তুমি আমার -পর্ব ১৪

0
350

#তুমি_আমার
#পর্ব_১৪
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত

হসপিটালের বেডে অবচেতন অবস্থায় পরে আছে সিরাত।তাঁর সামনে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে আবেশ।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত সিরাতকে সে।চেহারাটায় আগের মত উজ্জ্বলতা নেই কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পরে গেছে।হয়তো এই ক’দিন ঘুমায়ও নি ঠিকমত।খাওয়া দাওয়া সবকিছুতে অনিয়ম।এই সব কিছুর জন্য দায়ী একমাএ সে নিজেই।নিজের কাছেই নিজে অপরাধী হয়ে গেলো।সেদিন যদি চারদিক দেখে শুনে ঘুমুতে যেত তাহলে এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে এতবড় কলঙ্ক মাথায় নিয়ে ঘুরতে হতো না।পুরো একটা ফ্যামিলিকে চুপ হয়ে যেতে দেখতে হতো না।এভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হতো না।মাথার সেলাই কাটতে হসপিটালে আসার পথে রাস্তায় লোকের ভিড় দেখে গাড়ি থামিয়ে কি হয়েছে দেখার জন্য গাড়ি থেকে নামে আবেশ কিন্তু সেখানে গিয়ে সিরাতকে দেখবে এটা কল্পনাও করে নি সে।তৎক্ষণাৎ ওকে পাজাঁকোল করে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে আসে।রাদিফ চেক আপ করে স্যালাইন দিচ্ছে।মাএাতিরিক্ত টেনশন আর খাওয়া দাওয়া না করায় শরীর দুর্বল তাই সেন্সলেস হয়ে গেছে।এই সবগুলোর কারণ আবেশ জানে তাই চুপচাপ বসে আছে।এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।এবার এর একটা হেস্ত নেস্ত করা প্রয়োজন। ওর জন্য মেয়েটা নিজেকে শেষ করে দিবে এটা মানবে না আবেশ।

🍁🍁🍁

একা একা হাঁটছে আরু।মাথায় তাঁর একটাই চিন্তা সিরাত।কাউকে কিছু না বলে মেয়েটা কোথায় গেলো।বাসায় গিয়েই ওর সাথে কথা বলতে হবে।মেয়েটার জীবনটা বোধহয় এলোমেলো হয়ে গেলো এবার।তাঁর জন্য সে নিজেকেই দায়ী ভাবে।সেদিন যদি ওকে ওদের বাসায় না নিয়ে যেতো তাহলে কিছুই হতো না।এখন ঠিক দুপুর।সূর্যি মামা মাথার উপর কিরণ দিচ্ছে।ঘেমে পুরো একাকার।হঠাৎ একটি কণ্ঠস্বর শুনে থমকে গেলো সে।এটা তাঁর মনের ভুল নাকি সত্যি।ঘুরে তাকানোর আগেই লোকটা সামনে চলে এলো তাঁর।তাহলে সত্যি লোকটা এখানে এসেছে কিন্তু কেন?এমনিতেই এড়িয়ে চলতে চায় সে কারণ ওকে দেখলে নিজের মধ্যে থাকে না।হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়।অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়।এই অনুভূতি যে ডেঞ্জারাস সেটা খুব ভালোভাবেই জানে সে।আজও ভয়ঙ্কর রকম সুন্দর লাগছে তাঁকে।আরু একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে।রাদিফ মৃদু হেসে বললো,

-‘আজ একা পুরো ঘ্যাং কোথায়?ওদের দেখছি না’?

-‘সবাই বাসায় চলে গেছে।আমি আর সিরাতের বাসা সবার পরে।কিন্তু আজকে সিরাত দুটো ক্লাস করে বেড়িয়ে গেছে।যাগগে আপনি এখানে’?আরুর কথা শোনে সিরাতের কথাটা বলবে বলবে বলেও বললো না সে।বললো হয়তো দেখা যাবে রাস্তার মধ্যেই কান্না জুড়ে দিয়েছে।

-‘একটু প্রয়োজন ছিলো তাই।আচ্ছা চলুন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেই’।আরুর উড়ো মন একবার ভাবলো যাবে আরেকবার ভাবলো এভাবে উনার সাথে টাইম স্পেন্ড করলে উনার প্রতি দুর্বলতা বাড়বে যদি প্রকাশ করে ফেলে তখন।তখন কি হবে।তাই বললো,

-‘না না ঠিক আছে।আপনি আসতে পারেন আমি চলে যেতে পারবো’।

-‘একমাএ বিয়াইন আপনাকেএভাবে ফেলে গেলে আমার ঘোর অন্যায় হবে।তাছাড়া তিথি যদি জানতে আমি তার ননদকে রাস্তায় পেয়েও লিফট দেতে কিপ্টামি করেছি তাহলে আমার কান মলে দেবে তাই প্লিজ চলুন’।আরু আর কথা বাড়ালো না চুপচাপ রাদিফের সাথে গাড়িতে উঠে বসলো।রাদিফ মৃদু হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

একটু আগে জ্ঞান ফিরেছে সিরাতের।আবেশ এখনও বসে আছে ওর সামনে।আস্তে আস্তে চোখ খুলে নিজেকে হসপিটালের বেডে দেখে অবাক হলো সিরাত।মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে ক্লান্ত শরীরে বসে আছে আবেশ।ফোনে কিছু একটা দেখছে সে।সিরাত ওর দেখে এক মনে তাকিয়ে রইলো।এই ছেলেটাকে খুব খুব ভালবাসে সে।খুব করে চাইতো লোকটা তার হোক,পুরোপুরি হোক।হলোও কিন্তু সময়টা ভিন্ন।আজকে মানুষটাকে নিজের করে পেয়ে কোনো সুখ আনন্দ উচ্ছ্বাস নেই তাঁর মাঝে।বরং রাগ লাগছে কোথায়ও শান্তি নেই এতটুকু শান্তি নেই জীবনে।নড়েচড়ে উঠে বসতেই আবেশ ভ্রু কুঁচকে ব্যস্ত হয়ে বললো,

-‘কি করছো স্যালাইন এখনও শেষ হয়নি।আরেকটু শুয়ে থাকো’।

-‘আমি শুয়ে থাকবো না।আমি এক্ষুণি বাসায় যাবো’।

-‘জেদ করো না।যেটা বলছি সেটা করো।এতে নিজেরই লাভ হবে’।তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে দাঁত কটমট করে বললো,

-‘লাভ ক্ষতি আমি বুঝি না।আমি যাবো মানে যাবোই’।

-‘প্লিজ সিরাত আমার কথাটা একটিবার শোনো।এভাবে নিজের ক্ষতি করো না।নিজের কি হাল করেছো দেখেছো।প্লিজ নিজের খেয়াল রাখো।একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে সিরাত।শুধু ক’টা দিন অপেক্ষা করো তারপর আমি সব ঠিক করে দেবো।তুমি তোমার সেই আগের মত বাঁচতে পারবে।জোর করে কোনো বন্ধনে তোমাকে জড়িয়ে রাখবো না’।

শেষের কথাটা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো লাগলো সিরাতের।কি ছেড়ে দেবে ওকে।কি পেয়েছে কি এই লোকটা।রাগে রিরি করে উঠলো সারা শরীর।হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে হাতেট সালাইন একটানে খুলে ফেললে।হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে এখন।সিরাতের পাগলামি দেখে হতভম্ব আবেশ।এবার রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না সে।থাপ্পড় মারার জন্য হাত উঠিয়েও কি ভেবে যেন নামিয়ে নিলো।হাত দিয়ে দেয়ালে ঘুষি মেরে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে নিজেকে রক্তাক্ত করলো।আবেশের হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে দেখে ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো সিরাতের।কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

-‘ররক্ত! আপনার হাত থেকে রক্ত ঝরছে’।মৃদু হাসলো আবেশ হেসে বললো,

-‘ঝরতে দাও।আমার মতো লোকের রক্ত ঝরলে বা মরে গেলেও কিচ্ছু হবে না।আমাকে কারোর প্রয়োজন নেই কিন্তু তোমাকে সবার খুব প্রয়োজন’।একজন সিস্টার কে ডেকে এনে সিরাতের হাত ব্যান্ডেজ করিয়ে দিলো আবেশ।কিন্তু নিজের হাত থেকে এখনও রক্তক্ষরণ হচ্ছে।সিরাতের এখন কান্না পাচ্ছে।মরে যাবে কথাটা শুনে ধক করে উঠলো।লোকএা মরে গেলে তাঁর কি হবে।কীভাবে বাঁচবে সে।এভাবে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে আছে।।সিরাত উঠে দাঁড়ালো এবার যেতে হবে তাঁদের।আবেশ তাগদা দিচ্ছে। ফোনে সিয়ামকে সবটা জানিয়েছে।এখন ওকে নেওয়ার জন্য সিয়াম আসছে ততক্ষণ সিরাতের সাথে আবেশ থাকবে কারণ বলা তো যায় না কখন আবার কি ঘটিয়ে ফেলে।সিরাত একদম আবেশের মুখোমুখি দাঁড়ালো।কাঁপা হাতে আবেশের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।আবেশ তাকিয়ে হাত সরিয়ে নেওয়ার জন্য টান দিলো কিন্তু সিরাত ছাড়লো না।বিরক্তি নিয়ে আবেশ বললো,

-‘ছাড়ো হাতে কিচ্ছু হয়নি।ওটা এমনি সেরে যাবে’।কোনোকথা বললো না সিরাত।চোখের পানিটুকু মুছে ওর হাতে মেডিসিন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।আবেশ অবাক দৃষ্টিতে সবটা দেখে গেলো শুধু। মেয়েটাকে একটুও বুঝতে পারে না সে।কখন কি করে হয়তো নিজেই জানে না সে।এতক্ষণ কি কান্ডটাই না ঘটালো আর এখন পুরো নীরব মুখে কোনোকথা নেই চুপচাপ।

🍁🍁🍁

রিয়ার বাসায় গেছে মিনার।কয়েকটি নোটস আনতে হবে তাঁকে।টেস্ট পরীক্ষার আর বেশিদিন বাকী নেই।পড়াশোনা লাটে উঠেছে।রীতিমত ক্লাসে মন বসে না আজকাল।কোনোকিছুতেই ফোকাস করতে পারছে না।এই কদিন কলেজ খামাই হয়েছে বেশ।সেগুলোর নোটস কালেক্ট করার জন্য সোজা বাসায় গেছে সে।সোফায় বসে রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে তখনই একটি পিচ্চি টাইপ মেয়ে কানে ইয়ারফোন গুজে হেলেদুলে সোফায় এসে বসলো।দৃষ্টি তার ফোনেই নিবদ্ধ।সেখান থেকে চোখ সরছেই না সামনে যে একটি লোক চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তাঁকে সেদিকে কোনো নজরই নেই তাঁর।রিয়া এসে রাম ধমক দেওয়ায় হুশ ফিরলো তাঁর।সামনে বসে থাকা লোকটির দিকে তাকিয়ে দৌড়ে জায়গা ত্যাগ করলো।তিহানা সম্পর্কে সকল ডিটেলস নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরলো মিনার।কারণ তার ভালোবাসার সেই কাঙ্গিত মেয়েটিকে খুঁজে পেয়েছে সে আর কোথাও হারাতে দেবে না তাঁকে।

কেটে গেছে পনেরো দিন।এখন সিরাত অনেকটাই স্বাভাবিক।বন্ধমহলের সবাই জানে আবেশকে ভালোবাসে সিরাত।সেটা তাঁর ডায়েরি পরে আরু জেনেছিল তারপর পুরো টিম।এখন ওদের এক করার জন্য পুরো টিম উঠে পরে লেগেছে।সেদিনের ঘটনার পেছনে কার হাত আছে সব খুঁজে বার করবে।তবে এখনও আবেশের বাসায় যায় নি সিরাত।আবেশও ছাড় দিচ্ছে।কোনো জোরাজুরি নেই।ক্লাসে এসে ক্লাস নেয় সিরাতের সাথে কোনোকথা হয় না।জীবনের নিয়মে জীবন চলে যাচ্ছে।কিন্তু সিরাত আবেশের এই ইগনোর যেন সহ্য করতে পারছে না।শত হোক বিয়ে যখন মানেন তখন সে অনুযায়ী তার ওয়াইফ সে।আর ওয়াইফের প্রতি এমন উদাসীনতা কিছুতেই মানতে পারছে না।বক্ষস্থলে ব্যাথা করে।তাছাড়া কলেজে নতুন একজন ম্যাম এসেছেন কাঁজল নাম তার সাথেই সারাক্ষণ দেখা যায় আবেশকে।হেসে হেসে কথা বলে একসাথে খাবার খায়।এগুলো তাঁদের ডেইলি রুটিন।যার কারণে আরো বেশি মন খারাপ হয় সিরাতের।যদি মেয়েটা তার কাছ থেকে কেড়ে নেয় আবেশকে তখন কি করবে সে।

হোটেলে বসে আছে বন্ধু বান্ধব সবাই।আজকে দুপুরে লাঞ্চ করবে এখানে তাঁরা।আর ট্রিট দিচ্ছে মিনার।কারণ তিহানাকে মনের কথা বলে দিয়েছে সে।তিহানা তাঁকে একসেপ্টও করে নিয়েছে এই পুরো ব্যাপারটায় রিয়া তাঁকে হেল্প করেছে।আজকে ওদের সাথে তিহানাও আছে।মেয়েটা লজ্জায় মাথানিচু করে বসে আছে।সিরাত নিজের ভাবনায় মগ্ন।আজও দুজনকে একসাথে দেখে এসেছে।মেয়েটা মারাত্মক সুন্দরী সিরাতের সাথে কোনো রকমের তুলনা হয় না।সেটা তাঁর নিজেরই দাবী।রুপে গুণে অন্যন্যা।তবে কি এভাবেই চোখের সামনে ওর থেকে পর হয়ে যাবে আবেশ।ওর ভাবনার মাঝেই আয়ান বললো,

-‘সিরাত দোস্ত তুই এই সন্ন্যাসী বেশভূষা নিয়ে থাক আর ওদিকে কাঁজল ম্যাম তোর বরকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে নিল।এরপর তুই কি সতীন নিয়ে সংসার করতে চাস’?

আয়ানের কথায় উপস্থিত সকলে হতভম্ব।আয়ানের কথার মানে কারেরই বোধগম্য নয়।আরু বললো,

-‘কি বলতে চাইছিস ক্লিয়ার করে বল’!

-‘সামনে তাকিয়ে দেখ’।সামনে তাকিয়ে সকলে হতবাক।কাঁজল শাড়ি চুড়ি পরে সেজেগুজে বসে আছে তাঁদের দু টেবিল পরে।কালো জর্জেট শাড়ি ফর্সা শাড়িতে দারুন মানিয়েছে।মুখে হাসি যেন সরছেই না।বার বার হাত ঘড়িতে টাইম দেখতে ব্যস্ত সে।বুঝাই যাচ্ছে কারোর অপেক্ষায় আছে।আয়ান বললো,

-‘কি হট লাগছে আজকে যদি ম্যাম না হত তাহলে আমিই প্রপোজ করতাম সেখানে আবেশ স্যার তো….বলেই সিরাতের দিকে তাকালো।সিরাত একটা ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলো তাঁকে।মিনার বললো,

-‘যা বলেছিস।আচ্ছা কার জন্য অপেক্ষা করছে বল তো নিশ্চয় আবেশ স্যার’।পাশ থেকে তিহানা চোখ গরম করে তাকাতেই বললো,’না মানে মজা করছিলাম’।সিরাত বললো,

-‘এমনি হয়তো বয়ফ্রেন্ডের হবে।আবেশ স্যার এখানে এখন আসবেন না’।

-‘যদি আসেন’?

-‘আসবেন না’।আয়েশা বললো,’তুই সিওর’।সিরাত বললো, ‘হুমম’।পাশ থেকে আরু বললো, ‘আজ যদি ভাইয়া এখানে আসে তাহলে তুই কথা দে আমরা যা বলবো তুই তাই করবি।ভাইয়ার লাইফে এন্ট্রি নিবি।এভাবে সম্পর্কটাকে ফেলে না রেখে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবি।আর যদি না আসে তাহলে তোর ইচ্ছে’।সিরাতের মনে অগাধ বিশ্বাস আবেশ আসবে না।কিছুতেই আসবে না।তাই সকলের কথায় রাজি হয়ে যায় সে।কিন্তু নিজের বিশ্বাস এভাবে কাঁচের মতো ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাবে ভাবে নি সে।আবেশ কাঁজলের শাড়ির সাথে ম্যাচ করে কালো শার্ট আর প্যান্ট পরে এসেছে।দেখতে অসাধারণ লাগছে তাঁকে।সেও হেসে হেসে ফুল হাতে নিয়ে কাঁজলের কাছে যাচ্ছে।আবেশের হাতে ফুল দেখে সিরাত রীতিমত কাঁপছে তাহলে কি সত্যি সব শেষ হয়ে গেলো।শেষ পর্যন্ত মেয়েটা কেড়ে নিলো তার কাছ থেকে তার আবেশ কে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here