জীবনসঙ্গী
পর্ব ১২
writer- Tanishq Tani
সকালে ঘারের ব্যথাটা খুব বেড়েছে লাগে,,মনে হচ্ছে এই বুঝি ঘাড়ের রগ টা ছিড়ে যাই,,,,বিছানা থেকে উঠে নামাজ টাও পড়তে পারে নাই,,অর্ধেক রাত ব্যথায় ছটফট করেছে শশী,,,
এসময় অনিকেতের প্রবেশ রুমে,,শশীর এতো বেলা করে শুয়ে থাকা দেখে চিন্তিত হয়,,
তোমার কি শশীর খারাপ?
না,,ব্যথায় মুখ মলিন হয়ে যায় শশীর
তাহলে এখনো শুয়ে আছ যে,,
না কিছু না,,এখনি উঠছি,,
শশী চোখ বন্ধ করে ঠোট চেপে ব্যথা ভুলে উঠতে গিয়ে পারে না,,
আর কতো নিজেকে কষ্ট দেবে,,তুমি কি ভাবো আমি বুঝিনা তুমি কাল রাত থেকে ঘাড়ের যন্ত্রনায় ভুগছ,,একটিবার আমাকে বলতে পারলে না?তোমার কষ্ট হচ্ছে,,
শশী চুপচাপ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে থাকে,,,
তোমাকে সাহায্য করার মতো অধিকারটুকুও দেওয়া যায় না আমাকে শশী?
এতোটাই কি খারাপ মানুষ আমি,,কষ্ট ভরা স্বরে বলে,,
শশী হাতটা অনির দিকে বাড়িয়ে দেয়,,
অনিকেত অবাক হয়ে যায়,,শশীর হাত বাড়িয়ে দেওয়া দেখে,,,
অনিকেত শশীর হাত এই প্রথমবার শশীর ইচ্ছায় স্পর্শ করে,,
এর আগে কলেজে একবার জোর করে ওর হাত ধরেছিলো,,আর কতো ধৈর্য ধরবে,,এই মেয়ে যে খুব জেদি,,কোনোভাবেই অনিকেত কে ভালোবাসে না,,কতো কি করেছে শুধু শশীর মুখে একবার ভালোবাসি শুনার জন্য,,, কিন্তু শশীর চোখ দিয়ে সেদিন জল গড়িয়ে পড়েছিলো অনিকেত শশীর হাত ধরাতে,,
নিজের কাছেই ছোট হয়েছিল ঐ দিন শশীর চোখে জল দেখে,,,
নিজের সাথে ওয়াদা করেছিলো ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আর কোনোদিন ওকে স্পর্শ করবে না,,
অনিকেত শশীর হাত না যেন চাঁদ হাতে পেয়েছে,,আজ সবচেয়ে খুশির দিন কারন অনির প্রেয়সী আজ নিজ ইচ্ছায় ওকে হাতটা ধরতে দিয়েছে,,,প্রিয়ার স্পর্শ পাওয়া যে সকল প্রেমিকের মনের বাসনা,,
অনিকেত শশীকে বিছানার পাশে বালিশ ঠেকিয়ে বসতে সাহায্য করে,,
ভাইয়া ডাক্তার আঙ্কেল এসেছে,,,
ভেতরে আসতে বল,,,
ঠিক আছে,,,
ফারিহা ডাক্তার কে নিয়ে অনির রুমে আসলো,,
ডাক্তার শশীকে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করলো,,,
প্রেশারটাও মেপে নিলো,,
না প্রেশার তো দেখছি ঠিকই আছে,,মনে হয় উল্টো পাল্টা শোয়ার কারনে এমনটা হয়েছে,,,
আচ্ছা তেমন কোনো চিন্তা নেই,, আমি ব্যথার ওষুধ লিখে দিচ্ছি খাইয়ে দিবা,,ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ,,,
ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়ে শশীকে আশির্বাদ করে চলে যায়,,, অনি ডাক্তার আঙ্কেল কে নিচ পর্যন্ত ছাড়তে যায়,,,
ভাবি খুব কি কষ্ট হচ্ছে,,,
না তেমন না,,,
তুমি বললেই হবে,,ব্যথায় মুখটা নীলচে হয়ে আসছে তোমার আর তুমি বলো তেমন না,,,
চিন্তা করো না ননদী,, ঠিক হয়ে যাবো আমি,,,
হুমম,,আল্লাহ যেন তাই করে,,
আচ্ছা ভাবি আমি যাই,,পরে আসবো,,,
অনিকে রুমে ঢুকতে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ফারিহা,,,
দরজার সামনে যেতেই মিনু কে খাবার সাজানো ট্রে হাতে অনির রুমে ঢুকতে দেখে,,,
ভাইয়া নাস্তা করে নাই মিনু আপা,,,
না ছোট আপা,,ভাইয়া ভাবির লগে খাইবো তাই খাবার ঘরে নিয়ে যাইতে কইছে,,,
হাও রোমান্টিক,,রোমাঞ্চ শুরু ভাইয়া ভাবির,,আমার রাতুল বলদ টা যে কবে শিখবে এসব রোমাঞ্চ,,,
ছোট আপা কি কন হাইসা হাইসা বিরবির কইরা ,,,
আরে কিছুনা,,তুই যা,,নয়তো রোমাঞ্চ থুক্কু খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে,,,
হে ফাগল নি,,কি কয় আমি বুঝিনাই,,আফনারা বুজঝুইন,,,,
মিনু ফারিহার পাগলামি দেখে মুখটা বোকার মতো করে রুমে ঢুকে খাবার দিয়ে বের হয়ে যায়,,,
অনি রুমের দরজা বন্ধ করে খাবার ট্রে টা বিছানার উপর রাখে,,,
শশী চুপচাপ বসে থাকে,,অনিকে ব্লাক এ বরাবরই অসাধারণ লাগে,,
আসলে ব্লাক কেন এমন ফর্সা সুঠাম দেহি সুশ্রী পুরুষকে সবকিছুতেই চমৎকার লাগে,,,
অনি প্লেটে খাবার বাড়ে আর শশী চেয়ে থাকে অনির দিকে বিমুগ্ধ নজরে,,,
এভাবে চেয়ে থেকো না বউ,,প্রেমে পড়ে যাবা,,খাবার প্লেটে বাড়তে বাড়তে বাকা হাসি দিয়ে বলে অনিকেত,,,
শশী চোখ বড় করে নিজের মুখে হাত দেয়,,
আমি তো মুখে কিছু বলিনাই,,অনিকেত শুনলো কি করে তাহলে,,,
জাদুটাদু জানে নাকি?
সত্যি তো এভাবে চেয়েছিলাম কেন এই গুন্ডা হ্যান্ডসাম টার দিকে,,,
এতো কেয়ার করলে সেই মানুষটার উপর চেয়ে না থেকে কি পারা যায়,,, তারপর যেই লুক এইটার আল্লাহই জানে এর মতো আরেকটা পিস দুনিয়াতে আছে কি না,,,
শশীর কেন যেন আজ মনে হয় অনিকেতের মা ঠিকই বলেছিলো শশী আসল হিরা চিনতে পারে নি,,
রিশাদের জীবনে থাকাকালীন রোগে শোকে মৃতপ্রায় হলেও রিশাদের সময় হতো না শশীর খোজ নেওয়া,,হাজার অসুখ হোক রিশাদের বিছানার সঙ্গী শশীকে হতেই হতো,,
দুচোখের জল গড়িয়ে পড়তো,,তবুও ঐ পশুর মনে একটু দয়া হতো না,,
সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে রাতে রিশাদের মাইর অথবা শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হতে হতো,, এখনো মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে শশীর,,,অন্ধকার অধ্যায় ছিলো
শশীর জীবনে ওটা,,,
আর এই মানুষটা অনুমতি ছাড়া হাতটাও ধরতে নারাজ শশীর,,,প্রকৃত পুরুষ তো একেই বলে,,যে পুরুষ নিজের স্ত্রীকে সম্মান দিতে জানে না সে পুরুষ সুপুরুষ নয়,,,
দুচোখে জল গড়িয়ে পড়ে শশীর,,
অনি শশীর মুখে রুটি তুলে দিতে যাবে তখনি মাথা নিচু করা শশীর চোখে জল পড়তে দেখে
কি হয়েছে তোমার খুব কি কষ্ট হচ্ছে,,,বলো আমাকে,,তোমার চোখের পানি আমার ভেতর বাহিরে তোলপাড় সৃষ্টি করে শশী,,মাথা ঠিক থাকে না ঐ চোখে জল দেখলে,,, বলো না কেন কাঁদছ,,
কিছু না,,আপনি খাওয়ান আমাকে,,চোখ মুছে মুচকি হেসে,,,হা করে
চোখের জল দেখে অনির বুকে হঠাৎ ওঠা ঝড় টা যেন এক নিমিষেই শান্ত নদীর জল হয়ে যায় শশীর হাসি দেখে
তুমি জানো শশী,,আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য কি,,শশীর মুখে রুটির টুকরো দিয়ে,,
কি,,,, রুটির টুকরো হা করে মুখে নিয়ে
তোমার এই হাসি,,রোম রোম দাড়িয়ে যায় আমার তোমার হাসির শব্দে,,বুকের ভেতর কাঁপন তোলে তোমার ঠোটের প্রসারনে,,,
আপনি পাগল একটা,,,
হুমম,,তোমার এই হাসির প্রেমে পাগল আমি,,,তোমার মুখের হাসি দেখার জন্য এই অনিকেত কি কি করতে পারে তা তুমি ভাবতেও পারবে না,,,
আমার লাগবে না ভাবা,,আপনি খান এবার,,,
আমি না খেলে কি কষ্ট হয় তোমার,,,
সত্যি বললে খাবো আমি,,নয়তো না,,,
না কষ্ট হয় না আনন্দ হয়,,আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছা করে,,,রাগ করে বলে,,
তুমি নাচতেও পারো? বাহ! বাবা গান পারে মা নাচ পারে,,,, ভালোই হবে আমাদের সন্তান তাহলে মাল্টি টেলেন্টেড হবে,,
আপনার মাথা হবে,,,
সেটা কি করে হয় আবার,,
জানি না যান,,
চলে যাবো?
না না,,আপনি খাবার না খেয়ে কোথাও যাবেন না কিন্তু,,,
ঠিক আছে তাই হবে মিসেস,,, হাসি দিয়ে বলে,,
অনিকেত শশীর সামনে নাস্তা করে খাবার প্লেট গুলো গুছিয়ে রাখে,,,শশীকে বিছানা থেকে নামতেই দেয় না,,
আলমিরা থেকে কি যেন বের করে নিয়ে আসে,,
শশী এটা তোমার জন্য,,,
এতো দামি মোবাইল আমাকে কেন দিচ্ছেন,,,
নিজের বউকে দেবো না তো অন্যের বউকে দিবো,,,
না মানে,,আমি তো এগুলো তেমন চালাতে পারি না,,
জানি আমি,,আমি শিখিয়ে দিচ্ছি তোমাকে,,,
অনিকেত শশীকে প্রাইমারি নিয়মগুলো শিখিয়ে দেয় এন্ড্রয়েড মোবাইল চালানোর,,,
মায়ের সাথে কথা বলবে,,,
শশীর চোখে মুখে খুশির ঝলক উপচে পড়ে,,সত্যি আপনি দেবেন কথা বলতে মায়ের সাথে,,,
আমি তো ভাবছিলাম আপনিও হয়তো রিশাদের মতো মায়ের সাথে কথা বলতে চাওয়ার কথা বললে বকবেন মারবেন,,,
আমাকে কি তোমার রিশাদ মনে হয়,,একদম ওর নাম মুখে আনবে না,,, ভুলে যাবে ঐ নামে কেউ ছিলো তোমার জীবনে,,,আমি শুরু আমিই শেষ তোমার জীবনে বুঝতে পেরেছ,,, রাগে লাল হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়,,
যা বাব্বাহ কি বললাম,,মি. কুল দেখি মি. হট হয়ে গেলো,,,
মায়ের সাথে ২দিন কথা বলি নাই,,কতো কষ্ট হচ্ছিল আমিই জানি,,,
শশী অনিকেতের শিখিয়ে দেওয়া নিয়মে কল অপশনে গিয়ে মাকে কল করে,,,
হ্যাঁলো কে বলছেন,,
মা,,আমি শশী,,,
শশী,,কেমন আছিস রে মা,,
ভালো মা,,মা তুমি আমাকে এভাবে পর করে দিলে,, বেঁচে আছি না মরে গেছি একটিবার খোজও নিলে না,,,কেঁদে দেয় শশী,,,
নারে মা এভাবে বলিস না,,আগের বার রিশাদকে তোর সাথে একটু কথা বলাই দিতে বলতাম বলে তোরে কতো কথা শুনতে হতো,,মাইরও খেতি,,তাই এবার বুকে পাথর বেঁধে রেখেছি তোর ভালো জন্য,,সুখের জন্য,,
হ্যাঁ রে মা ভালে আছিস তো তুই,, ঐ বাড়ির লোকজন কি তোকে খুব কথা শুনায়,,
হ্যাঁ আমি খুব ভালে আছি,,না মা,,এরা খুব ভালো সবাই,,আমাকে বুঝতেও দেয় না আমি ডিভোর্সি,গরিব,,,তুমি জানো ওর মা আমাকে বলেছে আমি শুধু তার ছেলের বউই না তার মেয়েও,,,আমাকে খুব আদর করে এরা,,
নিজের অসুস্থতার কথা মাকে জানায় না মা চিন্তা করবে তাই
সত্যি শশী,,শুনে কলিজায় শান্তি পেলাম,,দুচোখের পানি আমার শুকিয়ে গেছে তোর চিন্তায় কেঁদে,,এখন কিছুটা চিন্তা
মুক্ত হলাম আমি,,,
মা সামীর আর শিখা কেমন আছে,,ওরা কি স্কুলে যায় ঠিক মতো,,ওদের কে একটু দাও না কথা বলি,,,
শশী ভাইবোন মায়ের সাথে মন ভরে কথা বলে,,,সুখ তো এখানেই শশীর,,,এরাই তো বাঁচার মাধ্যম শশীর জন্য,,,
শশী এখন তাহলে ফোন রাখ,,তোর শ্বশুরবাড়ির লোক খারাপ ভাবতে পারে,,,
আচ্ছা মা,,,পরে আবার কথা বলবো,,তুমি জানো এই মোবাইল অনিকেত আমাকে উপহার দিয়েছে,,একগাল হেসে মাকে বলে শশী,,
সেকি রে,, স্বামীর নাম ধরিস,, তোকে কতোবার বলবো এসব বেয়াদবী,,,আর ডাকবি না,,আর শোন মা অনিকেত খুব ভালো ছেলে আমি খোজ নিয়ে জেনেছি,, তুই রিশাদের পাপের শাস্তি ঐ বেচারাকে দিস না,,
অতীত ভুলে নতুন জীবন শুরু কর মা,,,
হুমমম,,
আচ্ছা রাখি মা,,,শশী কল কেটে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবে,,,,
নতুন করে জীবন শুরু করা কি এতোই সহজ মা,,ঐ স্মৃতি ভোলা এতো সহজ না মা আমার জন্য,,, কে জানে অনিকেত ও আমার দেহ ভোগ করে রিশাদের মতো ব্যবহার করবে,,
আমার ভয় হয় আবার ভালোবাসতে। আবার স্বপ্ন দেখতে মা,,,,একবার তো ভেঙেচুরে জিন্দা লাশ হয়ে আছি,,পরের বার হয়তো বেঁচে থাকার মতো সাহস বা অবলম্বন কোনোটাই থাকবে না আর পৃথিবীর বুকে শ্বাস নেওয়ার,,,
চলবে,,,