জীবনসঙ্গী
পর্ব ২৩
writer Tanishq Tani
২ দিন পর শশী ও অনিকেত বাংলাদেশের উদ্দেশ্য রওনা হয়,,, খুব ভোরে বাংলাদেশ এসে পৌঁছায় ওদের প্লেন,,
শশী মোটেও জার্নি করতে পারে না,,জার্নি করলে ওর বমি করতে করতে অবস্থা হালুয়া টাইট হয়ে যায়,,
বাসায় এসে পৌঁছাতেই সবাই শশীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে,,খুব দূর্বল হয়ে গেছে শশী,,জার্নিতে তো শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে,,
অনির মা তো অনিকে ইচ্ছা মতো বকা,,,
অনিকেত! এ কি হাল করেছিস বউটার,,এতো সুন্দর পুতুলের মতো বউটাকে তোর সাথে দিলাম আর তুই তার এ অবস্থা করেছিস?
আমি কি করলাম? অনিকেত চোখ কুঁচকে মায়ের দিকে তাকায়,,
তোমার বউমা কে কত্ত বুঝিয়েছি,,জিজ্ঞেস করো কতো খেয়াল রেখেছি ওর,,
শশী কিছু বলবে তার আগেই শ্বাশুড়ি মা অনিকে ধমক দিলো,,
ও কি বলবে,,আমি দেখছি তো কি খেয়াল রেখেছিস,,কতো দূর্বল হয়ে গেছে মেয়েটা,,খাওয়া দাওয়াও মনে হয় ঠিকমতো করে নাই,,তুই তো মনে হয় তোর নিজের চিন্তায় ব্যস্ত ছিলি?
আরে মম! কি বলছ,,আমি জীবনে নিজেরও ওতো খেয়াল রাখি নাই যতটা শশীর রেখেছি,,কিন্তু ওর বমি মাথা ঘোরা এসব সমস্যা যাচ্ছিলোই না,,কত্ত বার বললাম চলো ডক্টর কে দেখায় বলে লাগবে না দেখানো,,গ্যাস্ট্রিকের জন্য এমন হচ্ছে ঠিক হয়ে যাবো? কি করবো বলো? মাইর দিবো তোমার বউ মাকে?শশীর দিকে চোখটিপ দিয়ে,,
কি? এই তোর সাহস কি করে হয় বউকে মারার কথা বলার? অনির গায়ে কয়েকটা থাপ্পড় মারে অনির মা,,
শশী সহ সবাই মিটিমিটি হাসতে লাগলো,,
ভালো মা ভালো! তুমি কি আমার মা না ওর মা,,ওর জন্য এই প্রথম মাইর দিলা,,নাকে কেদে কেদে বলে,,
আমি ওর মা হয়ছে,,এখন যা গিয়ে তোর ডাক্তার আঙ্কেল কে কল করে বাসায় আসতে বল,,
পারতাম না? তোমার মেয়ে তুমিই যাও,,সোফায় বসে,,
অনি! তুই এমন করছিস কেন? সুইজারল্যান্ড গিয়ে কি তুই বাচ্চা হয়ে গেছিস,,বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করছিস,,
যা না রে প্রিন্স টা আমার,,
হুমম যাচ্ছি যাচ্ছি,, বউমা ই সব হয়ে গেলো আমিও যে শুকিয়ে গেছি সেদিক কারো খেয়াল আছে? কেউ নাই আমার,,আজ মা টাও পর হয় গেলো,নাক টানতে টানতে মায়ের গলা জরিয়ে ধরে,,
বউমা! আমার ছেলেটার কি হয়ছে রে মা,,এমন করছে কেন?
অনি প্রিন্স আমার কি হয়েছে তোর,,অনির দিকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে গায়ে বুলাতে থাকে,,
মা আমার কি মনে হয় জানো? ভাইয়াকে কোনো সুইচ জিনে ধরছে? তাই এমন করছে,,
শশী ফারিহার কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়,,
বেশি বুঝিছ তুই,, ফারিহার মাথায় হালকা থাপ্পড় দিয়ে,,শশীর দিকে চোখ ছোট্ট করে তাকায়,,
অনির ওভাবে তাকানো দেখে শশী সবার নজর লুকিয়ে অনিকে জিহ্বা বের করে ভ্যাঙ্গায়,,
ভাইয়া! হুহুহু মা দেখো না? নাকে কাঁদে ফারিহা,,
অনি যা তো তুই,, আগে তোর ডাক্তার আঙ্কেল কে কল কর,,পরে তোর জিন ছাড়াচ্ছি আমি,,
ফারিহার বাচ্চা! তোকে হাতের নাগালে পাই একবার,,জিনে ধরলে কি করে দেখাবো,,ফারিহার কান মুচড়ে চলে যায় অনি,,
মা!! ফারিহা কান ডলতে ডলতে নাকে কাঁদে,,
তোরা দুই ভাইবোন কি দিন দিন ছোটো হচ্ছিস রে,,তোর তো আগে থেকেই বুদ্ধি কম,,এখন এই অনিটাও এমন করছে,,আমার হয়েছে যতো জ্বালা,,
কি আমার বুদ্ধি কম?ছোট মা,,
ভাবি ছাড়ো তো,, ওদের এসব দুষ্টু সারাজীবন চলবে,,
এখন কেমন লাগছে বউ মা! খাবার নিয়ে আসি? অল্প করে কিছু মুখে দাও?
ভালো লাগছে মা এখন,, আচ্ছা নিয়ে আসেন,,শশীরও খুব খিদে পেয়েছে,, কিন্তু খিদে পেলে কি হবে,,খাবার গন্ধ শুকলেই বমি চলে আসে,,
বিকালে ডক্টর আঙ্কেল আসে শশীকে দেখতে,,অনি একটু কাজে স্টুডিও তে গেছে,,
মিজান ভাই! কি হয়েছে বউমার? কিচ্ছু খেতে পারছে না,,সকালে, বিকালে শুধু কয়েকটুকরা ফল ছাড়া আর কিছুই খেতে পারে নাই,, চিন্তিত হয়ে ডাক্তার মিজানকে বলে অরুনা চৌধুরী,,
সমস্যা তো গুরুতর,, আজিম কে কল করেন,,তার তো মহাবিপদ সামনে? শশীকে চেকাপ করে গম্ভীর গলায় বলে ডাক্তার মিজান,,
বিপদ? কি বলেন,,বউমার কি এমন হয়েছে মিজান ভাই,,কাঁদো কাঁদো হয়ে যায় অরুনা চৌধুরী,,,
আরে ভাবি? বিপদ ই তো? আজিমের কম্পিটিটর আসছে যে,,আপনার ঘরে অতিথি আসছে ভাবি,,হোহোহো করে এসে ওঠে ডাক্তার মিজান,,
কি? অরুনা চৌধুরী চোখ বড় করে মুখে হাত দেয়,,সত্যি?
হ্যাঁ ভাবি! মিস্টি কই,,শালা আজিমের আজ খবর আছে ভাবি বলে দিলাম,,মোটা অংকের ফিস ছাড়া ওকে ছাড়ব না আমি,,
শশী! তো অবাক হয় আবার লজ্জা ও পায়,, এতো তাড়াতাড়ি কন্সিভ করবে ও স্বপ্নেও ভাবে নাই,,
অরুনা চৌধুরী শশীকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়,,চিৎকার করে সারাবাড়ি এক করে,,ফারিহা, নাসিফ, ছোট মা,ছোট চাচ্চু তো সেই খুশি,,
অনিকে সারপ্রাইজ দেওয়ার চিন্তা করতে থাকে মনে মনে সবাই,,,
অরুনা চৌধুরী খুশিতে মনে হয় পাগল হয়ে যাবে,,কাজের লোকদের সাথে সাথেই ৫০ হাজার টাকা দান করে দেন,,
নিজের অনাগত বংশ প্রদীপের জন্য সবার কাছেই দোআ কামনা করেন,
শশী নিজের পেটে হাত দিয়ে অনাগত সন্তান কে অনুভব করতে থাকে,,মনের অজান্তেই দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে শশীর চোখ দিয়ে,,আচ্ছা অনি কি খুশি হবে? নাকি ও রিশাদের মতো এখন বউয়ের সাথে মজা চাই বাচ্চা না,,শশী এই বাচ্চা কে হারাবে না,,যেকোনো মূল্যে এ বাচ্চাকে শশী দুনিয়ার আলো দেখাবে,,
সাত পাঁচ নানা চিন্তা শশীর মাথায় ঘোরে,,
নাসিফ এসে ভাবির পাশে বসে,,
কি হয়েছে নাসিফ বাবু,,নাসিফের মাথায় হাত দিয়ে বলে শশী,,,
ভাবি মনি!তোমার কি হয়েছে,, তুমি কি অসুস্থ,,
না বাবু! আমি ঠিক আছি,,
তাহলে ডাক্তার নানু আসলো কেন?
তুই চাচ্চুমনি হবি তাই বলতে এসেছে বুঝেছিস? শশীর দিকে চেয়ে হেসে বলে ফারিহা
ভাবি মনি! ফুপি কি সত্যি বলছে,,আমি চাচ্চু হবো,,হুরররে,,ঢিঙ্কা চিকা ঢিঙ্কা চিকা,,,আমি চাচ্চু মনি হবো,,
শশী আর ফারিহা হাসছে নাসিফের খুশিতে নাচ দেখে,,
হঠাৎ শশীর মোবাইলে অনির মোবাইল থেকে কল আসে,,,
ঐ যে বাচ্চার বাবা কল করেছে,,ফারিহা কিছুটা ধাক্কা দিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে উঠে নাসিফকে সঙ্গে করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়,,
শশী মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে,,বুকটা কাঁপছে,, লজ্জা লাগছে অনির সাথে কথা বলতে,,সংকোচ করে কল রিসিভ করতে যাবে তার আগেই কলটা কেটে গেলো,,।আবার কল আসতে থাকলো,,
এই যে বাচ্চার বাপ এতো অধৈর্য কেন আপনি??,,শশী মোবাইলে ভেসে আসা অনির নাম্বার টা দেখে বলে,,
আসসালামু আলাইকুম! হেসে লাজুক ভঙ্গিতে কল রিসিভ করে বলে শশী,,
হ্যাঁলো! আপনি কি মিসেস অনিকেত বলছেন?
অচেনা কন্ঠস্বর শুনে ঘাবড়ে যায় শশী?
জ্বী!থতমত খেয়ে বলে,,
তোমার লাজুক হাসির শব্দটা এখনো আগের মতোই বুকে এসে লাগে আমার,,,, অচেনা ব্যক্তি বলে,,,
অনিকেত কোথায়,,আপনি কে? ওর মোবাইল আপনার কাছে কেন? বলুন,,ভয়ার্ত স্বরে বলে,,,
শশী! শশী! মাই লাভ,,অনিকেত অনিকেত করছ কেন? আমাকে কি তোমার এখন আর ভালো লাগে না,,মনে পড়ে না আমার কথা,,,
কে আপনি? এসব কথা কেন বলছেন?
এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে? আমি কিন্তু এখনো ভুলি নাই তোমাকে,তোমার শরীরের গন্ধ কে,,, প্রথম যেদিন তোমার সারা শরীর ছুয়েছিলাম,,বিশ্বাস করবে এতো মজা আমি কোনোদিন পাই নাই যতো মজা ঐদিন তোমার দেহভোগে পেয়েছি,,, আলাদা একটা নেশা আছে তোমার শরীরে,,এই জন্যই তো শালা অনিকেত তোমাকে বিয়ে করেছে,,সেকেন্ড হ্যান্ড হলেও তুমি খাসা মাল বুঝেছ,,
রিশাদ???
শশীর হাত পা অবশ হয়ে যায় রিশাদের মুখে এমন বিশ্রী, অশ্লীল ইংগিতবাহী কথা শুনে,,,
চলবে,,