রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 39

0
1722

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৩৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
শখ পেছনে ঘুরে আয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
–আপনি কেনো করলেন,এমনটা।আমি না আপনাকে খুব বেশি বিশ্বাস ভরসা করতাম।সবাই আমাকে মিথ্যা বলল।আপনি তো সত্য’টা জানতেন তাহলে কেনো বলেন নাই আমাকে।এভাবে আমার বিশ্বাস ভরসার মূল্য হালকা করে দিলেন।এখন আমার আপনাদের বিশ্বাস করতে’ও ভয় লাগে।
আয়ান শখকে একদম নিজের সাথে মিলিয়ে নিয়ে বলল।
–আমি যা করেছি,তোমার ভালোর জন্য-ই করেছি।আমি ভেবেছিলাম কথা’টা তোমাকে সময় নিয়ে,ভালোভাবে বুঝিয়ে বলবো।কিন্তু মুনতাহা আর আন্টি এমন করে বসবে।আমি কখনো ভাবতে’ও পারি নাই।
–হ্যাঁ হয়েছে।নিজে ভুল করেছে।এখন আসছে ভালো সাজতে।কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকুন।না হলে আপনার সাথে কোনো কথা নেই আমার।
–এ্যাঁ
–এ্যাঁ নয় হ্যাঁ।
–তোমার তো সাহস কম না।তুমি আমাকে কান ধরতে বলো।
–সাহসের কি দেখছেন।কথা কম বলেন।আর কান ধরুন।
–আমি পারবো না।কথা না বললে নাই।
–ঠিক আছে।গেলাম আমি।শখ নিজেকে ছাড়াতে যাবে।আয়ান শখকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
–শখপাখি তুমি আমার খাঁচায় এসেছ নিজের ইচ্ছায়।কিন্তু মুক্তি পাবে আমার ইচ্ছায়।আমি যতক্ষণ না ছাড়ছি।তোমার মুক্তি নেই।
কিছুক্ষণ ছোটাছুটি করে শখ ক্লান্ত হয়ে,আয়ানের বুকে মাথা রাখলো।কেউ কোনো কথা বলছে না।শুধু অনুভব করছে দু’জন দু’জনকে।প্রায় দীর্ঘ দিন না ঘুমানোর জন্য সারা রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিয়েছে শখের চোখে।আয়ানের বুকে মাথা রাখলে মনে হয়।পৃথিবীর সবথেকে শান্তি আর নিরাপদের জায়গা আয়ানের বুক।তাই সে নির্ভয়ে আয়ানের বুকে ঘুমিয়ে গেলো।আয়ান বুজতে পারছে শখ ঘুমিয়ে গেছে।এখন নড়াচড়া করলে ঘুম ভেঙে যেতে পারে।কতদিন পরে একটু শান্তিতে ঘুমিয়েছে মেয়েটা।ঘুম নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।আয়ান আস্ত করে কোনোরকম বসে পড়লো।শখের ঘুম নষ্ট হবে ভেবে আর রুমে গেলো না।শখকে বুকে নিয়ে বেলকনিতে-ই ঘুমিয়ে গেলো আয়ান।
পরের দিন সকাল বেলা রুহি ফোনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো নিচে।হঠাৎ চোখ গেলো আয়ানের রুমের দিকে এত সকালে ওদের দরজা খোলা কেনো,জানার জন্য রুমে এসে দেখে শখ বা আয়ান কেউ নেই।রুহি অবাক গেলে কই ছেলেদের দু’টো।বেলকনিতে চোখ পড়তে’ই রুহি বেলকনির দিকে এগিয়ে গিয়ে যাহ দেখলো বেশ খুশি হলো সাথে লজ্জা’ও পেয়ে গেলো।
–ইসস কত সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি না করলে তাই হয়।রুহি শখ আর আয়ানের একটা ছবি তুলে নিলো।তারপরে একটা চাদর নিয়ে এসে বেলকনিতে বেঁধে দিলো।রোদ এসে ওদের ঘুমটা নষ্ট না করে দেয়।চাদর বেঁধে দিয়ে রুহি চলে গেলো।
আয়ান আর শখের ঘুম ভাঙলো দশ-টায়।শখ নড়েচড়ে উঠতেই বললো।
–ঘুম হয়েছে।নাকি আরো ঘুমাবে।
–উম।
–কি উম।
–কয়টা বাজে।
–আমি জানি না।
–তাহলে কে জানে।
–রুমে গিয়ে দেখতে হবে।
–রুমে গিয়ে দেখতে হবে মানে।
শখ চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো।
–তার মানে সারারাত বেলকনিতে ঘুমিয়েছি।
–আগ্গে জ্বী ম্যাডাম।
–আমাকে ডাকলেন না কেনো।শখ লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
আপনার সারারাত এভাবে বসে থাকতে কষ্ট হয় নাই।
–হ্যাঁ হয়েছে অনেক কষ্ট হয়েছে বউ।একটু আদর করে দাও তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।
–কচু হয়ে যাচে।কোথায় কষ্ট হয়ে বলেন।যদি সাহায্য করতে পারি।
আয়ান তার ঠোঁট দেখিয়ে বললো।এখানে কষ্ট হচ্ছে একটা চুমু দিয়ে দাও ঠিক হয়ে যাবে।
–অসভ্য লোক একটা।থাকুন আমি গেলাম।বলেই শখ উঠে দাঁড়াল।
–বউ একা কই যা-ও।আমাকে’ও সাথে না-ও।বলেই আয়ান হাত বাড়িয়ে আয়ানকে তোলার জন্য।শখ হাত ধরে আয়ানকে উঠে দাঁড় করালো।শখ চলে যেতে লাগলে একটানে শখকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।গালে কাঁপালে ইচ্ছে মতো চুমু খেয়ে ছেড়ে দিলো শখকে।
–বাজে লোক একটা,আপনাকে সাহায্য করা টাই আমার ভুল হয়েছে।
আমি আবার আসবো বউ।ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলল।
শখ আর কোনো কথা না বলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে,মাথায় হাত দিয়ে বসলে পড়ল।হায় আল্লাহ দশটা পার হয়ে গেছে।এত ঘুমালাম কি করে।সবাই কি মনে করবে।
–কি ভাবছো এতো যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।নাকি আমি সাথে করে নিয়ে যাব।শখ আয়ানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
একটু পরে দু’জন মিলে খেতে চলে গেলো।
–কি ঘুম হয়েছে দুজনের।বলল রুহি।
–আম্মু তুমি’ও না।দেখতে পাচ্ছো না।ঘুম না হলে এমনি খাবার খেতে আসছে।বোকার মতো প্রশ্ন করো খালি।তা আয়ান বাবা তুমি’ও বউ পেয়ে সবার মতো হয়ে গেলে।বলল রাফি।
–রাফি শুনলাম তুমি নাকি স্কুলে,,
–মামু,মামু চুপ করো আমি তো মজা করছিলাম।তার বউ’মা কি সব ঠিকঠাক তো তোমাদের মধ্যে শুনলাম তোমাদের নাকি সংসার ভেঙে যাচ্ছিল।মামু তো প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলো বউ হারানোর ভয়ে।
রাফির কথা শুনে রুহি আর শখ হেঁসে ফেলল।আয়ান রাগি চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে রাফির দিকে।
–রিয়া কেমন আছে রাফি।তোমাদের মধ্যে সব ঠিকঠাক তো।
–মামু তুমি বেশি কথা বলতে শিখে গেছো।ভুলে যেও না মামু।আমি তোমার বাবা হয়।ভদ্রভাবে কথা বলো।
–কিরে রিয়া কে।তোরা দু’জন এমন করে কথা বলছিস কেনো।
–ও কিছু না আম্মু।তুমি বুজবে না।এটা আমাদের বাবা ছেলের ব্যাপার।
–দেব একটা যাও পড়তে বসো।
–শুক্রবারে কিসের পড়া আম্মু।আজকে একটু আরাম করবো।
বলেই দৌড়ে চলে গেলো রাফি।
–আম্মু অনেক হয়েছে।আর না আজকে যদি আয়ান ভাইয়ার কাছে নিয়ে না যা-ও,তাহলে আমি একাই চলে যাব।অনেক ধৈর্য ধরেছি আর না।
–আচ্ছা বাবা রাগ করিস না।আজ বিকেলে যাব।তোকে আয়ানের কাছে এবার খুশি।
–হ্যাঁ আম্মু অনেক অনেক খুশি।আর ধৈর্য ধরতে পারছি না।কখন বিকেল হবে।এটা শুনে মুনতাহা দৌড়ে রুমে গেলো।শুভকে ফোন করে সবকিছু বলে দিলো।
–এখন কি হবে মুনতাহা।খুব একটা বড় ঝড় আসতে চলেছে।
–আর কোনো রাস্তা নেই মিহুকে আটকানোর।
–আচ্ছা আমরা সবাই যাব নাকি।তখন কিছু একটা করা যাবে।রাখো কাজ করছি।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
–বউ।
–কি।
–ভালোবাসি।
–আমি’ও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।শুভ হেসে কল কেটে দিলো।সেদিন-ই মুনতাহা শুভর সাথে চলে আসছে।ওদের সম্পর্ক আগের থেকে আরো বেশি সুন্দর হয়ে উঠেছে।দু’জন দুজনকে চোখে হারায়।ভালোবাসা’টা আগের থেকে দিগুন বেড়ে গেছে।খুব সুখে কাটাছে শুভ আর মুনতাহার জীবন।শুভ মুনতাহাকে সবকিছু বলছে মিহুর ব্যাপারে।মুনতাহা বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো।তার বোন এমনি দুখী।আবার নতুন কোনো বিপদ এসে তার জীবন’টা তচনচ করে দিবে না তো।কয়দিন হলো মুনতাহার মন’টা কু ডাকছে।মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হতে চলেছে।শখ মুনতাহার সাথে কথা বলে না।সেদিনের পড়ে আর কারো সাথে কথা বা দেখা হয় নাই শখের।আহনাফ সাহেব লুকিয়ে লুকিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে শখের।এই ভাবে-ই চলছিলো তাঁদের জীবন।
আসল লেখিকা ফাবিহা বুশরা নিমু।
বিকেল বেলা সবাই মিলে চৌধুরী বাসায় আসলো।মিহু খুব খুশি কতদিন পরে তার আয়ানকে দেখতে পারবে।কলিং বেলে চাপ দিতে-ই শখ এসে দরজা খুলে দিলো।শখকে দেখে মিহু ভ্রু কুঁচকে তাকালো।শখকে পাশ কাটিয়ে আয়ানের বাবা কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
–মামু কেমন আছো।
–আরে মিহু মা।কেমন আছিস।কতদিন পরে দেখলাম।এতদিন পরে বুঝি আমাদের কথা মনে পড়ল।
–আরে মামু আর বলো না।আমি কবে’ই বাংলাদেশে এসেছি।তোমাদের বাসার নিয়ে আসার জন্য করে থেকে আম্মুকে বলছি।আম্মু নিয়ে-ই আসছে না।
–কিরে ছোট মিহু সত্যি কথা বলছে।
–জ্বী ভাইজান মিহু সত্যি কথা বলছে।
–আরে মিহু যে কখন এলি এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো বস।আপু ভেতরে আসুন।বসুন।শুভ বাবা কেমন আছিস।বলল নীলিমা চৌধুরী।
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো মামনি তুমি কেমন আছো।
মুনতাহা শখের দিকে তাকিয়ে আছে।শখ একবারো মুনতাহার দিকে তাকায় নাই।দূরে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।
–শখ আয় তো মা আমার সাথে।রুহির মাথা ব্যাথা করছে।শুয়ে আছে।আমার সাথে সাহায্য করবি।
–আচ্ছা আম্মু চলো।
মিহু এবার বলল।
–মামনি এই মেয়েটা কে।তোমাদের বাসার নতুন কাজের লোক নাকি।তোমরা পার’ও মামনি।কাজের লোকদের এত মাথায় করে নেওয়া লাগবে কেনো।দেখে মনে হচ্ছে এই বাসার মেয়ে।
–মিহু তুই পাগল হয়ে গেছিস।ও কেনো কাজের লোক হতে যাবে।একদম কাজের লোক বলবি না।ও আমার মেয়ে।
–কাজের লোক-কে কাজের লোক বলবো না।তাহলে কি বলবো।আমি জানি তুমি কাজের লোকদের কতোটা ভালোবাসো।
–আপু আপনার কোথা’ও ভুল হচ্ছে।আমি এই বাসার কাজের লোক না।আমি এই বাসার একমাত্র ছেলে আয়ান চৌধুরীর বউ শখ চৌধুরী।
–এই মেয়ে তোমার সাহস কম না।কাজের লোক হয়ে মালিকের বউ হবার স্বপ্ন দেখিস।
–সাহসের কি আছে রে মিহু।শখ তো সত্যি কথা’ই বলছে।শখ আমার বউ।আর একদম’ই ওকে কাজের লোক বলবি না।বিষয়’টা আমার একদম ভালো লাগছে না।
–ভাইজান আয়ানের বিয়ে করিয়েছেন।আমাকে বলেন নাই কেনো।
–কেনো তোদের কার্ড শুভর কাছে দিয়ে ছিলাম।শুভ বলে নাই।তোকে অনেক কয়বার ফোন’ও করা হয়েছে।তুই ধরিস নাই।
–আয়ান ভাইয়া তুমি মজা করছো আমার সাথে।দেখো আমি একদম তোমার মনের মতো হয়ে এসেছি।আমাকে আর ফিরিয়ে দিতে পারবে না।এবার আমাকে বিয়ে করবে তো আয়ান ভাইয়া।
মিহুর কথা শুনে শখের ভেতর ধক করে উঠলো।কি বলছে মেয়ে’টা।
–মিহু তুই আর ছোট নেই।তাই বাচ্চাদের মতো বায়না ধরা বন্ধ কর।
–তুমি এই মেয়ের জন্য আমার সাথে এমন করছো তাই না। তুমি যদি আমার না হও।তাহলে আমি তোমাকে কারো হতে দিব না।বলেই দৌড়ে গিয়ে শখের গলা টিপে ধরলো।
শখ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,কিন্তু মিহুর শক্তির সাথে পেরে উঠছে।এখনো শখের শরীল দুর্বল।শখে দম বন্ধ হয়ে আসছে।এই বুঝি দেহ থেকে প্রানপাখি টা বেড়িয়ে যায়। আয়ান রেগে গিয়ে শখের থেকে মিহুকে ছাড়িয়ে নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে মিহুকে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
মিহু শখের গলা ছাড়ার সাথে সাথে শখ জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।পুরো শরীল কাঁপছে।আয়ান তাড়াতাড়ি করে শখের কাছে গিয়ে সবার সামনে শখকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here