রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 36

0
1188

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৩৬(শখের আসল পরিচয়)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
পরের দিন দুপুর বেলা মুনতাহা এসে কোনো কথা না,বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।এতে মুনতাহা মা বেশ অবাক হলেন,দরজার কাছে গিয়ে ডাকতে শুরু করলেন।কিন্তু মুনতাহা কিছুতে’ই দরজা খুলছে না।তিনি উপায় না পেয়ে শখ আর আয়ানকে বললেন।শখ আর আয়ান আসতে’ই মুনতাহা বলল।কিছু হয় নাই। অনেক দূর থেকে এসেছে।ক্লান্ত লাগছে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসবে।তাই আর তাকে কেউ বিরক্ত করলো না।মুনতাহা মা তার মেয়ের জন্য রান্না বসিয়ে দিলেন।একটু পরে মুনতাহা বেড়িয়ে আসলো।শখ ড্রয়িং রুমে বসে সবজি কাটছিলো।মুনতাহা সোজা তার মায়ের কাছে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।মেয়ের কান্না দেখে।তিনি বিচলিত হয়ে বললেন।
–কি হয়েছে মা,তুই এভাবে কান্না করছিস কেনো।তোর কি কোনো সমস্যা হয়েছে।ঐ ছেলেটা তোকে কষ্ট দিয়েছে।তুই আমাকে বল।আমি আগে’ই জানতাম ছেলেটা ভালো না।মুনতাহা কিছু বলছে না।শুধু কান্না করে যাচ্ছে।
–লক্ষি মেয়ে আমার কান্না করে না।আমাকে বল সোনা কি হয়েছে।মাকে বল হালকা লাগবে।আমি তোর সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবো।
–মা শুভ আমাকে আগের মতো ভালোবাসে না।আমাকে কেমন জানি এরিয়ে চলে।ভালো ভাবে কথা বলে না।রাত করে বাড়ি ফিরে।কিছু বললে’ই রাগ দেখায়।আমার মূল্য’ই নেই ওর কাছে।আর কাল সারারাত তো বসায় ফিরে নাই।
–কি বলছিস এসব।আয়ান বাবা যে বললো,তার ভাই খুব ভালো।আমি আগেই জানতাম ও ছেলে ভালো না।শুধু শুধু আমার মেয়ের জীবন’টা নষ্ট করে দিলো।
শখ সবজি কাটতে কাটতে দেখার চেষ্টা করছিলো তার বোন কোথায় গেলো বেখেয়ালির জন্য শখ সবজির জায়গায় নিজের হাতে চাকুর ভেতর বসিয়ে দিলো সাথে সাথে হাত থেকে রক্ত ঝরা শুরু হয়ে গেলো।শখ হালকা চিৎকার করে উঠলো।আয়ান নিচের দিকে আসছিলো।শখের চিৎকার শুনে দৌড়ে আসলো।এসে দেখে শখ হাত কেটে বসে আছে।সাথে সাথে আয়ানের রাগ মাথায় উঠে গেলো।কে বলেছিলো ওকে কাজ করতে।তাড়াতাড়ি শখের কাছে গিয়ে হাত ধরে বলল।
–দেখি দেখি কতো খানি হাত কেটে গেলো।কে বলেছিলো কাজ করতে হ্যাঁ।বলেই শখের হাত মুখে পুরে নিলো রক্ত বন্ধ করার হালকা চেষ্টা।
–ঔষধের বক্স কোথায় তাড়াতাড়ি বলো।তুমি যে কি করো না।হাত কেটে বসলে।শখ হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলে।আয়ান তাড়াতাড়ি ঔষধের বক্স নিয়ে এসে শখের হাতে ব্যান্ডিজ করে দিলো।
–দেখলি দেখলি কতো ভালোবাসে শখকে,আজ এইখানে তুই থাকতি।শখের জায়গায় তোর থাকার কথা ছিলো।সবকিছুর জন্য শখ দায়ী আজ সবকিছু ওর জন্য হয়েছে।বাবা-মাকে খেয়ে শান্তি হয় নাই এইবার আমাদের খেতে এসেছে।ওর জন্য কি করি নাই। ও আমার মেয়ের সুখ-ই কেঁড়ে নিলো ওকে তো আজই আমি ছাড়বো না।
মুনতাহা মনে মনে ভাবতে শুরু করলো সত্যি তো আয়ান স্যার শখকে কতো ভালোবাসে।শখ একটু ব্যাথা পেয়েছে।তাই স্যার কতো পাগলের মতো করছে।সেদিন যদি শুভর সাথে না যেতাম।তাহলে শখের জায়গায় আমি থাকতাম।শখ আর আয়ান স্যার ইচ্ছে করে আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে।আমি’ও শখকে ভালো থাকতে দিব না।ছোট বেলা থেকে আমার সবকিছু কেঁড়ে নিয়েছে।আজ আমি ওর সবকিছু কেঁড়ে নিব।
বলে-ই মায়ের পিছু পিছু গেলো মুনতাহা।
শখের মা এসে শখের চুল ধরে বললো।
–অলক্ষি মেয়ে সবকিছু তোর হয়েছে।আমাদের জীবন’টা নষ্ট করে হয় নাই।আমার মেয়েটা’র জীবন’টা নষ্ট করে দিলি।তুই’ও কেন,তোর বাবা মায়ের সাথে মরলি না।বেঁচে যেতাম।তোর বাবা মা-কে খেয়ে শান্তি হয় নাই।আমাদের খেতে চাইছিস।তোর বাবা-মা তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছে।
–আন্টি কি করছেন এসব।ছাড়ুন ওকে।শখ ব্যাথা পাচ্ছে তো।বলল আয়ান।
–মা তুমি এসব কি বলছো।বাবা-মা মরে গেছে।তোমরা তো ঠিকি আছো।তোমাদের কিছু হয় নাই।
–কারন আমার বাবা-মা তোর আসল বাবা-মা-ই না।তাই জন্য বলছে।তোর বাবা মা মারা গেছে।
–আপু মজা করো না তো।এখন মজা ভালো লাগছে না।আমি জানি তুমি আমাকে সয্য করতে পারো না।তাই এমন কথা বলছো আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
–মুনতাহা একদম ঠিক কথা বলছে।ওর বাবা তোর আর তোর ভাইয়ের মতো অভিশাপ কে,যেদিন এ বাসায় নিয়ে আসছিলো,সেদিন থেকে আমার ছেলে মেয়ে গুলো আমাদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছে।বাবা মার থেকে দূরে থেকেছে।তোকে কি কম ভালোবাসতাম নাকি রে শখ।আমার মেয়ের এতবড় ক্ষতিটা করলি।তোকে মাথায় হাত দিয়ে বলিয়ে নিয়ে ছিলাম,আয়ান আর মুনতাহার বিয়েতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবি না।নিজে ভালো থাকার জন্য,আয়ানকে দিয়ে কাজ করালি।তোর বাবা মা এই জন্য-ই মরে গিয়ে বেঁচে গেছে।আর আমাদের অশান্তিতে রেখে গেছে।
–মুনতাহার মা।চুপ করো কিসব বলছো তুমি।আর একটা কথা বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।দরজার কাছে থেলে বলল আহনাফ সাহেব।
শখ দৌড়ে তার বাবার কাছে গেলো।
–বাবা দেখো,মা কি সব যা-তা বলছে।মজা করছে তাই না বলো।এমন মজা করতে নিষেধ করো না।আমার খুব ভয় লাগছে।
–খবরদার তুৃমি যদি আজ সত্যি টা লুকিয়ে যা-ও।তাহলে শখের মরা মুখ দেখবে।মুনতাহার মা বলে’ই গায়ে হাত তুলতে গিয়ে’ও হাত নামিয়ে নিলো।
–এই অলক্ষির জন্য তুমি আমাকে মারতে চাইলে।আর কতো কি দেখতে হবে এই মেয়ের জন্য।
আয়ান কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।এটা সম্পর্ন ওদের পারিবারিক ব্যাপার আয়ানের কি উচিৎ হবে।ওদের মধ্যে কথা বলার।তাই সে নিরব দর্শক এর মতো সবকিছু দেখছে।
–বাবা আমি তোমার থেকে সবকিছু শুনতে চাই।তুমি বলো না মা মিথ্যা কর বলছে।
–নারে মা তোর মা সত্যি কথা বলছে।তুমি আমাদের মেয়ে নস।কিন্তু তোকে কোনোদিন অন্যের মেয়ে ভাবি নাই।সব সময় নিজের মেয়ে মনে করছি।আহনাফ সাহেবের কথা শুনে শখের মনে হলো ওর পায়ের নিচে থেকে কেউ মাটি সরিয়ে নিয়েছে।শখ আহনাফ সাহেবের থেকে দু’পা পিছিয়ে গেলো।
–তাহলে আমার আসল বাবা মা কে।আপনি বা কে,আর আমাকে লালন পালন করছেন কেনো।
–আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে,তোর বাবা মা একটা কাজের জন্য বেশ চিন্তিত ছিলেন।সেই কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকায় তোদের ঠিক মতো সময় দিতে পারছিলেন না।একদিন আমার কাছে এসে বলল তোর বাবার আর মায়ের প্রানের ঝুঁকি আছে।তোদের কোনো ক্ষতি হোক তারা চাই না।তাই তারা বিশ্বাস করে তোকে আর তোর ভাইকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিল।নিজের বড় ভাইকে না করতে পারি নাই।নিজের ভাইয়ের ছেলেমেয়ে’কে নিজের বাসায় নিয়ে আসলাম।তোর মা,সম্পর্কে তোর খালা হয়।তোর মায়ের আপন ছোট বোন মুনতাহার মা।নিজের বোনের ছেলেমেয়ে’কে আপন করে নিতে খুব একটা কষ্ট হয় নাই তার।খুব ভালোবাসতো তোদের।যেদিন রাতে তোদের আমাদের কাছে রেখে যায়।সেদিন রাতে,ভাই আর ভাবি গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়।তারপর থেকে তুই আর ফিয়াজ আমাদের কাছে আছিস।কোনো প্রকারে জানতে দেই নাই।তোরা আমাদের ছেলে মেয়ে নস।তোদের আগলে রাখার জন্য নিজের ছেলেকে দূরে রাখছি।
–তার মানে আপনি আমার চাচা,উনি আমার খালা।আমার আসল বাবা মা মারা গেছেন।ভালোই জোকস বলতে পারেন তো সবাই।এই কথাটা এত বছর লুকিয়ে রেখে ছিলেন কেনো।এই জন্য বুঝি আপু আমাকে দেখতে পারতো না।আমি কতটা বোকা তাই না বলেন।আপনারা যা বুঝিয়েছেন।আমি মেনে নিয়েছি।আর আপনার ছেলে কই।কেনো তাকে দূরে সরিয়ে রাখছেন।আমাদের জন্য।আমাদের এত দয়া করা লাগবে না আপনাদের।অনেক করেছেন আর না।
–উনাকে বলতে হবে না।আমি ওনাদের ছেলে।তোমাদের জন্য আমি আমার বাবা মায়ের কাছে থেকে দূরে থাকেছি।কারন বাবা মা আমাদের থেকে বেশি ভালোবাসতো তোমাদের।
–আয়াশ আপনি এখানে।
–হ্যাঁ আয়াশ-ই আমার নিজের ছেলে।মুনতাহা তোকে বকাবকি করে চুপ থাকলে-ও আয়াশ ফিয়াজকে দেখতে পারতো না।খালি খুন করার চেষ্টা করতো।ছোট মানুষের হিংসা খুব ভয়ংকর।একবার ফিয়াজের মাথায় ইট দিয়ে বাড়ি মারছিল।এর জন্য ফিয়াজ এক মাস হসপিটালে ছিলো।এর পরে থেকে ফিয়াজের কিছু মনে নেই।ওও নিজের সবকিছু ভুলে গেছে।আয়াশ এখানেই থেমে ছিলো না।বিভিন্ন প্রকারে ফিয়াজকে মারতে চাচ্ছিল।একদিন ছুরি দিয়ে ফিয়াজকে মারতে চাই ছিলো।শেষে না পেরে আয়াশ’কে তার নানুর বাসায় পাঠিয়ে দেই।প্রথমে খুব জ্বালিয়েছে।পরে ঠিক হয়ে গিয়েছিল।পরে আয়াশকে পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় পাঠিয়ে দেই আর কোনো সমস্যা হয় না।কিন্তু আয়াশ আমেরিকা থেকে এসে আবার পাগলামি শুরু করে দেয়।কোনো রকম বুঝিয়ে রাখি।
–বাহ খুব সুন্দর নাটক সাজিয়েছেন।আমাকে আগে কেনো বলেন নাই।কেনো গোপন করেছেন।আর এখন আমার ভাইয়ের’ও সবকিছু মনে নাই।দুনিয়ায় আমার আপন বলতে কেউ থাকলো না।আপনারা সবাই বেইমান।সবাই আমার সাথে বেইমানি করেছেন।আমি কোনো দিন আপনাদের মাফ করবো না।
–আমরা কি একা বেইমানি করছি।করলে তোর স্বামী’ও করছে।তোর বর আর তার পুরো পরিবারকে আগে’ই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তুই আমাদের নিজের মেয়ে নস।
–আপনি-ও জানতেন।আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো।
আয়ান কোনো কথা বলছে না।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াশ শখের কাছে এসে বলল।
–শখ তুই আমাকে মাফ করে দে।আমি তোর সাথে যা কিছু করেছি তা একটি মেয়েকে পাওয়ার জন্য করেছি।তোদের নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই।আজ আমি বাবার কাছে,এসে ছিলাম মেয়েটির কথা বলতে।এখানে যে এত কিছু হচ্ছে জানতাম না।আর আয়ান তুমি’ও আমাকে মাফ করে দাও।আমি যা কিছু করেছি।তার জন্য তোমাদের দু’জনের কাছে,মাফ চাচ্ছি।আর আয়ান তুমি তো আমার সাথে পড়াশোনা করেছো।তুৃমি তো জানো আমি কেমন।আয়াশের কথায় পাত্তা না দিয়ে শখ আবার আয়ানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।
–স্যার আমি আপনার থেকে কিন্তু জানতে চাচ্ছি।
–তোর যা কিছু জানার আছে।আমাদের বাসায় বাহিরে গিয়ে শুন।তোকে যেনো কোনোদিন আমাদের বাসায় না দেখি বলল মুনতাহার মা।
এতক্ষণ রাগের মাথায় মায়ের সাথে তাল মিলেয়ে কথা বললে’ও এখন বেশ খারাপ লাগছে মুনতাহার রাগে বশে,সে এটা কি করে ফেললো শখকে কষ্ট দিয়ে ফেলল।নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
–মা তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো শখের সাথে।
–থাক আপু অনেক দয়া করেছো।আর দয়া করা লাগবে না।এই জন্য বুঝি আমাকে দেখতে পারতে না।কারন আমি তোমার নিজের বোন না।আমাকে আগে বলে দিতে তোমাদের জীবন থেকে সরে যেতাম।
–শখ তুই আমারকে।
–থাক আর কিছু বলতে হবে না।
–মুনতাহা তুমি শুভকে যেমটা ভাবছো,আসলে শুভ কিন্তু তেমন না।একদিন তুমিও খুব আফসোস করবে।সবকিছুর জন্য।শখকে এভাবে না বললেও পারতে।
–অনেক হয়েছে।বাহ সবার দয়া নিয়ে কি সুন্দর বেঁচে আছি।স্যার আমি তো আপনাকে খুব বেশি বিশ্বাস,ভরসা করতাম আপনি-ও আমার সাথে বেইমানি করলেন।সবাই স্বার্থপর,স্বার্থে আঘাত পড়লে সবার আসল রুপ বেড়িয়ে আছে।আমার কাউকে দরকার নেই।দরকার পড়লে নিজের জীবন নিজে শেষ করে দিব তবুও কারো দয়ার পাত্রী হতে চাই না।আয়ান শখের কাছে আসতে চাইলে।শখ টেবিল থেকে চাকু হাতে ধরে বললো।
–একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।যদি করেন এর পরিমান খুব খারাপ হয়ে যাবে।বলেই বাহিরের দিকে দৌড় দিলো শখ।
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here