তুমি বললে আজ – পর্ব ৭(প্রথমাংশ)

0
600

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ০৭. ( প্রথমাংশ )

.
প্রচন্ড অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আপু গুলোর দিকে। বুঝতে পারছি না আপু গুলোর আমাকে দিয়ে কাজ কি? হঠাৎ এসে নিজে নিজেই কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। ভদ্রতার খাতিরে আমিও তাদের কাথার টুকটাক জবাব দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ কথা বলার পর হঠাৎ করে একটা আপু বলে উঠলো,

“কিছু মনে না করলে, একটা হেল্প করবা? না মানে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম আর কি।”

কথাটা শোনার পর অনেকটা অবাক হয়েই তাকিয়ে আছি আপুটার দিকে। অপরিচিত একটা মেয়ের কাছে সাহায্য চাইছে? বিষয়টা অনেক চিন্তার। অপরিচিত এই আপু গুলোর সাথে সখ্যতা করার ইচ্ছা না হলেও কৌতুহল ঠেকাতে পারলাম না। কথাটা শোনার জন্য অনেক আগ্রহ হয়ে উঠলাম। হঠাৎ করেই মনে পরলো এই আপু গুলো তো গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা সেই আপু গুলো। তখনই হুট করে তাসফি ভাইয়ার কথা মাথায় এলো। এবার পুরো কাহিনি টা-ই আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে ঢুকে গেল। আপুগুলো আমাকে কি বলতে পারে বুঝতে পারলোও তাদের মুখে শোনার জন্য মাথা ঝাঁকালাম। সাথে সাথে তাদের চোখ-মুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো।

“এই গেইটে তোমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো, ওটা কে হয় তোমার?”

যদিও বুঝতে পারছিলাম উনারা তাসফি ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করছে, তবুও অবুঝের মতো করে বলে উঠলাম,

“কার কথা বলছেন আপু? কে দাঁড়িয়ে ছিলো?”

আমার নেগেটিভ উত্তরে আপুটা চুপ হয়ে গেল। অন্যজন তাকে বাধা দিয়ে বললো,

“আরে তুই চুপ কর, আমি বলছি। ওই যে গেইটে তোমার সাথে দাড়ালো না? সুন্দর করে ফর্সা যে ছেলেটা, কালো পাঞ্জাবি পরা ছিলো। গেইটের ঝামেলাটা সুন্দর করে মিটমাট করলো। উনার কথা বলছিলাম আমার। কে হয় উনি তোমার?”

অনেক উৎসাহের সাথে বলতে লাগলো কথাগুলো। আমিও এবার তাদের কথার সায় জানিয়ে বললাম,

“ওওও আচ্ছা! তাসফি ভাইয়ার কথা বলছেন?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ হবে হয়তো। উনার নাম তো জানি না, তোমার ভাই হয় উনি?”

আমি মাথা নাড়াতেই আপুগুলো আরও গল্প জুড়ে দিলো আমার সাথে। আর গল্পের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো মি. বজ্জাত তাসফি ভাই। কিছুক্ষণ পর একজন তো বলেই ফেললো উনাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে। আপুটার কথা শুনে রাগে ফেটে পরলাম যেন কিন্তু প্রকাশ করলাম না। কেন রে? বিয়ে বাড়িতে কি আর কাউকে চোখে পরলো না তাদের। আমাকেই কেন চোখে পরলো? লুচু মেয়েগুলো কথাকার, সুন্দর ছেলে দেখলেই লাইন মারার জন্য উঠেপরে লাগে। দেশে কি ছেলের অভাব পরেছে নাকি যে উনাকেই পছন্দ করতে হলো এদের। মনে মনে তাদের বকে নিজেই অবাক হলাম কিছুটা। তবে ফট করে কিছু মনে হতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো আমার। আপুগুলোকে জব্দ করার চিন্তা মাথায় আসতেই হাসি মুখে বললাম ‘ঠিক আছে’। আমার কথায় তারা আরও খুশি হয়ে উঠলো।

একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাসফি ভাইয়া ও সেই আপুগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি। তাদের কথাগুলো শুনতে না পারলেও বুঝতে পারছি খুব খোশমেজাজে গল্প শুরু করছে। তাদের হাসি হাসি মুখে গল্প করা যেন আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করছে। আমার ভাবনাটা পুরোই বিফলে গেল। বজ্জাত লোকটার কাছে গিয়ে এই লুচু লুচু মেয়েগুলোর কথা বলতেই হালকা করে একটা ধমক দিলো আমাকে, তারপর একটু রাগী ফেস করে এগিয়ে গেল তাদের দিকে। তখন ধমক খেলেও মনে মনে অনেক খুশিই হয়েছিলাম। আমাকেই ধমক দিলো আপুগুলোর কথা বলতে না জানি তাদের কি না কি করে। কিন্তু এখন ব্যাপারটা পুরোই উল্টো হয়ে গেল। কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে তাদের সাথে আর একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে। উনি আসলেই চরম লেভেলের বজ্জাত একটা মানুষ। আমাকে সারাদিন ধমকের উপর রাখে আর সবার সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলে। অসহ্য লোক একটা।

.
রিমি আপুর বিদায়ের পর নিচে সবাই মিলে আড্ডায় মেতে উঠেছে। বড়মা, ফুপি, আম্মু সহ পরিবারের ছোট বড় সবাই আছে আড্ডার মাঝে। মধ্যরাত পর্যন্ত নাকি চলবে এই আড্ডার আসর। আর এই আড্ডার আসর বসিয়েছেন পরিবারের সবার অতি আদরের ছেলে তাসফি ভাইয়া। রিমি আপুর বিদায়ের সময় কান্নায় ভেঙে পরে বড়মা সহ পরিবারের সবাই। আপু যাবার পরও সকলে মন মরা হয়ে বসে ছিলো বাহিরে। তখনই তাসফি ভাইয়া কোক আইসক্রিম নিয়ে এসে জমিয়ে তোলে আড্ডার আসর।
এতক্ষণ সবার মাঝে বসে থাকলেও এখন আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না আমার। মাইগ্রেনের ব্যাথাটা তিরতির করে বেড়ে চলছে, সাথে গাঁ গুলিয়ে আসছে। বিকেল থেকে এমন হলেও এখন গাঁ গুলোনো মাত্রায় বেড়ে চলছে। আড্ডার আসর থেকে আস্তে করে উঠে দাঁড়ালাম। হেঁটে একটু বাহিরে আসতেই গরগর করে বেড়িয়ে গেল পেটের সমস্তকিছু। নিজেকে সামলে নিয়ে যেতেই কারোর সাথে আটকে গেলাম। ধাক্কা লাগার মানুষটিকে দেখতে পেছন ফেরার আগেই কর্কশ গলায় ভেসে আসলো কারোর গলা। পিছন ফিরে মানুষটিকে দেখতেই এক রাশ বিরক্তিতে ছেয়ে গেল আমার মন।

“ছি ছি যেখানে সেখানে এসব কি করে বেড়ায় এই মেয়ে। আসে পাশে সব নোংরা করলো সাথে আমাকেও। বাবা-মা কিছু শেখাই নি তোকে। এভাবে যেখানে সেখানে বমি-টমি করে রাখছিস।”

কড়া গলায় কিছু বলতে চাইলেও বললাম না কিছু। এখন এই মহিলাটার সাথে কিছুতেই কথা বলার মুড নেই। এমনিতেই শরীর অনেক দূর্বল তার সাথে প্রচন্ড মাইগ্রেনের ব্যাথা। আমাকে চুপ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলো,

“চারদিকে এত আত্মীয় স্বজনরা আছে, আর এই মেয়েটা সব নোংরা করছে। এর থেকে আর কিই বা আশা করা যায়। খুব তো চ্যাটাং চ্যাটাং কথা কইয়া বেড়াস এখন কি হইলো? মুখে কুলুপ এঁটে আছিস ক্যান?”

“দ..দেখুন কথা বলতে একদমই ইচ্ছে হচ্ছে না এখন।অযথা কথাবার্তা বাদ দেন।”

“শিক্ষা নাই শিক্ষা নাই, এই মেয়ের কোন শিক্ষা-দিক্ষা নাই। দাদীর সাথে কেমনে মুখে মুখে তর্ক করে দেখ। মা-বড়মারা কি এল্লায় শিখাছে তোকে? এই জন্যই এদের এখানে আসতে চাই নি। গ্রামে গেলে তো সম্মান দেয় না, এখানেও এমন করছে আমার সাথে।”

“এই রূপা, তুই দিন দিন খুব বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস তো। আম্মার সাথে আবার লাগছিস? তোর কি কোন লজ্জা নাই রে। আজকে অন্তত মেহমান মনে করে না লাগতি আম্মার সাথে। আম্মার বয়স হয়ছে সেটা তো দেখবি একবার।”

‘বুড়ি হয়েছে তাও তো এই বুড়ির কূটনামি কিছুতেই কমে না। বুড়িকে নাকি আবার সম্মান দিতে হবে’? মনে মনে কথাটা বললেও মুখে কিছু বললাম না।এতক্ষণ একটা ছিলো এখন আরেকটা এসে পরছে। এখন কিছু বলা মানেই বড়সড় একটা ঝামেলা বেঁধে যাবে। আত্মীয়-স্বজনের মাঝে অনেকে চলে গেলও কেউ কেউ রয়ে গেছে। তার মাঝে শরীরটা ভীষণ রকমের খারাপ লাগছে। তাই চুপ থাকাটাই শ্রেয়।
এই মানুষগুলো আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ মানুষের তালিকায় রয়েছে। আমার দাদুর ছোট পক্ষের স্ত্রী। আব্বু, বড় চাচা ও ফুপির সত মা। আমাদের ছোট হাসি খুশি পরিবার ধূলিসাৎ করে ফেলেছে। ছোট থেকেই এই মহিলাটার বিভিন্ন অপকর্মের সাক্ষী হয়ে এসেছি। সবার সামনে ভালো সেজে থাকলেও তার অপকর্মগুলো ফলাতে দু’মিনিটও ভাবে না। এই মহিলাটার জন্যই আমার দাদীকে ধুকে ধুকে আফসোস করে মারা যেতে দেখেছি। নিজের মতো করেই তার তিন ছেলেমেয়ে গুলোকেও শিক্ষা দিয়েছেন। একদম উনার কার্বন কপি। আত্মীয়তার খ্যাতিরেই আপুর বিয়েতে দাওয়াত দিতে হয়েছে এনাদের, তা না হলে বড় চাচাও অনেক এড়িয়ে চলে এদের।

“দেখন ফুপু আমার শরীরটা একেবারেই ভালো লাগছে না। আর আমি তো দাদীকে কিছুই বলি নি, উনি অযথায় এমন করছে।”

শরীর অতন্ত্য খারাপ লাগায় উনাদের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে করে বলে উঠলাম। একদমই ভালো লাগছে না এখানে দাঁড়িয়ে থাকায়। মনে হচ্ছে এখনি বিছানার শুয়ে পরা ভীষণ প্রয়োজন, তা না হলে হয়তো এখনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবো। উনাদের পাশ কেটে আস্তে আস্তে এগোতে লাগলাম আড্ডার আসরে। এই অবস্থায় কিছুতেই সিড়ি ভেঙ্গে দোতালায় যাওয়া সম্ভব নয় আমার জন্য। ওখানে গিয়ে আম্মুকে বললে উপরে গিয়ে রেখে আসবে।

উনাদের উপেক্ষা করে চলে আসায় এই মহিলা দুটো অনেক কথা বলতে লাগলো আমাকে ঘিরে। কানে নিলাম না তাদের কথা। আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলাম সামনের দিকে। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েই আম্মুকে ডাকতে নিলেও পারলাম না ডাকতে। গলা দিয়ে কোন কথায় বের হলো না আমার। মাথার পেছন থেকে ব্যাথা হতে লাগলো সাথে চারদিকে কেমন যেন ঘুরতে লাগলো। চোখের সামনে কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসলো। হাত দিয়ে কিছু ধরার চেষ্টা করেও ধরতে পারলাম না। আস্তে আস্তে অন্ধকার ভর করলো চোখের সামনে। নিজের ব্যালেন্স ধরে রাখতে না পেরে লুটিয়ে পরলাম মাটিতে। চোখ বন্ধ হয়ে গেলেও জ্ঞান হাড়াইনি তখনও। বুঝতে পারলাম কেউ এসে ধরেছে আমাকে। টিপটিপ করে চোখ মেলে তাকাতেই তাসফি ভাইয়ার চেহারাটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে। কিছু হয়তো বলছে কিন্তু তার কিছুই কানে এসে পৌছালো না আমার। তারপর আম্মু, বড়মা, ফুপি, রিফাপু সহ সবার উদ্বিগ্ন চেহারা দেখতে পেলাম। সবাই কিছু বললেও কোন কথাই আমার কানে আসলো না। তারপরই চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসলো আমার।

.
.
চলবে……

পারিবারিক সমস্যার কারণে অনেক ঝামেলার মধ্যে আছি। এতটুকুই লেখা সম্ভব হয়েছে। ভুলত্রূটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এই পর্বের বাকি অংশ আগামীকাল দিবো ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here