জীবনসঙ্গী
পর্ব ২
শশীর মন ভালো করার জন্য রিমি অনেক মজার গল্প বললো,,কিন্তু মুচকি হাসি ছাড়া আর কিছুই বের হলো না শশীর মুখ থেকে,,,
বিকালে রিমি চলে যাওয়ার পর রিশাদ কল দেয়,,
কি করছে বউটা আমার,,
কিছুনা,, রূঢ হয়ে,,
রাগ করেছ শশী,,রাগ করো না প্লিজ লক্ষিটি,,
না, রাগ করবো কেন,,রাগ করি নি,,
এইতো ভালো বউ আমার,,আচ্ছা খেয়েছো
কখনকার খাবার?
ওহ সরি,, এখন তো বিকাল হয়ে গেছে,,,,শোনো না আমি তোমাকে উঠায় নিয়ে আসি আমাদের বাড়ি তারপর দেখবা কত্ত ভালোবাসবো আদর করবো তোমাকে,,
আমি তো এখনি ঠিক করে রেখেছি আমরা কক্সবাজার অথবা বান্দরবান হানিমুনে যাবো,,
রিশাদ এটা ওটা নানা কথা বলতে লাগলো,,
শশী শুধু হুমম হুমম উত্তর দিলো,,
কি হলো শশী এভাবে হুম হুম করছো কেন?
ভালো লাগছে না আমার সাথে কথা বলতে,,
রেখে দেবো,,
শশীর ইচ্ছা করছিলো বলতে হ্যাঁ রেখে দেন,,
কিন্তু মা যদি জানে কষ্ট পাবে,,তাই চুপচাপ সহ্য করে,,
না! না! আমার আসলে অন্যরকম লাগছে,,আপনার সাথে আজই প্রথম কথা তাই,,আপনি আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েন না প্লিজ,,
আরে না পাগলী মেয়ে,,কষ্ট কেন পাবো,,তুমি আর আমি তো এখন এক,,
তোমাকে একটা কথা বলি শশী?
জ্বী বলুন!
তুমি জানো তুমি কতো সুন্দর,, তোমার মায়াবী মুখশ্রী, কাজল কালো দীর্ঘ চক্ষুদ্বয়,
তোমার গোলাপ রাঙা গায়ের রঙ সবটা আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে,,,
আপনি কি দেখেছিলেন নাকি? অভিমান করে বলে,,
তোমার কি মনে হয়,,তোমাকে আমি দেখেছি শশী,,দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে,, কিন্তু তুমি একবাও আমার দিকে তাকাও নাই,,,
তোমাকে দেখে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল,, এতো মিষ্টি বউ তো ভাগ্যবানেরি কপালে জোটে নাকি?
শশী মুচকি হাসে,,সে হাসির সাক্ষীও একমাত্র শশী হয়,,এমন কথা শুনলে সত্যি অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করে,,
এভাবেই মনে হয় একদিন রিশাদকে ওর ভালো লেগে যাবে,,হয়তো ভালোও বেসে ফেলবে,,,
এভাবে কেটে যায় ২ সপ্তাহ,, এর মধ্যে রিশাদ ওর সাথে দেখা করতে না আসলেও রিশাদের বাবা মা আসতো,,
মা খুব আপ্যায়ন করে খাওয়াতো,,মামী তো দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতো নিজের সংসারে আমাদের,,, এখন মামী প্রায় মামার সাথে ঝগড়া করে না খেয়ে থাকে,,তার ঘরে আমরা কি কম ঝামেলা ছিলাম যে এখন নিত্যদিন নতুন অতিথি আসছে খরচ বাড়াতে,,,
মা তো এখন আমাকে অনেক চাপ দিচ্ছে মানসিকভাবে,,, আমি যেন রিশাদকে একটু বলি তাড়াতাড়ি আমাকে উঠিয়ে নেওয়ার কথা,,,
মা ধারনা আমাকে রিশাদের জীবনে সেটেল করতে পারলেই তার সকল দুশ্চিন্তা শেষ চিরতরে,,ঐ পরের ছেলের প্রতি এতো বিশ্বাস আমার মায়ের,,
কিন্তু মা কে কি করে বোঝায় রিশাদকে আমার দেখা অন্য বিবাহিত পুরুষ বা স্বামীদের মতো লাগে না,,
আমার খুঁত খুতে মন সে জন্য কি না, সে বিষয় সন্দেহ আছে কিছুটা অবশ্য আমার,,
কলেজ শেষে রিমি আর আমি হেটে বাড়িতে আসছিলাম,,বেশি দূর না কলেজ বাড়ি থেকে,,
রিমি তো সব সময় রিশাদ আর আমাকে নিয়ে মজা করে এটা ওটা বলে,,আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না,,
রিশাদ ভাই কি কি বলে রে তোকে,,
সেটা তোকে কেন বলবো,,
স্বামী স্ত্রীর গোপন কথা কাওকে বলতে নেই,,গুনাহ হয়,,বুঝলি শাক চুন্নি,,
হু ডং,,বললে কি তোর হিরোর মতো স্বামীকে আমি নিয়ে নিবো,,
ও হিরো তুই কি করে জানলি,,,
শোভন ভাইয়া তোদের বিয়ের ছবি দিয়েছিলো কাল রাতে,,তাতেই দেখলাম,,জানিস দেখতে অবিকল পুলকিত সম্রাটের মতো,,
দারুন লাগছে কিন্তু আমার,,
সর! তোর যতো আজাইরা কথা,,,
ওলে লে পুলকিত সম্রাটের বউটা দেখছি খুব লজ্জা পেয়েছে,,,
দেখ রিমি,,নিজে যে শোভন ভাইয়ার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করো আমি বুঝি জানি না,,মামী কে বলবো তোদের কথা,,
দেখ দেখ শশী,,তুই যা ভাবছিস তা না,,
হুমম,
আচ্ছা যা,,আমিও তোর স্বামীকে বলে দিবো আপনার বউ তো আপনারে পুলকিত সম্রাট বলে,,,
দেখ রিমি,,ভালো হচ্ছে না কিন্তু,,,
কি দেখবো বল,,
কুত্তি,,
ঘেউ,,ঘেউ,,শশীকে কাতুকুতু দিতে দিতে,,
পুরোটা রাস্তা রিমি রিশাদকে নিয়ে প্রচন্ড জ্বালায়,,
নতুন বিবাহিত মেয়েদের এই একটা পিড়া সবাই শুধু মসকরা করতে থাকে এটা ওটা নিয়ে,,
রিমি বাড়ি শশীদের বাড়ির রাস্তার অন্য দিকে,,
তাই রিমি চলে যায়,, শশী কিছুটা পথ একাই বাড়ির দিকে যায়,,
দুপুরের দিক লোকজন সচরাচর এই গলিতে কম থাকে,,,
শশী দেখে সামনে রাতুল ভাইয়া দাড়িয়ে আছে,,,
পাশ কাটিয়ে যেতেই,,,
ভালো আছেন ভাবি?
আমি আপনার কোন জনমের ভাবি হই বলেন তো রাতুল ভাইয়া,, কিছুটা বিরক্তি নিয়ে,,,
আপনি আমার সারাজনমের ভাবি হন,,
এতো নিষ্ঠুর হতে পারলেন ভাবি,,একটিবার অনিকেতের কথা মনে পড়লো না,,ওকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিলেন,,
দেখেন রাতুল ভাইয়া,, আপনি এসব কি বলছেন মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে,, আপনার বন্ধুকে কি কোনোদিন আমি বলেছি তাকে আমি ভালোবাসি,,না সেরকম ইঙ্গিত দিয়েছি,,তাহলে সে মরলো কি বাচলো তার দায়ভার আমার উপর দিচ্ছেন কেনো,,
এখনো সময় আছে,, অনিকেত কে একটা সুযোগ দিন,,ও আপনাকে প্রচন্ড ভালোবাসে ভাবি,,ওর জীবন আপনি ছাড়া মূল্যহীন ওর কাছে,,কেন ভালোবাসতে পারলেন না ওকে,,
প্রথম কথা আপনি আমাকে ভাবি বলা ছেড়ে দিন,,আমি এখন অন্য কারো বউ,,আপনি কিংবা আপনার বন্ধু আগেও আমার জীবনের কেউ ছিলেন না,,আর ভবিষ্যতেও থাকবেন না,,
আপনার বন্ধুর মতো গুন্ডা কে হ্যান্ডসাম, সিঙ্গার ভেবে এলাকার মেয়েরা ফিদা হতে পারে,,কিন্তু আমি হবো না,,কারন আমি জানি সে বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলে,,,তার কাছে মেয়েমানুষ শুধু দেহসর্বস্ব একটা পুতুল,,যাকে মনমতো খেলে মনভরে গেলে ছুড়ে ফেলে দেয়,,
কোন ভিত্তিতে এতোবড় কথা বললেন আপনি অনি সম্পর্কে,, রাতুল কিছুটা রেগে যায়,,
এলাকার সবাই জানে এসব কথা,,এর আবার নতুন কি ভিত্তি দেবো আপনাকে,,
আর কখনো আমার জীবনে এভাবে ঝামেলা করতে আসবেন না আপনি কিংবা আপনার ঐ গুন্ডা বন্ধু,,,
রাতুলের ইচ্ছা করছিলো শশীকে ঠাটিয়ে একটা চড় দিতে,,ওর কলিজার দোস্ত সম্পর্কে এতো নোংরা কথা বলে গেলো,,
কিন্তু অনির ভালোবাসার কথা ভেবে কিছুই বলে না রাতুল,,,
শশী বাসায় গিয়ে অবাক,,কারন রিশাদ এসেছে,, এ কদিনে একটু একটু ভালোবেসে ফেলেছে রিশাদকে শশী,,মানুষটার সাথে কথা না বললে এখন ভালোই লাগে না শশীর,,,
শশী লজ্জায় মাথা নিচু করে রিশাদের সামনে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়,,,
রিশাদ আড়চোখে শশীকে দেখে হাসে,,,
শশী ব্যাগটা রেখে বিছানায় বসে,,হাত পা কাঁপছে,, এই প্রথম রিশাদকে দেখে বুকটা দুরুদুরু করছে,,,মাথায় কাজ করছে না,, লজ্জায় সব ভুলে যাচ্ছে,, গলাটাও শুকিয়ে যাচ্ছে,, মোবাইলে কথা বলে দুজন অনেকটা কাছাকাছি এসেছে,, কিন্তু সামনা সামনি রিশাদকে দেখে কেমন যেন অচেনা অনুভূতি কাজ করছে,,,
আসবো,,,
রিশাদের হাসি মাখা কন্ঠ শুনে শশী আরো লজ্জা পায়,,দাড়িয়ে পড়ে,,
জ্বী আসুন,,,
চলবে,,,