তুমি বললে আজ – পর্ব ২৩

0
636

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ২৩

.
‘প্রিয়জনের হাত ধরে সারাজীবন চলতে পারার মানুষের সংখ্যা অনেক কম। সবাই প্রিয় মানুষের দেখা পায় না, কেউ পেয়েও আগলে রাখতে পারে না, আবার কেউ আগলে রাখার চেষ্টা করলেও বাঁধা দূরত্বের জন্য চাইলেও পারে না।
এই পিচ্চি মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে একসময় পাগল প্রায় হয়ে গেলাম কিছুটা। পড়াশোনায় মন টিকে রাখতে পারছি না, বারবার দাদুর কথাগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে আর চোখের সামনে ভেসে উঠেছে সেই নিষ্পাপ পিচ্চি পিচ্চি মুখটা। বাড়ন্ত বয়সের আবেগ ভেবে ছুটতে লাগলাম এলোমেলো পায়ে, আবেগটাকে ঝেড়ে ফেলার আশায়।
উদ্দেশ্যহীন নাম না জানা গন্তব্যের দেখা পেয়ে আপনা-আপনি থেমে গেল চলন্ত পা দু’টো। হঠাৎ ভালোলাগায় ছেয়ে গেল পাগলামি করা মনটা। শীতল হতে শুরু করলো হৃদয়ের দহনগুলো, অনুভব করতে পারলাম আরও গাড়ো অনুভূতি গুলো। বসে পড়লাম একটা গাছের গোঁড়ায়, চোখ দুটো বন্ধ করে সময় কাটালাম। হঠাৎ মনে দলা পাকিয়ে প্রশ্ন জাগলো, মাসের পর মাস তো আবেগ ধরে রাখতে পারে না। তাহলে কি ভালোবাসা? এত এত মাইল দূরে থেকেও কি ভালোবাসা যায়? ঠিক তখনই প্রকৃতি থেকে আওয়াজ এলো কাউকে দূর থেকেও অনুভব করা যায় তাকে, ভালোবাসা যায় গভীরভাবে। ভালোবেসে ফেলেছি, ডুবে গিয়েছি সেই পিচ্চি মেয়েটার ভালোবাসার মাঝে। ভালোবাসার মানে না বোঝা সেই মেয়েটা-কেই ভালোবেসে ফেলেছি আমি।

রূপা, পিচ্চি একটা মেয়ে। গুটিগুটি পায়ে আমার কাছে এসে চকলেট চাইতো, কোন বারণ ছাড়াই দিয়ে দিতাম। গুলুমুলু গাল দুটো সারাক্ষণ টিপে দিতাম। সবসময় কাঁদাতাম, আবার আমিই হাসাতাম, তারই প্রেমে কি না আমি পড়লাম?
পিচ্চিটার প্রতি নিজের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ না হয়ে যায়, সেজন্য ধমকের উপর রাখতে শুরু করলাম। ভয় দেখাতে শুরু করলাম আমার রুপকন্যাকে। এমনটা না করলে খুব বড় ভুল কিছু হয়ে যাবে আমার দ্বারা। ওকে দেখলেই যে অনুভূতি গুলো নাড়া দিয়ে উঠে আমায়। ভুল কিছু করার উদ্দেশ্য জাগ্রত হয় মনে।

আকাশের এই বিশাল সৌন্দর্যয় ঘেরা চাঁদটাকে যেমন ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ছোঁয়া যায় না ঠিক তেমনি তোমাকেও আমার ছোঁয়ার কোন সাধ্য নেই। সাধ্য নেই তোমাকে আমার অনুভূতি গুলো দেখানোর। কারণ আমার রুপকন্যা-টা যে বড্ড ছোট। আমার অনুভূতির ধরা-ছোয়ার বাইরে সে। বিষন্ন মনে তোমাকে ভেবেই সময় কাটাতে হচ্ছে, দিনগুলো তোমাকে অনুভব করেই পারি দিতে হচ্ছে। কবে শেষ হবে এর অবসান? কবে জড়িয়ে দিতে পারবো তোমাকে আমার ভালোবাসায়।
তোমায় ভালোবেসে আমার বুকে সহস্র শুন্যতার ঢেউ খেলা করে, আমি অনুভব করতে পারি। খুব গভীর ভাবেই অনুভব করতে পারি আমার অবুঝ বুকের হাহাকার। তোমাকে দেখতে চাওয়া তৃষ্ণাত্ব কাকের ন্যায় ছটফট করা। সময়ের সাথে অধিকতরে বেড়ে চলছে তোমাকে ভালোবাসার মাত্রা। ভালোবাসার জন্য তোমাকে যে কাছে পেতে হবে এমনটা তো নয়, দূর থেকেও ভালোবাসা যায়। প্রিয় জিনিসগুলো তো মাঝে মাঝে আগলেও রাখতে হয়। ঠিক তেমনি তোমাকেও না হয় দূর থেকেই আগলে রাখলাম। গোলাপ গাছের মতো অজস্র কাঁটা বিছিয়ে দিলাম তোমার আশে-পাশে। ভালোবাসার তো কোন সীমা থাকে না, সবকিছু শুধু একজনেই আঁটকে যায়। আমার গন্তব্য-টা শুধু তোমাতেই আঁটকে গেছে, তুমি বললে তোমাকেও আঁটকে ফেলতে চাই আমার গন্তব্যের সীমানায়।

তুমি যদি বলো কতটা ভালোবাসি তোমায়? তাহলে বলতে পারবো না আমি, কারণ জানা নেই এর উত্তর আমার। শুধু জানি তোমায় ওই এক আকাশ সমান ভালোবাসি। আকাশের যেমন কোন সীমানা হয় না, ঠিক তেমনি আমার ভালোবাসারও কোন সীমানা নেই। ওই এক আকাশ সমান সীমাহীন ভালোবাসি আমার রুপকন্যাকে।

সময় চলছে তার নিজস্ব গতিতে, আমার রুপুও বেড়ে উঠছে ওর সীমাবদ্ধতায় আর প্রেমের দহনে প্রতিনিয়ত জ্বলে যাচ্ছি আমি। কিন্তু কাছে পাবার নামই তো ভালোবাসা নয়, নিজের বাসনাগুলো বিসর্জন দিয়ে তোমার মুখে হাসি ফুটিয়েও তো ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়। একান্ত অপ্রকাশিত ভাবেই না হয়, ভালোবেসে যাই তোমাকে। অপেক্ষায় থাকি তোমার ভালোবাসা পাবার কাঙ্গাল হয়ে।

আমি অপেক্ষায় রইলাম তোমার হাতটি ধরব বলে।
তোমার হাত ধরে আমি হেঁটে যেতে চাই বহুদূর অজানা গন্তব্যহীন ভালোবাসার শহরে। আমি অপেক্ষায় আছি, তোমার চোখে চোখ রাখে তোমার ভালোবাসায় ডুবে যাবো বলে। তোমার চোখে চোখ রেখে আমি হারিয়ে যেতে চাই অজানাতে। আমি জানি না, আমার সেই অপেক্ষা আদোও কখনও শেষ হবে কি না? আমার ইচ্ছা গুলোও কখনও সত্যি হবে কি না? তবুও অপেক্ষায় রইলাম তোমার চোখে আমার জন্য একবিন্দু অনুভূতির আসায়।

মন বড্ড বিচিত্র জিনিস। কখন, কিভাবে, কার প্রতি ধেয়ে যায় কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। নিজস্ব আওতায় বেডিয়ে আসে নিজের থেকে। মনটা স্থায়িত্ব বজায় রাখে প্রেয়সীর হৃদয়ে। আমার মনেও অজান্তেই ভাগ বসিয়েছে আমার রুপকন্যা। আস্তে আস্তে পুরোটা দখলে নিয়েছে নিজের করে।

একটা সময়ে মন খারাপ হলেই পাতার পর পাতা ভরিয়ে দিয়েছি, ব্যাকুল হৃদয়ে তোমার শুন্যতা অনুভব করে ভরিয়ে দিয়েছি ডায়েরির পাতা কলমের কালো রঙে। কিন্তু এখন? এখন তো আমি তোমায় পেয়ে গেছি নিজের করে। একান্ত ব্যাক্তিগত আমার নিজস্ব সম্পত্তি করে পেয়ে গেছি তোমায়। জুড়ে নিয়েছি বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের বাঁধনে। কিন্তু? কিন্তু এভাবে তো আমি চাই নি তোমায়, চাই নি আমার পবিত্র ভালোবাসায় কোন দাগ লাগাতে। তাহলে এমনটা কেন হলো? কেন আমার ভালোবাসাকে অপমানিত হতে হলো সবার সামনে? আমি পারলাম না তোমাকে প্রটেক্ট করতে। হ্যাঁ, আমার জন্যই তো আমার রুপুকে এতটা অপমানিত হতে হলো, শুনতে হলো ভিত্তিহীন কিছু কথা।
প্রেয়সীকে এক নজর দেখার অদম্য ইচ্ছে কিছুতেই ধামাচাপা দিতে পারছিলাম না। মনের বিরুদ্ধে যখন পেরে উঠলাম না তখন ছুটে গেলাম তোমার কাছে। একান্তই তোমার সাথে কিছু সময় কাটাতে চলে যেতে বললাম রিফাকে। কোন বাঁধা দিলো না সে, কারণ তোমার প্রতি আমার পাগলামো গুলো তুমি ছাড়া বাড়ির সবাই দেখেছে। সবাই আরও গভীর ভাবে আমার মনে তোমার জন্য প্রেমের বীজ গেঁথে দিয়েছে।
কিন্তু তোমাকে এক নজর দেখতে যাওয়াটাই ছিলো আমার ভুল। তাদের ষড়যন্ত্রে অজান্তেই ফেঁসে গেছিলাম দুজনে। সুযোগ পেয়ে দরজা আঁটকে দিয়ে আমার পবিত্র ভালোবাসাকে নষ্টামিতে রুপ দিয়েছিলো, জুড়ো দিতে চেয়েছিলো অন্য কারোর সাথে। আমি তো জানি, ভালোবাসাকে আগলে রাখতে হয়, বেঁধে নিতে হয় নিজের সাথে। কিন্তু এভাবে তোমার আপন করে নিতে হবে সেটা কখনোই ভাবতে পারি নি। জানি এভাবে হয়তো কখনোই আমাকে মানতে পারবে না, আমার প্রতি জাগ্রত হবে না তোমার অনুভূতি গুলো। কিন্তু বেঁধে নিবো আমার ভালোবাসায় তোমাকে, তোমার অনুভূতিতে স্থান করে নিবো নিজের। তুমি বললে আজ থেকেই ভালোবাসার অন্তত মায়ায় পারি জমাবো তোমায় নিয়ে।’

‘ভালোবাসা শেষ হয়ে যায় এমনটা কোন কথা নেই।
সমস্যাগুলো জমা হয়ে পাহাড় আকৃতির ধারণ করেছে এমনও নয়।
তবুও যেন রাগ নয়, অভিমান গুলো মনের কোণে ভীর জমায়।
তুমি জানো? আমার চোখে চোখ রাখলে
তুমি ভীষণ লজ্জা পেয়ে যাও?
আমি জানি, তোমার চোখে চোখ রাখলে আমার রাগ গুলো শান্ত হয়ে যায়।
হাড়িয়ে যাই অন্য একটা পৃথিবীতে তোমায় ঘিড়ে।
তোমার চোখে তাকিয়ে, তোমার প্রতি
আমার সকল অভিযোগ গুলো ঝড়ে পড়ে!
সব ভুলে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে,
ভালো থাকতে ইচ্ছে করে শুধু তোমায় ঘিরে।’

.
ডায়েরিটা পড়ার পর বিস্ময় নিয়ে আধা ঘন্টা থম মেরে বসে ছিলাম আমি। মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলো চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলো আমার। নিজের স্তম্ভিত যখন ফিরে পেলাম তখন এক ছুটে বাথরুমে গিয়ে মুখে পানির ঝাঁপটা দিতে শুরু করলাম। প্রায় অর্ধ গোছল সেরে ফেলেছিলাম সেই খেয়ালটাও ছিলো না আমার। শুধু অনুভূতিরা তাদের ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে লাগলো আমার মনে, জোরে জোরে শ্বাস নিতে হলো আমাকে। নিজেকে স্বাভাবিক করে দুরুদুরু বুক নিয়ে ফোন দিলাম ওনাকে। মনে মনে ভাবতে লাগলাম হয়তো ফোন রিসিভ করবেন না, খুব করে চাইলামও যেন কলটা না ধরেন উনি। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সাথে সাথেই রিসিভ করে ফেললেন। অপর পাশ থেকে ‘হ্যালো’ বলতেই কেঁপে উঠলাম আমি। ছিটকে বিছানার উপর পড়ে গেল আমার হাতের মোবাইল। তাসফি ভাইয়ার কণ্ঠ লাগাতার ভেসে আসলেও আমার গলা দিয়ে কোন কথা বেরুলো না।
একটু পর উনি কলটা কেটে দিয়ে ব্যাক দিলেন। কেন জানি কলটা রিসিভ করার সাহস হলো না আমার। ততক্ষণে কল কেটে গিয়ে তৃতীয়বার বেজে উঠলো ফোনের রিংটোন। এবার সকল দ্বিধা ফেলে রিসিভ করে কানে ধরে কাঁপা গলায় হ্যালো বলতেই ভেসে আসলো ওনার গলা।

“রুপা কি হয়েছে তোর? ঠিক আছিস তো? কথা বলছিলি না কেন?”

ওনার উত্তেজিত কণ্ঠ শুনে আস্তে করে বললাম,

“হুম ঠিক আছি।”

“বেয়াদব মেয়ে, কল দিয়ে কথা বলছিলি না কেন তাহলে? আবার আমার ফোন রিসিভ করছিলি না? আমায় টেনশনে ফেলতে খুব ভালো লাগে তোর, তাই না?”

আমি কিছু বললাম না ওনাকে, শুধু ওনার ভালোবাসার পরিমাণ অনুভব করতে লাগলাম। ওনার ধমকের মাঝে খুঁজে পেলাম সীমাহীন ভালোবাসার মাত্রা। ভালোবাসেন উনি আমায়, তাসফি নামক মানুষটা শুধুই আমায় ভালোবাসে। কথাটা ভাবতেই আনন্দে নেচে উঠেছে আমার মন।
ফোনের অপর পাশের মানুষ টাকে আমার এই মুহুর্তে অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্য! কোন কথায় যেন আমার গলা দিয়ে নামছে না, শুধু শুনে চলেছি তার কথাগুলো। এক পর্যায়ে কথা শেষ করে ফোন কাটতে চাইলেন, কিন্তু আমার অবাধ্য মন আকুল আবেদন জানালো মানুষটার আরও কিছু কথা শোনার জন্য। তবে মুখ ফুটে বলতে পারলাম না তাকে, শুধু আমার নীরবতায় বোঝাতে চাইলাম। হয়তো বুঝতেও পারলেন উনি। ধীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

“ঢাকার কাছাকাছি চলে আসছি, দেড় ঘন্টার মাঝেই বাসায় আসবো। এতটুকু সময় একটু কষ্ট করে কাটিয়ে দাও, বাসে তো আমি একা নই।”

কোন মতো ছোট করে ‘হুম’ বলেই কেটে দিলাম ফোনটা। হাজারো অনুভূতিরা আঁকড়ে ধরলো আমার। অবাক্ত্য ইচ্ছে গুলো উকি দিতে লাগলো মনের মাঝে।

.
দেড় ঘন্টার জায়গায় আড়াই ঘন্টা পেরিয়ে গেল তবুও দেখা পেলাম না কাঙ্ক্ষিত সেই মানুষটার। সময়টা যতদূর পেরুতে লাগলো, আমার ভিতরের ছটফটানি গাড়ো হতে শুরু করলো। অনুভূতি গুলো শুন্য আকারে দলা পাকাতে শুরু করলো মনে। আস্তে আস্তে অভিমানের পাল্লাও যেন ভারী হতে লাগলো সাথে। বিক্ষিপ্ত মনে কোন কিছুতেই সায় দিতে পারলাম না, শুধু বিষন্ন নয়নো রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলাম বারান্দায় বসে।
হঠাৎ কর্কশ শব্দে মোবাইল বেজে উঠলো। আননোন নাম্বর দেখে রিসিভ করলাম না। কলটা কেটে গিয়ে আবারও একই ভাবে বেজে উঠলো। এবার আর উপেক্ষা করতে পারলাম না। পরিচিত কারোর ফোন ভেবে কল রিসিভ করে কানে দিলাম। অপর পাশ থেকে ভেসে আসলো অপরিচিত কারোর গলা। লোকটি কিছু একটা বলতেই আমার হাত থেকে পড়ে গেল মোবাইল ফোনটা।

.
.
(চলবে….)

আজকের পর্বে তাসফির অনুভূতি গুলো লেখায় কতটা পেরায় পরতে হয়েছে তা বলে বোঝাতে পারবে না। এ-সব রোমান্টিক অনুভূতি প্রকাশ করা আমার দ্বারা সম্ভব না😑 আজ মনে হচ্ছে কেন যে একটা প্রেম করলাম না জীবনে, তবুও একটা ছেলের অনুভূতি সম্পর্কে ধারণা পেতাম।🥲 যাই হোক, আজকের পর্বটা হয়তো অনেক বাজে হয়েছে একটু কষ্ট করে পড়ে নিবেন সবাই। রি-চেক করা হয় নি, ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন এবং ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here