তুমি বললে আজ – পর্ব ২৯

0
569

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ২৯

.
বিরক্তি জিনিসটা যে কখন কিভাবে এসে যায় সেটা অনুমান করা যায় না। প্রতিনিয়ত একঘেয়ে কোন কাজে নিজের প্রিয় জিনিসটার প্রতিও বিরক্তি এসে যায় কোন এক সময়। আমার অবস্থাটাও ঠিক এমনি। শুয়ে বসে মোবাইল টিপে অলস সময় কাটানো ভালো লাগলেও এই সময় অনেক বিরক্তিতে পরিণত হয়েছে আমার জন্য। সকাল থেকে এক প্রকার ঘুমিয়ে, শুয়ে-বসে মোবাইল টিপেই কাটিয়ে দিয়েছি। বিকেলের শেষ ভাগে এসে এই এক ঘুয়ে কাজগুলো কিছুতেই করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তাসফি নামক এই মানবটা ভার্সিটিতে যেতে দেয় নি, এমন কি রুম ছেড়ে নিচেও নামতে দেয় নি আমাকে। সকালে রুমে নিয়ে আসার পর থেকে এভাবেই আমাকে নজর বন্দী করে রেখেছেন।

সকালে বমি করার পর শরীরটা ভেঙে পরেছিলোম কিছুটা। স্যালাইনের পানি খাবার পর একটু ভালো লাগলে, উনি আবারও খাবার খাইয়ে দিয়েছিলেন কিছুটা। সেই সাথে কয়েকটা ওষুধ খাইয়ে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেন। কিছু সময় পর একটু ভালো লাগলে ভার্সিটির কথা মুখে আনতেই ধমকে উঠেন। ওনার আজকে যাবার কথা থাকলেও ভার্সিটিতে ফোন করে জানিয়ে দেন যেতে পারবেন না আজকে।
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বিছানা ছেড়ে নামতে গেলেই তাসফি টেবিলে বসেই ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

“যাচ্ছিস কোথায় এই অসুস্থ শরীর নিয়ে? চুপচাপ শুয়ে থাক।”

“উফ্ অসহ্য! বললামই তো একটুও ব্যাথা নেই। এখন একদম ঠিক আছি আমি। ভালো লাগছে না আমার এভাবে সারাদিন ঘরে বসে থাকতে।”

“ওও আচ্ছা… তো কি করলে ভালো লাগবে?”

এবার যেন একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম আমি। এই অফারে বাইরে ঘুরে আসলে মন্দ হয় না। কথাটা মাথায় আসতেই বিছানা ছেড়ে উঠে ওনার সামনে গিয়ে টেবিলের কাছে দাঁড়ালাম। আস্তে করে বলে উঠলাম,
“চলেন না বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”

আমার কথা শুনে উনি কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকলেন। বললেন,
“আজকে নয়, আরও একটু সুস্থ হয়ে নে, কালকে নিয়ে যাবো ঘুরতে।”

নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেল আমার। এই বজ্জাত লোকটাকে কি বললে বিশ্বাস করবে আমি ঠিক আছি এখন। রাগে ফুঁসে আর কিছু না বলে গটাগট পায়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। দরকার নেই কোথাও যাবার, যেতেও চাইবো আর। হু!

এর মাঝেই তাসফি এসে বলে উঠলো ‘কি হলো?’ জবাব দিলাম না আমি। উনি আবারও বললেও আমি সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছু না বলে। এবার উনিও চুপ হয়ে গেলেন। একদম আমার পিঠ ঘেঁষে দাঁড়ালেন, তবুও কিছু বললাম না। হঠাৎ চুলে টান লাগতেই আহ্ করে উঠলাম। চুলে টান লাগায় পিছন ঘুরে তাকাতে নিতেই আগের চেয়েও জোরে টান লাগলো। এবারও আহ্ শব্দ করে বলে উঠলাম,

“লাগছে তো, ছাড়েন… ছাড়েন আমার চুলটা।”

“উহুম! ভালোলাগা, ভালোবাসার জিনিসগুলো কখনো ছাড়তে নেই।”

বলেই ঘাড়ের কাছে পড়ে থাকা চুলের মাঝে মুখ ডুবিয়ে দিলেন। শিউরে উঠলাম আমি, কেঁপে উঠলাম কিছুটা। দাঁড়িয়ে রইলাম শক্ত হয়ে। উনি একটু একটু করে চুলগুলো হাতে পেচিয়ে নিতেই আমি বললাম,

“ক্..কি করছেন? লাগছে তো।”

“বোঝার চেষ্টা করছি, নিজে না খাইয়ে চুল গুলোকে ঠিক কত কি খাইয়ে বড় করেছিস।”

হা হয়ে গেলাম আমি ওনার কথায়। এটা আবার কেমন কথা? একটু যত্ন করলেই তো চুল লম্বা হয়, এর সাথে খাওয়ার কি সম্পর্ক? আমি অবাক হয়ে ‘মানে?’ বললেই উনি বললেন,

“মানে, তোর চেয়ে তোর চুলের স্বাস্থ্য বেশি। বেশি বেশি খেয়ে যদি একটু স্বাস্থ্যবান হতি, তাহলে কাল রাতের জন্য তোর এমন অবস্থা হতে না।”

“অসভ্য, অশ্লীল, অভদ্র একটা ছেলে। ছাড়েন… ছাড়েন আমায়।”

“অভদ্র.. হয়েছি আমি তোমারি প্রেমে… তাই কাছে আসো না, আরো কাছে আসো না….”

“ছি… এগুলো কি ধরনের গান? ছাড়েন, ছাড়েন আমায় বলছি।”

প্রচন্ড রাগের স্বরে বলে উঠলাম। নিজেকে ছাড়তে নিতেই উনি আরও জড়িয়ে ধরলেন। হাতের পেঁচানো চুলগুলো টান দিতেই আমার রাগটা এবার আরও কিছুটা বেড়ে গেল। বললাম,

“আহ্… লাগছে তো। চুল ধরে টানাটানি করছেন কেন? একদম আমার চুল ধরে টানাটানি করবেন না বলে দিচ্ছি। তাইলে ভালো হবে না কিন্তু, আমার চুল আমার ভালোবাসা। ছাড়েন, ছাড়েন বলছি।”

“আর আমি? আমি বুঝি তোমার ভালোবাসা নয়?”

ওনার আস্তে করে বলা কথায় হঠাৎ স্থির হয়ে গেলাম আমি। ছটফটানি থামিয়ে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে মনে আওরাতে লাগলাম, ‘ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি। অনেক বেশিই ভালোবাসি আপনাকে।’ কিন্তু মুখে বলার সাহস টুকুও করতে পারলাম না। আমার উত্তর না পেয়ে তাসফিও কিছু বললেন না আমায়। কিন্তু একটু মাথাটা নিচু করে সেভাবেই পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়ে ঘাড়ে গলায় ও গালে সমানে চুমু দিতে লাগলেন। বাঁধা দিতে চাইলেও পারলাম না কিছুতেই, আমিও যেন কাল রাতের মতো হারিয়ে যেতে শুরু করলাম ওনার মাঝে।
কিছু সময় অতিক্রম হবার পর আস্তে করে বললাম,

“এখন তো ছাড়েন, কেউ দেখে ফেলবে তো।”

“উহুম!”

“বারান্দায় দাঁড়িয়ে এমন করছেন কেন? এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এবার কিন্তু সত্যিই আমার মাথা ঘুরছে।”

“আচ্ছা, এক রাতের মাঝেই তোর এমন মাথা ঘুরছে, বমি হচ্ছে, ব্যাপারটা কি? বল তো। ঢাকা আসার পর এই তিন মাসেও তো আমি তোকে কিছু করি নি, তাহলে কি তুই আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে কিছু করেছিস নাকি? যার ফলে এখানে কেউ চলে এসেছে?”

শেষ কথাটা আমার পেটে হাত দিয়ে বললেন। তাসফির কথাটা বুঝে উঠতেই হা হয়ে গেলাম আমি। চোখ দুটো অনায়সেই বড়বড় হয়ে গেল। কোন কথায় কি মানে বের করলেন উনি? সিরিয়াস কিছুতে উল্টা পাল্টা কথা কিভাবে বলা যায় সেটা যেন এই বজ্জাত লোকটার হাড়ে হাড়ে জুড়ে আছে।
ছিটকে সরে আসলাম আমি ওনার থেকে। অনেকটা জোরে ‘অসভ্য অভদ্র অশ্লীল ছেলে’ বলেই দূত বারান্দা ছেড়ে রুমে চলে আসলাম।

.
দিনের পর দিন যেতে যেতে সপ্তাহ আসলো। সপ্তাহ চলে গিয়ে মাসের দেখা দিলো, হঠাৎ করেই কেটে গেল প্রায় দু’টো মাসের বেশি। ভাবলে মনে হয় দীর্ঘ একটা সময় কেটে গেছে, আবার মনে হয় এই তো কত তাড়াতাড়ি করে কেটে গেল সময়গুলো।
মুখটা গোমড়া করে গাল ফুলিয়ে বই নিয়ে বসে আছি পড়ার টেবিলে। গাল ফুলিয়ে থাকার কারণ হলো, মি. তাসফির প্রতি রেগে আছি আমি। সেই সাথে ভীষণ রকমের মন খারাপ।

তাসফির প্রতি আমার রাগটা না আসলেও বিগত দু’দিন থেকে রাগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রাগ করার মূল কারণ, এক মাস পর বাসায় যেতে চাইলেও সেখানে দু’টো মাসের বেশি সময় চলে গেছে। এর মাঝে তাসফি ভার্সিটিতে লেকচারার জয়েন হয়ে গেছেন আমার স্যার হিসেবে, যদিও আমার ডিপার্টমেন্টে না। কিন্তু এখনো আমাদের বাসায় যাবার সুযোগটা হয়ে উঠে নি। তিন দিন আগে থেকে ভার্সিটি অফ হয়ে গেলেও তাসফির জন্য যাওয়া হচ্ছে না। এতদিন বাসায় যেতে না চাইলেও হঠাৎ করে কেন জানি খুব করে মনে পরছে বাসার সবার কথা। কতদিন দেখি নি সবাইকে, দেখাটা শুধু ভিডিও কলের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো।

আর মন খারাপের কারণ হলো আমার প্রথম ভালোবাসার জন্য। মানে, আমার সবচেয়ে প্রিয় চুলের কারণে। লম্বা আর ঘন চুল কার না ভালো লাগে, আর সেই চুল যদি লাগাতার বিরতিহীন ভাবে উঠতে শুরু করে তাহলে মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। সন্ধ্যায় আঁচড়ানোর সময় যতগুলো চুল উঠেছে তাতে রীতিমতো কান্না পাচ্ছে আমার। সব মিলিয়ে মন ভার করে বই সামনে রেখে বসে আছি।
তাসফি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
“কি ব্যাপার? এমন গাল ফুলিয়ে আছিস কেন?”

ওনার কথায় কিছু বললাম না আমি। সেভাবেই চুপচাপ বসে পড়ার ভান করলাম। উনি আমার বলে কি হয়েছে আমার, আমি তবুও চুপ করেই থাকলাম কিছু না বলে। তাসফি এবার আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন। আমাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিয়ে আবারও জানতে চাইলেন কি হয়েছে। এবারও মুখে কিছু না বললেও মাথা ঝাঁকিয়ে কিছু না বোঝালাম। উনি হয়তো এবার আমার মন খারাপটা ধরতে পারলেন। বললেন,

“এত মন খারাপ করে করার কি আছে? বললাম তো খুব খুব তাড়াতাড়ি বাসায় যাবো। ভার্সিটিতে জয়েন হবার পর কত রকমের ঝামেলা গেল। এর মাঝে এখন হুট করে জাহিদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। বিয়েটা শেষ হলেই বাসায় যাবো।”

“এতদিন বাসার কাউকে ছাড়া আগে কখনোই একা থাকি নি তো, তাই একটু মন খারাপ লাগছে। কতদিন হয়ে গেল সবাইকে দেখি না।”

“আচ্ছা, মন খারাপ করিস না। টিকিট কেটে রাখবো, পরশু বিয়েটা হয়ে গেলেই রাতের গাড়িতে বাসায় যাবো, ঠিক আছে।”

ওনার কথা শুনে নিমিষেই মনটা ভাল হয়ে গেল। ইস্ কতদিন পর সবাইকে দেখতে পাবে, সবার সাথে মন খুলে গল্প করতে পারবো। খুশিতে ওনার কোমর জড়িয়ে পেটে মুখ গুজে দিলাম। অজান্তেই বলে ফেললাম,
“এই জন্যই তো আপনাকে এত এত ভালো লাগে, সবকিছু বলার আগেই বুঝে যান।”

“ভালো লাগে বলতে পারিস, কিন্তু ভালোবাসি বলতে পারিস না কেন?”

.
.
(চলবে…..)

ছোট হয়েছে বলে কেউ মন খারাপ করবেন না প্লিজ। আগামী পর্ব বড় করে দিবো ইনশাআল্লাহ। যারা গল্পটা পড়বেন একটু কষ্ট করে রিয়াক্ট এবং কমেন্ট করবেন। আইডি রেস্ট্রিকটেড করার ফলে অনেকের কাছে গল্পটা যাচ্ছে না। ইনবক্সে অনেকেই বলেছে। একটু বেশি বেশি কমেন্ট করার চেষ্টা করবেন।🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here