রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 34

0
1801

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৩৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–এটা সত্যি কথা স্যার,আমি কারো ওপরে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারি না।
–অনেক কথা হয়েছে।এখন ঘুমিয়ে পড়।সকালে উঠতে হবে।
তারপরে আয়ান শখকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
পরের দিন সকাল বেলা শখ ঘুম থেকে উঠে দেখলো আয়ান পাশে নেই।চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো কোথাও নেই।
–কি ব্যাপার বজ্জাত স্যার গেলো কোথায়।সকাল সকাল।
–ম্যাডাম আপনার ঘুম হয়েছে।উঠে ফ্রেশ হয়ে,রেডি হয়ে নিন।কলেজে যেতে হবে।
–আপনি কোথায় গিয়েছিলেন।এত সকালে।
–আমার আরেকটা বউ আছে।ওর সাথে একটু দেখা করতে গিয়ে ছিলাম।
–কি বললেন।রেগে বলল।
–তোমার জন্য কিছু জামাকাপড় আর বোরকা কিনে নিয়ে আসলাম।
–আমার এসব লাগবে না।আপনার আরেকটা বউ আছে।ওনাকে গিয়ে দিয়ে আসুন।
–আচ্ছা তাহলে গেলাম থাকো।
–আরে আরে কোথায় যাচ্ছেন।
–বউ এর কাছে।
–কচু।
–তোমাকে রান্না করে খাওয়াবো।
–আমি খাই না।
–কথা কম রেডি হয়ে নিচে আসো।
তারপরে দু’জন মিলে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ল।
–ঐ দিকে কোথায় যাচ্ছো।
–কেনো কলেজে।
–হ্যাঁ তো ঐ দিকে যাচ্ছো কেনো।
–ভুলে গেলেন,আমার আলাদা যাই।
–যেতে হবে না,চলো আজ থেকে আমার সাথে যাবে।
আয়ানের কপালে হাত দিয়ে শখ বলল।
–আপনার শরীল ঠিক আছে তো।হঠাৎ করে আজ আপনার কি হয়ে গেলো।
–কিছু হয় নাই কথা কম বলো তাড়াতাড়ি চলো দেরি হয়ে যাবে।
–যাব না আপনার সাথে বলে-ই চলে যেতে লাগলে,আয়ান হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।
–কি হলো বললাম না আপনার সাথে যাব না।আপনি সাথে করে নিয়ে যাবেন। সবার সামনে আপনার জনপ্রিয়তা কমে যাবে তো।
আয়ান রেগে শখের দিকে তাকালো।
–খুব বেশি কথা হয়েছে তাই না তোমার।
শখ আর কোনো কথা বলল না।
অর্ধেক রাস্তায় এসে আয়ান বলল।
–কি হলো কথা বলছো না যে।
–কথা বললে’ও দোষ।আবার কথা না বললে’ও দোষ।যতো দোষ শখ ঘোষ।
–বাপ রে বউয়ের কি রাগ হয়ে গেছে।
–কিসের বউ।আমি আপনার ছাত্রী।আস্তে বলুন।সবাই শুনে ফেলবে।
শখের কথায় আয়ান হালকা হাঁসল।
কলেজে এসে আয়ান শখকে নামিয়ে দিতে’ই সবাই শখের দিকে কেমন করে তাকিয়ে।প্রথমে শখ পাত্তা না দিলে-ও এখন বেশ অস্বস্তি হচ্ছে,শখকে দেখলেই সবাই দূরে সরে যাচ্ছে।নিজেরদের মধ্যে কি সব বলাবলি করছে।
–আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম।স্যারের বউ কেমন আছেন।পেছনে থেকে বলল আয়েশা।
–অলাইকুমুস আসসালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।এভাবে কথা বলছিস কেনো।
–তাহলে কি করবো।তোর সাথে খারাপ করে কথা বললে,ঐ মেয়েটার মতো কলেজ ছাড়া হতে হবে।
–মানে!
–মানে’টা খুব সহজ।কালকে নাকি আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে তোকে খুব অপমান করেছে।বাজে বাজে কথা বলছে।আয়ান স্যার তাকে রাসটিকেট করে দিয়েছে কলেজ থেকে।আর এটা’ও বলে দিয়েছে।তুই তার স্ত্রী।পরবর্তীতে তোকে যেনো কেউ বাজে কথা না শোনায়।যদি কেউ এমন দুঃসাহস দেখায়।তার শাস্তি খুব খারাপ হবে।এটা বলে কালকে কলেজে থেকে হনহন করে বেড়িয়ে গেছে।কাল স্যার খুব রেগে ছিলেন।সবাই খুব ভয়ে পেয়ে গিয়েছিল। স্যার চাকরি ছেড়ে দেয় নাকি।বলল মেধা।
মেধার কথা শুনে শখ বড় বড় করে তাকায়।
–বলিস কিরে আমি যে সকালে এতগুলো কথা শুনালাম ওনাকে।
–এখন কি আমরা’ও আপনার সাথে হিসাব করে কথা বলবো ম্যাডাম।বলল স্নেহা।
–দিব একটা।এটা কেমন কথা বলছিস।তোরা সবাই আমার ভাই বোন।আমি আগে’ও তোদের কাছে যেমন ছিলাম। এখনো তেমনি আছি।
–ধুর আমি ভয় পাই নাকি।শখ আগে আমার কাছে যেমন ছিলো।এখনো আমি শখের সাথে তেমন-ই করবো।ঐসব স্যারের বউ টউ মানতে পারবো না।বলল আমান।
–ঠিক বলেছিস।ও স্যারের বউ হয়েছে তো কি হয়েছে।স্যারের বউ জন্য আলাদা করে সন্মান করতে পারবো না।বলল সিয়াম।
–এখন শখ আমাদের সবাইকে খাওয়ানো ব্যবস্তা কর।বলল কাব্য।
কাব্যের কথা শুনে সবাই মিলে একসাথে হেঁসে দিলো।
–আচ্ছা তোদের সবাইকে খাওয়াবো।এখন চল ক্লাসে যাই।
সবাই মিলে ক্লাসে চলে গেলো।এখন টিফিন টাইম শখ আয়ানের কবিনের সামনে এসে বলল।
–আসতে পারি স্যার।
–জামাইয়ের রুমে আসতে পারমিশন লাগে।
–আপনার কি শরীল খারাপ নাকি ভূতে ধরছে বলেন তো।একদিনে এত পরিবর্তন।ভেতরে আসতে আসতে বলল শখ।
–না তুমি ধরছো।
–মজা করেন।
–তুমি কি আমার বান্ধবী যে আমি মজা করবো।
–আপনার বান্ধবী কে।
–কেউ নেই।
–মিথ্যা কথা বলেন।
–আরে সত্যি।
–খাবার রেখে গেলাম খেয়ে নিবেন।
–খাইয়ে না দিলে খাব না।
–আপনি কি ছোট বাচ্চা খাইয়ে দিতে হবে।
–আমি খাব না।
–আপনার ইচ্ছে।বলেই শখ চলে যেতে লাগলে,আয়ান শখের হাত ধরে নিজের কলে বসায়।
–কি করছেন,ছাড়ুন।ঐ দেখেন সিসি ক্যামেরায় আপনার শশুর সবকিছু দেখছে।
–আমার শশুর তো নেই।আর দেখলে দেখুক।অন্যের বউকে তো আর নেই নাই।নিজের বউকে’ই নিয়েছি।
–শশুন নেই মানে।
–মানে তোমার বাবা কি এখানে আছে যে দেখবে।
–তা-ও তো ঠিক আচ্ছা আমাকে ছাড়ুন,আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি।আয়ান শখকে ছেড়ে দিলে শখ আয়ানের পাশে চেয়ার নিয়ে বসে আয়ানকে খাইয়ে দিতে শুরু করলো।আয়ানকে খাইয়ে দিয়ে শখ চলে গেলো।
সন্ধ্যা বেলা শখ বেলকনিতে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আয়ান এসে শখের পাশে দাঁড়াল।
–কি হয়েছে তোমার মন খারাপ কেনো।
কোনো কথা বলছে না শখ।
–কি হলো কথা বলছো না কেনো।
–বাবা-মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।আপনি আমাকে বিয়ের পরে একদিন ও বাবা মায়ের কাছে নিয়ে যান নাই।রুহি আপু বলছিলো নিয়ে যাবে।কিন্তু এখন তো নিয়ে যাচ্ছেন না।
–ওও আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে বউয়ের আমার এই জন্য মন খারাপ।আচ্ছা আমি কালকেই তোমাকে তোমার বাবার বাসায় নিয়ে যাব।
–সত্যি বলছেন স্যার।
–কি জামাইকে স্যার,আপনি আগ্গে করে বলো।তুমি করে বলতে পারো না।সুন্দর একটা নাম আছে আমার।আয়ান বলে ডাকবা।
–বড়দের নাম ধরে ডাকবো।কিন্তু বাবা বলছে বড়দের সন্মান করতে।
–জামাইরে ডাকলে কিছু হবে না।তুমি করে ডাকবেন বুজছেন মহারাণী।
–আমি আবার মহারানী হলাম কবে।
–এতো বুজতে হবে না চলো ঘুমাবো।
–তো আপনি ঘুমান আমাকে ডাকছেন কেনো।
–তোমাকে ছাড়া ঘুম আসে না।
–ডং এতদিন কি করে ঘুমিয়েছেন।
–এতদিন বউ ছিলো না।এখন বউ হয়েছে।বলে’ই শখকে কোলে তুমি নিয়ে রুমে গেলো।
–নামান আমাকে আপনি খালি আমাকে কোলে তুলে নেন কেনো।
–আমার বউ আমার ইচ্ছে।আর একটা’ও কথা না তারপরে আয়ান শখকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।শখের কেনো জানি ঘুম আসছে না।কয়টা দিন ধরে ভালো লাগছে না।অজানা কষ্ট খুব করে কষ্ট দিচ্ছে শখকে।কউকে কিছু বলতে’ও পারছে না।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে। নিজও জনে না।
পরের দিন সকাল আয়ান ও শখ আয়ানের বাবা মার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। দরজায় কলিং বেল বাজতে-ই শখের আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো,শখকে দেখে খুশি হলো।
–আরে তোরা আজ আসবি আগে বলবি না।আস্তে কি খুব সমস্যা হয়েছে।আয় ভেতরে আয়।আয়ান বাবা ভেতরে আসো।
–আমি নিজে’ও জানতাম আম্মু আজ আমরা আসবো।স্যারকে রাতে বললাম আমি বাসায় যাব,আমি জানতাম নাকি স্যার সত্যি আমাকে সকালে নিয়ে চলে আসবে।
–আয়ান বাবা খুব ভালো ছেলে।লক্ষি সোনার টুকরো ছেলে আমার। সেজন্য মুনতাহার সাথে বিয়ে দিতে চাই ছিলাম। কিন্তু কার ভাগ্য কে আছে, উপর আলা ছাড়া কেউ বলতে পারে না।আচ্ছা মা যা হয়ে গেছে বাদ দে।বস আমি নাস্তা নিয়ে আসি।
–কিছু করতে হবে না।আগে বলো আব্বু কোথায়।
–তোর বাবা একটু বাজারে গেছে,এখনি চলে আসবে।তোরা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
–আচ্ছা আম্মু বলেই ওপরে চলে গেলো শখ।
বাবা মনে হচ্ছে কত বছর পরে আমার রুমে আসলাম কি শান্তি।
–হ এই জঙ্গলটায় এসে তোমার শান্তি।চারদিকে খালি পুতুল আর পুতুল।
–একদম আমার টেডি নিয়ে কথা বলবেন না।
–কি করবে টেডি নিয়ে কথা বললে।
–আপনার সাথে আর যাব না।
–না গেলে নাই। আমি’ও থাকবো তোমার সাথে এখানে।
–আপনাকে তাড়িয়ে দিব।
–সাহস আছে,শখের দিকে এগোতে এগোতে বললো।
–আলবাত আছে।দেখতে চান।
–হ্যাঁ চাই।দেখাও।তোমার না খুব সাহস তাহলে এভাবে পিছিয়ে যাচ্ছো কেনো।
–তাহলে আপনি সামনে এগোচ্ছেন কেনো।বলতে বলতে শখ দেওয়ালের সাথে ঠেকে গেলো।
–এবার কোথায় যাবে।তোমার না খুব সাহস।এবার বলো কি বলতে।
–আমার গরম লাগছে।সরুন।ফ্রেশ হবো।
–পারলে নিজে সরিয়ে দেখাও।
–আপনার মতো হাতিকে আমার মতো মশা তাই সরাইতে পারে।
–কি তুমি আমাকে হাতি বললে।
–তা নয়..আর কিছু বলতে পারলো না আয়ান শখের গালে আলতো করে চুমু খেলো।ঠোঁটের কাছে আসতেই শখ জোরে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো শখ।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here