তুমি বললে আজ – পর্ব ৫

0
692

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ০৫

.
“রূপা…. এই রূপা, দরজা লাগিয়ে রেখেছিস কেন? খোল তো তাড়াতাড়ি।”

উচ্চ স্বরে কণ্ঠটা ভেসে আসতেই ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা থেকে চোখ সড়িয়ে দরজায় ত্যাগ করলাম। গলাটা আব্বুর চাচাতো বোন তাহেরা ফুপির। ফুপিদের মাঝে সকলের বড় তিনি। সবে মাত্র গোছল সেরে বেরিয়েছি। প্রতিদিন গোছলের পর আয়না দেখা যেন আমার অভ্যাসগত একটা কাজ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরখ করতেই ফুপির গলা কানে আসে। মূলত রেডি হবার জন্যই বাথরুম থেকে বেরিয়ে দরজা আটকিয়ে ছিলাম। রিমি আপুকে সকাল সকালেই পার্লারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তার সাথে গেছে রিফাপু সহ আমার পুরো কাজিন দল। পার্লারে সাজাটা আমার সবচেয়ে বিরক্তিকর একটা কাজ জন্যই বাসায় থেকে যাওয়া।

চুলে পেচানো তোয়ালেটা চুলে রেখেই এগিয়ে গেলাম দরজার কাছে। দরজাটা খুলে দিতেই ফুপি তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকে পড়লো।
বলতে লাগলো,

“কতক্ষণ ধরে ডেকে চলেছি তোকে। তৈরি হবো কখন বল তো? একটু পরেই তো বরযাত্রীরা চলে আসবে।”

কথাগুলো বলতে বলতেই কোণায় রাখা ব্যাগগুলো থেকে নিজের ব্যাগ টেনে বের করতে লাগলেন। পরখ করে দেখে বের করতে লাগলের আজকে পরার জন্য শাড়ি। ফুপি বেশ শৌখিন একটা মানুষ। সবকিছুতে তার পারফেক্ট হওয়া চাই। পরার জন্য একটা জামদানী শাড়ি হাতে নিলেন। ব্যাগটা ভালোভাবে রেখে উঠে আসতে আসতে বললেন,

“উফ্ বাবা! এতক্ষণে সময় পেলাম তৈরি হওয়ার জন্য। তুইও তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে, বরযাত্রী এলো বলে।”

“হু, এই তো এখনি রেডি হবো।”

আমার উত্তরটা আধা শুনেই এগিয়ে গেলেন তিনি। এই মানুষটা এমনি, সব কাজেই তার তাড়াহুড়ো করতে হবে। এতক্ষণ সবটা কাজেই তাড়া দিয়েছেন সবাইকে। উনার প্রধান কাজ এটাই।
ফুপির চিন্তা ছেড়ে আবারও দরজা আটকে দিলাম। আসলেই অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। বরযাত্রী এখন না আসলেও রিমি আপুকে নিয়ে কাজিন দলের ফেরার সময় হয়ে গেছে। আর আমার এদিকে কিছুই হলো না। জামাটা পরার জন্য হতে নিতেই দরজায় টোকা পরলো। ‘কে?’ বলতেই ওপাশ থেকে ভেসে চাচীর কণ্ঠ। মাজাটা বিছানায় রেখে আবারও দরজা খুলে দিলাম। রুমে ঢুকে আমাকে দেখে চাচী অবাক হয়ে বললো,

“কি রে রূপা, তুই এখন গোছল করলি? রেডি হবি কখন? আমারা তো কাজের জন্য সময় পাচ্ছি না, তোর তো কোন কাজ নেই। রিমি কে নিয়ে তো ওরা এখনি চলে আসবে পার্লার থেকে। বরযাত্রীরাও তো তিনটার মধ্যেই চলে আসবে। তাড়াতাড়ি কর।”

‘তোমাদের অতি আদরের বজ্জাত ছেলেটার ফরমাশ খাটতে খাটতেই তো এতটা দেরি হয়ে গেল। বজ্জাত লোক একটা। সুযোগ বুঝে সব কাজ আমাকে দিয়ে করিয়ে ছাড়লো।’
কথাটা মনে মনে বললেও মুখে আনতে পারলাম না। ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললাম,

“এই তো হচ্ছি এখন। নতুন দুলাভাই আসতে তো দেরি ই আছে। আতিফা কি করে?”

“কি আর করবে বল? ওর যা কাজ। তোর কাছে সেজেগুজে বাকি বাচ্চাদের সাথে ছোটাছুটি করছে, আর বলছে ‘আমাকে সুন্দর লাগছে বেশি, আমাল লুপা আপু সেজে দিছে’।”

বলেই হাসতে লাগলো চাচী। আমিও হেসে উঠলাম। পিচ্চিরা আমার হাতে সাজতে ভীষণ ভালোবাসে। হুট করে এক সময় এসে আমাকে বলবে ‘লুপা আপু, আমাকে সেজে দাও’। সাজার পর পুরো বাড়ির সবাইকে দেখিয়ে বেড়াবে যে তাকে কেমন লাগছে?
চাচী আবারও বললো,

“রেডি হয়ে নে পরে আর সময় পাবি না কিন্তু।”

আমি ‘হু’ জানাতেই চাচী আর দাড়ালেন না। নিজের ব্যাগ থেকে আজকে পরার জন্য শাড়ি নিয়ে চলে গেলেন। এই একটা জিনিসে ভীষণ রকমের বিরক্ত আমি। বাসায় এত এত রুম থাকলেও সবার আমার রুমেই তাদের ব্যাগ রাখতে হবে। আমার রুমটা নাকি সবচেয়ে নিরাপদ একটা স্থান। তার মাঝে বিয়ে বাড়ি, চারদিকে চেনা-অচেনা আত্মীয়ের ছড়াছড়ি। কখন কি চুড়ি টুড়ি হয়ে যায় বলা তো যায় না। এসব কথা বলেই ফুপি চাচীদের পাঠিয়ে দেন আমার রুমে।

চার তালার এই বিশাল বাড়িটা বড় চাচা ও আব্বুর সযত্নে গড়ে তোলা। নিচ তালায় ছোটখাটো গ্যারেজ সহ একটা ফ্ল্যাট রয়েছে। তিন তালাও চার তালায় দুটো করে চারটা ফ্ল্যাট। আর দো’তালায় দু’টো ফ্ল্যাটের জায়গা জুড়ে বিশাল একটা ফ্ল্যাট। উপরের চারটা ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া থাকলেও দোতালার পুরোটা জুড়ে থাকি আমরা। আট রুমের বিশাল বড় ফ্ল্যাট হওয়া সত্ত্বেও আমার রুমটায় সকলের একটু বেশিই আগ্রহ দেখায়। মাঝে মাঝে এই আত্মীয়-স্বজনর ভালো লাগলেও বিশাল বিরক্তিকর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
চাচী চলে যাবার পরও আটকাতে পারলাম না রুমের দরজাটা। একে একে দুই ফুপি আসলো, রিমি আপুর বড় মামী, আরেক চাচী আসলো। বিরক্তির সীমা যেন ছাড়িয়ে গেল আমার। মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছি না আর না পারছি সহ্য করতে। বিরক্তিগুলো রাগে পরিণত হয়ে গিয়ে পরলো আমার মাতা জননী ও মি. বজ্জাত তাসফি উপর। আম্মু যদি না বলতো আমার রুমে ব্যাগগুলো রাখার জন্য তাহলেই কেউ রাখতো না। আর তাসফি ভাইয়া, তার কথা আর কি বলবো? এক প্রকার ভয় দেখিয়ে আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে ছেড়েছেন।

.
সকালের নাস্তার পর কোন সময় নষ্ট না করে সবাই নিচে এসে ডেকোরেশনের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে তাসফি ভাইয়ার কথায়। আমার কোন কাজ না থাকায় চুপচাপ বসে বসে দেখছিলাম তাদের কাজগুলো। প্রায় একঘন্টা পর রিমি আপু এসে সবগুলো বোনদের তারা দিতে লাগলো পার্লারে যাবার জন্য। পার্লারের কথা শুনে সবাই খুশি হয়ে ছুটে গেল বাসার ভিতরে রেডি হতে। থেকে গেল ভাইরা সহ রিমি আপু ও রিফাপু। আমাকে যাবার জন্য বলতেই বলে উঠলাম,

“না না, আমি ওসব আটা-ময়দা মাখতে যাবো না। জানোই তো পার্লারের সাজ আমার খুব বিরক্ত লাগে। তাছাড়া তুমি বউ মানুষ তোমার কথা আলাদা। আমি তো যাবো না।”

আমার কথায় হেসে উঠলো সকলে। রিমি আপু বললো,

“এটা কোন কথা রূপা? আমার বিয়ে আর তুই পার্লারে সাজবি না? কেমন হয় বল তো?”

“দূর আমি তো আর শাড়ি পরবো না, যে পার্লারে যেতে হবে? শাড়ি পরলে না হয় যেতাম তোমাদের সাথে। তাছাড়া শাড়ি পড়ার শখ আমার চিরতরে মিটে গেছে আমার।”

শেষের কথাটা বিরবির করেই বললাম। তাসফি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন তিনি। ওনাকে দেখে রাগ মিশ্রিত ভয় এসে হানা দিলো মনে। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। রিফাপু বলে উঠলো,

“আপু ছাড়ো তো। ওকে হাজার বললেও যাবে না। এমনিতেই সুন্দরী মানুষ, ওর না গেলেও চলবে। চলো তুমি দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

“হু বলছে তোমাক? তোমরা সুন্দরী মানুষ, আরও সুন্দর হয়ে এসো। আমার ওসব ভালো লাগে না। রিমি আপু যাও তো তুমি, তা না হলে দেখা যাবে তুমি আসার আগেই নতুন দুলাভাই এসে হাজির হয়েছে। বেচারা! বউকে আর খুঁজে পাবে না।”

বলেই হাসতে লাগলাম। আপু আমার মাথায় টোকা দিয়ে বললো,

“পাজি হয়ে যাচ্ছিস কিন্তু দিন দিন। আমি কিন্তু তোর বড় আপু।”

খিলখিল করে হেসে উঠলাম আমি। সাথে সবাই হাসছে। রিমি আপু বেশ লজ্জা পেয়েছে। হঠাৎ তাসফি ভাইয়া বলে উঠলেন,

“তোরা যা রিমি। ও এমনিতেই সারাক্ষণ পেতনী সেজে থাকে, এভাবেই তোর বিয়েটা কেটে দিক। তাতে বরং কিছুটা লাভ হবে, ওকে দিয়ে তের জামাইকে ভয় দেখিয়ে গেইটে বেশি বেশি টাকা নিতে পারবো।”

কথাটা শুনতেই যেন হাসির বন্যা বয়ে গেল। হো হে করে হেসে উঠলো সবাই। ভিতর ভিতর জ্বলে উঠলাম আমি। আসলেই বজ্জাত একটা মানুষ উনি। রাগ রাগ চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলাম। রিমি আপু আর কিছু বললো না। রিফাপুকে শুধু ‘চল’ বলে নিজেই হাঁটতে লাগলো। রিফাপুও চলে গেল পিছন পিছন। আপুরা চলে যেতেই কাজের মাঝে রাহাত বলে উঠলো,

“তুই খারাপ হলে কি হবে, তোর জামাইয়ের কপালটা বড্ড ভালো রে রূপা। অনেক ভালো মানুষ উনি।”

অবাক হয়ে চট করে তাকালাম ওর দিকে। এই ছেলেটা আমার জামাই পেল কোথায়? আর তার ভালো দিকটা দেখলোই বা কিভাবে? আবার তাকে ভালো বলে আমাকে খারাপও বললো? আমাকে খারাপ বলেছে, মনে হতেই এক দল রাগ এসে ভীর জমালো আমার চোখে। রাহাত আমার রাগী চোখ দেখে বলে উঠলো,

“না মানে, সেটা না। বিয়ের দিন পার্লারে সাজবি না, তাতে তোর জামাইয়ের টাকাটা বাঁচবে আর কি। কিন্তু বেচারা যে এমন পেতনী দেখে ভয় পাবে না, তার কোন গ্যারান্টি নেই।”

আফসোসের সুরে বলতে লাগলো রাহাত। আবারও হাসির রোল পরে গেল যেন। সাথে এই বজ্জাত লোকটা তো আছেই। তেতে উঠলাম আমি। বললাম,

“ওই শয়তান, কি বললি তুই? হারামি, তোকে যে আমি কি করবো নিজেও জানি না। দাড়া এক্ষুনি চাচুর কাছে গিয়ে বলছি, তারপর দেখ তোর কি হয়।”

অতিরিক্ত রাগের বসে কথাগুলো বলেই উঠে দাড়ালাম চেয়ার ছেড়ে। এগোতে লাগলাম সামনে। উদ্দেশ্য চাচুর কাছে গিয়ে নালিশ দেওয়া। আমার এই উদ্দেশ্যে ব্যাঘাত ঘটালেন তাসফি ভাইয়া।

“আমার মামার টাকায় খেয়ে খেয়ে তোর রাগের মাত্রাতে দেখি বহুগুণ বেড়ে চলছে রে রুপু। বড়দের সামনে রাগ দেখাস? আজকেই মামীকে বলতে হবে দেখছি। এত রাগ না দেখিয়ে চুপচাপ কাজে হাত লাগা। বেয়াদব!”

থেমে গেল আমার পা দু’টো। এক ধমকেই যেন আমি শেষ। উফ্! কেন যে উনার সামনে বাহাদুরি দেখাতে গেলাম? এখন হলো তো? এক ধমকেই তোর সব বাহাদুরি ফুস হয়ে গেল। পিছন ফিরে তাকালাম। সবাই যে যার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। কিন্তু রাহাত আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হেঁসে চলছে। কটমট চোখে রাহাতের দিকে তাকালেও তাসফি ভাইয়ার কথা ভেবে কোমলতায় নেমে এলাম। আস্তে করে বললাম,

“আ..আমি তো পারি না এসব…. ”

“সারাদিন খাওয়া আর ঘোরা ছাড়া কি আর পারিস? বেয়াদব! আমার হাতে হাতে সাহায্য কর, আয় এদিকে।”

জানি, না বললেও উনি মানবেন না। একবার যখন বলেছে তো আমাকে দিয়ে কাজটা উসুল করেই ছাড়বেন। বাধ্য হয়েই শুনতে হয় উনার সব কথা। তারপর আমাকে দিয়ে এটা ওটা করিয়েই গেছেন এতক্ষণ। আপু ও ভাইয়ার বসার জায়গা সহ গেইট পর্যন্ত সাজিয়েছেন আমাকে সাথে নিয়ে। উনার অত্যাচারে মনে হচ্ছিলো রিমি আপুর কথা মেনে পার্লারে যাওয়াটাই যেন ঠিক ছিলো আমার। কথায় আছে না ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’। আমার অবস্থাটা ঠিক তেমনি হয়েছিলো।

.
এবার মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যেই এসে দরজা ধাক্কায় না কেন, কিছুতেই দরজা খুলবো না। জামাটা পরা শেষ করে তবেই দরজাটা খুলে দিবো। ভাবনার অবসান ঘটিয়ে চুল থেকে তোয়ালেটা খুলে ফেললাম। আগে চুলটা শুখানো আমার জন্য খুব দরকার। লম্বা চুল যে শুকানো যে কতটা কষ্টের সেটা তারাই বুঝে যাদের চুলগুলো লম্বা। চুলটা ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে জামাটা হাতে নিলাম। দু’পার্ট জামার লেহেঙ্গা পার্টটা নিয়ে পরে নিলাম। উপরের কামিজের মতো পার্টটা পরার জন্য উদ্যোগ হতেই আবারও দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পেলাম। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও তা ভেঙে গেল রেহেনা ফুপির আওয়াজে। বড়মা, আম্মুর চেয়ে আমায় ভালোবাসার মানুষ ফুপি। তাকে তো আর উপেক্ষা করা সম্ভব না। দরজাটা খুলে দিয়েই খাটের দিকে আসতে আসতে বলতে লাগলাম,

“উফ্ ফুপি দেখো তো তখন থেকে জামা-কাপড় নিয়ে বসে আছি, কিছুতেই রেডি হতে পারছি না। তোমার আদরের বজ্জাত ছেলেটার জন্য আ….”

আটকে গেল কথাটা আমার। আঁতকে উঠলাম যেন আমি। ভয়ে হ্রদপিন্ডটা তড়িৎ গতিতে প্রবাহিত হতে লাগলো বারংবার।

.
.
চলবে…..

আসসালামু আলাইকুম। দু’দিন গল্প না দেবার জন্য অনেক বেশিই দুঃখিত। অতিরিক্ত লোডশেডিং সাথে বৃষ্টি, সাথে নেট প্রবলেমটাও অনেক। যার ফলে অনলাইনে আসা হয় নি দু’টো দিন। আগামী পর্ব থেকে নিয়মিত দেবার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে? নেক্সট, নাইস না বলে পাঠনমূলক মন্তব্য করলে বুঝতে পারবো। এতে লেখার আগ্রহটাও হয়তো কিছুটা হলে বাড়বে। তাই গল্পটা কেমন এগোচ্ছে, কোথায় ভুল হচ্ছে জানাবেন প্লিজ। সবাইকে অনেক ভালোবাসা রইল।🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here