তুমি বললে আজ – পর্ব ৩৫

0
524

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ৩৫.

.
“রুপু….”

“হুম!”

“এভাবেই আমার পাশে থাকিস, আমার প্রতি বিশ্বাস রাখিস, জীবনের শেষ পর্যন্ত আমায় ভালোবাসিস।”

পিনপতন নীরবতার মাঝে হঠাৎ তাসফির বলা এই তিন বাক্যে কেমন জানি কেঁপে উঠলাম। নিশ্বাসের আনাগোনা বেড়ে গেল আগের চেয়ে, পিনপতন নীরবতায় ছেয়ে গেল আবারও।
সবাই রুম ছেড়ে চলে যাবার পর থেকে সেভাবেই জড়িয়ে ধরে আছি ওনাকে, উনি ওনার শক্ত হাতের বাঁধনে আঁটকে রেখেছেন আমায়। মিনিট বিশেকের মতো সময় অতিক্রম হয়ে গেছে হয়তো। তারপরই উনি আস্তে করে বললেন। ওনার কথাগুলোর মাঝে কেন জানি হারিয়ে যাবার ভয় বুঝতে পারলাম।

আজকে যদি আমি ঠিক সময়ে রুমে না আসতাম, তাহলে কি হলো? রিয়া ওনার কাছে ঝুঁকে যাচ্ছিলো, তখন ঘুমের ঘোরে আমাকে ভেবে যদি রিয়ার সাথে কিছু করতেন উনি? তাহলে…. তাহলে তো সত্যি সত্যিই ওনাকে হারিয়ে ফেলতাম হয়তো। না.. না, কখনোই হারিয়ে যেতে দিবো না আমি ওনাকে। কখনোই ওনার বিশ্বাসের বিলীন হতে দিবো না। ওনার মতো করেই ওনাকে অনেক ভালোবাসবে।
মুখ ফুটে কিছু বললাম না আমি, মাথা উঠিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। মনের কথাগুলো ওনাকে বোঝাতে মুখ এগিয়ে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম ওনার গালে। উনিও হয়তো সাথে সাথে বুঝে নিলেন আমার না বলা কথাগুলো। তৃপ্তির একটা হাসি দিয়ে, এক হাতে আলতো করে আমার গালে ছুঁয়ে দিলেন। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। বললেন,
“এমন নিরামিষ চুমু দিলে হবে না রুপুসোনা, আফটার অল দুটো সপ্তাহের পাওনা আদর বাকি আছে।”

বলেই উনি নিজের মুখ এগিয়ে আনতে লাগলেন। বড় বড় চোখ করে তাকালাম আমি। সিরিয়াস মোমেন্ট গুলো তে, শুধু মাত্র ওনার দ্বারাই এমন উদ্ভট কথা বার্তা বলা সম্ভব। সবসময় সিরিয়াস কথার মাঝে রোমাঞ্চ টেনে আনা চাই ওনার। বিরক্ত হলাম আমি, কপাল কুঁচকে ওনাকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললাম,
“ছাড়েন এখন। অনেক রাত হয়েছে, নিজেও ঘুমান আর আমাকেও ঘুমাতে দেন।”

“তুমি বললে আজ রাতটা কিন্তু জাগিয়েও কাটিয়ে দিতে পারি।”

“দূর, সবসময় ফাজলামি! শুয়ে পড়েন তো, ঘুম লাগছে আমার। সারাদিন একটু শোবারও সুযোগ পাই নি।”

“শুয়ে পর।”

গাল টেনে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। আমি বিছানায় শুয়ে পরতেই লাইট অফ করে দিলেন। বিছানায় এসে আমায় আঁশটে পিশটে জড়িয়ে ধরে নিজেও শুয়ে পরলেন।

.
বাইরের কোলাহল, বাচ্চাদের চিৎকার চেচামেচি তে সকালের গাড়ো ঘুমটা হালকা হয়ে গেল। এক ফালি আলো চোখে ভির জমাতেই কপাল কুঁচকে গেল। মিটমিট করে চোখ খুলে পাশে তাকালে দেখা পেলাম না তাসফির। ওনার পরিবর্তে রিফাপুকে বসে বসে মোবাইল টিপতে দেখলাম। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আবারও মোবাইলে ডুবে গেল। আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছেড়ে উঠতে নিলেই রিফাপুর গলা ভেসে আসলো।
“কি দিন আসলো বল তো? যে মেয়ে আমাকে টেনেটুনে ঘুম থেকে তুলতো, তার এখন আমার ওরে ঘুম ভাঙে।”

রিফাপুর কথায় জোরে একটা হাই তুলে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বললাম,
“ঘুম না ভাঙলে কি করবো বলো? রাতে তো ঠিক মতো ঘুম হয় নি।”

সরল মনে বললেও আমার কথাটা সরল মনে নিলো না রিফাপু। শয়তানি একটা হাসি দিয়ে টিপ্পনী কেটে বলে উঠলো,
“পুরো দুটো সপ্তাহ পর জামাই কে কাছে পাইছিস, ঘুম হবে কি করে শুনি? সারারাত তো শুধু আদর হবে, চুমু হবে, আ…..”

“ছি… কি বলছো? তুমি কিন্তু…”

“কিশোর ছি… হুম? বড় বোনের আগে বিয়ে করে রোমাঞ্চ করবি, আর আমি বললেই ছি হয়ে গেল, তাই না?”

“উনি কিন্তু তোমার বড় ভাই, ভুলে যেও না।”

“থাম তো তুই, বড় হয়ছে তো কি হয়ছে? এতদিন অনেক জ্বালাইছে আমায়, এবার আমার পালা। আর তুই, উনি উনি ছেড়ে তুমি নাম এবার।”

“দূর, কি যে বলো না তুমি। বাদ দাও এসব কথা, তুমি এখানে কি করছো? তাই বলো।”

আমার কথায় বিরক্তিতে ছেয়ে গেল রিফাপুর মুখে। মুখ গোমড়া করে বললো,
“কি আর করবো, আপনার জামাইয়ের একমাত্র বউকে পাহারা দেই।”

“মানে?”

“মানে আবার কি, টেনে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে ‘একদম রুম ছেড়ে কোথাও যাবি না। যতক্ষণ না ও ঘুম থেকে উঠছে, ততক্ষণ বসে থাকবি ওর পাশে’। আহ্! কি ভালোবাসা। তোদের দেখে আমার আর সহ্য হচ্ছে না, তাড়াতাড়ি বিয়েটা করতেই হবে।”

“তাস… মানে, উনি তোমাকে এ কথা বলেছে? কেন?”

“আপনার উনি, না বললে কি আমি মিথ্যা বলছি।”

বলেই কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে ধীর কণ্ঠে বললো,
“তাছাড়া ভয় তো পাবারই কথা। কালকে যা হলো, তারপর তো ভয় পাওয়া-টাই স্বাভাবিক।”

কিছু বললাম না আমি। আসলেই কাল রাতে হঠাৎ করে এতকিছুর পর ওনার ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মানুষটার সব দিকেই কেমন জানি খেয়াল রাখেন। সজীব ভাইয়ার বিয়েতে অনেকটাই ব্যস্ত হয়ে পরেছেন হয়তো, তবুও আমার খেয়াল রাখাটা ভুলে যান নি। কি করে এতটা ভালোবাসতে পারেন উনি?
দেরিতে ওঠার জন্য আম্মু এসে বকাঝকা করতে লাগলো। আম্মুর বকা থেকে বাঁচার জন্য বিছানা ছেড়ে উঠে তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বেরিয়ে আসতেই রিফাপু টেনে নিয়ে গেল খাবার জন্য। এটাও নাকি তাসফি বলে দিয়েছে রিফাপুকে। পেটে প্রচুর খুদা থাকলেও খেতে পারলাম না তেমন। এতগুলো খাবার চোখের সামনে দেখে কেমন জানি গা গুলিয়ে আসলো। অনেক কষ্টে কিছুটা মুখে দিয়ে উঠে আসলাম।

দুপুর পর্যন্ত আর দেখা পেলাম না তাসফির। বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন উনি। তাই বাকিটা সময় রিফাপু দের সাথেই কাটাতে হলো। দুপুরের পরে সবাই ব্যস্ত হয়ে পরলো বিয়েতে যাবার রেডি হতে। আমিও রুমে এসে গোছল সেরে রেডি হতে নিলাম। কালকে তাসফির আনা দু’টো শাড়ি নিয়ে ভাবতে লাগলাম কোনটা পরবো। টকটকে লাল, কমলা রঙের জামদানী এবং কালো রঙের শাড়ি এনেছেন আমার জন্য। দুটোই ভীষণ সুন্দর। কোনটা পরবো ভাবতেই হঠাৎ মাথায় এলো উনি নিশ্চয়ই কালো রঙের শার্ট বা পাঞ্জাবি পরবেন। তাই আমিও ভাবলাম কালো শাড়িটাই পরি।
শাড়ি পরা শেষ করে চুলগুলো আঁচড়ে কাঠি দিয়ে বেঁধে নিতেই তাসফি রুমে ঢুকলো। ওনার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পর্শ ভেসে উঠেছে। আমাকে দেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ স্কান করলেন। কাছে এসে দাঁড়িয়ে সেভাবেই দেখতে লাগলেন। এবার কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলাম আমি। ইস্! এভাবে দেখার কি আছে? মাথা ঘুড়িয়ে সরে আসতেই আঁটকে নিলেন উনি। দু’হাতে গাল ধরে বলে উঠলেন,
“রুপুসোনা, তুই কি আসলেই দিন দিন এত কিউট হচ্ছিস? নাকি আমার চোখেই শুধু কিউট লাগে?”

প্রতিত্তোরে কিছু বললাম না আমি। উনি টুপ করে ঠোঁটে আলতো করে ওনার ঠোঁট ছুঁয়ে দিলেন। বলতে লাগলেন,
“এক্ষুনি খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে তোকে, কিন্তু আফসোস করা ছাড়া উপায় নাই। রাতে কিন্তু রে…”

হঠাৎ চুপ করে গেলেন উনি। নিচের দিকে একবার তাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না, ওনার হঠাৎ চুপ করে যাবার কারণ। কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম,

“দেখেন, একদম বকাবকি করবেন না এখন। আমি জানি না আজকে আবার কেন চুল উঠলো। আপনার নিয়ে আসা শ্যাম্পু এবং তেল গুলো কিন্তু নিয়মিত ইউস করছি।”

জোরে একটা নিশ্বাস ছাড়লেন উনি। আমি আবারও বললাম,
“এখন আর এসব বিষয়ে মাথা ঘামাতে হবে না আপনার। আরও কিছুদিন ব্যাবহার করলে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি এখন তাড়াতাড়ি গোছলে যান।”

উনি কিছু বলতে চাইলে আমি আবারও আঁটকে দিলাম ওনাকে। গোছলে যাবার জন্য তাড়া দিতেই উনি ‘যাচ্ছি’ বলে বাথরুমে ঢুকে গেলেন। অল্প সময়ের মাঝেই বেরিয়ে এসে ঝটপট রেডি হয়ে গেলেন। কালো শার্টে হিরো লুকে ওনাকে দেখে আমি নতুন করে আবারও প্রেমে পড়ে গেলাম যেন। মনে মনে রেগেও গেলাম কিছুটা। এভাবে হিরো লুকে বিয়ে বাড়িতে যাবার কি দরকার? আমার-ই এ অবস্থা, অন্য মেয়েদের কি হবে? এমনিতেই তো ওনাকে দেখে মেয়েরা গিলে খায়। আজকে এভাবে গেলে তো আমার ফুপাতো বরকে নিজেই পাবো না। না… না, এভাবে ওনাকে কিছুতেই যেতে দেওয়া যাবে না।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বডি স্প্রে দিতেই তাসফির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। ওনার পায়ের পাতায় পা তুলো কিছুটা ওনার সমান সমান হয়ে আঁচড়ানো চুলগুলো এলোমেলো করে দিলাম। শার্টের উপরের একটা বোতাম খুলে কিছুটা এলোমেলো করে দিলাম। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। বোঝার চেষ্টা করছেন ঠিক কি করতে চাচ্ছি আমি। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সরে আসলাম ওনার থেকে। ওনাকে ভালোভাবে দেখে চোখ দুটো জ্বলে উঠলো আমার। অশ্রুকণা গুলো ভীর জমাতে লাগলো চোখের কোণে। ওনার দিকে তাকিয়ে ভেজা গলায় বলে উঠলাম,
“আপনাকে আরও সুন্দর লাগছে কেন? এভাবে তো আগের থেকেও মারাত্মক সুন্দর লাগছে। এবার তো আরও বেশি বেশি করে সব লুচু মেয়েগুলো তাকিয়ে থাকবে আপনার দিকে।”

“কি বলছিস তুই? কি হলো হঠাৎ করে তোর?”

“একদম ঠিক বলছি। দেখেন না? সব লুচু লুচু মেয়েগুলো কেমন চোখ দিয়ে গিলে খায় আপনাকে। আর সেটার সুযোগ নেবার জন্য হিরো সেজে বিয়েতে যেতে চাচ্ছেন?”

জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে ঠোঁট উল্টে আবারও বললাম,
“কিন্তু এখন তো আরও মারাত্মক সুন্দর লাগছে আপনাকে। যেতে হবে না আপনার, আমিও যাবো না।”

হেঁসে উঠলেন উনি। দু’হাতে কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিলেন৷ এক হাত আমার গালে আলতো করে ছুঁয়ে বললেন,
“ইস্! আমার বউটা যে দিন দিন এতটা হিংসুটে হয়ে যাচ্ছে, জানা ছিলো না তো।”

আমি কিছু বলতে চাইলে উনি বাঁধা দিলেন। বললেন,
“আমি তো শুধু আমার রুপুসোনা-তেই আঁটকে আছি, ডুবে গেছি তার মাঝে। তার নিজেরও সাধ্য নেই, আমাকে তার মাঝে থেকে তোলার।”

.
সবার সাথে যাবার ইচ্ছে থাকলেও তাসফির জন্য, ওনার সাথে ওনার বাইকে যেতে হলো। এতে কাজিন দলের সবাই পচাতে ভুললো না। সজীব ভাইয়ার শ্বশুর বাড়ি যাবার পর যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটা হলো। সবগুলো মেয়েরা হা করে গিলতে লাগলো ওনাকে। রাগে, দুঃখে মনে হলো, বড় বড় অক্ষরে ‘আমি বিবাহিত, আমার বউ আছে। আপুরা আমার দিকে তাকাবেন না।’ লিখে ওনার পিঠে কাগজ ঝুলিয়ে দেই। সেটা পারায় শক্ত করে ওনার হাত ধরে রাখলাম। তাতে তেমন একটা কাজ হয়েও হলো না।
বিয়ে পড়ানো শেষে খাবার সময় বড় একটা টেবিল নিয়ে আমরা কাজিন গুলো বসে পরলাম। খাবারের গন্ধেই কেমন যেন পেট গুলিয়ে আসলো। তবুও কিছুটা সহ্য করে খাবার মুখে দেবার চেষ্টা করলাম। টুকরে টুকরে খেতে দেখে পাশ থেকে তাসফি চাপা স্বরে ধমকে উঠলো আমাকে। আমি শুনতে পেলেও বাকিরা কেউ বুঝতে পারলো না। ওনার ধমকের জোরে বাধ্য হয়ে খেতে লাগলাম। যার ফলস্বরূপ গা গুলিয়ে আসলো। দূত চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে চলে আসলাম। ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে গড়গড় করে সমস্ত কিছু বের করে দিলাম। তাসফি সাথে সাথেই এসে আমাকে আঁকড়ে ধরলেন।
আস্তে আস্তে শরীরটা আরও কিছুটা খারাপ লাগতে লাগলো। মাথাটা কিঞ্চিৎ ব্যাথা হতে লাগলো, সাথে চোখের সামনে কেমন জানি ঝাপসা হয়ে উঠলো। সবার কথাতে তাসফি বাসায় নিয়ে যেতে চাইলেও বাইকে করে যাবার শক্তিটুকু আমার মাঝে নেই। তাই বাধ্য হয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হলো সেখানে। সাহিল ভাইয়াকে বাইক নিয়ে যেতে বলে আমাকে নিয়ে গাড়িতে করে বাসায় আসলেন। বাসায় এসে কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা বিছানায় শুয়ে পরলাম।

.
ঘুমটা ভেঙে গেল ঠিক কয়টায়, জানা নেই আমার। বুঝতে পারলাম মাথা ব্যাথা কিছুটা থাকলেও শরীরটা একদম ফ্রেশ লাগছে। হাতিয়ে মোবাইলটা নিয়ে সময় দেখলাম সাড়ে এগারোটা বাজে। পাশে ফুপিকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম। পরে বুঝতে পারলাম এটা নিশ্চয়ই ওনার কাজ। আমাকে পাহারা দেবার জন্য ফুপিকে থাকতে বলেছেন হয়তো। আমি উঠে বসতেই আম্মু ও বড়মা রুমে ঢুকলো। আম্মু আমার পাশে বসে জানতে চাইলো এংন কেমন লাগছে, শরীর ঠিক আছে কি না। আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম একদম ঠিক আছি। আরও দু’ একটা কথা বলতে লাগলো। এর মাঝে তাসফির কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো, উনি সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছেন। আমি যেতে চাইলে বড়মা কড়া গলায় না বলে উঠলো। তাসফিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি বলে চলে গেলেন রুম ছেড়ে। বড়মা যাবার পর পাঁচ মিনিটের মাথায় উনি চলে আসলে আম্মু এবং ফুপি চলে গেলেন।

রাতের কিঞ্চিৎ মাথা ব্যাথাটা সকালে কেন জানি তীব্র ভাবে ধরা দিলো। মাথা চেপে ধরে বিছানা ছেড়ে উঠতে চেয়েও পারলাম না। আঁশটে পিশটে জড়িয়ে ধরে আছেন উনি। ওনাকে ছাড়াবার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হতে হলো আমাকে। চিনচিন ব্যাথাটা তীব্র থেকে তীব্র হতে শুরু করলো। গা গুলিয়ে আসতে লাগলো সমানে। গায়ের যতটুকু শক্তি ছিলো সমস্তটা দিয়ে তাসফি কে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। ছুটে বাথরুমে গিয়ে কোন ভালো দেয়ালটা ধরে গড়গড় করে বমি করে দিলাম। গায়ের জমানো শক্তিটুকু ক্ষয় করে পরে যেতে লাগলাম নিচে। সাথে সাথে তাসফি এসে আঁটকে নিলেন আমায়। চোখ মুখে পানি ছিটিয়ে কোলে তুলে বিছানায় এনে শুইয়ে দিলেন। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলেও জবাব দিতে পারলাম না আমি।
আস্তে আস্তে সবাই আমার অসুস্থর কথা জেনে গেলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বললো। তাতে ঘোর বিরোধিতা জানিয়ে না করলাম আমি। সজীব ভাইয়ার বৌভাত ছেড়ে সবাই আমাকে নিয়ে পড়ুক সেটা চাইলাম না।

.
গ্রাম ছেড়ে বাসায় আসার দু’টো দিন কেটে গেছে। ভাইয়ার বৌভাতের পরদিনই চলে এসেছি গ্রাম ছেড়ে। এই দু’টো দিন কিছুটা ভালো থাকলেও আজকে সকালে আবারও মাথা ঘুড়ে উঠেছে। কারোর চোখে না পরলেও তাসফির চোখে ঠিকই পরেছে আমার অসুস্থতা। তাতেই আমাকে এক প্রকার ধমকে উঠে হসপিটালে যাবার জন্য রেডি হতে বলেছেন। ওনার সাথে বাসার প্রতিটা সদস্যও একই সুরে সুর মিলিয়েছন।

ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছি আমি আর তাসফি। সামনেই কয়েটা রিপোর্ট হাতে নিয়ে সেগুলো দেখে চলেছেন মাঝ বয়সী ডাক্তারটা। হসপিটালে আসার পর আমাকে চেকআপ করে কয়েটা টেস্ট দেন। অনেক সময় নিয়ে টেস্টগুলো করে রিপোর্ট দেবার পর সেগুলো নিয়েই ওনাকে দেখাবার জন্যই আনা হয়েছে। বিগত দশ মিনিট ধরে রিপোর্ট গুলো দেখেই চলেছেন উনি। আরও কিছু সময় নিয়ে কিছু একা লিখে রিপোর্ট সহ তাসফির দিকে এগিয়ে দিলেন। ওনাকে বললেন রিপোর্টগুলো নিয়ে রেফার কৃত ডাক্তারের কাছে যেতে। তাসফি কিছু না বলে রিপোর্ট সহ কাগজটা নিয়ে বেরিয়ে আসলেন আমাকে নিয়ে।
রেফারেন্স ডাক্তারের চেম্বারে যাবার পূর্বে কাগজটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন উনি। তাসফির হঠাৎ করে দাঁড়ানো দেখে ওনার দিকে তাকালাম। কেমন জানি চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। চোখ দুটো লাল আভায় ছড়িয়ে গেছে কিছুটা। ওনার হঠাৎ এমন অবস্থায় হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি। কি হলো হঠাৎ ওনার? জিজ্ঞেস করেও কোন উত্তর পেলাম না। কৌতুহল বসত ওনার হাত থেকে কাগজটা নিলাম দেখার জন্য। ডাক্তারের লেখাগুলো তেমন ধরতে পারলাম না। কিন্তু রেফারেন্স ডাক্তারের জায়গায় নিউরোলজিকাল লেখা দেখে অনেকটা অবাক হলাম। ওনার লাল হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকাতেই দেখি কেমন করে জানি তাকিয়ে আছেন উনি আমার দিকে।

.
.
(চলবে…..)

যেখানে শেষ করতে চাইলাম, চেষ্টা করেও পারলাম না। অনক দেরি হয়ে গেল তাতেই🙁 যাইহোক আগামীকাল দেবার চেষ্টা করবো। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালোবাসা রইল সবাইকে।🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here