তোমাতে বিলীন – পর্ব 05

0
603

#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ০৫ ||
মিসেস ইয়াসমিন আশিয়ান ও ঊদিতার ব্যাপারে মি.মোরশেদকে জানালেন সব। ছেলে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে শুনে খুব খুশি হলেন তিনি। এই নিয়ে তো তার জন্য কম মেয়েকে দেখা হয়নি৷ প্রত্যেকটা বিয়ের প্রস্তাবই রিজেক্ট করেছে সে। কোনো মেয়ের ছবি দেখেও তার ভালো লাগে নি। হাজারটা খুঁত খুঁজে বের করতো। বিয়ে না করার ধান্ধা সব তা ওনারা ভালোই বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু এবার সে নিজে থেকেই বিয়েতে রাজি হয়েছে তাও কনে না দেখেই এটা খুবই অবাক করা বিষয় মি.মোরশেদের কাছে।
তাও তিনি খুশি হয়েছেন। এটলিস্ট রাজি তো হয়েছে বিয়ের জন্য এটাই যথেষ্ট। মি.মোরশেদ মিসেস ইয়াসমিনকে আদেশ দিলেন যত জলদি সম্ভব ঊদিতার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে ওদের বিয়ের বিষয়টা পুরোপুরি পাকাপোক্ত করে ফেলতে। নইলে আবারও যদি আশিয়ানের মত পাল্টে যায় তাহলে তো সমস্যা!বলা যায় না কিছু,,, ওকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। মিসেস ইয়াসমিন ও সায় জানালেন মি.মোরশেদের কথায়।
সাড়ে নয়টার দিকে এনা তার ক্লাসে চলে গেল। তাহমিদ, তামজিদ ও তাসকিন তাদের অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেল। তাশজিদ গেল হসপিটালে এবং তাজিম গেলো তার ভার্সিটিতে। পিচ্চি দুইটা এরাত এবং পুতুল ওরা সেই সকালে স্কুলে চলে গিয়েছে। মি.মোরশেদ এবং মি.এনামুল ও দেরী না করে ওনাদের অফিসে চলে গেলেন। মহিলারা ও সার্ভেন্টরা ছাড়া বাসায় আর কেউ নেই।
মিসেস ইয়াসমিন বেলা প্রায় আড়াইটা পর রান্না বান্না ও অন্যান্য কাজকর্ম সেড়ে একদম ফ্রী হয়ে মিসেস লিমাকে ফোন দিয়ে ওনার সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বললেন। মিসেস লিমাও বেশ আন্তরিকতার সাথে মিসেস ইয়াসমিনের সাথে কথা বলছেন। মিসেস ইয়াসমিন একটুও সংকোচ না করে ডিরেক্টলি ঊদিতাকে আশিয়ানের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। ওনার ছেলে যে ঊদিতাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে একথাও জানালেন মিসেস লিমাকে।
মিসেস লিমা খুব খুশি হলেন মনে মনে। রাজপুত্রের মতো ছেলেটার সাথে ঊদিতার বিয়ে হবে,, ভাবতেই ভীষণ উৎফুল্ল হয়ে গেছেন তিনি। মিসেস ইয়াসমিনকে তিনি কথা দিলেন ঊদিতার আব্বু আম্মুকে কালকেই তিনি তার বাসায় ডেকে আনবেন এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন ওদেরকে রাজী করানোর। ওনার ছোট ভাই ওনার কথা ফেলবে না বলে প্রচুর আত্নবিশ্বাস রয়েছে মিসেস লিমার মনে।
মিসেস ইয়াসমিনকে তিনি নিশ্চিন্তে থাকতে বললেন। এবং মি.মোরশেদ ও মিসেস ইয়াসমিনকে আবারও দাওয়াত জানালেন আগামীকাল ওনাদের বাসায় যাওয়ার জন্য।মিসেস ইয়াসমিন ও হাসিমুখে দাওয়াতটা গ্রহন করলেন। তাদের ওখানে যাওয়াটা যে ভীষণ জরুরি।
মিসেস ইয়াসমিন দুপুরের খাওয়া সেড়ে রেডি হয়ে কেয়াকে সাথে নিয়ে ঢাকার বসুন্ধরা সিটিতে চলে গেলেন। উদ্দেশ্য,, ঊদিতার জন্য কিছু কেনাকাটা করবেন। যেতে যেতে কেয়াকে সব কিছু খুলে বললেন তিনি। কেয়া যেমন অবাক হলো তেমনই খুশিও হলো। যাক তার দেবর তো বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এটাই অনেক বেশি।যে ছেলে বিয়ের কথা বললেই খেপে যেত,, রাগ দেখাতো,, সে যে এত সহজে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে যাবে তা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে কেয়ার।
ড্রাইভার পার্কিংলটে গাড়ি পার্কিং করার পর দুজন কথা বলতে বলতে শপিংমলের ভেতর প্রবেশ করলো। কেনাকাটা করতে করতে এনা ও তার বান্ধবী তিশার সাথে ওনাদের দেখা হয়ে গেল।ওরাও ক্লাস শেষ করে সোজা শপিংমলে চলে এসেছে। তারপর ওরা সবাই একসাথে মিলে প্রচুর শপিং করলো।
🌸🌸
আশিয়ানের গাড়ি দেখামাত্রই সিকিউরিটি গার্ড তাড়াতারি করে গেট খুলে দিলো। গেট খোলার সাথে সাথে আশিয়ান গাড়ি নিয়ে অফিসের পার্কিং এরিয়ায় শাঁ করে ঢুকে পড়লো।গাড়ি পার্ক করার সঙ্গে সঙ্গে একজন গার্ড এসে গাড়ির দরজা খুলে মেলে ধরলো ৷গার্ডের হাতে গাড়ির চাবি দিয়ে ফোন হাতে ব্যস্ত ভঙ্গিতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা অফিসের মেইন ডোর দিয়ে ঢুকে পড়লো আশিয়ান।
প্রথমতলায় যত কর্মচারীরা ছিলো সবাই দাঁড়িয়ে গেলো আশিয়ান প্রবেশ করায় ৷ অফিসের ম্যানেজার এসে তাকে সালাম দিয়ে জানালেন যে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রায় ২৫০ জনের মতো মানুষ এসেছে। আশিয়ান তাদেরকে বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে বলে লিফটে উঠে গেল। আশিয়ানের কেবিন ৫ম তলায়।মিনিট দুয়েক পর লিফট গিয়ে পাঁচতলায় পৌঁছে গেলো।
লিফট থেকে বেরিয়ে ব্লেজার টেনে ফিট করে নিজের কেবিনের দিকে যেতে লাগলো সে। এখানেও যত কর্মচারীরা ছিলো তারা সবাই আশিয়ানের সম্মানার্থে বসা থেকে কাজ রেখে দাঁড়িয়ে গেলো। আশিয়ান তাদেরকে হাত দিয়ে বসতে ইশারা করে কেবিনের ভেতর চলে গেল। আশিয়ানের এত এটিটিউডের কারণে অফিসের প্রত্যেকটা মেয়ে তার জন্য পাগল। কিন্তু ভয়ে কেউ জীবনেও সেসব প্রকাশ করে না।
শুধুমাত্র এসব কারণে আশিয়ান প্রায় শ’খানেক মেয়ের চাকরি খেয়েছে। তাই আশিয়ানকে কারো ভালো লাগলেও তা নিজের মনের মধ্যে চেপে রাখে। কারো সাথে শেয়ার করার ও উপায় নেই। এতটাই কঠোর পদ্ধতি ও নিয়ম এ অফিসের।
কাজ করার নির্দিষ্ট রুলস না মানলে সরাসরি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে এটাই নিয়ম আশিয়ানের অফিসের ৷ এজন্য কাজের ব্যাপারে সবাই স্ট্রিক্ট।টাইমলি অফিসে এসে হাজির হতে হয়।সময়ের এদিক ওদিক হেরফের হলেই এক্সেক্ট কারণ দর্শাতে হয় নাহলে বেতন কেটে রাখা হয়।ছুটি নিতে হলেও উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তবে ছুটি নিতে হয়।এতটাই স্ট্রিক্ট রুলস। কাজের বাইরে এক্সট্রা কোনো কথা বা আলোচনা এখানে এলাও নয়।তাই কাজের বাইরে কেউ এক্সট্রা কথা বলে না।
আশিয়ানের পিএ ইউনুস ও অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ২ জন ব্যক্তি মিলে ইন্টারভিউয়ের বিষয়টা সামলাচ্ছেন। আশিয়ান তার রুমে বসে কফি খেয়ে খেয়ে বেশ কয়েকটা জমে থাকা ফাইলগুলো দেখে দেখে সাইন করলো। অতঃপর পেন্ডিংয়ে রাখা বাকি ডিলগুলোর ব্যাপারে সমস্ত তথ্যাদি খতিয়ে দেখতে লাগলো ৷ একটা কোম্পানি সুইডেনের এবং অন্যটা ইতালির।ফাইলের সবকিছু ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছে সে।কোনো তথ্যাদি যাতে চোখ এড়িয়ে না যায়।
ইন্টারভিউ শেষ করতে করতে বেলা ২:৩০ টা বেজে গেছে। ২৫০ জনের মধ্যে মোটমাট ২৫ জনকে বাছাই করা হয়েছে। এই ২৫ জনকে আগামীকাল আবারও স্বয়ং আশিয়ান নিজে থেকে ইন্টারভিউ নেবে। এটা হচ্ছে চূড়ান্ত বাছাইপর্ব।
সাড়ে বারোটার পর পরই তাজিম, তাশজিদকে নিয়ে আশিয়ানের অফিসে চলে এলো। তার মিনিট পনেরো পর এলো তাসকিন। ৪ ভাই মিলে প্রায় আধাঘন্টার মতন সারা অফিসে চক্কর দিলো। আশিয়ান তাদেরকে সারা অফিসটা আবারও ঘুরে দেখালো। বেশ অনেককিছুর ডেকোরেশন চেঞ্জ করা হয়েছে। আরো সুন্দরভাবে সজ্জিত করা হয়েছে অফিসকে। অফিস ঘুরাঘুরি শেষে তারা অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা 5 Star রেস্টুরেন্টে চলে গেল।
রেস্টুরেন্টে এসে একটা টেবিল বুক করে সেখানে বসে যার যা খেতে ভালো লাগে তা অর্ডার দিলো ওরা। অর্ডারকৃত খাবার আসতে কিছুক্ষণ লাগবে তাই আড্ডায় মশগুল হয়ে গেল সব ভাই।
আশিয়ান তার বেস্ট ফ্রেন্ড ২ টাকে ফোন করে বলেছিলো আগে এখানে চলে আসতে। মিনিট পাঁচেক পর ওরাও এসে হাজির হলো। চেয়ার টেনে বসতে বসতে আসিফ বললো;
আসিফ:-হ্যালো এভরিবডি,,, আজ অনেকদিন পর তোদের সাথে দেখা হলো। কেমন আছিস তোরা সবাই???
তাসকিন:-হুম,,, আমরা সবাই ভালো আছি। তুমি কেমন আছো???
আসিফ:-এইতো বেশ আছি।
তৌহিদ:-আজ সূর্য কোনদিক দিয়ে উঠলো বলতো?স্বয়ং আশিয়ান আমাদেরকে রেস্টুরেন্টে আসার জন্য অফার করেছে।ভাবতেই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে আমার। (টিপ্পনী কেটে)
আশিয়ান:-হয়েছে,,, আর ঢং করতে হবে না। বিয়ে
করে তো দুইটা একদম পর হয়ে গেছিস। এখন আর নিজেদের বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ে না একবারও। হুহ,,,সবগুলাই স্বার্থপর তোরা৷
আসিফ:-আমরা স্বার্থপর হলে তুই কী?প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ছ্যাঁকা খাওয়ার পর থেকে দেবদাস হয়ে তুই একদম নিজেকে আমাদের থেকে গুটিয়ে ফেলেছিস!আমাদের কথা তো ভুলেই গিয়েছিলি তুই। আমরা তো ঠিকই তোর সাথে যোগাযোগ করি সবসময়।আমরা বলে এখনো আছি,, অন্য কেউ হলে ঝাড়ু দিয়ে পিডাইতো।(ভ্রু কুঁচকে)
তাজিম:-হয়েছে ভাইয়ারা,,, এইতো খাবার এসে গেছে। এখন আর নো কথা কাটাকাটি,, খাওয়া শুরু করো সবাই।
ওয়েটার এসে টেবিলে অর্ডারকৃত খাবার সব সাজিয়ে দিয়ে গেলো। খাওয়া শুরু করলো সবাই।
তাশজিদ:-তোমরা জানো,,, তাসকিন ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
আসিফ:-আরে বাহ,,,এতো দারুণ সংবাদ। কংগ্রাচুলেশন তাসকিন।
তৌহিদ:-আহ,,, অনেকদিন হলো কারও বিয়ে খাচ্ছি না,,,। এবার তাসকিনের বিয়ে খাবো ভাবতেই আনন্দ লাগছে। এনিওয়ে তাসকিন,,, কংগ্রাচুলেশন।
তাসকিন:-থ্যাংকস,,,।(মুচকি হেসে)
আসিফ:-কীরে আশিয়ান?তোর ছোটভাইয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তুই কী এভাবেই চিরকুমার থাকবি সারাজীবন?এবার অন্তত বিয়েটা করে নে। তৌহিদ আর আমাকে দেখ,,, বিয়েশাদি করে বাচ্চার বাপ হয়ে গেছি।আর কত এভাবে একা থাকবি বলতো?
আশিয়ান নিরবতা ভেঙে বলে উঠলো;
আশিয়ান:-কে বলেছে আমি চিরকুমার থাকবো?একই দিনে আমারও এনগেজমেন্ট। তোরা তোদের বউ বাচ্চাদের নিয়ে এর কয়েকদিন আগেই চলে আসিস।
সবাই সন্দিহান দৃষ্টিতে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে ;
তাশজিদ:-ফান করছো তুমি তাই না ভাইয়া?এত সিরিয়াস মোমেন্টে তো তুমি কখনো ফান করো না!(চিন্তিত হয়ে)
তৌহিদ:-শালা,,, আমরা সিরিয়াসলি বলছি! আর তুই মজা করছিস আমাদের সাথে?
আশিয়ান:-আজব তো মজা করবো কেন? আম্মু কাল রাতে বললো আমাকে,, তাসকিনের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে ওর হবু বউয়ের মামাতো বোনকে আম্মুর ভীষণ ভালো লেগে গেছে। তারপর আম্মু কাউকে না জানিয়ে ওই মেয়েটাকে আংটি পড়িয়ে ১০ হাজার টাকা সালামি দিয়ে চলে এসেছেন। কাল পরশু মেবি ওর আব্বু আম্মুর সাথে বিয়ের কথাবার্তা বলে সবকিছু পুরোপুরি পাকাপোক্ত করা হবে।
আশিয়ানের কথা শুনে সবাই খাওয়া রেখে হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যেন ওর কথা কারও বোধগম্য হচ্ছে না। অবাক হয়ে তাসকিন বলে উঠলো;
তাসকিন:-ভাই তুই সত্যি বলছিস?মানে তুই ইলিয়ানাকে ভুলে আবার নতুন করে লাইফে মুভ অন করবি?
আশিয়ান:-সে যদি আমার খাঁটি ভালোবাসাকে ফেলে টাকার লোভে ওই বয়স্ক এমপিকে বিয়ে করতে পারে,, তাহলে আমি কেন অন্য কারো সাথে সংসার করতে পারবো না? ওর জন্য আমি কেনো এভাবে দেবদাস হয়ে থাকবো?মানছি আমি ২ বছর নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলাম সবকিছু থেকে, এটা নয় যে শুধু ওর কষ্টে,, নিজের ক্যারিয়ারের জন্য একরকম সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি ,,। ওর জন্য কষ্ট লাগে নি তাও নয়,,ওর কারণে অনেক কষ্ট পেয়েছি আমি প্রতিনিয়ত,,,।তাই বলে নিজের জীবনকে কী একটা সুযোগ দেবো না?ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলাম বলে কষ্ট পেয়েছি,,, কিন্তু ২য় বার তো আর জীবনে ভুল মানুষের আগমন নাও ঘটতে পারে।
আসিফ আর তৌহিদ আশিয়ানের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বাহবা দিলো। তাসকিন,তাজিম ও তাশজিদ খুশি হলো তাদের ভাইয়ের কথা শুনে।
আসিফ:-এই নাহলি আমার বন্ধু,,,!সাবাস ব্যাটা,,,।তোর তারিফ করতে হয়। সত্যি বলেছিস,, বারবার তো জীবনে ছলনাময়ী কারো আগমন ঘটে না। কারো আগমনে জীবন নরকপ্রায় হয়ে যায় আবার কারো আগমনী বার্তায় জীবন হয়ে উঠে স্বর্গীয় সুখের আভাস। তোর জন্য এরথেকেও ভালো কেউ অপেক্ষা করছে দেখিস,,,আন্টির চয়েস বলে কথা,,,। তোর জন্য খাঁটি কাউকেই বেছে নিয়ে আসবেন তিনি আমার বিশ্বাস। এবার সত্যি বিয়েটা করে নে।আমরা সবাই তোর সাথে আছি।
তৌহিদ:-হ্যা রে,,,দেখিস,,, তুই অনেক সুখী হবি। তখন তুই নিজেই বলবি,,, আল্লাহ সেরা কাউকে তোর জীবনসঙ্গী হিসেবে বাছাই করে দিয়েছেন। যাকে পেয়ে তোর জীবনটা সুন্দর সাজানো বাগানের মতো হয়ে যাবে। মিলিয়ে নিস আমার কথা।
তাসকিন:-একসময় ইলিয়ানা অনেক আফসোস করবে আমার ভাইয়ের এত এত ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছে বলে। আক্ষেপের শেষ থাকবে না তার। তবে আমার ভাইটার জন্য বেস্ট কেউ অপেক্ষা করছে।
আশিয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো;
আশিয়ান:- আফসোস এখনই করা শুরু করে দিয়েছে সে। সে আবারও আমার লাইফে ব্যাক করতে চায়। বাট আমি পাত্তাই দিই নি ওকে।এই আশিয়ান কোনো ফেলনা নয় যে দূরে ঠেলে দিয়ে আবার কাছে আসতে চাইবে আর আমি নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যাবো। হাহ্,,,ভালোবাসতাম ঠিকই,, কিন্তু এখন আর বাসি না। কোনো ফিলিংস নেই ওর জন্য আর। ফোন থেকে ব্লক মেরে সোজা ডিলিট করে দিয়েছি ওর নাম্বার আমি। আমার আর কোনো পিছুটান থাকুক তা আমি চাই না। আমি যে আমার আম্মুকে কথা দিয়েছি আমি আবারও লাইফে মুভ অন করবো,,, সবসময় হাসিখুশি থাকবো,,, কারো জন্য আর কষ্ট পাবো না। নিজের পরিবারের সবার সাথে বেশি করে টাইম স্পেন্ড করবো।নিজেকে আর কখনো একা ভাববো না।
আসিফ:-ভালো করেছিস ব্লক করে। ওর মতো বাজে মেয়ে এ দুনিয়ায় মনে হয় দুটো নেই।আবার লাইফে ব্যাক করতে চায়,, শখ কতো!কোন মুখে আবার ফোন দিয়েছে বেহায়া মেয়ে জানি কোথাকার।ওসবে তুই মোটেও কান দিবি না। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছে তোকে ও।
তাশজিদ:-বিশ্বাস করো ভাইয়া,, তোমার কথাগুলো শুনে ভীষণ খুশি হয়েছি। অবশেষে দুইভাইয়ার বিয়ে একসাথে হবে,,, কী আনন্দ!
তাজিম:-ঠিক তাই,,,। আচ্ছা আমাদের হবুভাবীর নাম কী?(জানতে চেয়ে)
আশিয়ান মাথা চুলকে নামটা মনে করার চেষ্টা করলো। এতসবের মধ্যে নামটা ওর মোটেই মনে নেই।
আশিয়ান:-কী যেন নাম মেয়েটার,,, আম্মু বললো,,,। ঊ দিয়ে কী যেনো নামটা,,, মনে আসছে না,,, সরি ভুলে গেছি।
তৌহিদ:-এসব একমাত্র তোর দ্বারাই সম্ভব। নিজের হবুবউয়ের নামটা ভুলে বসে আছে বলদ একটা৷আমার তো এখন সন্দেহ হচ্ছে,,,তুই এতবড় অফিস কী করে একাহাতে সামলাস যদি এই সামান্য নামটাই তোর মনে না থাকে?
ওদের কথাবার্তা শুনে বাকিরা হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওদের হাসি ছাপিয়ে আশিয়ান বলে উঠলো;
আশিয়ান:-আমার মনে নেই তো কী হয়েছে? আম্মুকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিস তাহলেই হলো।
তাশজিদ:-তা আশা আপুর কী হবে?বেচারির তো মন ভেঙে দিলে তুমি!!!দেখো তোমার বিয়েতে না আবার কোনো সিনক্রিয়েট করে বসে,,।
আশিয়ান:-ওর বাপেরও সেই সাহস নেই। ওর চৌদ্দগুষ্টির ভাগ্য ভালো যে আমি এখনো ওর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করি,,, নেহাত পাপার বন্ধুর মেয়ে দেখে কিছু বলি না। এরকম কিছু করলে সে আমার আসল রূপ দেখতে পাবে,,,বুঝবে আশিয়ান চাইলে ঠিক কতটা ভয়ংকর হতে পারে।(থ্রেড দিয়ে)
বাকিরা বুঝলো আশা কোনো সিনক্রিয়েট করলে ওর কপালে মারাত্মক দুঃখ অপেক্ষা করছে।আশিয়ান ওকে ছুঁচো ছাড়া আর কিছুই মনে করে না।এত্ত ন্যাকার ষষ্ঠি আর জোঁকের মতো কোনো মেয়ে হতে পারে,,, আশিয়ান তা ভাবতেই পারে নি। তার আব্বু আম্মু ও তাকে কিছু বলে না। উল্টো আরও আহ্লাদ করে ওকে,,, একমাত্র মেয়ে কী না তাই!!!সারাদিন মেকআপ করে থাকবে,,, আর ড্রেসআপের কী ছিঁড়ি!! আশিয়ানের জাস্ট ঘেন্না লাগে ওকে দেখলে। আর সে বাসায় আসলেই আশিয়ানের পিছনেই পড়ে থাকে সবসময়।কিন্তু আশিয়ান তা মোটেই পছন্দ করে না।
যাকগে,,,,এভাবেই আড্ডা দিতে দিতে খাওয়ার পাঠ চুকিয়ে ফেললো ওরা। অতঃপর আরো মিনিট পাঁচেক গল্প করে যে যার পথে চলে গেল। তাসকিন, আসিফ ও তৌহিদ গেলো তাদের যার যার অফিসে। তাজিম ও তাশজিদ একসাথে হাতিরঝিল ঘুরতে চলে গেল। আর আশিয়ান গেলো তার অফিসে।
✨🛍️✨
এদিকে,
শপিং করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। অতঃপর এনা ‘রা আজকের জন্য বিরতি দিয়ে রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যার নাশতা সেড়ে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।তিশা সন্ধ্যার অনেক আগেই চলে গেছে তার বাসায়।শুধু মিসেস ইয়াসমিনেরা রয়ে গিয়েছিলেন।
প্রচুর কেনাকাটা করা হয়েগেছে আজ। সবাই খুব টায়ার্ড হয়ে পড়েছে। বাসায় পৌঁছে সবার আগে যার যার রুমে চলে গেল ওরা রেস্ট নিতে।
মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতা ও আলেয়ার জন্য প্রায় ১৫ টার মতো শাড়ি কিনেছেন।শুধু ঊদিতার জন্যই মোট ১০ টা শাড়ি।সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ,পেটিকোট,অর্নামেন্টস ও জুতাও আছে,,। সবকিছু ব্রান্ডেড।মিসেস তারানা ও তারিনকে ডেকে এনে সবকিছু দেখালেন মিসেস ইয়াসমিন। তারপর সবকিছু সুন্দরভাবে খুলে বললেন তাদেরকে।
ওরাও খুব খুশি হলো শুনে। তবে তারিনের মনটা হালকা ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠলো এ কথা শুনে যে ঊদিতা অনেক বেশিই নজরকাঁড়া সুন্দরী।
এ বাড়িতে তারিনের একটু বেশিই দাপট একারণে যে বাড়ির বউদের মধ্যে ও অনেক বেশি স্মার্ট এবং সুন্দরী। এমনকি কেয়ার সাথেও সে নিজেকে তুলনা করে ভাবে যে কেয়ার থেকে সেই অনেক বেশি সুন্দরী।এ নিয়ে তার মনে অহংকারের শেষ নেই।
আলেয়াকে তার পছন্দ করার কারণ আলেয়ার গায়ের রং তার থেকে হালকা মান্দা টাইপ। অতএব সবসময়কার মতো তার দাপটই বেশি থাকবে ভেবেছিলাে সে। কিন্তু এখন ঊদিতার কথা শুনে যা বুঝতে পারছে সে,,, ঊদিতা তার থেকে হাজার গুনে সুন্দরী।এবং গুনের দিক থেকেও অনন্যা। তাহলে ঊদিতা এ বাড়ির বউ হয়ে আসার পর তারিনের এই দাপট ও অহংকার তো তখন মাটির সাথে মিশে যাবে। এটা কীভাবে মেনে নেবে সে?
চাইলেও স্টার জলসা ও জি বাংলার ভিলেন মহিলাদের মতো বিয়ে ভাঙতে পারবে না তারিন। নাটকে যেভাবে দেখায় এসব,,, বাস্তবে তা মোটেও সম্ভব না। মিসেস ইয়াসমিন যে কড়া টাইপের মহিলা। সিসিটিভি ক্যামেরার মতো সবদিক দিয়ে তার নজর থাকে।কোনো কিছু চোখ এড়ায় না তার৷মনে মনে আল্লাহর কাছে মিনতি করতে লাগলো তারিন বিয়ের কথাবার্তা যাতে আর না এগোয়। এখানেই যাতে সব স্টপ হয়ে যায়। কিন্তু একটা প্রবাদ আছে না,,’শকুনের দোয়ায় কখনো গরু মরে না’,,,বেচারি হয়তো এ প্রবাদ সম্পর্কে অবগত নয়।
মিসেস তারানা:-তাহলে ভাবী,,, কালকে আমিও তোমার সাথে যাবো। আমার আশুর হবুবউকে না দেখলে যে তৃষ্ণা মেটবে না আমার। আমার কত ইচ্ছে আশুর বউকে দেখবো তার সাথে কথা বলবো,,।আল্লাহ যে আমার দোয়া এভাবে কবুল করবেন তা আমি ভাবতেই পারি নি। ছেলেটা যে রাজী হয়েছে এটাই অনেক বেশি।যাক,, অবশেষে ছেলের সুমতি হয়েছে। শুকরিয়া আল্লাহ তোমার দরবারে। (আন্তরিক কন্ঠে)
মিসেস ইয়াসমিন মিসেস তারানার কথা শুনে মুচকি হাসলেন। বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-ঠিক আছে। আমরা বিকেল ৩ টার দিকে ওনাদের ওখানে যাবো। তুই রেডি থাকিস। আর এনামুল ভাইকেও বলিস আমাদের সাথে যেতে।
মিসেস তারানা:-আচ্ছা,, ঠিক আছে।
মিসেস ইয়াসমিন এবার আলমারি থেকে ওনার গহনার সিন্দুক বের করে সেখান থেকে বেছে বেছে একটা স্বর্নের গলার হার,,একজোড়া কানের দুল,, একটা ডায়মন্ডের নাকফুল,, একজোড়া স্বর্নের মোটা বালা ও একজোড়া চুড়ি,, স্বর্নের দুটো চ্যাপ্টা কারুকাজ করা আংটি,,এবং গলার সিম্পল একটা স্বর্নের চেইন এসব বের করে আলাদা একটা বক্সে ভরে রাখলেন।
কালকে এগুলো ঊদিতাকে পড়িয়ে দিয়ে আসবেন।আজকে আরো অনেক গহনা বানানোর জন্য অর্ডার দিয়ে এসেছেন পরিচিত ও বিশ্বস্ত জুয়েলারি শপে। কয়েকদিনের মধ্যেই বাসায় এসে দিয়ে যাবে সেসব ৷ মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতাকে একদম পুতুলের মতো সাজিয়ে স্বর্ন দিয়ে মুড়িয়ে বাড়ির বউ করে নিয়ে আসবেন। তার আশিয়ানের বউ বলে কথা!!কোনোকিছুর কোনো কমতি থাকতে দিবেন না তিনি।সবকিছু গুছিয়ে রেখে দিলেন। এখন রাতের ডিনারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই দেরি না করে রান্নাঘরে চলে গেলেন তিনি।
তারিন দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কাটছে আর মনে মনে ভাবছে কীভাবে এই বিয়েটা ভেস্তে দেয়া যায়!হুট করে তার মাথায় এক শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল! মনে মনে ছক কষে ফেললো কীভাবে কী করবে সেটার!
প্ল্যান সাজানো হয়ে গেলে পৈশাচিক এক হাসি দিলো সে যা কেয়া ছাড়া আর কারো বোধগম্য হলো না। ওর এরকম চতুর মার্কা হাসি দেখে কেয়ার কপালে ভাঁজ পড়লো। কেয়া খুব ভালো করেই জানে কোনো শয়তানি বুদ্ধি মাথায় আসলে সে এভাবেই হাসে,,। এবার কোন ভেজাল সৃষ্টি করবে সে?? আনমনে ভাবছে কেয়া। মনে মনে ঠিক করে ফেললো মিসেস ইয়াসমিনকে সব জানিয়ে দেবে আজকে,,, আগে থেকে সতর্ক থাকলে কিছুই করতে পারবে না সে। মিসেস ইয়াসমিন যে তার থেকেও বড় চালাক!
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং গঠনমূলক কমেন্ট করবেন সবাই আশা করি।এই গল্পটা কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবিক অর্থে লিখছি আমি।যদিও অনেক বেশি মালমসলা দিয়ে সাজানো।আর নায়ক নায়িকার দেখা হতে একটু সময় প্রয়োজন।বিয়ে তাদের অবশ্যই হবে।তবে তাদের দেখা করাটাও অন্য রকম হবে।আমি অযথা গল্প বড় করবো না।আসলে আমি একটু গল্পের থিমটা অন্যরকম ভাবে সাজিয়েছি।সো সবাই আমাকে সাপোর্ট করবেন আশা করি।এন্ড হ্যাপি রিডিং গাইজ।ভালোবাসা অবিরাম,,,❤️)
চলবে…🍃

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here