জীবনসঙ্গী
পর্ব ২৫
writer Tanishq Tani
আমার তখনকার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছ তাই না শশী!
শশী মাথা নিচু করে চোখের জল ছেড়ে দেয়,,
সরি বেগমসাহেবা,,এই দেখো কানে ধরেছি,,তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে ওমন আচরন করেছি যাতে তুমি রাগ করে রুম থেকে বের হয়ে যাও আর আমি তোমার জন্য সারপ্রাইজ রেডি করতে পারি,,
আমি কোনো সারপ্রাইজ চাই না অনি! তুমি আমার হয়ে থেকো জীবনভর এতেই আমি খুশি,,আর কিছুই চাই না আমার,,তোমার দেওয়া কষ্ট আমার বুকে তীর হয়ে বিঁধে তুমি জানো না অনি,,আমি পৃথিবীর সমস্ত কষ্ট সহ্য করতে পারি কিন্তু তোমার দেওয়া কষ্ট আমি কোনোদিন সহ্য করতে পারবো না,,এর চেয়ে যে আমার মৃত্যুও ভালো,,,
চুপ,,একদম চুপ,,আরেকবার মুখ থেকে মরার কথা বের করলে মেরে তক্তা বানিয়ে দেবো,,,শশী আর অনির ৫/১০ টা বাচ্চা হবে,,ঘর ভরা নাতি নাতনী হবে? তাদের কে আমরা আমাদের ভালোবাসার গল্প শুনাবো,,
এসব ভাববা,,আবার যদি উল্টো পাল্টা কথা শুনেছি খবর আছে বুঝলা,,আসো বুকে মাঝে আসো এখন,,
শশী অনিকে জরিয়ে অনির বুকে মাথা রাখে,,,
,,,,,শশী!
,,,,,হুম,,
একটা কাজ করবে?
কি? বুক থেকে মাথা উচু করে অনির মুখ পানে চেয়ে,,,
ঘরের বাতিটা জ্বালিয়ে দিয়ে আসবে?
আচ্ছা,,,,
শশী দেখে অনি এখনো জরিয়ে ধরে আছে শশীকে,,,
,,,কি হলো ছাড়ো! না ছাড়লে বাতি জ্বালাবো কি করে,,,
ওহ্ হ্যাঁ,, কিন্তু এই মুহুর্তে তোমাকে নিজের থেকে ছাড়াতে ইচ্ছা করছে না,,
তাহলে থাক,,,মুচকি হেসে শশী বলে,,
,,হুম,,,,শশীর চুলে হাত বুলতে বুলাতে বলে অনিকেত,,,
আচ্ছা,, যাও বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে আসো,,,,
শশী বাতি জ্বালিয়ে বিছানার দিকে তাকাতেই শশীর খুশিতে চিৎকার করতে ইচ্ছা করে,,,
পুরোটা বিছানায় ছোট বেবিদের ছবি,,মাঝ খানে আম,তেতুল,, বিভিন্ন রকম ফলও আচারে ভর্তি ঝুড়ি,,,পাশেই শশীর ফেবারিট পিঠা,পায়েশ,,খিচুড়ী বিফ,,ফুচকা,হালিম,চটপটি,আইসক্রিম,, হাজির বিরিয়ানী,, আরো অনেক কিছু,,অনির দিকে তাকাতেই মনটা দ্বিগুণ খুশিতে নাচে,,৩ রঙের গোলাপ,রজনীগন্ধা জারবেরা সহ কয়েক প্রকার ফুলের বুকে হাতে দাড়িয়ে আছে অনিকেত,, তাতে লেখা
” Happy birthday ❤ আমার বাচ্চার আম্মি”
সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে হুড়মুড় করে ঘরে ঢোকে ফারিহা,রাতুল, রিমি,শোভন, শিখা,সামির,নাসিফ,,, হ্যাপি বার্থ ডে হবু বাচ্চার মা,,,
রিমি শিখা সামির শশীকে জড়িয়ে ধরে,,,
শশী কি বলবে,,এমন সারপ্রাইজে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে একপ্রকার,,,
আজ যে ওর নিজের বার্থডে ছিলো শশী নিজেও জানতো না,,কোনোদিন শোভন ভাইয়া আর রিমি ছাড়া কেউ মনেও রাখতো না শশীর বার্থ ডে,,
শিখা সামির কে আদর করে রিমির কাছে যায় শশী,,আমাকে মাফ করে দে রিমি! তোকে আমি বিশ্বাস না করে কত্ত কথা শুনিয়েছি,,তুই ই ঠিক বলেছিলি,,রিশাদ ভালো না,,
আরে বাদ দে তো! আমি সব ভুলে গেছি,,আমার জানটুস টা হ্যাপি আছে এতেই খুশি আমি,,,তোর জায়গায় আমি থাকলে আমিও এমন করতাম,,সো পাস্ট ইজ পাস্ট,,
নাও চিল বাবু,,উম্মাআআ,,শশীকে জরিয়ে গালে চুমো দেয় রিমি,,
আমি যে আন্টি মা হচ্ছি তাতেই তোর দোষ মাফ,,তুই সুস্থ থাক আর বাবুটাও এটাই আমার দোয়া,,,
রিমি শশীকে জরিয়ে ধরে কাঁদে,,,
এই কাদুনী,,একদম কাদবি না,,এখন হ্যাঁপি মোমেন্ট চলছে সবাইর এর মধ্যে তোর চেহারা স্যাড বানাইস না,,শশীর চোখ মুছিয়ে দিয়ে,,,
অনি ভাই,,বউকে ফুল দিয়ে দেন,,অনি শশীর সামনে হাটু গেড়ে বসে ফুলটা দিয়ে ধরে
আমার বাচ্চার মা,,আমার সহধর্মিণী, অর্ধাঙ্গিনী মিসেস অনিকেত কে আমার পক্ষ থেকে একগুচ্ছ ভালোবাসা ও শুভ জন্মদিনের শুভেচ্ছা,,সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি আজ সত্যি কৃতজ্ঞ তিনি আমাকে তার এতো সুন্দর সৃষ্টির জীবনসঙ্গী করেছেন,,
রাতুল শোভন সমস্বরে বলে ওঠে,,
,,আমিন! আমিন!
শশী হেসে লাজুক লাজুক ভঙ্গিতে ফুলটা হাতে নেয়,,,
সবাই বসে আড্ডা দিতে থাকে,,শশীকে সবাই জোর করে অনেক কিছু খাওয়া,,শশী সবার খুশির জন্য একটু একটু সব কিছু খায়,,কিন্তু এখন কেমন যেন বমি বমি ভাব আসছে,,,
কিরে শশী! মুখটা ওমন করছিস কেন? বমি আসছে নাকি?
এই কথাটা বলতে যতো দেরি শশী দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে গড়গড় করে বমি করতে দেরি করে না,,,
অনি, শিখা,রিমি গিয়ে ওকে পরিষ্কার করে এনে বিছানায় পিঠ বালিশে ঠেকিয়ে বসিয়ে দেয়,,,
খুব খারাপ লাগছে শশী? অনিকেত চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করে,,
না এখন একটু ভালো লাগছে,,,অনির বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে,,,
আমরা বরং অন্য রুমে গিয়ে বসি,,তুই রেস্ট কর শশী,,রিমি শশীকে বলে,,,
আরে না না! আমি এখন ভালো আছি,,কতোদিন পর তোদের দেখলাম,,থাক না পাশে,,
আচ্ছা ঠিক আছে,,
ফারিহা একটু পর সবার জন্য আইসক্রিম
নিয়ে আসে,,শশীকে অনিকেতের বাটি থেকে অনিকেত ২ চামচ খাইয়ে দেয়,,
আচ্ছা অনি,, একটা গান শুনা,,অনেকদিন তোর কন্ঠে গান শুনি না,,,
না রে রাতুল মন চাচ্ছে না এই মুহুর্তে,,, শশীর মুখের দিকে তাকিয়ে,,
রাতুল ভাই! আজ অনি ভাই থাক! আজ মিসেস অনিকেতের গান শুনবো আমরা,,,
রিমির কথা শুনে সবাই শশীর মুখের দিকে তাকায়,,
অনি নিজেও ঘার বাকিয়ে শশীর দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়,,,
শশী রিমির কথা শুনে হকচকিয়ে ওঠে,,
ঐ কি বলিস তুই,,
হ্যাঁ! তুই গান গাইবি এখন,,,
হ্যাঁ রিমি আপু ঠিক বলেছ,,শশী আপু অনেক সুন্দর গান গাইতে পারে,,,শিখা রিমির কথার সাথে কথা মিলিয়ে বলে,,,
সত্যি! অনিকেত শশীর দিকে তাকায়,,
আরে কি বলছিস রিমি তোরা এসব?লজ্জিত হয়ে বলে,,,
আমি গান টান পারি না,,
এসব বললে হবে না শশী ভাবি,,গান তো গাইতেই হবে,,,
রাতুল সহ সবাই অনিকেত কে দিয়ে শশীকে গান গাইতে রাজি করায়,,,অবশেষে শশী রাজি হয়,,তবে সম্পূর্ণ নয় অল্প করে গানটা শেষ করবে বলে রাজি হয় শশী,,,
অনিকেত সহ সবাই আগ্রহ নিয়ে শশীর গানের অপেক্ষা করে,,,
চোখ বন্ধ করে বড় শ্বাস নিয়ে রিমির কিছুটা পেছনে মুখ লুকিয়ে গান গাইতে থাকে শশী,,
“কত ভালোবাসি,,কি যে ভালোবাসি🎶
এতো ভালোবাসি তাই মনে জাগে ভয়🎶
এতো সুখ ভাগ্যে যদি না সয়🎶
জানে ফুল, জানে পাখি,জানে ঐ ঢেউ,, 🎶
তুমি ছাড়া এ জীবনে নেই আর কেউ🎶
জানে চাঁদ, জানে রাত, জানে জোছনা 🎶
তুমি ছাড়া দুটি চোখে কিছু দেখি না🎶
কেন যে ভালোবাসি জানে এ হৃদয়🎶
চলবে,,,