জীবনসঙ্গী – পর্ব ২৪

0
267

জীবনসঙ্গী
পর্ব ২৪
writer Tanishq Tani

রিশাদ???
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় রিশাদের এমন নোংরা কথা শুনে,,একজন খারাপ মানুষের সঙ্গী হলে জীবনে যে কতো কষ্ট শশী হারে হারে বুঝেছিলো রিশাদকে বিয়ে করে,,

শশীর এখনো মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে,, শশীকে যখন উঠিয়ে নেয় নাই রিশাদ রা,,রিশাদ প্রায় হোটেলে নিয়ে যেত ঘুরার কথা বলে,,বিবস্ত্র করে সিগারেট ধরিয়ে বসে বসে শশীর সমস্ত শরীরের ছবি তুলতো

একসাথে বিছানায় থাকাকালীন ভিডিও করতো,,এসব নাকি ভালো লাগে রিশাদের,,পর্নোগ্রাফির নায়িকাদের মতো শশীকে ড্রেস পড়াতো,,ঠিক ঐরুপ আচরন অঙ্গভঙ্গী করতে বলতো,,শশীর সাথে ঐভাবে থাকতো,,
কতোবার বলতো রিশাদ এসব আমার ভালো লাগে না,,আমি তো আর ঐ সব মেয়ে না,,আমার কাছে আমার ইজ্জত বহু মূল্যবান,, এসব করা তো আল্লাহও পছন্দ করবে না,,দয়া করে এমন করো না,,

কথায় আছে না চোরে শোনে না ধর্মের কথা,,
রিশাদও তাই,,স্বামী হিসাবে তার যা অধিকার শশী সব দিতো,,কিন্তু সহধর্মিনী ও একজন নারীর হিসেবে শশীও চাইত তার স্বামী তাকে ভালোবেসে স্পর্শ করুক,,কিন্তু রিশাদের স্পর্শে শুধু কামনার লালসা ছাড়া কিছুই কোনোদিন পায় নাই শশী,,সব মুখ বুঝে সহ্য করতো,,পৃথিবীর সমস্ত মেয়েই স্বামী সংসার ঠিকিয়ে রাখতে চাই,,ভাঙ্গতে কয়জন চাই?

শশীও চাই নাই,,শত অপমানের পরও যখন রিশাদের একটু ভালোবাসা মাখা কথা শুনতো সব কষ্ট ক্ষোভ ভুলে যেত,,,
সকল অপমান লাঞ্চনা সহ্য করেও স্বামীর হেদায়েত কামনা করে স্বামীকে আঁকড়ে ধরে বেচে ছিলো শশী,,

মেয়েরা সবকিছুর ভাগ দিতে রাজি হয় কিন্তু স্বামীর ভাগ মেয়েরা কোনোদিনও একচুল পরিমানও দিতে রাজি থাকে না,,স্বামী শুধুই তার স্বামী হবে,,স্বামী ভালোবাসা রাগ অভিমান অত্যাচারে শুধু তারই অধিকার থাকবে,,,অন্যকোনো রমনীর আনাগোনা স্বামীর চৌহদ্দির আশেপাশেও পছন্দ করে না স্ত্রী রা,,এটাই স্ত্রীদের স্বভাবগত ধর্ম,,

শতাব্দী, যুগ, বছর পাল্টেছে কিন্তু নারীদের এই স্বভাব পাল্টায় নাই,,আর খারাপই কিবা এতে? স্বামীর প্রতি হক থাকতেই পারে,,এটা প্রতিটি স্ত্রীর স্ত্রীগত অধিকার,,,

শশীর সব সহ্যের সীমা ঐ দিন ভেঙে যায় যেদিন শশী বুঝতে পারে রিশাদ পরকীয়া করে,,পুরুষজাতের মতিগতি দুজন মানুষ বুঝতে পারে,,এক মা দুই নাম্বার স্ত্রী,, রিশাদের হাবভাবে শশীর বুঝতে বাকি থাকে না রিশাদ অন্য মেয়েতে আসক্ত,, যেসব পুরুষের ঘরের বউয়ের প্রতি টান থাকে না,,তারা সচরাচর অন্য মেয়েতেই আসক্ত থাকে,,,

বাইরে যদি প্রতিদিন ভ্যারাইটি খাবার পায়,,ঘরের নিত্যদিনের ডাল ভাত কার ভালো লাগে,,এই ধারনাটা সব পুরুষের নেই। তবে কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের পুরুষের রয়েছে,, রিশাদও তেমন মন মানসিকতা সম্পন্ন প্রানী,,

শশী বুঝতে পারে প্রায় গভীররাত পর্যন্ত রিশাদ মোবাইলে চ্যাটিং করে কার সাথে যেন?এমনকি বিছানায় শশীর সাথে দৈহিক সম্পর্কের সময়ও মাথার কাছে মোবাইল রেখে চ্যাটিং করে,,দৈহিক সম্পর্কটা যেন রিশাদের জন্য নিছক একটা ডিউটি,,যা অনিচ্ছা স্বত্বে ও পালন করে,,কারন এই মিলনে নেই কোনো আবেগ নেয় কোনো ভালোবাসা শুধুই যেন দৈহিক চাহিদা,,,

শশীর দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে,,কেন পড়ে শশী বোঝে না,, হয়তো নিজেকে তুচ্ছ লাগে,,নিজের স্বামীর চোখে অর্ধাঙ্গিনী নয় কোনো পতিতা মনে হয় নিজেকে,,
মন না ছুঁয়ে দেহভোগের মিলনে সুখ নয় হীনমন্যতা জাগে,,,স্বামী স্ত্রীর এমন মিলনে ইসলামেও নিষেধ আছে,,

একটা মানুষ কতটা বিকৃত মনা হলে তাকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্টতম পদে অধিষ্ঠিত করা যায় তা রিশাদকে না দেখলে শশী জানতেও পারতো না,,

কি হলো শশী! তুমিও কি আমার সেই ভালোবাসার পরশগুলো মনে করছ? বলেই শয়তানী সুরে হাসি দেয়,,

হঠাৎ রিশাদের খিকখিক করা শয়তানী হাসি শুনে ঘোর কাটে,,এমন হাসির শব্দে গা জ্বালা দিয়ে ওঠে শশীর,,
পরক্ষনেই মনে পড়ে অনিকেতের মোবাইল রিশাদের কাছে কিভাবে এলো?অনির কোনো ক্ষতি করলো না তো এই পশুটা?

আমার অনি কোথায়? কি করেছ তুমি অনিকেতের,,ওর মোবাইল তোমার কাছে কেন এলো,,শশী অস্থির হয়ে বলে,,

কুল ডারলিং! এতো রেগে যাচ্ছ কেন?অনিকেতের সাথে যা করার তাই করবো আমি,,শালা আমার শিকার নিয়ে নিজের কাছে রেখেছে,,ওকে যা করার করবো সময় হলেই,,,
ওর কথা বাদ দাও তো এখন,,চলো একটু পুরোনা স্মৃতিচারন করি,,

তোর মতো কুকুরের কাছে কুকুরের মতোই ব্যবহার আশা করা যায়,,কারন তুই তো আর সভ্য সামাজিক জীব না,,তোর কথা শুনলেও আমার পাপ হবে,,আমার অনির
কিছু হলে তোকে আমি কেটে কুঁচি কুচি করে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো রিশাদ,,,রাগে চিৎকার দিয়ে বলে শশী,,

কাম ডাউন জান! আগে তো এমন ছিলে না,,আমাকে তুই তুকারি করছ কেন? ভেরি ব্যাড,,আমি না তোমার প্রথম লাভ,,আর প্রথম ভালোবাসার জন্য সব মানুষের একটা সফ্ট কর্নার থাকে মনে তা আমি ভালো করেই জানি,,তোমার হৃদয়েও আমার প্রতি সফ্ট কর্নার আছে তাই না? আমি সিওর সবার চেয়ে একটু বেশিই আছে কারন তোমার দেহে এখনো যে আমার দেওয়া দাগ আছে সোনা তাই না! রাগ অভিমান ভুলে চলো না আবার এক হয়,,

হারামী! তোর কান্না দেখে ঐ দিন কষ্ট পেয়েছিলাম। কারন তুই আমার প্রথম স্বামী,,সেই খাতিরে মনে একটু কষ্ট লাগাটায় স্বাভাবিক,, কিন্তু তাই বলে সেই দয়া করুনা করা কে তুই দূর্বলতা ভেবেছিস,,শুনে রাখ হৃদয়ে তো দূরে থাক আমার জুতার তলায় ও তোকে রাখি না আমি,,মনের সফ্ট কর্নারে তোকে রাখবো আমি? এমন যোগ্যতা রাখিস বুঝি?

অনিকেত কোথায় তাই বল তুই,,নয়লে ১৪ শিকের ভাত সারাজীবন খেতে হবে তোকে বলে দিলাম আমি,,নারীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে দূর্বলতা ভেবে ভুল করেছিস তুই,,নারীর আত্নসম্মান, বিশ্বাসে যখন আঘাত আসে তোর মতো মানুষ রুপি জানোয়ারকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার সাহস শক্তি এমনিতেই চলে আসে,,,,

ওক্কে সময় হলেই দেখবো আমার জানের কতো ক্ষমতা । অনেক রেগে গেছো দেখছি,,এই সময় এতো রাগ কি ভালো বলো? বাচ্চার সমস্যা হবে তো নাকি?যদি আগের মতো কিছু হয়ে যা,,আআআআ কি হবে তখন জানেমান?

তুই এতো কিছু কি করে জানিস?আগের মতো কি হবে ? শশী আৎকে ওঠে,,,

সাসপেন্স! সাসপেন্স! সব তো এখন বলা যাবে না,,তুমি বরং তোমার ভালোবাসার অনিকেতের সুস্থতা কামনা করো,,

রিশাদ??রিশাদ! শশী রিশাদ রিশাদ বলতে বলতেই কলটা কেটে দিলো রিশাদ,,,

খুব টেনশন হচ্ছে শশীর,,অনিকেত কোথায় তুমি? বাড়ির সবাইকে কি বলবো এসব কথা? হ্যাঁ বলতেই হবে
,
শশী বিছানা থেকে উঠতেই দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে অনিকেত,,,
ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরে অনিকেত কে,,

,,,কোথায় ছিলে তুমি? জানো কতোটা ভয় পেয়েছি আমি,,কাঁদতে কাঁদতে বলে শশী,,

আরে কি সমস্যা তোমার? আসতে না আসতে কান্না শুরু হয়ে গেলো,,বাইরে থেকে এসে একটু জিরাতেও কি দিবা না,,সরো তো,,শশীকে ছাড়িয়ে হনহন করে ওয়াশরুমে চলে গেলো অনিকেত

শশী অনিকেতের এমন দূরব্যবহারে অবাক হয়ে গেলো,,মনে ব্যথা পেলো খুব,,
কি এমন করলো যার জন্য এমন আচরন করলো অনিকেত,, শশী যে ভয়ে কাদছিলো অনিকেত বুঝেও এমন করতে পারলো? একবার জিজ্ঞেস ও করলো না কি হয়েছে তোমার?

বড্ড অভিমান হয় শশীর,,মুখ কালো করে নিচে চলে যায় শশী,,,কথায় বলবো না আজ অনিকেতের সাথে,,

মম! মম! গলা ছেড়ে রুম থেকে চিল্লাতে চিল্লাতে বের হয় অনি,,,

ডায়নিং এ সবাই বসে রাতের খাবার প্রস্তুতি সারছিলো,,,অনিকেতের এমন হাক ডাকে চমকে গেলো সবাই,,

কি হলো? ওভাবে ধেড়ে গলায় চিৎকার করছিস কেন? ডায়নিং টেবিলে বসে পেয়াজ কাটতে কাটতে বলে অরুনা চৌধুরী,,,

চিৎকার করবো না তো কি করবো? আমার কালো টিশার্ট টা কোথায় রেখেছ খুজে পাচ্ছি না,,,শশীর দিকে একনজর তাকিয়ে রাগী স্বরে বলে অনি,,

শশী মন ভার করে পেয়াজ কাটছে আর দুচোখের পানিতে নাক মুখ ভেজাচ্ছ,,, খুব কান্না পাচ্ছিলো শশীর,,কান্না টা গলা অব্দি এসে বাধা ভাঙার সকল চেষ্টা করছে,,
তাই পেয়াজ কাটার ছলে মন ভরে কেদে নিচ্ছে শশী,,,অনিকেতের চিৎকারে আরো কষ্ট লাগছে শশীর,,

ভালো করে খুজে দেখ,,পেয়ে যাবি,,ঘরের জিনিস ঘরেই আছে,,অরুনা চৌধুরী অনির দিকে বিরক্তি নিয়ে বলে,,

না নেই ঘরে,,থাকলে কি তোমাকে বলতাম,,

না থাকলে অন্য যেটা আছে সেটাই এখন পর,,ঝামেলা করিস না তারপরও,,,

আমার ঐটায় দরকার,,তুমি দিয়ে যেতে বলো ওকে,,,

ওকে কাকে বলবো? তুই বলতে পারিস না,,ঝগড়া করেছিস বউমার সাথে তুই? ঝাঁঝালো গলায় বলে অরুনা চৌধুরী,,

না মা,,ঝগড়া হবে কেন? আমি এখনি খুজে দিচ্ছি তোমার শার্ট,,, শশী অরুনা চৌধুরীর সন্দেহ নিবারনের জন্য কথা চেপে যায়,,অনিচ্ছা সত্বেও অনির সাথে কথা বলে শশী,,

বউ মা তোমাকে পেয়াজ কাটতে কে বলেছে,,কেঁদে কেটে একাকার করে ফেলেছ,,ওঠো ওঠো,, তোমার কোনো কাজ করা লাগবে না শুধু পাশে বসে থাকলেই হবে মা,,,এখন যাও গিয়ে ঐ বাদরটার শার্ট দিয়ে আসো,,,

শশী অনিকেতের দিকে তাকাতেই অনিকেত মুখ ঘুড়িয়ে হন হন করে রুমে ঢুকে দরজা দিয়ে দেয়,,

শশীর বুক ফেটে কান্না আসে,,তবুও শ্বাশুড়ির সামনে হাসি মুখ করে চোখ মুছতে মুছতে সিড়ি বেয়ে রুমের দরজার কাছে এসে থামে,,দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে দরজা খুলতেই বড়সড় শকড পায়,,শকডও বলা যায় না অবাক বিশাল পর্যায়ের অবাক হয়,

হঠাৎ ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেলো,,দেয়ালে প্রজেক্টেরের আলো পড়লো,,তাতে শশীকে ঐ যে প্রথম মাঠে বসে খেলা দেখতে দেখেছিলো অনিকেত গালে হাত দিয়ে বিরক্তি ভরা মন নিয়ে সেই ছবিটা ভাসছে,,ইশশ কেমন ভাবুক ভাবুক দেখাচ্ছে,,,

তুমি কি বিশ্বাস করবে? তোমাকে হ্যাঁ তোমাকেই প্রথমবার দেখে এই অনিকেতের হৃদস্পন্দন কেঁপেছিলো,,থেমে থেমে যাচ্ছিলো পুরোটা সময়,,
কেন? কি কারনে? আজও এর ব্যাখ্যা আমার মন আমাকে দেয় নাই,,আমি তো বিনা দ্বিধায় বিনা জানায় মন দিয়ে ফেলেছিলাম তোমাকে,,

ঐদিন থেকে আমাকে আর আমি খুজে পেতাম না,,নিজেকে খুজতে গিয়ে তোমাকেই বার বার খুজে পেতাম,,সিগারেট মদ সব নেশায় তো করেছি,,কিন্তু তোমার নেশা অদ্ভুত এক নেশা,,আমার ভেতরটা পুরো জেকে বসেছিলো সেই নেশা,,,আবার তোমাকে ভালোবেসে সব নেশা পায়ে ঠেলেছি আমি,,

শশী থ হয়ে দাড়িয়ে রয়,,বৃষ্টি শেষে হিমশীতল হাওয়া যেমন গায়ে কাঁপন লাগিয়ে দেয় হঠাৎ,, এই মুহুর্তে অনির কথাগুলোও তেমন কাপন লাগিয়ে যায় শশী দেহ মনে,,,

পরের ছবিটা বিয়ের পরেরদিনের,, যখন রিমি আর শশী বাড়ির ছাঁদে দাড়িয়ে ছিলো তখনকার,,,এখানেও মন ভার করে দাড়িয়ে আছে শশী,,

আবার সেই শিহরণ জাগানো আবেগ মাখা কথা শুনতে পেলো,,শশী ছবির দিকে চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে মোহমুগ্ধতায় কথাগুলো শোনে,,

তোমাকে এভাবে হারাবো স্বপ্নেও ভাবি নাই,,
কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি এই কথাটাও আমি যে মানতে পারি নি,,তুমি জানো সব নেশা তে ডুবেছি কিন্তু তোমার নেশা ভুলতে পারিনি,,,

পরের ছবি আসতেই পরিচিত হাতের স্পর্শ শশীর পেট জরিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে,,
সাথে সাথে শশীর মন খুশিতে ভরে ওঠে সামনের ছবি ও প্রিয় মানুষটার ছোঁয়া পেয়ে,,

ছবিটা শশী আর অনিকেতের বিয়ের,, ,যখন ও কাবিন নামাই সাইন করছিলো সেই সময়কার,,,

অবশেষে সৃষ্টি কর্তা তোমাকে আমার কাছে বৈধ ভাবে ফিরিয়ে দিলো সারাটা জীবনের জন্য ফিরিয়ে দিলো,,,আমার করে শুধুই আমার,,,আর আজ সেই তুমি,,আমার প্রেয়সী বধু থেকে আমার সন্তানের মা হয়ে গেলে,,আজ আমি পরিপূর্ণ,, আমার ভালোবাসাও পরিপূর্ণ,,,
অনিকেত শশীর মুখটা দুহাতে নিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে পরম আদরে জরিয়ে নিলো বুকের মাঝে,,,,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here