সুখ সন্ধানী – পর্ব ৭

0
193

#সুখ_সন্ধানী
পর্ব ৭
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno

আমি রক্তাক্ত কপাল চেপে ধরে দেওয়ালে পিঠ লাগিয়ে বসে পড়ি। আমার দিকে নজর দেওয়ার কেউ নাই। যদিও আজিজ ছেলে মেয়ের সাথে প্রচুর ঝগড়া করছে কিন্তু আমার কাছে এইসব অসহ্যকর মনে হচ্ছে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আজিজ রেগে গিয়ে বলে,, আসমানীর সাথে কেউ কখনো খারাপ আচরণ করলে আমার অবশিষ্ট যায়গা জমি যা আছে সব ওর নামে লিখে দিবো। আজিজের এমন কথা শুনে আমি হতবাক!! এমনিতেই ছেলে মেয়েরা আমাকে লোভী মনে করে তারউপর এমন কথা শুনে তাদের বিশ্বাস আরো পাকাপোক্ত হলো।

আমার মাথার রক্ত গুলো পরিষ্কার করে দেওয়ার পরে আমাকে রান্না ঘরে নিয়ে আসা হয়। রান্না ঘরের আসবাবপত্র গুলোর নাম জানা তো দূরের কথা আমি জীবনেও দেখিনি। উনি আমাকে যা ইচ্ছে রান্না করতে বলে বাইরে চলে যান এবং উনার ছেলের বউকে ডেকে আমাকে সাহায্য করতে বলেন। কাল থেকে তো কিছুই খায় নি তাই খিদেও পেয়েছে প্রচুর তাই আমি রান্নার কাজে মনোযোগ দিলাম।

উনার সম্পত্তির উপর কোন লোভ নেই আমার। আমি যখনই বাইরে কোথাও কাজে বা অন্য কারনে যেতাম তখনই কারো না কারো লালসার দৃষ্টিতে পড়তাম। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম উনার বাড়িতে স্ত্রী রুপে কাজের মেয়ে হয়ে থাকতে। দশ জনের দৃষ্টিতে না পরে অন্তত একজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চেয়েছি। গরীবের ঘরের মেয়েদের কারো ঘরের বউ হওয়ার সৌভাগ্য হবে না।

সারাদিন আমার সাথে কেউ কোন কথা বলে নি। উনি বিকালে আমার জন্য কিছু নতুন জামাকাপড় সহ বিছানার জিনিসপত্র কিনে নিয়ে আসেন। উপযুক্ত ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ের সামনে উনার এইসব আদিখ্যেতা আমাকে সত্যিই লজ্জায় ফেলছে। রাতে উনার সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা হলো আমার। উনি বলেন,, আমার চেয়ে অনেক বয়সী মানুষের বউ বাচ্চা না। প্রতিটি মানুষের শারীরিক চাহিদা থাকে। আমি তাদের থেকে ব্যাতিক্রম নই। কিন্তু এই বয়সে নতুন করে সংসার করার কথা বললে লোকে খারাপ ভাবে, ছেলে মেয়েরাও খারাপ মনে করে। কিন্তু তারা বুঝেনা দিন শেষে কথা বলার জন্য বৃদ্ধকালেও একজন জীবন সঙ্গী সবার প্রয়োজন আছে। বর্তমান সামাজিক এবং মানুষিক দৃষ্টিভঙ্গি গুলো এমন হয়েছে যে, ছেলে মেয়ে বড় হওয়ার পরে কারো স্বামী/স্ত্রী মারা গেলে ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও কেউ তাদের চাহিদা গুলো পুরোণ করতে পারে না। কিন্তু শেষ বয়সে এই একাকীত্বটা কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা শুধু ভুক্তভোগীরাই বুঝে।

উনার বলা প্রতিটি কথার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। সত্যিই তো, স্বামী অসুস্থ হলে একজন স্ত্রী যে সেবা দিতে পারবে সেই সেবা কি মেয়ে বা ছেলের বউ দিতে পারবে। আমরা শুধু উপরের বিষয় গুলো নিয়ে একটা মানুষ সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করি কিন্তু তার গভীরতা কখনো বুঝার চেষ্টা করিনা।

আমার রান্না করা কোন খাবার শুধু মাত্র আজিজ ছাড়া এই পরিবারের অন্য কেউ খায় না। তাই একরকম আলাদা সংসারের মতো চালচলন। আগে আমি রান্না করে চলে আসি তারপর ওরা করে। এভাবেই চলছে কয়েকদিন। আজ দুপুরের আগে উনি কয়েক সেট জামাকাপড় হিমেল জন্য কিনে আনেন। আমাকে দিয়ে বলেন, আমি যেন বিকালে হিমেলকে দেখতে যায়। এই বাড়িতে রান্না করার পরে আর তেমন কোন কাজ করতে হয় না আমাকে। সারাদিন চুপিচুপি হিমেল আর মা বাবার জন্য কান্না করি। লজ্জায় কিছু বলতেও পারি না। ইচ্ছে ছিলো হয়তো কখনো হিমেল কে এখানে নিয়ে আসার কথা বলবো কিন্তু এই পরিবারের অবস্থা দেখে সেই ইচ্ছে কে করব দিয়েছি।

বিকালে নতুন নতুন পোশাক পড়ে বাবার বাড়িতে আসার জন্য রেডি হলাম। এমন সময় তুলি (আজিজের মেয়ে) এসে হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে দেখতে লাগে ওদের বাড়ি থেকে কি কি নিয়ে যাচ্ছি। তারপর হিমেলের জামাকাপড় দেখে বলে,, জারজ বাচ্চার দ্বায়িত্ব আমার বাবার ঘাড়ে দেওয়ার জন্য দেহ বিক্রির ব্যাবসা ছেড়ে রাজ প্রাসাদের দিকে নজর দিয়েছিস। আমার বাবাকে আলাভোলা মানুষ পেয়ে নিজের ইচ্ছে মতো নাচাতে তোর লজ্জা করে না। তোর ওই নোংরা শরীরে কতশত মানুষের স্পর্শ আছে তা জানি না কিন্তু এই শরীর বাপের বয়সী মানুষের কাছে দেখতে তোর সামান্যও লজ্জা করে না??

তুলির কথার জবাব দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। তার যায়গাতে আমি হলেও হয়তো এমন কথা বলতাম। গরীবের লজ্জা থাকতে নেই তাই আমি আবারও ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হতেই উনি বাড়িতে আসেন। তারপর আমার হাতে পাঁচশো টাকা দিয়ে বলে যাওয়ার সময় যেন কিছু কিনে নিয়ে যায়। এক সাথে এতো টাকা দিয়ে জিনিস আমি জীবনেও কিনি নাই। আমি নিতে না চাইলেও উনি জোর করে আমাকে টাকা দেন।

আজ কয়েকদিন পরে আমার নাড়ি কাটা ধনকে দেখলাম। আদরে আদরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে। আমার চেয়ে আমার সন্তানের জীবন আরো কষ্টকর। আমি নিজ হাতে ওর জীবন এমন করেছি। যদি গর্ভে থাকা অবস্থায় নষ্ট করার বৃথা চেষ্টা না করতাম তাহলে হয়তো সুস্থ সবল ভাবে জন্ম নিতো। এই কথা গুলো আমাকে গুমরে গুমরে কষ্ট দেয়।

বাড়ির রুপ পালটে গেছে। নতুন ঘরে হিমেলকে সাথে নিয়ে মা বাবা ঘুমায়।অন্য বাচ্চারা ৭/৮ মাস হতে না হতেই বিভিন্ন রকম বুলি ফোটে কিন্তু আমার হিমেল এখনো কিছুই বলতে পারে না। জানি হয়তো ছেলেটার মুখে মা ডাক কখনো শুনতে পাবো না। এ বাড়িতে রাত থেকে পরের দিন দুপুরের আগে বাড়িতে চলে আসি। বিকালে খুব বেশি মনে হচ্ছিলো হিমেলর কথা গুলো। ঘরে বসে একা একা বেশ কিছুক্ষণ কান্না করলাম। আজিজের পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে দেখে তারাতাড়ি নিজের চোখের পানি মুছে চোখ মুখে পানির ছিটা দিলাম।

উনি উনার মেয়ের জন্য কিছু পোশাক কিনে এনেছেন,, আমাকে বিয়ে করার পরে এখন পর্যন্ত মেয়েটা উনাকে ডাকে নি বা কোন রকম কথা বলে নি। তুলির ঘরের সামনে গিয়ে তুলিকে বারবার ডাকছে, তুলি কোন রকম জবাব না দিয়ে বাইরে এসে বলে,, কি হয়েছে কেন ডাকছেন?

আমি দরজার ফাঁক দিয়ে দেখছি শুধু। উনি জামাকাপড়ের ব্যাগ গুলো তুলিকে দিতেই তুলি ওইগুলো ফেলিয়ে দিয়ে জোরে জোরে বলতে থাকে,, আমার জন্য এইসবের কি দরকার ছিল। ওই বে** আর ওর জারজ বাচ্চার জন্য বেশি বেশি কিনে দেন। বুড়াতি বয়সে রঙ লেগেছে আপনার শরীরে, চোখের সামনে আপনাদের এমন রঙ ঢং দেখার জন্য এই বাড়িতে আছি আমরা। নায়ক নায়িকারা প্রতিদিন সিনেমা করে বাড়িতে আর আমরা সেই সিনেমা দেখার দর্শক মাত্র।

তুলি দরজাটা আটকে আবারও ঘরে চলে গেছে। উনি ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন কিছুক্ষণ। পাশের ঘরের বাইরে উনার ছেলের বউ ও ছিলেন। উনি হয়তো প্রচুর লজ্জা পেয়েছেন এই মুহুর্তে। কোন রকম সে বাইরে চলে যায়। রাত অনেক হয়েছে অথচ উনি এখনো ফিরেন নি। প্রচুর উৎকণ্ঠা অবস্থায় অপেক্ষা করছি। অবশেষে উনি ফিরলেন। আমি খাওয়ার দিতে চাইলে উনি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছেন বলে চুপচাপ সুয়ে পড়েন। আল্লাহর প্রদত্ত সম্পর্কে জড়ানোর পরে এমনই আলাদা মায়ার বাধনে আবদ্ধ হয়ে যায় পরস্পরে।ঠিক তেমনই মায়া সৃষ্টি হয়েছে আমাদের মাঝে। তবে এই মুহূর্তে উনাকে শান্তনা দেওয়ার মতো কোন ভাষা জানা নেই আমার। তাই আমি কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ সুয়ে পড়লাম।

গত দুই দিন থেকে আরিফের আচরণ কেমন যেন লাগছে। গোসলের পরে ভেজা জামা কাপড় শুকাতে দিলে সেগুলোর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে। আমি বুঝতে পারি আমাকে সে ভালো নজরে দেখে না। আজ গোসল করার সময় হঠাৎ করে গোসলখানার উপরের ছিদ্রের দিকে নজর পড়ে। সাথে সাথে দুটো চোখ ছিদ্র থেকে দূরে সরে যায়। ভয়ে হাত পা জমে গেলো। জানি এটা আরিফ কিন্তু এই কথা কাউকে বলা যাবে না । কারণ এমনই আমাকে নিয়ে সব সময় ঝামেলা বেঁধেই আছে নতুন করে লঙ্কাকাণ্ড বাধাতে ভয় পাচ্ছি। কোন রকম গোসল শেষ করে বাইরে এলাম। আশেপাশে আরিফ কে কোথাও দেখলাম না। বারবার ওই মুহূর্তটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

আমি আমার মতো করে চলাফেরা করতে থাকি। নিজেকে সব সময় আরিফের থেকে দূরে দূরে রাখতাম।আজ সকালে আজিজ মাছের ট্রাকের সাথে ঢাকায় যায়, মাঝখানে একদিন পরে ফিরার কথা। বিকালে দেখলাম আরিফের বউকে কোথায় যেন যেতে।হয়তো বাবার বাড়িতে যাচ্ছে। কেমন একটা ভয় আমাকে জেপেধরে। রাতে আমি দরজা জানালা ভালো করে বন্ধ করে দিয়ে সুয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পরেই অনুভব করি কেউ আমার স্পর্শকাতার যায়গাতে হাত দিয়েছে। তৎক্ষনাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার মুখ চেপে ধরে জোরজবরদস্তি শুরু করে। নিজেকে রক্ষা করতে আমি হিংস্র বাঘীনির মতো রেগে যায়। সুযোগ বুঝে আরিফের শরীরের সব চেয়ে দুর্বল যায়গা তে স্ব জোরে লাথি মারি।সাথে সাথে আরিফ ককিয়ে উঠে বিছানা ছেড়ে নিচে পরে যায়। আমি হাতের কাছে একটা ফুলদানি পাই আর সেটা দিয়ে আরিফের উদ্দেশ্যে আঘাত করি। যেহেতু ঘর অন্ধকার তাই বুঝতে পারিনি কোথায় লেগেছে। সে আবারও আমার কাছে আসার চেষ্টা করে তখন হঠাৎ করে মনে হলো বিছানার নিয়ে আজিজের একটা বড় রামদা আছে। এই মুহূর্তে আমি হাতাহাতি জ্ঞানশুন্য, ভালো মন্ধ বোঝার অবস্থায় নেই।

দা হাতে নিয়ে সরাসরি,,,,,,,

চলবে,,,

ডিসেম্বর পর্যন্ত রেগুলার এবং বড় করে পর্ব দিতে পারবো না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here