন আমি খাবার গরম করছি,,,
দাঁড়াও,,, তুমি খাবার খেয়েছ,,,
শশী না সূচক মাথা নাড়ায়,,,
কেন?
জানি না,,,
শশী অনিকেত কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে,,তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে যায়,,
অনিকেতের এতো ভালো লাগে,,খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করে,,, ওর স্বপ্ন সব বাস্তব হয়ে ধরা দিচ্ছে,,,
ভেতরে একটা বিশ্বাস তৈরি হচ্ছে হয়তো শশী একদিন ওকে আপন করে নেবে,,,
অনিকেত ফ্রেশ হয়ে একটা ব্লাক টিশার্ট পড়ে নিচে নামে,,,
শশী টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিচ্ছে,,,
অনিকেত চেয়ার টেনে শশীর দিকে চেয়ে চেয়ারে বসে,,,
শশী অনিকেতের প্লেটে খাবার বেড়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে পাশে দাড়িয়ে থাকে,,
অনিকেত কোনো কিছু নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই শশী গিয়ে আগেই সেটা নিয়ে অনিকেতের কাছে দেয়,,,
অনিকেতের হৃদয়জুড়ে ভীষণ ভালো লাগা কাজ করে,,,আনমনে হাসে অনিকেত,,,
এখানে বসো তোমার তো হাতে ব্যথা তাই হয়তো খাও নি,,বসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি,,,
শশী বসতে ইতস্তত করলে অনিকেত ধমক দিয়ে পাশে বসায়,,,
তারপর শশীকে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দেয়,,
পরেরবার আবার খাওয়াতে গেলে শশী বলে
এবার আপনি খান,,, সকালে তো কিছুই খান নি,,,নিচের দিকে চেয়ে
আমি এই হাত মুখে দিলে তোমার এই এটো হাতে খেতে ইচ্ছা করবে,,,
কেন ইচ্ছা করবে না,,আপনি খান তারপর আমাকে খাইয়ে দিয়েন,,,মাথা নিচু করে লাজুক ভঙ্গিতে বলে,,,
ঠিক আছে,,মিসেস যা বলবে তার মি. তাই শুনবে,,,,ঠোঁট বাকিয়ে হেসে,,,
শশীকে খাইয়ে নিজেও খাই,, খাওয়া শেষে অনিকেত শশীকে খাবার প্লেট ধুতে ও বাকি খাবার সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে,,,
শশীর দিকে চেয়ে আনমনে হাসে অনিকেত,, চোখে মুখে আনন্দ উপচে পড়ে,,,
আচ্ছা তাহলে তুমি গিয়ে শুয়ে পড় আমি পাশের রুমে আছি,,,দরকার হলে বলো,,,
শুনুন,,,, অনিকেত কে পেছন থেকে ডাক দিয়ে,,
হ্যাঁ বলো,,শশীর দিকে ফিরে,,,
আমার রাতে একা ঘুমাতে ভয় করে,,,মুখটা ছোট করে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
আচ্ছা তুমি যাও,, আমি আসছি,,,,
শশী,,অনিকেতের জবাব শুনে খুশি হয়,,,
শশী বিছানা ঠিক করে দুটো বালিশ মাথার দুপাশে রেখে বিছানা উপর বসে থাকে অনিকেতের প্রতিক্ষায়,,,
অনিকেত কিছুক্ষণ পর রুমে ঢুকে সোফায় শুয়ে পড়ে শশীকে শুতে বলে,,,
শশী মন টা বেজার করে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়ে,,,
আচ্ছা আমি উনাকে পছন্দ করি না ঠিক,,কিন্তু স্বামী হিসেবে তো মানি,,কিন্তু উনি কিভাবে দূরে দূরে থাকে,,,এক বিছানায় শুলে কি হতো,,,
ঘোড়ার ডিম টা ভালোবাসে,,পঁচা স্বামী,,,
এই যে শুনছেন,,,
হ্যাঁ বলো,,মোবাইল ফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে শশীর দিকে চেয়ে,,,
আপনি সোফায় শুয়েছেন কেন,,আপনার জন্য যে ফেরেশতারা আমাকে অভিশাপ দেবে,,
হোয়াট,,,
কেন আপনি জানেন না বুঝি,,,স্বামী স্ত্রী আলাদা ঘুমালে ফেরেশতারা নারাজ হয়,,
সেটা তো ঝগড়া করে আলাদা ঘুমালে,,,
তোমার সাথে তো আর আমি ঝগড়া করি নাই,,তাছাড়া তুমি যতদিন চাইবা না আমি তোমার কাছে স্বামীর অধিকার চাইব না,,,
বলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে অনিকেত ,,,
শশী চুপ করে অনির দিকে তাকিয়ে থাকে,,,কেন মনটা খারাপ লাগে অনিকেতের এমন দূরত্বে,,,আমিও তো চাই সে দূরে থাক আমার থেকে,,,আসলে কি আমি চাই সে দূরে থাক আমার থেকে?হ্যাঁ আমি চাই সে দূরে থাক,,কি আছে আমার অনিকেত কে দেওয়ার মতো,,,কিছুই নেই,,,চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে শশীর অনিকেতের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে,,,
আমি কি দেবো ওগো তোমায়,,
নিজের বলে কিছু নাই যে আমার,,,
তোমার চরনের ফুল হওয়ার ভাগ্য
নেই গো প্রিয় এই অভাগির,,,
চলবে,,,