তুমি আমার -পর্ব বোনাস

0
349

#তুমি_আমার
#বোনাস_পার্ট
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত

আবেশ আর কাঁজল বসে আছে মুখোমুখি দুটি চেয়ারে।আবেশের হাতে থাকা ফুলগুলো দেখে মেয়েটার চোখগুলো দ্বিগুণ চিকচিক করছে।সিরাত সেদিকে তাকিয়ে কয়েক ফোঁটা জল ফেললো।শেষমেশ বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও লোকটাকে নিজের করে রাখতে পারলো না। হারিয়ে গেলো সুন্দরীর কাছে।সকলের মুখে বিষণ্ণতার চাপ।কেউ কোনো আন্দাজ করতে পারছে না।আবার ফুলগুলোও মেয়েটাকে দিচ্ছে না।তবে কি ফিল্মি স্টাইলে প্রপোজ করবে তাঁকে।এবার মুখ খুললো আরু,

-‘কি বিশ্বাস ভেঙ্গে গেছে।কষ্ট হচ্ছে নিজেকে এলোমেলো লাগছে তো।মনে হচ্ছে বেঁচে থাকাটা অর্থহীন।যেখানে প্রিয় মানুষ টাই কাছে নেই পাশে নেই সেখানে বেঁচে থেকে লাভ নেই।সিরাত নিজের অধিকার নিজের ভালোবাসা নিজেকে বেঁধে রাখতে হবে অন্য কেউ তোমাকে সাহায্য করবে না।একজন স্ত্রী হয়েও তোর স্বামী বাইরে একটা মেয়ের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর তুই একেবারে নিশ্চুপ কিচ্ছু বলছিস না হতে দিচ্ছিস।মেনে নিচ্ছিস আজব’!আয়েশা বললো,

-‘সিরাত যোকোনো পরিস্থিতিতে হোক বিয়েটা হয়ে গেছে ।আর বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়।তাছাড়া তুই তো ভাইয়াকে ভালোবাসিস তাহলে মেনে নিতে সমস্যা কোথায়’?রিয়া বললো,

-‘মানিয়ে নিয়ে স্যারকে নিয়ে জীবনটা সুন্দর করে সাজা।দেখবি তোর সুখের অভাব হবে না।স্যার তোকে খুব সুখে আর ভালো রাখবে।এখন থেকে হাল ধর হাল ছাড়িস না।নইলে পরে তোকে পস্তাতে হবে’।আয়ান বললো,

-‘একবার তো নিজেকে সুযোগ দে।লোকে জানাজানি হওয়ার আগ পর্যন্ত চেষ্টা কর।যদি মানতে না পারিস বা উনি না মানতে পারেন তখন না হয় অন্য পথ দেখবি’।

চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ায় সিরাত।তোরা ঠিক বলেছিস এবার থেকে নিজের অধিকার অর্জন করে নেবো আমি।ওই আরু দেখি তোর ভাই এখানে পিরিতির আলাপ কি করে করে’।নিজেকে সামলে আবেশের সামনে দাঁড়ায় সিরাত।ওকে দেখে দুজনে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়।কিন্তু সিরাত সেদিকে পাওা না দিয়ে একটি চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পরে।ওর এহেন আচরণে হতভম্ব সকলে।কাঁজল হা হয়ে আবেশের দিকে তাকালো আবেশ বললো,

-‘কি হলো সিরাত তুমি এখানে’?কাজঁল সেইম প্রশ্ন করলো তাঁকে।সিরাত হেসে হেসে জবাব দিলো,

-‘এখানে বন্ধুদের সাথে খেতে এসেছি কিন্তু এখন ওদের সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই আপনাদের টেবিলে চলে আসলাম।স্যার ম্যাম আপনারা কি ডিস্টার্বড’।আবেশের কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পরলো কিন্তু কিছু বললো না।সিরাতের মটিভ বুঝার চেষ্টায় রয়েছে সে।কাজঁল হাসকা হেসে না জানালো।ওখান থেকে আরু উঠে এসে বললো,

-‘ভাইয়া ফুলগুলো খুব সুন্দর তো।কার জন্য আমার ভাবীর জন্য এনেছো বুঝি’?আবেশের দিকে দুষ্টু হেসে কথাগুলো বেশ সাহস সঞ্চয় করে বললো আরু।ভাবী ডাকটা যে সিরাতকে উদ্দেশ্য করেই বলা তা বুঝতে বেগ পেতে হয়নি তাকে।কাঁজল কাঁদোকাঁদো ফেইস নিয়ে বললো, ‘ভাবী মানে’?সিরাত গুতা দিয়ে আরুকে সত্যিটা বলতে নিষেধ করলো।কারণ চায়না পাবলিকলি এভাবে সিনক্রেইট করতে।আরু কথা ঘুরিয়ে বললো,

-‘ম্যাম বুঝলেন না তো।আরে বাবা ভাবী মানে আমার ভাইয়ার বউ।মানে ফিউচারে যে হবে তাঁর জন্য নাকি মানে প্রপোজও তো করতে পারে নাকি’।এতক্ষণে স্বস্তির শ্বাস ফেললো কাঁজল।ততক্ষণে পুরো ঘ্যাং হানা দিয়েছে এই টেবিলে।বাকীরা পাশের টেবিলে।আবেশ সিরাতের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললো,

-‘আমি ওসব পারবো না।ফুল দিয়ে প্রপোজ করে হাতে দামী আংটি পরিয়ে বার বার ভালবাসি বলে কানের কাছে প্যান প্যান করতে আমি পারব না।ওসব আমার কাছে জাস্ট ইম্পসিবল।আমি আমার স্টাইলে ভালোবাসি তাঁকে।যদি এসব ছাড়া আমার ভালোবাসা ধরতে পারে বুঝতে পারে তাহলে সে পূর্ণ আর নইলে শূন্য’। আবেশের কথার মর্মান্ত কিছুই বুঝলো না কেউ।ফুলগুলো কাঁজলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো আবেশ,

-‘শুভ জন্মদিন কাঁজল!দোয়া করি আগামী জীবন সুখের কাটুক।সবসময় এভাবে হাসিখুশী থাকো।নিজের স্বপ্নের উচ্চ শিখরে পৌছাও’।সকলের হ্যাবলার ন্যায় একে অপরের দিকে তাকালো।তারপর একে একে সবাই উইশ করলো।তাঁরা কি ভেবেছিল আর হলো কি।উফফ!এটা আগেই ভাবা উচিৎ ছিলো এটা আয়ান বা মিনার নয় এটা হলো আবেশ মিঃ আবরার আবেশ।

🍁🍁🍁

মাঝেমধ্যেই ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে আরু।ঘুমের মধ্যে কারো স্পর্শ অনুভূত হয় তাঁর।প্রথম প্রথম দুঃস্বপ্ন ভাবলেও এখন এটা সত্যি ধরে নিয়েছে সে।খুব বাজেভাবে স্পর্শ করে এমন নয়
আলতো হাতে গালে স্পর্শ করে নয়তো কপালে একটি চুমো দিয়ে চলে যায়।কিন্তু চোখ খুলে আশেপাশে কাউকে দেখতে পায় না।আজও ঠিক একইভাবে স্পর্শ করেছে তাঁকে কিন্তু চোখ খুলে কাউকে দেখে নি।এবার রুমের লাইট জ্বালিয়ে বসে আছে আরু আজ দেখতেই হবে কে আসে তাঁর রুমে।প্রায় দেড় ঘন্টা ওয়েট করার পরও কেউ এলো না।ঘুম পেয়েছে ওর বারবার হামি দিচ্ছে একসময় ঘুমিয়ে গেলো।হঠাৎ কারো মিহি সুরের ডাক কানে পৌঁছাতেই লাফিয়ে উঠলো আরু।হ্যাঁ একটি ছেলে বসে আছে তাঁর সামনে।ছেলেটির মুখে মাস্ক পড়া শুধু চোখ গুলো দেখা যাচ্ছে তাঁর।আরুর টেডিবিয়ার টা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে সে।আরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

-‘কে আপনি? এভাবে রাত বিরাতে আমার ঘরে এসেছেন কেন’?

-‘তুমি আমার জন্য ওয়েট করছো তাই তোমাকে দেখতে এসেছি’।

-‘হোয়াট’?

-‘হুম!তুমি এতক্ষণ না ঘুমিয়ে আমার পথ চেয়ে ছিলে তাই সামনে না এসে পারলাম না।এবার দেখা হয়েছে যাই’।

-‘আপনি এসব কেন করছেন?কে আপনি’?

-‘আমার পরিচয় খুব শীঘ্রই পাবে।আর আমি!আমি হলাম তোমার ভালোবাসা’।লোকটার জথায় চটে গেলো আরু।বললো,

-‘আপনি আমার ভালোবাসা নন।আপনি অত্যন্ত অভদ্র অসভ্য একটি লোক।নইলে এই রাতের আধাঁরে আপনি একটি মেয়ের ঘরে ঢুকে তাকে বাজেভাবে স্পর্শ করতেন না।কেন এভাবে আমাকে মেন্টালি ট্রমার মধ্যে দিয়ে রাখছেন কি দোষ করেছি আমি’।

-‘তোমার কোনো দোষ নেই।সবটাই আমার দোষ।তোমাকে দেখার পর থেকে ঘুমাতে পারি না।তোমাকে এক দন্ড না দেখলে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করি নিজেকে আটকে রাখতে কিন্তু পারি না।জানি এসব ঠিক না কিন্তু কি করবো বলো।নিজের অনুভূতির কাছে আজ নিজেই অসহায়’।

-‘ঠিক ভুল জাজ করতে জানেন অথচ ভুল পথ বিসর্জন দিয়ে সঠিক পথে আসতে পারছেন না।এটা কোনোকথা হলো।আমাকে এভাবে আর ডিস্টার্ব করবেন না। আমি একজনকে ভালোবাসি।আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না।তাই শুধু শুধু কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে হয় না’।আরু অন্য কাউকে ভালোবাসে কথাটা শুনেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তাঁর।নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বললো,

-‘কাকে ভালোবাসো নাম কি তাঁর’?সন্দিহান চোখে তাকালো আরু।

-‘কেন মারবেন তাঁকে’?

-‘নাহ শুধু ভাগ্যবান ব্যাক্তিটি কে একবার জানতে চাই।যদি দেখি ওর সাথে তুমি ভালো আছো তাহলে কখনও তোমার লাইফে আসবো না।আর যদি দেখি তুমি ওর সাথে হ্যাপী নও তাহলে আসবো।একবার নয় বার বার আসবো’।

খাবার টেবিলে বসে আছে খান বাড়ির সবাই।সেখানে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে উঠে এসেছে সিরাত। মেয়েটা এখন আর এই বাড়িতে আসে না।আগে যাও আরুর সাথে আসা যাওয়া করতো কিন্তু এখন ভুলেও এ পথে পা মাড়ায় না।ফুপি বিদায় নিয়েছে পরশু।এতদিন তাঁর জন্যই সিরাত সম্পর্কে কোনো কথা তুলেনি তাঁরা।এখন গেছে তাই শান্তিতে কথা বলছে।আবার আসবে বলে গেছে সে।তিথিও ওর কথাই বলছিলো সকলের কথার মাঝেই খাবার টেবিলে আবেশ উপস্থিত হলো।আবেশকে দেখে সবাই চুপসে গেলো।আবেশ ভ্রু কুঁচকে সকলের দিকে একবার তাকালো আবার খাওয়ায় মনযোগী হয়ে উঠলো।মিঃ খান বললেন,

-‘আবেশ তোমার মনে হয় না তুমি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছো’?বাবার কথায় আবেশ মুখ তুলে তাকালো।কোন দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলো আবেশ।চোখ ছোট ছোট করে বললো,

-‘কোন দায়িত্ব বাবা’?

-‘ছেলে ভাই হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারলেও একজন স্বামী হিসেবে ব্যর্থ তুমি।তোমার বউ এতদিন ধরে বাপের বাড়ি পরে আছে আর তুমি এখনও তাঁকে নিয়ে এলে না।ফোন করে ভালো মন্দ খবর পর্যন্ত নিলে না।তুমি তো এমন ইরেস্পপন্সিবল ছিলে না তাহলে শুধু সিরাতের বেলায় কেন’?

-‘বাবা বিয়েটা স্বাভাবিক কিছু তো ছিল না।তুমি তো সবটাই জানো তারপরও।আমি সিরাতকে নিজের মতো বাঁচতে দিচ্ছি প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে দিচ্ছি যাতে এটা মনে না হয় বিয়ে হতে না হতেই ওকে খাঁচায় বন্দি করে রাখছি।উড়তে চাইছে উড়তে দাও কতদিন উড়বে’।

-‘স্বাভাবিক ছিল না বলে সারাজীবন এই অস্বাভাবিক জীবন বয়ে বেড়াবে এটা তো হয় না।এবার নিজেদের সম্পর্ক ঠিক করার চেষ্টা করো।আর শোনো বিকালে ও বাড়ি যাচ্ছি আমরা সবাই আবেশ তুমিও তৈরী থেকো।তাছাড়া আমরা আগেই চেয়েছিলাম সিরাত এই বাড়ির ছোট বউ হোক শুধু সময়ের অপেক্ষা মাএ।কিন্তু মাঝপথে এমন হবে ভাবতে পারিনি’।আবেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো তার বাবার দিকে,

-‘বাবার কথায় চমকে উঠলো আবেশ।আগে থেকেই এই ইচ্ছে ছিলো।তা ও বাড়ি হঠাৎ কিসের জন্য বাবা’?

-‘আমার বৌমা আনতে’!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here