রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 38

0
1117

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৩৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
তার আগেই ফিয়াজ এসে শখকে টেনে নিলো।
–কি রে কি পাগল হয়ে,গেছিস।এভাবে কেউ রাস্তায় মাঝখানে এসে দাঁড়ায়।মন কোথায় থাকে তোর।তোর যদি কিছু হয়ে তাহলে স….
–ভাইয়া,আসলে।তুমি জানো আমরা..
–ওকে কিছু বলিন না মা।ওর কিছু মনে নেই।এখন ওকে কিছু বললে-ই মাথায় হাত দিয়ে পাগলের মতো করবে।পেছনে থেকে বলল আহনাফ সাহেব।
–আরে চাচ্চু আপনি এখানে,আমি আমার ভাইয়াকে যা কিছু বলতে পারি।সেটা নিশ্চয় এখন আপনাকে বলে করতে হবে না।
–শখ..আমি তোর বাবা হই।
–হ্যাঁ পালিত বাবা।আপনার মেয়ে আর আপনার বউ তা আমার চোখে আঙুল দিয়ে,দেখিয়ে দিয়েছে।আপনারা অনেক ভালো মানুষ।অনেক করেছেন আমার জন্য।আর কোনো রকম দয়া চাই না।
–শখ এটা তোমার কেমন ব্যবহার।বাবা হয় উনি তোমার।তুমি এভাবে কথা বলতে পারো না।
–আপনি আমার সাথে একদম কথা বলবেন না স্যার।আপনার সাথে আমার আর কোনো কথা থাকতে পারে না।আজ থেকে আপনি আপনার মতো আর আমি আমার মতো।তাই আমার কথার মধ্যে কথা না বললে খুশি হবো।
–শখ তুৃমি ভুলে যাচ্ছো আমি কে।তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এভাবে কথা বলার। আমাকে রাগি’ও না।ফলাফল খুব খারাপ হবে।
শখ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুনতাহা আর শভ এসে হাজির।
–তুই আমাকে মাফ করে দে শখ।বিশ্বাস কর আমি তোকে কষ্ট দিতে চাই নাই।রাগে বসে কি যে করে বসলাম।আমাকে দয়া কর মাফ করে দে বোন আমার।
–হাহা।ছোট বেলা থেকে আমাকে কষ্ট দিয়েই যাচ্ছো।কতই না অপমান করছো।একটা বলে দিতে তুই নিজের বোন না।তাহলে দেখতে আমাদের জন্য তোমরা দুই ভাই বোন যা কিছু হারিছো।সবকিছু ফিরিয়ে দিতাম।নিজের বোন না বলে আমার সাথে এমন ব্যবহার করতে।আজ তুমি খুশি তো আপু শখ সবকিছু জেনে গেছে।আর তোমাদের কোনো কিছুতে ভাগ বাসাবে না।দেখো যে মা আমাকে কতো ভালোবাসতো তার মেয়ের কষ্ট হয়েছে শুনে,তার রুপ বদলে যেতে দুই মিনিট লাগলো না।গিরগিটির মতো রং বদলে ফেললো।আসলে স্বার্থ আঘাত পড়লে সবার আসল রুপ দেখা যায়।আপনারা সবাই চলে যান,আমার মুখের সামনে থেকে।আমি আপনাদের কারো মুখ দেখতে চাই না।
–শখ তুই এসব কি বলছিস।মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর।বলল ফিয়াজ।
–স্যার আপনি সবাইকে নিয়ে চলে যান।আমি শখকে দেখে নিচ্ছি।আয়ান ইশার করতে’ই সবাই চলে গেলো।
–হাত ছাড়ুন আমার,এখনি আপনি-ও কি আমাকে দয়া দেখাবেন।
–শখ আমি তোমার স্বামী।এখানে দয়ার কোনো প্রশ্ন-ই আসে না।তুমি আমাকে লিখিত ভাবে সারাজীবন এর জন্য তোমার করে নিয়েছো।তাহলে এখানে দয়া আসছে কোথায় থেকে।তুমি ছাড়া কি আমার ওপরে কেউ অধিকার দেখাইতে পারবে বলো।
–তাকে আমি জানে মেরে ফেলবো।আপনি চলে যান।আপনি-ও সবার মতো আমার সাথে বেইমানি করেছেন।আমি আপনাকে খুব বিশ্বাস করতাম।আপনি আমার সেই বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছেন।আমার কাউকে চাই না।কাউকে লাগবে না।কাকে বিশ্বাস করবো।বিশ্বাস শব্দে’ও বিষ আছে।বলেই শখ হাঁটা শুরু করলো।সে কোথায় যাচ্ছে নিজে’ও জানে না।
আয়ান গিয়ে রাস্তা ভর্তি মানুষের সামনে শখকে কোলে তুৃলে নিলো।
–এটা কেমন ধরনের অসভ্যতা।নামান আমাকে সবাই দেখছে।
–দেখলে দেখবে।অন্যের বউকে কোলে নেই নাই।আমার বউকে নিয়েছি।আমার ওপরে আর একটা কথা বললে তোমার খবর আছে।বলে গাড়ি ডেকে নিলো।গাড়িতে উঠে শখ নামার জন্য ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে।শখ কিছুতে’ই আয়ানের সাথে যাবে না।আয়ান কম যায় কিসে।যতদিন বেঁচে আছি,আমার হাত থেকে তোমার মুক্তি নেই।আমি মরে গেলে মুক্তি তোমার।আয়ানের এই কথায় শখ একদম চুপ হয়ে গেলো।কোনো কথা বলছে না।যেনো সে কথা বলতে জানে না।
এভাবে কেটে গেলো একটি মাস।শখ কারো সাথে ঠিকমতো কথা বলে না।সব সময় নিজেকে রুমের মধ্যে বন্ধি রাখে।আয়ানের সাথে ঠিক ভাবে কথা বলে না এরিয়ে চলে।খুম কম আয়ানের সামনে যায়।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না।রাতে ঘুমোয় না।এই কয়দিনে অনেক’টা শুকিয়ে গেছে মেয়েটা।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।চেহারা আগের মতো উজ্জ্বলতা নেই।নিজের প্রিয় মানুষটার এমন অবস্থা আয়ানকে পুরিয়ে শেষ করে দিচ্ছে।কোনো ভাবেই শখকে কিছু বোঝাতে পারছে না।কলেজে যায় না ঠিকমতো।কিছু বোঝাতে গেলে বলে চলে যাবে।আয়ান ভয়ে কিছু বলতে না পেরে রুহি কল দিলো।
—-হ্যালো,আয়ান বল কি হয়েছে কেমন আছিস।
–আপু তুমি একটু আমাদের বাসায় আসবে।আমার সয্য ক্ষমতা শেষ।আমি আর পারছি না।শখ খুব বেশি পাগলামি শুরু করে দিয়েছে।তুমি এসে একটু বুঝাবে।আমি শিওর তুমি ওকে ভালোকরে বুঝিয়ে বলল,ও নিশ্চয় তোমার কথা শুনবে।ও তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসে।
–কি হয়েছে,কি সব বলছিস আমাকে ভালো করে সবকিছু খুলে বলতো।
তারপরে আয়ান রুহিকে সবকিছু খুলে বললো।সবকিছু শুনে রুহি ছোটা খাটো একটা ধাক্কা গেলো।
–কি বলছিস আয়ান তুই এসব।শখ যে স্যারের মেয়ে না।আমরা সবকিছু জানি।এগুলোও জেনে গেছে।
–হ্যাঁ তোমাকে আমি এমনি বলছি।আমাকে ভুল বুজছে।আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলে না।আমার সামনে আসে না।আমার আর ওর এত অবহেলা সয্য হচ্ছে না আপু।আমি এবার মরে যাব।
–সর্বনাশ!তোকে দিব একটা থাপ্পড়।তুই কেমন বর রে বউয়ের রাগ ভাঙাতে পারিস না।আমি সন্ধ্যার দিকে আসছি।তারপরে দেখি কি করা যায়।বলে-ই কল কেটে দিলো।
সন্ধ্যার দিকে রুহি আসলো।রুহিকে দেখে রুহির কাছে গেলো।
–এখন কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।তুই রাফিকে নিয়ে যা,কয়টা চকলেট কিনে দে।তারপরে সব কথা হবে।আয়ান বাধ্য ছেলে মতো চলে গেলো।
আয়ান চলে যাওয়ার সাথে সাথে বাবা-মায়ের সাথে একটু কথা বলে ওপরে চলে গেলো রুহি।কয়েকবার দরজায় নক করার পরে-ও শখ যখন দরজা খুললো না।রুহি তখন রাগি কণ্ঠে শখকে ডাকতে লাগলো।একটু পরে শখ এসে দরজা খুলে দিলো।শখের দিকে তাকিয়ে রুহি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।কয়েক দিনের ব্যবধানে মেয়েটার কি অবস্থা করে ফেলেছে।
–একি শখ,তোমার কি অবস্থা করেছো নিজের,লোকে দেখলে বলবে তো আমার বাবা-মা তোমাকে খেতে দেয় না।না খাইয়ে রাখে।
–সেটা তোমরাই ভালো বলতে পারবে আপু।
–দেব একটা লাগিয়ে।খুব বেশি কথা হয়েছে তোমার।তুমি কি ভুলে গেছো আমি তোমার বড় বোন।আমার মুখে মুখে কথা বলছো।এত বড় সাহস তোমার।
শখ মাথা নিচু করে ফেললো।
–দেখো বোন সত্যি কথা কোনোদিন চাপা থাকে না।একদিন না একদিন ঠিক সামনে আসে।তার জন্য খাওয়া দাওয়া সবকিছু ছেড়ে নিজেকে সবকিছুর থেকে দূরে সরিয়ে রাখলে তুমি নিজেকে,ভালো রাখতে পারবে।বোন জীবন’টা খুব সুন্দর।তাই এভাবে নিজের মহা মূল্যবান সময় নষ্ট না করে জীবন টা সুন্দর ভাবে কাটাও।আচ্ছা একটা কথা বলতো,তোমার বাবা নেই।এটা জেনে শুনে তোমাকে আয়ানের সাথে বিয়ে দিয়েছি।তোমার বাবা-মা নেই এটা নিয়ে তোমাকে আমাদের বাসায় কেউ কোনো বাজে কথা শুনিয়েছে।
–না।
–তাহলে তুমি এমন করছো কেনো।তোমাকে নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই শখ।আর তুমি দয়ার কথা বলছো।এখানে তোমাকে দয়া করার আমরা কে,আয়ান তোমার স্বামী।তোমার একান্ত সম্পদ সে।তুমি তোমার অধিকারে আছো।তাই নিজের ছোট ভাবার কোনো কারন নেই।কারন এটা তোমার বাসা।আগে তো আমি’ও এই বাসার মেয়ে ছিলাম।কিন্তু বিয়ের পরে প্রতিটি মেয়ের স্বামীর বাসা তার নিজের বাসা হয়ে যায়।আর বাবা বাসায় আসতে হয় মেহমান হয়ে।যেমন আমি আসি।তুমি জানো তুমি যতটা কষ্ট পাচ্ছো।তার থেকে বেশি কষ্ট আমার ভাই পাচ্ছে।সময় থাকতে মূল্য দাও শখ।কিছু কিছু মানুষ হারিয়ে বারবার ফিরে আসে না।আসো তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো।বলেই শখের হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে গেলো রুহি।
–তুমি এখানে কিছুক্ষণ লুকিয়ে থাকবে।একটা কথা বলবে না।দেখবে শুধু কি হয়।শখ রুহির কথা মতো লুকিয়ে পড়লো।
–তা বাবা শুনলাম তোমার নাকি সংসার ভেঙে যাচ্ছে।আমি আগেই জানতাম তোমার মতো রাগী ছেলের সংসার কোনো মেয়ে করতে পারবে না।বলল রাফি।
আয়ান রাগী চোখ নিয়ে তাকাতেই নানুর কাছে দৌড়ে চলে গেলো।
–আপু আসবো।
–হ্যাঁ,ভেতর আয় বস।বউয়ের সাথে তুই’ও অনশন করতে লাগলি নাকি।চেহারার কি অবস্থা।আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।রুহিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
–আপু আমি আর পারছি না।তুমি একটু শখকে বুঝিয়ে বলো না।আমার সাথে কথা বলে না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।সত্যি আমি মারা যাব।শখের এত অবহেলা সয্য হচ্ছে না।যেদিন আমি বদলে যাব।সেদিন শখ আমাকে মেনে নিতে পারবে তো।বলছে আর এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিচ্ছে।ছেলে মানুষের কাঁদতে নেই।তবু্ও চোখের পানি বাধা মানছে না।আয়ানের চোখে পানি দেখে শখের এবার বেশ খারাপ লাগছে।একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে এভাবে কান্না করতে পারে।উনার তো কোনো দোষ নেই।উনি আমার সবাই কিছু জেনে,সবসময় আমার পাশে থেকেছে।আমাকে ভরসা দিয়েছে।আর আমি কি-না একটা ভুলের জন্য ওনাকে এত কষ্ট দিয়ে ফেললাম।আয়ানের কান্না দেখে শখ ও কান্না করে ফেললো।শখ বেড়িয়ে আসতে চাইলে রুহি ইশারা করে মানা করে দিলো।
–একদম বাজে কথা বলবি না।আমি আসছি না সব ঠিক করে দিব।এখন যা নিজের রুমে যা।
–শখ দরজা খুলবে না।
–দরজা খোলা আছে।আনু খালাকে দিয়ে রুম টা পরিষ্কার করে নে।আয়ান উঠে চলে গেলো।
আয়ান চলে যেতে-ই শখ বেড়িয়ে আসলো।দৌড়ে আয়ানের কাছে যেতে লাগলে,রুহি হাত ধরে ফেললো।
–বাবা এত তাড়া কিসের এখন আমাকে-ই চিনো না।
শখ অশ্রুভেজা চোখে তাকাল রুহির দিকে।
–দেখলে তো আমার ভাই তোমাকে কতটা ভালোবাসে।আমার ভাইয়ের ভালো থাকা।খারাপ থাকা সবকিছু তোমার ওপরে নির্ভর করে।তুমি কষ্ট থাকলে তার থেকে বেশি কষ্ট আমার ভাই পায়।কতটা অসহায় হয়ে আজকে আমাকে ফোন করেছিলো জানো।আমার ভাইয়ের জীবনে তুমি প্রথম নারী।ওকে বিয়ে কথা বলার জন্য দেশ ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিল।যেদিন কলেজে প্রথম কলেজে জয়েন হবে,সেদিন-ই চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিদেশে চলে যাবে ঠিক করে।কিন্তু তোমাকে দেখার পড়ে থেকে যায়।এত ভালোবাসার পরে-ও তুমি এই মানুষটা’কে অবহেলা করছো।
–আমার ভুলে হয়ে গেছে আপু।
–আমার ভাইয়া কে আর কষ্ট দিতে।
–না।
–কান ধরে বলো।
–কান ধরে বলছি আপু।আর কষ্ট দিব না।
–লক্ষি বোন আমার।
শখ এবার রুহিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।আয়ানের কাছে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে শখ।রুহি ধরে রাখছে।যেতে দিচ্ছে না।
–আমাকে যেতে দিচ্ছো না কেনো আপু।
–এটা তোমার শাস্তি।তুমি আমার ভাইয়াকে এতদিন কষ্ট দিয়েছো,এখন দেখো কেমন লাগে।
–আপু।
–আপু বলে লাভ নেই।
রাত্রি নয়টা বাজে রুহি শখকে সাথে নিয়ে ডিনার করতে গেলো।শখকে ডাইনিং টেবিলে দেখে আয়ান সহ সবাই অবাক।খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো।
অনেকক্ষন ধরে আয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে।আয়ান আসছে না এদিক ওদিক ছটফট করছে। বেলকনিতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে শখ।আজ তার বাবা মা বেঁচে থাকলে কতই না সুন্দর হতো তার জীবন’টা।
–দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা।
–শখ যদি রেগে যায়।
–হাহাহা।আয়ান চৌধুরী ভয় পাচ্ছে।তা-ও আবার কাকে।দারা ভিডিও করে রাখি সবাইকে দেখাবো।
–আপু।
–যা শখের কাছে।আমি ওকে বুঝিয়েছি।আশা করি আর সমস্যা হবে না।
–দরজা যদি না খোলে।
–আয়ান দেব একটা থাপ্পড়।এত ডং কই থেকে শিখছিস।
–আমি কিছু বললেই দোষ হয়ে যায়।রেগে ওপরে চলে আসলো।সত্যি তো দরজা খোলা।আগে জানলে আপুকে আগেই নিয়ে আসতাম।শখকে রুমে না পেয়ে বেলকনিতে গেলো।
বাবা মার সাথে যদি আমি’ও মরে যেতাম তাহলে খুব ভালো হতো।এসব ভাবছিলো।হঠাৎ কারো স্পর্শ কেঁপে উঠলো।বুজতে আর বাকি নেই কে।আয়ান শখকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে শখের কাছে মাথা রাখলো।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here