রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 35

0
1208

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৩৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
দুপুরের সবাই মিলে খেতে বসেছে।
–আয়ান বাবা কেমন আছো।বলল আহনাফ সাহেব।
–আলহামদুলিল্লাহ স্যার ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন।
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো।এখনো স্যার বলে ডাকবে।
–আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।আর কোনো কথা না বলে সবাই খেতে শুরু করলো।
–মা তুমি আমাকে আয়ান ভাইয়ার কাছে নিয়ে যাচ্ছো না কেনো।কবে নিয়ে যাবে।আমি আর পারছি না।এবার সবদিক দিয়ে-ই আয়ান ভাইয়ার যোগ্য হয়ে আসছি।আয়ান ভাইয়া আমাকে আর ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
–কি সারা দিন আয়ান,আয়ান করিস।আয়ান ছাড়া কি সুন্দর ছেলের অভাব পড়েছে।
–আমার কাছে আয়ান ভাইয়া সবথেকে সুন্দর।আয়ান ভাইয়াকে ছাড়া আমার কাউকে ভালো লাগে না।
–আয়ান কোথায় জানি গেছে।সকালে নীলিমাকে ফোন করে ছিলাম।আয়ান আসলে আমি তোকে আয়ানদের বাসায় নিয়ে যাব।
–সত্যি বলছো মা।উফফ আমি আর পারছি না।কতোদিন অপেক্ষা করা লাগবে।ভাইয়ার বিয়ে না হলে সেদিন-ই চলে যেতাম।
–কানের মাথা খাস না।যা গিয়ে দেখ মুনতাহা কি করছে।মেয়েটা রুম থেকে বের হয় না।মন খারাপ করে থাকে।কি যে হয়েছে।কিছু বলে’ও না।
তখনি মুনতাহা রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।
–কি হয়েছে আম্মু।
–এই তো ভাবিমনি তুমি আসছো।তুমি আর ভাইয়া তো বিয়ে করে নিয়েছো।এবার আমাকে তাড়ানোর ব্যবস্তা করো।
–মানে!
–আমি দেখেছি,কত ভাবি বিয়ে করে এসে ননদী কে বিয়ে দিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করে।তোমার দেখছি আমাকে নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথাই নাই।নিজে তো ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেলে।এবার আমার ভালোবাসার মানুষকে পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্তা করে দাও ভাবিমনি।
–তুমি কাকে ভালোবাসো আপু।
–আরে আর বলো না।ছোট বেলা থেকে আমার মেয়েটা পাগল।
–কার জন্য আম্মু।
বলতে পারল না,তার আগেই শুভর বাবা চলে আসলো।
–এখানে কি হচ্ছে।
–কি হচ্ছে দেখতে পাচ্ছো না।আমরা সবাই মিলে গল্প করছি।
–আমি কি তোমাদের সাথে যোগদান করতে পারি।
–কেনো পারবে না।তুমিও শুরু করে দাও।তারপরে সবাই মিলে গল্প শুরু করে দিলো।
সন্ধ্যা বেলা শখ কালো রং এস শাড়ি পড়ে বেলকনিতে ফুলের গাছে পানি দিচ্ছিল।আয়ান দুপুরে খেয়ে বেড়িয়েছে।এখনো বাসায় আসার নামে নাম নেই।আকাশের অবস্থা খুব খারাপ যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হবে।হলে ভালো-ই ভিজতে পারবো।স্যার থাকলে বৃষ্টিতে ভিজতে দিবে না।এসব ভাবতে ভাবতে হালকা বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো।আস্তে আস্তে বৃষ্টির গতি বেড়ে যেতে শুরু করলো।শখ আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো না।দৌড়ে ছাঁদের দিকে যাবে।দরজার সামনে আসতেই আয়ান হাজির।
–এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিলে।
–ইয়ে মানে,আপনার কাছে-ই তো আপনাকে আসতে দেখে দৌড়ে যাচ্ছিলাম।
–খুব সুন্দর মিথ্যা কথা।বাকি মিথ্যা কথা কালকে শুনবোএখন আপাতত সত্যি কথা’টা বললে-ই হবে।
–ছাঁদে যাচ্ছিলাম।
–বাহ এই তো বউ সোজা পথে আসছো।ছাঁদে যাচ্ছিলে কি করতে বৃষ্টিতে ভিজতে।এখন বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না।জ্বর এসে যাবে।সো এই সব আশা বাদ দিয়ে দাও।
–আমি জানতাম আপনি যেতে দিবেন না।আপনি যে দুপুর থেকে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।আমি কিছু বলছিলাম।আমি তো আপনার মতো টই টই করে ঘুরে বেড়াতে যাচ্ছি।একটু ভিজে চলে আসবো বেশ।
–এত ভেজা লাগবে না।আর তুমি শাড়ি পড়ছো কেনো।বাসায় কি কেউ আসবে।সত্যি করে বলো কার জন্য পড়েছ।
–আপনার সতীনের জন্য পড়েছি।আমার আরো দশ-টা জামাই আছে,ওরাই আর কি দেখতে আসবে।তাদের জন্য সেজেগুজে বসে আছি।
–শখ…
–গরুর মতো চিৎকার করছেন কেনো।
–বাজে কথা বলো কেনো।তুমি আমার বউ আমার জন্য সাজবে।
–হ্যাঁ আমি আপনার বউ আপনার জন্য-ই সেজেছি।এটা যদি বুজতে না পারেন।তাহলে কি আপনাকে ক,খ বলে বুঝিয়ে দিতে হবে।
–বড্ড বেশি কথা বলতে শিখে গেছো তুমি।
–হ আমি কথা বললে-ই বেশি হয়ে যায়।আমি নিচে গেলাম।বলে-ই দৌড়ে দিতে যাবে।আয়ান শখের হাত ধরে ফেলে।
–এত নিচে যাওয়া লাগবে না।তুমি কেমন নিচে যাবে।তা,আমি ভালো করে-ই জানি।চুপচাপ এখানে বসো।বৃষ্টিতে ভিজলে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো।
–ছাতা ভালো লাগে না।এই জন্য-ই বলে বিয়ে করতে নেই।নিজের সব ইচ্ছে,আশা,আকাঙ্ক্ষা,স্বপ্ন, স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে দিতে হয়।একদম কথা বলবেন না আমার সাথে।বলে-ই বিছানায় গিয়ে মন খারাপ করে বসলো।
–তোমাকে একটা কিছু বলতে-ই পারি না।সাপের মতো ছ্যাত করে উঠো কেনো।
–কিহ আমি সাপ,আপনি আমাকে সাপ বললেন।আপনি কি কালোনাগ একটা।
–ওটা কালোনাগ হবে না কালনাগ হবে।
–ঐ একি হলো।
–বৃষ্টিতে ভিজতে দিচ্ছি না বলে এত রাগ বাপরে।চলো ভিজবে।
–বাকি মিথ্যা কথা কালে শুনবো।
–আজকে-ই শুনো,যাবে না ভালো হয়েছে।থাকো ফ্রেশ হয়ে আসি।বলে-ই আয়ান ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
শখকে আর পায় কে এক দৌড়ে ছাঁদ চলে গেলো।বৃষ্টি দেখলে মাথা ঠিক থাকে না শখের।ছাঁদে গিয়ে উরাধুরা নাচ শুরু করে দিয়েছে।এদিকে আয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে শখ রুমে নেই।আয়ানের আর বুজতে বাকি রইলো না,শখ কোথায় যেতে পারে।
শখ ছাঁদে দুই হাত মেলে দিয়ে আকাশের দিকে বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।বৃষ্টির পানি মুখে আসায় চোখ মেলে তাকাতে পারছে না।দুই চোখ বন্ধ করে,দুই হাত মেলে দিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে।এদিকে এক জোরা চোখ শখের দিকে নেশাক্তময় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।সেদিকে শখের খেয়াল-ই নেই।এতক্ষণ নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলে’ও এখন আর আয়ান নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারছে না।সে-ও শখের কাছে গিয়ে,শখের হাতের সাথে নিজের হাত মিলিয়ে দিলো।এই ঠান্ডার মধ্যে গরম উষ্ণতা পেয়ে শখ পেছনে ঘুরতে যাবে।আয়ান শখকে পেছনে ঘুরতে দিলো না।শখকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শখের ঘাড়ে মুখ গুজে দিলো।এবার আস্তে করে শখের ঘাড় থেকে চুল গুলো সরিয়ে নিজের ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগলো।আয়ানের স্পর্শে শখ বার বার কেঁপে উঠছে।
শখ সামনের দিকে ঘুরে বলল,
–স্যার কি…আর বলতে পারলো না সে তার আগেই আয়ান শখের ঠোঁটে হাত দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো।শখের পুরো মুখ চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে আয়ান।শখ নিজের শাড়ি খামচে ধরে আছে।
–স্যার বলছি কি চলুন আর ভিজবো না।ঠান্ডা লাগছে আমার।বলেই দূরে সরে আসতে লাগলে,আয়ান শখকে নিজের কাছে টেনে এসে শখের ঠোঁটে নিজের ঠোঁটে ডুবিয়ে দিলো।হঠাৎ এমন হওয়ায় শখ আয়ানের শার্ট খামচে ধরলো।বেশ কিছুক্ষণ শখকে ছেড়ে দিয়ে শখকে কোলে তুলে নিলো আয়ান।নিচের দিকে নামতে শুরু করলো,শখের বেশ লজ্জা লাগছে।সে হালকা করে আয়ানের গলা ধরে আছে।ইস সে যদি দৌড়ে পালাতে পারতো।
–স্যার আমাকে নামিয়ে দিন।আমি একা যেতে পারবো।
আয়ান শখের কোনো কথাই শুনছে না।বেচারি পড়েছে বিপদে,কেনো যে বৃষ্টিতে ভিজতে আসলাম।না আসলেই ভালো হতো।আয়ান রুমে গিয়ে শখকে বিছানার শুইয়ে দিল।তারপরে শখের গলায় নিজের মুখ গুজে দিলো।শখ চাইলে’ও আয়ানকে সরাতে পারছে না।ঠিক তখনি শখের আম্মু দরজার ওপাশ থেকে বলে।
–শখ তোদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি মা।নিয়ে যা’
শখ আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে ধর ফরিয়ে উঠে বসলো।
–হায় আল্লাহ আম্মু এসেছে।আমাকে ভেজা শরীলে দেখলে প্রচুর বকবে।আম্মু দুই মিনিট আমি ওয়াশরুম আছি।বলে-ই শখ একটা সালোয়ার কামিজ নিয়ে ওয়াশরুমে দৌড় দিলো।কোনো রকম কাপড় বদলে মাথায় কাপড় দিয়ে,তার মায়ের কাছে গেলো।
–কিরে তোর এতক্ষণ লাগে।কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।আয়ান বাবা এসেছে।
–হ্যাঁ মা এসেছে।
–কখন এসেছে।
–এই তো একটু আগে এসে ঘুমি-ঘুমিয়েছে।ওনার শরীল নাকি খারাপ লাগছে।বললো একটু ঘুমালে নাকি ঠিক হয়ে যাবে।
–সে’কি রে আয়ান বাবা অসুস্থ নাকি।বেশি খারাপ লাগছে।তোর ডাক্তার কাকুকে আসতে বলবো।
–না আম্মু তার আর দরকার নেই।উনি ঠিক আছে।
–সত্যি বলছিস তো।
–হ্যাঁ,আম্মু সত্যি বলছি।একদম ঠিক আছে।ঐ বজ্জাত ব্যাডা।
–ঠিক থাকলেই ভালো।কিছু বললি নাকি।
–কই না তো আম্মু।ভেতরে আসো।
–নারে যাব না।তোর বাবাকে চা দিয়ে রাতের রান্না বসিয়ে দিব।
–আচ্ছা আম্মু তুমি যা-ও আমি’ও আসছি।তোমাকে সাহায্য করবো।
–তোমার এত পাকনামি করতে হবে না।আমি নিজে’ই সব করে নিতে পারবো।বলেই চলে গেলেন।
শখ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।শখ রুমে আসতে’ই আয়ান শখকে দেখে হাসছে।এতে শখের আরো রাগ বেড়ে গেলো।বজ্জাত ব্যাডার জন্য কতোগুলো মিথ্যা কথা বললাম।শখ রেগে আয়ানকে বললো।
–এভাবে সঙ্গের মত ভেজা শরীরে বসে আছেন কেনো।যান ফ্রেশ হয়ে আসুন আর খেয়ে আমাকে উদ্ধার করে দিন।
আয়ান উঠে এসে শখকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু খেলো।
–আরে আজব,আপনি কথায় কথায় জড়িয়ে ধরেন কেমো।
–তুমি তো বললে আমাকে খেয়ে উদ্ধার করে দিন।
–আমি আমাকে খাওয়ার কথা বলি নাই।খাবার খাওয়ার কথা বলছি।মানুষ কি কখনো খাওয়া যায় নাই।অসভ্য ছেলে।যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।ঠান্ডা লেগে যাবে।
–আগে একটা চুমু দিবা।তারপরে যাব।নাহলে এক পা নড়বো না।গাল এগিয়ে দিয়ে বলল।
শখ এবার রেগে গিয়ে নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে আয়ানের গালে কামড় বসিয়ে দিলো।
–আম্মা গো,এটা কি হলো।
–কেনো জামাই আদর।
–এমন আদর আমি’ও করতে চাই।তোমার গাল এগিয়ে দাও।
–অনেক হয়েছে আপনার অসভ্যতামি এবার আপনি যাবেন।
–যাচ্ছি এত রাগ দেখানোর কি আছে।আমার মতো ভালো ছেলেকে একা পেয়ে খালি রাগ দেখাই।বলেই আয়ান ফ্রেশ হতে চলে গেলো।শখ হালকা হেঁসে নিচে চলে গেলো।
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here