তোমাতে বিলীন – পর্ব 04

0
591

#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ০৪ ||
বারান্দার রেলিঙের উপর একহাতের ভর রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আশিয়ান। ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে ভেসে এলো;
ইলিয়ানা:-কেমন আছো আশিয়ান???
আশিয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো;
আশিয়ান:-লাইক সিরিয়াসলি?আমি কেমন আছি সেটা জানতে তুমি আমায় ২বছর পর ফোন দিয়েছো?হাহ্,,,ভালো খুব ভালো।তাহলে শুনো অনেক বেশি ভালো আছি আমি।
ইলিয়ানা:-ওহ,,(একমুহূর্ত নিরব থেকে) জিজ্ঞেস করবে না আমি কেমন আছি?
আশিয়ান:-তোমার ওই আঙ্কেলমার্কা স্বামী তো তোমাকে বেশ ভালোই রেখেছে সেটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি? আর আমার এত টাইম নেই এসব আজাইরা কথা জিজ্ঞেস করার। (ইন্ডাইরেক্টলি অপমান করে)
ইলিয়ানা মুখ বুজে অপমানটা সহ্য করে নিলো। শান্তকন্ঠে আবারও বললো;
ইলিয়ানা:-তুমি আগের থেকে অনেক পাল্টে গেছো আশিয়ান!আগে তুমি আমার একটা ফোনকলের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে,,, আর এখন তুমি আমার কথাই সহ্য করতে পারছো না।
আশিয়ান:-ওও,, হ্যালো,,,আগের দিন বাঘে খাইছে। আগের আমি আর এখনের আমির মধ্যে রাতদিন তফাৎ।আর এখন তুমি বিবাহিত,,। আমার এত ঠেকা পড়েনি যে একজন বিবাহিত মেয়ের ফোনকলের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করবো।যেখানে এই আশিয়ান বলতে হাজার হাজার মেয়ে পাগল। সেখানে আমি একজন আন্টির ফোনকলের অপেক্ষা করবো কোন দুঃখে শুনি?(আবারও অপমান করে)
ইলিয়ানা:-হোয়াট ননসেন্স আর ইউ সেয়িং ? আমি তোমার আন্টি হলাম কীভাবে? (রাগ হয়ে)
আশিয়ান:-তুমি যাকে বিয়ে করেছো সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমারই দূরসম্পর্কের এক আঙ্কেল হয় বুঝলে? সেই হিসেবে তুমি আমার আন্টি!তুমি কেমন লোভী মেয়ে হে?তা আমার আঙ্কেল যে বিবাহিত তা কী তুমি জানতে না? নির্লজ্জের মতো একটা মেয়ের সংসার ভেঙে নিজের বাপের বয়সী একটা লোকের সাথে সংসার করতে তোমার একটুও বিবেকে বাঁধেনি?এতই টাকার লোভী তুমি ছিহ্,,,আমার তো ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে।
আশিয়ানের কথা সহ্য করতে না পেরে এবার ইলিয়ানা কান্না করে দিলো। অন্যসময় হলে আশিয়ান উতলা হয়ে উঠত ইলিয়ানার কান্নার সাউন্ড শুনে। বাট এখন একটুও কষ্ট হচ্ছে না তার। বরং ভালো লাগছে এত অপমান করে। মনটায় এক পৈশাচিক আনন্দ অনুভূত হচ্ছে তার। ইলিয়ানা কেঁদে কেঁদে বললো;
ইলিয়ানা:-আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আশিয়ান। তুমি যেমন আমার কেয়ার করতে আর কেউ তেমন ভাবে আমার কেয়ার করে না। আমি বেঁচে থাকলে কী আর মরে গেলেই বা কী?কারো কিছু এসে যায় না। আমি জানতাম না যে আসাদ(তার স্বামী) বিবাহিত। সে এখনো তার আগের বউকে ভালোবাসে। আমার জন্য তার মনে কোনো জায়গা নেই। সে শুধু আমাকে ইউস করার জন্য বিয়ে করেছে আশিয়ান।টাকা পয়সা থাকলেই যে সুখী হওয়া যায় না তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছি আমি। আমার আশেপাশে টাকা পয়সার ছড়াছড়ি,,, কিন্তু মনে কোনো সুখ নেই,,,আনন্দ নেই। একপ্রকার রোবটের মতো বেঁচে আছি। কোনো অনুভূতি কাজ করে না আশিয়ান। আমি ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছি। আর পারছি না।
কিছুটা খারাপ লাগা অনুভব করছে আশিয়ানের। কিন্তু এতে তার তো কিছু করার নেই। নিজের দোষেই এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে সে।
আশিয়ান:-অতি লোভে তাঁতি নষ্ট বলে একটা প্রবাদ আছে না সেটা তোমার ক্ষেত্রে ঘটেছে। বেশি লোভ করেছিলে তুমি এবং তোমার বাবা,,,তার ফল একাই ভোগ করছো তুমি এখন। এখানে কারও কিচ্ছু করার নেই।কারও মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার শাস্তি তুমি এখন পাচ্ছো। (তাচ্ছিল্য করে)
ইলিয়ানা:-আমি জানি তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসাে। যার কারণে তোমার মনে তুমি আজপর্যন্ত কাউকে জায়গা দিতে পারো নি। আমি তোমার লাইফে আবারও ব্যাক করতে চাই আশিয়ান। প্রমিজ করছি আগের থেকে ৩ গুণ বেশি ভালোবাসবো তোমায়। কখনো ছেড়ে যাবো না।
আশিয়ান ইলিয়ানার এই কথাটা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো।ইলিয়ানার ফোন দেয়ার কারণটা এবার তার কাছে পানির মতো পরিষ্কার হলো।হাসতে হাসতেই জবাব দিলো;
আশিয়ান:-ওহহো,,,এখন তোমার ফোন দেয়ার কারণটা আমার কাছে স্পষ্ট হলো। আমার এত কিসের দরকার লাগছে যে তোমার মতো ইউজলেস একটা মেয়েকে আমি আবার আমার লাইফে ফিরিয়ে নেব?আমাকে বোকা মনে হয় তোমার। মানছি একটা সময় আমি তোমায় খুব ভালোবাসতাম,,, বাট এখন তোমার প্রতি এসব সো কলড ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও আমার মনে নেই।তোমার জন্য না এই শাস্তিটাও অনেক সামান্য দিয়েছেন আল্লাহ,,, ওনার উচিত ছিলো তোমাকে আরও বড় কোনো শাস্তি দেয়ার। বাই দা ওয়ে,,,আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,,,। একসপ্তাহ পর এনগেজমেন্ট। তোমার দাওয়াত রইলো। আমার বিয়েতে তোমার স্বামীকে নিয়ে এসো কেমন?
ইলিয়ানা:-কীইই? তুমি বিয়ে করছো?কাকে?কে সেই মেয়ে?(অবাক হয়ে)
আশিয়ান:-অফকোর্স আমি বিয়ে করছি। ভেবোনা এতদিন তোমার দুঃখে সিঙ্গেল ছিলাম,,,আসলে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলাম তো তাই এতদিন বিয়ে করা হয়ে উঠে নি।আজ গিয়ে আমার আব্বু চাচ্চু মিলে আমার এবং আমার কাজিন তাসকিনের এনগেজমেন্ট ঠিক করে এসেছেন। সামনের শুক্রবার এনগেজমেন্ট। আর জানো মেয়েটা অনেক ভালো এটলিস্ট তোমার মতো ছলনাময়ী নয়। আর হুরপরীর মতো সুন্দরী,, তুমি তো তার নখের যোগ্যও নও।
ইলিয়ানা:-এভাবে বলো না প্লিজ আশিয়ান,,,আর যাই হোক আমি তোমাকে এখনো ভালোবাসি।
আশিয়ান:-ভালোবাসা মাই ফুট।। তোমার এসব সো কলড ভালোবাসার গুষ্টি কিলাই। ফোন রাখাে,,,আর কক্ষনো আমাকে ফোন দিবা না।আমি এক্ষুনি তোমার নাম্বার ব্লকলিস্টে ফেলছি।আমাকে ডিস্টার্ব না করে তোমার ঐ আঙ্কেলমার্কা হাসবেন্ডকে নিয়ে সুখে সংসার করো,,,। গুডবাই ফরেবার।
ইলিয়ানার আর কোনো কথা না শুনে ফোন কেটে দিলো আশিয়ান। সাথে সাথে নাম্বারটা ব্লকলিস্টে ফেলে নাম্বার ফোন থেকে ডিলিট করে দিয়ে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেললো সে। মন থেকে মুছে ফেলতে চায় সে এসব বিষাক্ত কালো অতীত। বর্তমানকে নিয়ে বেঁচে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর যাই হোক,, আল্লাহ যা করেন সবসময় ভালোর জন্যই করেন,,,। এবারও নিশ্চয়ই তার জন্য ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে। নিজের মনকে শান্তনা দিয়ে রুমে ফিরে চললো আশিয়ান। বারান্দার ডোর লক করে পর্দা মেলে দিয়ে রুমের লাইট নিভিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো সে। অতঃপর নানান চিন্তাভাবনা করতে করতে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।
🌄🌄🌄
পরদিন সকালে,,
ঊদিতা ঘুম থেকে অনেক সকাল সকাল ওঠে যায়।এটা তার অভ্যাস। সে একা নয়,,, তার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষেরই একই অভ্যাস। ঘুম থেকে ওঠে ফজরের নামাজ পড়ে তাদের সবার দিনশুরু হয়৷ এটা ভীষণ ভালো একটা অভ্যাস। যা শরীর ও মনের জন্য খুব উপকারী।
ফুপ্পির বাড়িতে এসেও অভ্যাসটা একটুর জন্যও হেরফের হয়নি ঊদিতার। সকালে উঠে নামাজ পড়ে নিজে নিজেই ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুম,কিচেন, সে যে রুমে ছিলো সে রুম,উঠান, ছাদ সব পরিষ্কার করলো সে। এটো থালাবাসন যা ছিলো তা সব ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে যথাস্থানে রাখলো। ছাদের উপর তার ফু্প্পির শখের ফুলগাছ ও কয়েকটা সব্জি গাছ আছে সেগুলোতে পানি দিলো। তারপর আবার কিচেনে এসে সবার জন্য নাস্তা বানাতে লাগলো।
কাজ ছাড়া একমিনিটও বসে থাকতে পারে না ঊদিতা।নিজের বাসায় তো টইটই করে সারাদিন নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতো সে। এখানে আসার পর ফুপ্পি তাকে কিছুই করতে দেননি একমাত্র কালকে ছাড়া। তাইতো সকালে উঠেই সবার জন্য নাস্তা বানায় সে।
ফুপ্পি তাকে বকেন এসব কাজ করার জন্য আবার মনে মনে খুশিও হন। তানিয়া ঊদিতাকে ভীষণ ভালোবাসে। তার কারণ হলো,, ঊদিতা এখানে এলে তানিয়াকে সবকাজে হেল্প করে,, অথচ আলেয়া আপন ননদ হয়েও তাকে কোনো ধরণের কাজে সাহায্য তো করেই না,,উল্টো আরও ফরমায়েশ দেয়। তাকে প্রত্যেকদিন সকালে ও বিকালে কফি বানিয়ে দিতে হয়,,, তার জন্য পছন্দের খাবার রান্না করতে হয়। তার রুম গুছিয়ে দিতে হয়। তানিয়া একটু নরম প্রকৃতির বলে সব মানিয়ে নিচ্ছে। অন্যকেউ হলে কপালে ঝাটার বাড়ি মারতো।
মিসেস লিমা ও তানিয়া প্রায় সকাল ৯ টার দিকে ঘুম থেকে ওঠলেন।কতদিন পর আজ শান্তিতে দেরী করে ঘুম থেকে ওঠলো তানিয়া।ঊদিতা না থাকলে সে সেই সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে ওঠে বাসার সমস্ত কামকাজ করে।
ঊদিতা ততক্ষণে সব নাস্তা বানিয়ে ডাইনিং টেবিলের ওপর সাজিয়ে রেখে গোসল করে আবারও ডাইনিং রুমে চলে এসেছে। মিসেস লিমা এত সুন্দর নাস্তার বহর দেখে খুব খুশি হলেন,,, তারপরও ঊদিতার দিকে তাকিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বললেন;
মিসেস লিমা:-এই মেয়ে,,, এতসব কাজ করতে তোকে বলেছি আমি?এসব করার জন্য তানিয়া আছে। তুই কেন করতে গেলি?
ঊদিতা:-উফফ,,,কী যে বলো না তুমি ফুপ্পি!আমি তো এমনিতেই কয়েকদিন পর চলে যাবো,,, তাহলে যতদিন আছি ততদিন নাহয় তোমাদেরকে একটু রান্না বান্না করে খাওয়াই। ভাবী তো এতগুলো বছর ধরেই এসব কাজ করে আসছে। এখন নাহয় ওনি কয়েকটা দিন অবসর সময় কাটাক।আমি ননদ হয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে খাবো আর ভাবী সারাদিন ধরে গাধারখাটুনি খাটবে,,আমি তা সহ্য করতে পারবো না ফুপ্পি। তা তুমি ভালো করেই জানো!
মিসেস লিমা এবার আমতা আমতা করে বললেন;
মিসেস লিমা:-তারপরেও,,,
ঊদিতা তাকে আর কিছু বলতে দিলো না। জোর করে তাকে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিয়ে বললো;
ঊদিতা:-আর কোনো কথা নয়। পারলে তোমার মেয়েকেও বলে দিও ভাবীকে একটু রেসপেক্ট করতে। ভাবীও কিন্তু একটা মেয়ে। হাজার হোক তারও কিন্তু শখ আহ্লাদ ও প্রাইভেসি বলতে কিছু আছে।আর তোমার মেয়ের যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তারও কিন্তু বোন আছে।এমন না হয় যেন আবার ওই মেয়েটা আলেয়া আপুকে সারাক্ষণ ফরমায়েশের ওপর রাখে। এই যে তোমার মেয়ে এত এত ফরমায়েশ প্রদান করে ভাবীকে,, ভাবী তো এ বাড়ির চাকরানি নয়। এ বাড়ির বউ হোন ওনি।তোমার একটামাত্র ছেলের একটামাত্র বউমা। তার কী রেস্ট নিতে মন চায় না। তাও তো সে মুখ ফুটে কিছু বলে না কাউকে। ভুলে যেও না ফুপ্পি,,,তুমিও কিন্তু এককালে কারও বউমা ছিলে। আম্মুর মুখে শুনেছি তোমার শ্বাশুড়ি মা খুবই স্ট্রিক্ট একজন মহিলা ছিলেন। সারাদিন তোমাকে দিয়ে কাজের মেয়ের মতো কাজ করাতো। তাও তুমি মুখ ফুটে কারও কাছে অভিযোগ করতে না। নিজের সংসারকে সযত্নে নিজ হাতে আগলে গুছিয়ে রেখেছিলে। যার কারণে দেখাে আজ তুমি খুব সুখে আছো নিজের ছেলেমেয়েকে নিয়ে। তুমি চাইলে কিন্তু সেরা একজন শ্বাশুড়ি মা হতে পারো ফুপ্পি। ভাবীকে কখনো বউমা মনে না করে নিজের মেয়ে ভাবতে পারো। দেখবে তোমার এ সংসারে সুখ উপচে পড়বে। আমার ভাবী কিন্তু অনেক ভালো।
লম্বা এক বক্তৃতা দিয়ে থামলো ঊদিতা। মিসেস লিমা ঊদিতার বলা কথাগুলো শুনে মাথা নিচু করে বসে রইলেন। ঊদিতার কথাগুলো তাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিলেন তিনি তার বউমার সাথে আজ থেকে নিজের মেয়ের মতো ব্যবহার করবেন। তার উপর কখনো সংসারের সব কাজ চাপিয়ে দেবেন না আর। অন্তর থেকে ভালোবাসবেন তানিয়াকে।
তানিয়া টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ঊদিতার বলা সমস্ত কথা মন দিয়ে শুনলো। মেয়েটা এত ভালো কেন?কী সুন্দর তাকে বুঝতে পারে সে!মনে মনে ভাবছে তানিয়া। ঊদিতার বয়স যখন মাত্র ১২ বছর তখন সে এ বাড়িতে বউ হয়ে আসে। এবং তখন থেকেই ঊদিতা তাকে অমায়িকভাবে স্নেহ করে নিজের আপন বোনের মতো। তানিয়াও তাকে ভীষণ স্নেহ করে।
তানিয়ার ধ্যান ভাঙলো তার শ্বাশুড়ি মা মিসেস লিমার ডাকে;
মিসেস লিমা:-তানু,,, চেয়ার টেনে বসে পড় মা।আজ থেকে একসাথে নাশতা করবো আমরা।
মিসেস লিমা এত গুলো বছর পর এই প্রথম তানিয়াকে নিজের মেয়ের মতো তুই করে ডাকলেন। সেই ডাক ভীষণ আন্তরিক ও স্নেহ জড়ানো ছিলো। তানিয়ার চোখ জ্বলে টলমল করে ওঠলো। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠেছে তার।খুশি হয়ে একবার ঊদিতার দিকে তাকালো সে। সেই দৃষ্টিতে ছিলো স্পষ্ট একরাশ কৃতজ্ঞতা। ঊদিতা তানিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ইশারা দিয়ে বসতে বললো তাকে ৷ তানিয়া হাসিমুখে জবাব দিলো;
তানিয়া:-জ্বী মা। বসছি। ঊদিতা তুমিও বসে যাও আমাদের সাথে?
ঊদিতা:-এইতো নাশতা বেড়ে দিয়েই বসছি।
ঊদিতা তিনজনের প্লেটে নাশতা বেড়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়লো চেয়ার টেনে। অতঃপর বিভিন্ন ধরনের গল্পগুজব করে নাশতা করতে লাগলো ওরা ৷ মিসেস লিমা ওদের দুজনের সাথেই আলেয়ার এনগেজমেন্টের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করতে লাগলেন খুশিমনে।
তানিয়া তার শ্বাশুড়ির সাথে বেশ অনেকটা ক্লোজ হয়ে গেছে এতসময়ে। মিসেস লিমাও তানিয়ার সাথে এনগেজমেন্টের ব্যাপারে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ডিসকাস করলেন। ঊদিতা তাদের শ্বাশুড়ি বউমার বন্ডিং দেখে মনে মনে ভীষণ খুশি। সে তো এটাই চায় যে ওরা সবসময় মিলেমিশে থাকুক। শ্বাশুড়ি বউমার মধ্যে কোনো প্রকার ভেদাভেদ না থাকুক।
আলেয়া নবাবের মতো বেলা ১২ টায় ঘুম থেকে ওঠলো। ওঠেই মিসেস লিমার কাছে একগাদা বকা খেলো সে। কথায় কথায় তার সাথে ঊদিতার তুলনা করলেন তিনি। ঊদিতার ব্যাপারে এত এত প্রশংসা শুনে কফির মগ আর বিস্কুটের প্লেট হাতে নিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আবারও নিজের রুমে চলে গেল আলেয়া। ঊদিতার প্রশংসা মোটেও সহ্য করতে পারে না সে।তার নানার বাড়ির বংশের মাঝে ঊদিতা সবথেকে বেশি আদরের এবং সে অনেক বেশি প্রশংসনীয় প্লাস রূপে গুণে অনন্যা,, এজন্য তাকে আরও সহ্য করতে পারে না আলেয়া। মনে মনে ঊদিতাকে ভীষণ হিংসা করে সে।
নাস্তা শেষে ঊদিতা রুমে গিয়ে বাবা মায়ের সাথে ফোনে কথা বললো বেশ কিছুক্ষণ। তারপর সময় কাটাতে সোফার রুমে বসে টিভি অন করে টম এন্ড জেরি দেখতে লাগলো। আলেয়া রুমে বসে তার ফ্রেন্ডসার্কেলের সাথে ফোনে চ্যাট করতে ব্যস্ত। মিসেস লিমা ওনার আত্মীয় স্বজন,,, ভাসুর,দেবর ও জাঁদেরকে ফোনের মাধ্যমে এনগেজমেন্টের দাওয়াত দিচ্ছেন। রান্নাঘরে তানিয়া তার ছেলেমেয়ের জন্য আলাদা করে ঝালছাড়া খাবার রান্না করছে। আর ঊদিতার ফুপা গেছেন ওনার চালের আড়তে ও ভাই মুরাদ সে তার অফিসে চলে গিয়েছে। ছেলেমানুষ বাসায় কেউ নেই। বাকি সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।
🌸🌸🌸
এদিকে,,
চৌধুরী হাউজে,,
আশিয়ান সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে একমগ স্ট্রং ব্ল্যাক কফি খেয়ে ছাদে চলে গেল। ছাদের একপাশে ওর পার্সোনাল একটা রুম আছে। সেখানে ওর সমস্ত জিম করার যন্ত্রপাতি রাখা। দৈর্ঘ্যে প্রস্থে অনেক বড় ও প্রশস্ত রুম সেটি। সেখানে গিয়ে প্রায় একঘন্টার মতো জিম করলো সে। তারপর রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে ডাইনিং রুমে গেল নাস্তা করতে।
ডাইনিং রুমে এসে দেখলো ওর আব্বু মি.মোরশেদ ও চাচ্চু মি.এনামুল, তার আপন বড়ভাই তাহমিদ,ছোটভাই তাশজিদ, ছোটবোন এনা,কাজিন- বড়ভাই তামজিদ, তাসকিন ও ছোটভাই তাজিম ওরা সবাই নাস্তা করছে। সেও গিয়ে এনার পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়লো। আজ প্রায় একসপ্তাহ পর সবার সাথে নাস্তা করতে বসেছে সে। এনা ভাইকে দেখে খুশি হয়ে বলে উঠলো;
এনা:-গুড মর্নিং ভাইয়া,,,
আশিয়ান ও হাসিমুখে আদুরে কন্ঠে জবাব দিলো ;
আশিয়ান:-গুড মর্নিং সুইটু,,,
বাকি সবাইকেও হাসিমুখে বললো;
আশিয়ান:-গুড মর্নিং এভরিওয়ান!!
আশিয়ানের এত সাবলীল ও স্বাভাবিক আচরণে মনে মনে অবাক হলেও তারথেকেও বেশি সবাই খুশি হলো খুব। তাকেও ওরা গুড মর্নিং জানালো।সবচাইতে বেশি খুশি হলেন মিসেস ইয়াসমিন। তার ছেলে যে তার কালো অতীত ভুলতে চাচ্ছে তা তিনি খুব ভালো করে বুঝতে পারছেন।
রান্নাঘরে কেয়া, তারিন, মিসেস তারানা কাজ করছেন। আশিয়ান মিসেস ইয়াসমিনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো;
আশিয়ান:-আম্মু আমাকে এককাপ মালাই চা দাও তো,,অনেকদিন হলো খাই না।
মিসেস ইয়াসমিন ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-এক্ষুনি দিচ্ছি বাবা।
আশিয়ানের জন্য বরাদ্দ করে রাখা আলাদা কাপে কেতলি থেকে চা ঢেলে আশিয়ানের সামনে এনে রাখলেন তিনি। আশিয়ান মুচকি হেসে প্লেট থেকে একটা স্যান্ডউইচ হাতে নিয়ে কামড় বসালো তাতে। মি.মোরশেদ গলা খাঁকারি দিয়ে আশিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললেন;
মি.মোরশেদ:-তা তোমার বিজনেস কেমন চলছে আশিয়ান?
আশিয়ান চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো;
আশিয়ান:-আলহামদুলিল্লাহ পাপা,, ভালোই যাচ্ছে। গতকাল কানাডার একটা কোম্পানি থেকে ৫০০ কোটি টাকার ডিল কনফার্ম হয়েছে। আরো দুটো ডিল আপাতত পেন্ডিংয়ে আছে। মিটিংএ প্রেজেন্টেশন করার পর ভালো লাগলে তবে কনফার্ম করবো।
মি.এনামুল ভাতিজার কাজের এমন অগ্রগতি দেখে খুশি হয়ে বললেন;
মি.এনামুল:-আরে বাহ,,,ভালো তো। আমাদের আশিয়ান যে আমাদের থেকেও টপ বিজনেসম্যান হয়ে গেল দেখছি। দোয়া করি তোর কোম্পানির আরও উন্নতি হোক।
মিসেস ইয়াসমিন:-আমিন।। আমার ছেলের এত কষ্ট এত পরিশ্রম অবশ্যই সফল হবে। (প্রশংসা করে)
তাহমিদ:-হ্যা রে,,,তোর অফিসের জন্য যে বলেছিলি এমপ্লয়ি লাগবে,,,বেশ কয়েকটা পোস্ট খালি হয়েছে শুনলাম,,, তো এমপ্লয়ি কী পেয়ে গেছিস নাকি?
আশিয়ান:-আজকে ইন্টারভিউ নেয়া হবে। যোগ্যতা ও কতটুকু পরিশ্রম করতে পারবে সেটার উপর নির্ভর করে বাছাই করা হবে। জানোই তো কাজে আলসেমি আমি মোটেই পছন্দ করি না।কাজের প্রতি সিনসেয়ার টাইপের লোক লাগবে আমার।
তাহমিদ:-ওহহ,,,আমার পরিচিত দুজনও আজ তোর অফিসে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে। তোর যা চাহিদা,, দেখা যাক টেকে কী না!!
আশিয়ান:-টেকলে ভালো না টেকলে কিছু করার নেই। কাজের মধ্যে আমি পরিচিত, আত্মীয় এসব দেখে রাখি না। যোগ্যতা ও পরিশ্রমী অনুযায়ী কাজ পায় লোকে। হোক সে পরিচিত অথবা অপরিচিত।(চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে)
তাজিম:-ভাইয়া,, আমি আজ তোমার অফিসে যাবো কিন্তু দেখতে,,,।
আশিয়ান:-তো যা না,,,কে মানা করছে তোকে?আর হ্যা শোন,, আমার সাথে লান্চ করবি আজ,,,। দু ভাই একসাথে জম্পেশ আড্ডা দিবো নে। লান্চ শেষে বাসায় চলে আসবি! (সহাস্যবদনে)
তাজিম খুশি হয়ে বললো;
তাজিম:-ঠিক আছে ভাইয়া।
তাশজিদ:-এমা তাহলে আমি কী দোষ করলাম? এই আমাকেও সাথে নিয়ে যাবি কিন্তু তাজিম,,,এত সুন্দর মুহূর্তকে আমি মিস করতে চাই না। ভাইয়ার সাথে আড্ডা দেয়া আর অমাবস্যার চাঁদ হাতে পাওয়া সমান কথা।
আশিয়ান:-কাব্যিক কথাবার্তা বাদ দে,,,তোর না হসপিটালে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস আছে শুনলাম?
তাশজিদ:-ও তো ১২ টায় শেষ হয়ে যাবে,,,তারপর আমি ফ্রী,,। তোমার অফিসে যেতে কোনো সমস্যা নেই আমার। আমি দুই পায়ে খাঁড়া। (চশমা ঠিক করে দাঁত কেলিয়ে হেসে)
তাসকিন:-আমিও ১২ টা পর ৩ ঘন্টার জন্য ফ্রী আছি আজ। তোদের সাথে যেতে কোনো প্রবলেম নেই। আমাকে ফেলে ভুলেও খাওয়া দাওয়ার প্ল্যান করিস না তোরা,,,ভালো হবে না কিন্তু। আর হ্যা আগেভাগে বলে দিচ্ছি,,, আমি কিন্তু একটাকাও দিতে পারবো না।
আশিয়ান:-দিতে হবে না তোর টাকা,,,কিপটা কোথাকার।। যা আজকে আমি তোদের ট্রিট দিবো। যত খেতে পারিস।
তাজিম:-থ্যাংকিউ ভাইয়া। (দাঁত বের করে হেসে)
এনা মাঝখান থেকে বলে উঠলো;
এনা:-আমি মানি না।। আমাকে ফেলে তোমরা এভাবে প্ল্যান করতে পারো না। আমি কিন্তু এবার কান্না করে দিবো। (হুমকি দিয়ে)
আশিয়ান হেসে ফেললো বোনের থ্রেড দেয়া দেখে। মুচকি হেসে ওয়ালেট থেকে একটা ডেবিট কার্ড বের করে দিয়ে বললো;
আশিয়ান:-ওদের সাথে গেলে তুই তেমন মজা পাবি না এনু। তার থেকে তুই তোর ফ্রেন্ডের সাথে শপিংয়ে চলে যা। তাের যা মন চায় কিনে নিস। চিন্তা করিস না,, ডেবিট কার্ডে মোট ৫ লাখ টাকার মতো আছে। সো নো চিন্তা,, ডু ফুর্তি।পারলে ভাইয়ার জন্য ও কিছু কাপড় চোপড় কিনে নিয়ে আসিস। তোর চয়েস তো আবার ফার্স্ট ক্লাস। আমি কেনাকাটা করার তেমন সময় পাচ্ছি না কাজের চাপে ৷
এনা খুশি হয়ে বলে উঠলো;
এনা:-ইয়েএএএ,,,আজকে শপিংয়ে যাবো। থ্যাংকিউ সো মাচ ভাইয়া। ঠিক আছে চিন্তা করো না তোমার জন্যও শপিং করে নিয়ে আসবো।
তাশজিদ:-এনাকোন্ডা সব নিয়ে গেল রে!ভাইয়া তুমি ওকে গোটা কার্ডটাই দিয়ে দিলে? এই এনাকোন্ডা,,,আমার জন্যেও কিনে আনিস কয়েকটা টি-শার্ট।
এনা মুখ দিয়ে ভেঙচি কেটে বলে উঠলো;
এনা:-এহ আইছে আমার মহারাজা,,,অর্ডার করছে আমারে,,,। আমার ঠেকা পড়সে তোর জন্য শপিং করবো,,,বলদ একটা। জাহান্নামে যা,, গো টু হেল ইউ বলদের হাড্ডি,, কতবড় সাহস আমাকে এনাকোন্ডা বলে ডাকে। তোর হাড্ডি যদি গুঁড়া গুঁড়া না করছি তো,,, আমারে তুই চিনোস নাই এখনো,,,।(রাগে গজরাতে গজরাতে)
তাশজিদ:-তুই বলদ,,,তুই এনাকোন্ডা,,, তুই বিচ্ছু,,,তুই একটা লেজছাড়া বাঁদর,,, তুই রানুমন্ডল প্রো ম্যাক্স,,,তুই কিপটা,,,তুই তার ছিঁড়া ইন্জিনিয়ার,,, তুই,, তুই,,(বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেল না সে)
এনা এবার রাগে ফুঁসে ওঠে একটা চামচ দিয়ে ঢিল মারলো তাশজিদকে। চামচটা ওর হাতে গিয়ে লাগলো। তেমন একটা লাগে নি তার। এসময় আশিয়ান হালকা ধমক দিয়ে বলে উঠলো;
আশিয়ান:-এই বেয়াদবেরা,,, ঝগড়া থামাও তোমরা নয়তো কাউকেই কিছু দিবো না আর। এতবড় ছেলেমেয়ে তোরা দুদিন পর একজন ইন্জিনিয়ার আর একজন ডক্টর হয়ে যাবি তারপরও মারামারি ছাড়লি না। কী এসব?
তাজিম:-এই তোরা না টুইন ভাইবোন?তাহলে কথায় কথায় এত মারামারি করিস কেন তোরা৷ শান্তিতে বসে নাস্তা খাবি,,, তা না করে পায়ে পা রেখে ঝগড়া শুরু করলি।শেইম অন ইউ গাইজ।
এনা জ্বলন্ত চোখে তাশজিদের দিকে তাকালো। যেন চোখ দিয়েই তাকে ভস্ম করে ফেলবে। এনাকে রাগাতে ভীষণ ভালো লাগে তাশজিদের। এনার রাগ দ্বিগুন করার জন্য দাঁত কেলিয়ে একটা ক্লোজআপ মার্কা হাসি দিলো সে। বিনিময়ে এনা হাত মুঠো করে ঘুষি দেখালো।আশিয়ান সামনে দেখে এনা চুপ করে গেছে,, নইলে এতক্ষণে তাশজিদের খবর করে ছাড়তো সে।
আজ অনেকদিন পর ভাইবোনদের সাথে এত মন খুলে কথা বলছে আশিয়ান।তাদের খুনশুটিগুলো খুব ভালো লাগছে আশিয়ানের। ওই ইলিয়ানার জন্য মনখারাপ করে নিজের ভাইবোনদের সাথে এত দুরত্ব তৈরি করে ফেলেছিলো নিজের অজান্তেই।মনে মনে ভেবে নিলো,,, এখন থেকে তাদের সাথে সময় কাটাবে বেশি করে। তাহলে নিজেকে আর একা লাগবে না।
তামজিদ কফির মগ হাতে নিয়ে একটা পত্রিকা পড়ছিলো বসে বসে।হঠাৎ সামনের পৃষ্ঠায় নজর বুলাতেই একটা নিউজ পড়ে থমকে গেল সে। উত্তেজিত হয়ে সবাইকে দেখিয়ে বলে উঠলো;
তামজিদ:-দেখাে দেখাে,,,ফ্লাইওভারের নিচে ঐ নারীপাচারকারী মদনকে মাফিয়া সারাজ খান মেরে ফেলে রেখে এসেছে। অনেক নিকৃষ্টভাবে মেরেছে তাকে,,,দেখতে কী বিভৎসই না লাগছে।মাগো,,, ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে ওঠছে আমার।
এনা:-কই দেখি,,,
এই বলে তামজিদের হাত থেকে পত্রিকাটা নিয়ে সারাটা কলাম পড়ে শেষ করলো সে।আশিয়ান নির্বিকার চিত্তে চা খাচ্ছে। যেন এতে তার কোনো ভাবান্তর নেই। এনা প্রশংসা করে বলে উঠলো;
এনা:-কিং সারাজ খান আছে বলেই এখন কেউ অন্যায় করতে হলে দশবার চিন্তা করে। আজকের এই ঘটনাটা অপরাধীদের মনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এরকম সারাজ খান যেন ঘরে ঘরে জন্মায়। তাহলে বাংলাদেশে আর অন্যায় বলে কিছু থাকবে না। এবং মেয়েরা নিরাপদে সম্মানের সঙ্গে চলাফেরা করতে পারবে। (উচ্ছ্বসিত কন্ঠে)
বাকিরাও তার কথায় সায় জানালো।এনার হাত থেকে মি.এনামুল এবার পত্রিকাটা নিয়ে পড়তে লাগলেন।
এনা মনে মনে তার ভাই আশিয়ানকে সন্দেহ করে এ ব্যাপারে। ওর মাঝে মধ্যে মনে হয় যে এই আশিয়ানই হয়তো মাফিয়া কিং সারাজ খান। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তাকে হাতেনাতে ধরতে পারছে না সে। তবে তার ভাই-ই যদি সারাজ খান হয় তাতে তার কোনো আপত্তি নেই,,, বরং সে আরও খুশি হবে।সে সারাজের বিরাট বড় ফ্যান।তাই তার এসব সন্দেহের কথা সে কাউকেই জানায় নি। কী দরকার এসব বলে মানুষের মনে সন্দেহ জাগিয়ে নিজের ভাইকে বিপদে ফেলার!তার ভাই হয়ে থাকলেও তো সব সিক্রেট ফাঁস হয়ে যাবে।যেখানে আজ পর্যন্ত সারাজ খানের চেহারাও কেউ কখনো দেখে নি,,না তার পরিচয় সম্পর্কে কেউ জ্ঞাত। কিং সারাজের গ্রুপ ভীষণ কেয়ারফুল এসব বিষয়ে। আজ পর্যন্ত তার গ্যাঙের কাউকেই সাধারণ মানুষেরা কখনো দেখে নি। যার পরকালের টিকেট কাটা হয়ে গেছে একমাত্র সেইই সারাজকে দেখতে পেয়েছে নয়তো কেউ না। এনা এসব কিছু জানে তাইতো এই অমূলক সন্দেহের কথা পরিবারের কাউকেই বলে নি,,,,এতে অনেক অসুবিধা দেখা দেবে।তাই চুপ করে থাকাটাই শ্রেয়।
আশিয়ান নাস্তা শেষ করে নিজের রুমে চলে এলো। রুমে এসে অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলো সে। কালো রঙের শার্ট ইন করে পড়ে তার উপর পড়লো কালো রঙের ব্লেজার। সাথে কালো প্যান্ট। কালো শু’জ।কালো ব্রান্ডেড ওয়াচ।কালো সানগ্লাস। এমনকি ফোনের কভার ও কালো। ফুল ব্ল্যাক ফরমাল গেটআপে তাকে ভীষণ মানিয়েছে ৷ আশিয়ানের কালো রঙটা সবসময়েরই খুব পছন্দের। তাইতো বেশিরভাগ সময়েই তাকে কালো গেটআপে দেখা যায়। চুলগুলো জেল দিয়ে একপাশে সেট করে আঁচড়ে নিলো হেয়ার ব্রাশ দ্বারা। আয়নায় নিজেকে একপলক দেখে নিয়ে ফোন ও গাড়ির চাবি হাতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।আজ অনেকদিন পর নিচে এসে মিসেস ইয়াসমিনকে জোরে ডেকে বললো;
আশিয়ান:-আম্মু আমি অফিসে যাচ্ছি,,, ফিরতে লেট হবে ৷
মিসেস ইয়াসমিন এগিয়ে এসে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-সাবধানে দেখেশুনে যাস বাবা।
আশিয়ান:-ওকে আম্মু,,,ডোন্ট ওয়ারি।
এই বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো আশিয়ান।বিশাল বড় গ্যারেজ থেকে নিজের ব্ল্যাক ফেরারি গাড়ি বের করে নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো সে।
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং গঠনমূলক কমেন্ট করবেন সবাই আশা করি।নাইস নেক্সট এসব লিখবেন না প্লিজ অনুরোধ রইলো।এন্ড হ্যাপি রিডিং গাইজ,,,🌷)
চলবে…🍃

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here