রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 02

0
2203

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_০২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
পদার্থ বিজ্ঞান ক্লাস বাদে সব কয়টা ক্লাস করলো শখ।এখন ব্রেক টাইম।
ক্যান্টিনে গোল হয়ে বসে আছে শখ,আয়েশা,স্নেহা,মেধা,আমান,সিয়াম,কাব্য।
আয়েশা:বইন,তোর সাহস কম না।তুই কি করে স্যারের থাকে ঝগড়া করলি।স্যার যে রাগি রে বইন আমাদের প্রথম দিন-ই উল্টা ঝুলিয়ে দিয়েছে।আমি তোকে কতো বার চোখ ইশারা করে বুঝিয়ে দিতে চাইলাম।কথা বলিস না। তুই আমার দিকে তাকালি না উল্টো স্যারের সাথে সেকি ঝগড়া। বাপ রে বাপ।তুই কি স্যারকে আগে থেকে চিনতি নাকি রে।
সবাই শখের দিকে তাকিয়ে আছে।শখ কোনো কথা বলছে না।চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।সবাই এমন ভাবে শখের দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে ও চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণী।
শখ:তোরা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।আমাকে দেখে তোদের চিড়িয়াখানার প্রাণী মনে হচ্ছে।
সিয়াম:তোর এই কুত্তা,বিলাই চেহারা নিয়ে।ঐ সুন্দর চিড়িয়াখানার প্রাণীদের মাঝে বড্ড বেমানান লাগবে হে রমনী।আর তুই কি না।ঐ,সুন্দর সুন্দর প্রাণীদের সাথে তোর তুলনা করছিস।কোথায় তুই আর কোথায় ওরা।
শখ সিয়ামের চুল টেনে ধরলো।
–নিজেক আয়নায় দেখেছিস তোমাকে আহট এর খুচরোর মতো লাগে।তোর থেকে আহট এর খুচরো বেশি সুন্দর।
–কি তুই আমাকে ভুতের সাথে তুলনা করছিস জানিস কতো সুন্দর কতো মেয়ে আমার পেছনে ঘুরে।
–হ মেয়েদের রুচি এতটা খারাপ হয়ছে যে তোর মতো ছাগলের পেছনে ঘুর ঘর করবে।যাদের রুচি খারাপ তারা’ই তোর পেছনে ঘুরে।
–কি বললি আমি ছাগল।তুই ছাগল।তোর বর ছাগল। তোর পুরো শশুর বাড়ির লোক ছাগল। তুই যার কপালে আছিস বেচারার কপাল পুড়ছে।আমি খুব চিন্তা হয় জানিস তোর বরের জন্য।
–চিন্তা করতে করতে মরতে’ও তো পারিস শালা।অনেক দিন হলো চল্লিষা খাই না।তুই মরলে অনেক দিন এর ইচ্ছা পূরন হতো আরকি।
–শখ তুই এভাবে বলতে পারলি।
কাব্য:কে মরবি সেটা বড় বিষয় না।বড় বিষয় হচ্ছে খেতে পেলে’ই হলো।
আয়েশা:শালা ছুঁচা কোথাকার লজ্জা করে না অন্যের টাকার খাবার খেতে চাস পারলে নিজে কামায় করে খা।আর যদি কামায় করতে না পারিস তাহলে তুই নিজেই মরে যা।আর নিজের চল্লিষা নিজে’ই খা।
আয়েশার কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
কাব্য:আমি যদি মরে’ও যায় না কেনো আমর আব্বু,আম্মুরে কমু তোগোরে যেনো মনের ভুলে’ও দাওয়াত না দেয়।
স্নেহা:তুই ভাবলি কি করে যে আমরা দাওয়াত এর জন্য অপেক্ষা করবো।বিনা দাওয়াতে চলে যাওয়া লোক আমরা।কি বলিস সবাই। একটু ভাব নিয়ে বললো।
সবাই সম্মতি জানালো স্নেহার কথায়।
আমান:তোরা থামবি এসব কথা বাদ দিয়ে আসল কথায় আসা যাক।
মেধা:কিসে আসল কথা রে।
আয়েশা:শখ,স্যার কে চিনে কি করে এটা এখনো বলে নাই। আগে ওর থেকে সবটা শুনবো তারপরে সব কথা বলেই সবাই শখকে চেপে ধরলো।তখন শখ মাথায় শয়তানি বুদ্ধি এনে বললো।
–আমি তোদের সবটা বলতে পারি কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
সবাই একসাথে বলে উঠলো কি শর্ত।
তোদের সবাইকে একটা সাহায্য করতে হবে।
কাব্য:এটা কোনো বিষয় হলো নাকি বল কি করতে হবে।
আমান:তুই সাহায্য চাইবি আর আমরা করবো না।তাই কখনো হয়।
শখ:আরে শালা আমার কথা শুন আগে।
আমান:তুই আমার কোন বোনকে বিয়ে করছিস সারাদিন শালা শালা করিস।
শখ:তুই চুপ করবি নাকি তোর ঘাড় মটকে দিব আমি।
সিয়াম:রাক্ষসি মেয়ে একটা।তোকে আবার বিশ্বাস নেই। দিতেও’ পারিস।এই সবাই ওর থেকে দূরে সরে যা।
শখ:সিয়ামের বাচ্চা আজ তোকে খাইছি।
সিয়াম:আমরা কোনো বাচ্চা নেই তাই তুই খেতে’ও পারবি না হিহিহি।
শখ রাগি চোখ নিয়ে সিয়ামের দিকে তাকালো।
সিয়াম:আমি তো মজা করছিলাম বাবু তুই রাগ করছিস কেনো।
শখ:আমাকে দেখে তোর বাচ্চা মনে হয়।যে বাবু ডাকছিস তুই। অনেকটা রেগেই বললো শখ।
সিয়াম:না তোকে দেখে আমার রাস্তার টোকাই মনে হয়।
সিয়াম বাঁচতে চাইলে পালা সবাই মিলে দিলো দৌড় শখ’ও কম যায় কিসে জুতো হাতে নিয়ে ওঁদের পেছনে থেকে তাড়া করতে লাগলো।
একসময় এসে আশেয়া বললো।(আশেয়া শখের বেস্ট ফ্রেন্ড)
আয়েশা:থাম বইন আর পারছি না।
শখ:থামতে পারি আরে বল তোরা সবাই আমাকে সাহায্য করবি।
সিয়াম:করবো এবার তো বল কি করতে হবে টোকাই না মানে শখ।
তারপের শখ ওঁদের সবটা বুঝিয়ে দিলো শখের কথা শুনে সবাই একসাথে বলে উঠলো অসম্ভব।
শখ:তারমানে তোরা আমাকে সাহায্য করবি না তাই তো।
আমান:কিন্তু তোকে স্যার করেছে টা কি যে তুই স্যারের সাথে এমন করবি।
তারপরে শখ সকালের সব ঘটনা সবাইকে খুলে বললো সবাই তো অবাক হয়ে গেছে শখের কথা শুনে।শেষ কি না
স্যারকে’ও ছাড় দিলো না শখ।আমি শিওর ঝগড়া করার জন্য যদি কোনো অ্যাওয়ার্ড থাকতো তাহলে সেটা তুই-ই পেতিরে শখ।বলল সিয়াম।
শখ:থাপ্পড় দিয়ে তোর কিডনি লক করে দিব এখন চল কাজে লেগে পড়ি।
আয়েশা:যদি ধরা পড়ে যায়।আমার সেই ভয় লাগছে রে।শখ বাদ দে নারে বইন এমনি আমরা ভালো আছি।
শখ:তারমানে তোরা আমাকে সাহায্য করবি না তাই তো।ওকে যা তোদের সাথে আজ থেকে ব্রেকআপ তোরা কেউ আমার সাথে কথা বলবি না।আমি শখ একাই থাকতে পারি।বলেই শখ চলে যেতে লাগলে।
আমান বলে তুই রাগ করছিস কেনো আমরা কি বলছি তোকে সাহায্য করবো না। কিন্তু ভয় লাগছে আজ স্যারের ক্লাস করে যা বুঝলাম স্যার অনেক রাগী।যদি জানতে পারে আমাদেরকে কলেজ থেকে রাসটিকেট করে দিবে।
শখ:তোরা শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস কিছু হবে না। আমি শখ থাকতে তোদের কোনো সমস্যা হতে দিব না।
সিয়াম:যা করার কাল করবি আজ আর কিছু করতে যাস না। পাকনামির ফল পেয়ে যাবি।
সিয়ামের কথায় শখ বাদে সবাই সম্মতি জানালো।শখের আর কি করার ওঁদের সাহায্য ছাড়া নিজে একা কিছু করতে’ও পারবে না।
সবাই যে যার মতো বাসায় চলে গেলো।পরের দিন সকাল বেলা শখ আজ অনেক আগে বাড়ি থেকে বেড় হয়েছে।কারন তাড়াতাড়ি কলেজে গিয়ে ক্লাস রুমে প্রবেশ করতে পারে।না হলে ব্যাডা খাটাশ আবার দেরি হলে রুমে টুকতে দেয় না।ক্লাস রুমে প্রবেশ করে দেখে দশ মিনিট আগে ক্লাস রুমে প্রবেশ করছে শখ।
–যাক বাবা আজ আগে আসতে পারছি।শালা হনুমান। আজ দেখবো কেমনে আমাকে রুম থেকে বের করসি।
–কিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি বিরবির করছিস তুমি বলল আয়শে।
শখ গিয়ে আয়েশার পাশে বসতে বসতে বললো।
–আরে খচ্চর ব্যাডার আগে আজ ক্লাস রুমে আসছি।আজ দেখবো।শালা খাটাশ ব্যাডা আমারে কেমনে বের করে।শালার জীবন তেজ পাতা বানায় দিমু।আমারে তো চিনে না।আমি’ও শখ।দেখায় দিমু।
আয়েশা:বলছি একটা বার ভাব বইন।
শখ:কি ভববো রে তোর ইচ্ছে হলে আমাকে সাহায্য করিস না।তা-ও কথা বলিস না।চুপ থাক।
আয়েশা:আচ্ছা রেগে যাচ্ছিস কেনো।ঐ দেখ স্যার আসছে।
শখ তাকিয়ে দেখলো সত্যি।
ক্লাসের সব মেয়েরা হা করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।পারে তো আয়ানকে চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলে।
কয়েকজনের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেছে।
একেক জন একেক রকমের কথা বলছে।
–শুন ওটা তোদের দুলাভাই হয়।একদম নজর দিবি না কেমন।
–তোর লজ্জা করে না ভাইয়ের মতো স্যারকে স্বামী বানানোর স্বপ্ন দেখতে। স্যার শুধু আমার।
–তোরা ঐ আশায় বসে থাক তোদের থেকে সব দিক দিয়ে আমি এগিয়ে।আমার বাবার অনেক টাকা আছে বাড়ি আছে গাড়ি আছে।আমি দেখতে’ও অনেক সুন্দর। তাছাড়া আমি খুব ভালো ছাত্রী আর টিচারা সব সময় ভালো ছাত্রীদের পছন্দ করে।তাই স্যারের বউ আমি হবো।
–বললেই হলো নাকিরে।বাড়ি গাড়ি টাকা থাকলে’ই হয় না।তোর থেকে ভালো ছাত্রী আমি।তাই তোরা স্যারের আশা ছেড়ে দে।স্যার শুধু আমার।
–সময় হলেই দেখা যাবে স্যার কার স্যার তো আমার-ই হবে তোরা দেখে নিস।
এদের ঝগড়া দেখে শখের বিরক্ত লাগছে কি এমন আছে ঐ হনুমানটার ভেতরে যে সবাই এত পাগল হয়ছে।
এসব কথা ভাবছিলো শখ কখন যে আয়ান এসে শখের সামনে দাড়িয়েছে সেদিকে শখের খেয়ালই নেই।
আয়ান:এটা পড়াশোনা করার জায়গা চিন্তা ভাবনা কারার জায়গা না।যদি চিন্তা করতেই হয়।বাহিরে গিয়ে করো।
শখ আয়ানের দিকে না তাকিয়েই বললো।
–এটা পোড়ানোর জায়গা জ্ঞান দেওয়ার জায়গা না।আপনাকে এখানে পড়ানোর জন্য রাখা হয়েছে জ্ঞান দেওয়ার জন্য না।তাই জ্ঞান না দিয়ে চুপচাপ পড়ান।
সবাই অবাক হয়ে শখের দিকে তাকিয়ে আছে।
শখ এরাব নিজের খেয়ালে এসে বুঝতে পারলো কতো বড় বেয়াদবি করছে সে। সামনে তাকাতেই দেখলো আয়ান রক্ত চক্ষু নিয়ে শখের দিকে তাকিয়ে আছে।
শখ এবার মাথা নিচু করে বললো।
–স্যারি স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আর কখনো এমন ভুল করবো না ক্লাসে অমনোযোগী হবো না।আমাকে এবারের মতো মাফ করে দিন।
–এদিকে এসো।
–স্যারি স্যার আর হবে না আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দিবেন না দয়া করে।
আয়ান এবার ধমক দিয়ে বললো।
–তুৃমি কানে কম শুনো।তাহলে ভালো একটা ডক্টর দেখাও।আমি তোমাকে এদিকে আসতে বলছি তোমার থেকে কোনো অজুহাত শুনতে চাই নাই।একে তো ক্লাসে অমনোযোগী ছিলে।তার ওপরে মুখে কথা বলছো।আমার এমন ছাত্রীর দরকার নেই বেড়িয়ে যাও।বলছি।
আয়ান এতটাই রেগে গেছে যে আয়ানের ধমন শুনে শখ ভয়ে কিছুটা কেঁপে উঠে। পুরো ক্লাস একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে। সবার দৃষ্টি এখন শখ ও স্যারের দিকে।
আয়ান আবার ও বলে উঠলো।
–আমি এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না।ভালো কথা কানে যাচ্ছে না।তোমার জন্য পুরো ক্লাসের সমস্যা হচ্ছে আমি তোমার জন্য আমি আমার ক্লাসের মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট করতে চাচ্ছি না।বেড়িয়ে যাও বলছি।
শখ:সরি,স্যার আর হবে না।শেষ বারের মতো মাফ করে দিন।কান্না করতে করতে বললো শখ।
আয়ান কিছু একটা ভেবে বললো ঠিক আছে ক্লাসের ভেতরে থাকবে তুমি।
–শখ খুশি হয়ে বললো সত্যি স্যার।
–আয়ান বললো হ্যাঁ সত্যি এখন বেড়িয়ে আসো।
–এ্যাঁ..
–এ্যাঁ নয় হ্যাঁ বেড়িয়ে আসো।
–বেড়োবো কেনো স্যার।
–আয়ান ধমন দিয়ে বললো সেই কৈফিয়ত কি আমি তোমাকে দিব।
শখ ভয়ে চুপচাপ বেড়িয়ে আসলো।
–এক পা উঁচু করো।
–কি।
–বাংলা কথা বুঝতে পারো না ইংরেজিতে বলতে হবে নাকি।
–না স্যার তুলছি।
–এবার কান ধরো।
–এ্যাঁ।
–এ্যাঁ নয় হ্যাঁ।রাগি চোখ নিয়ে বললো।
শখ এক পা উঁচু করে দুই কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়ান:তুমি এভাবে পুরো ক্লাস দাড়িয়ে থাকবে আর এটাই তোমার শাস্তি।আর সবাই দেখে রাখো ভুল করার আগে দশবার ভাব্বে অনন্ত আমার ক্লাসে।অন্য টিচারদের ক্লাসে কি করো জানি না আমার ক্লাসে আমি ভুল পেলেই সবাইকে শাস্তি দিব।
আশা করি আজকের ঘটনা মনে করে হলেও কেউ ক্লাসে সমস্যা তৈরী করবেন না।
চলবে..…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here