#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৪৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
শখ কারো সাথে কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।সবাই পেয়েছে’টা কি আমাকে যে,যার মতো ঠকিয়ে যাচ্ছে।অনেক হয়েছে।কাউকে ক্ষমা করবো না।
পরের দিন সকাল বেলা,শখ কালো শাড়ি পড়ে মাথায় হিজাব বেঁধে নিলো।সামনে পরীক্ষা এখন যদি পড়াশোনা না করি।তাহলে নিশ্চিত ফেল করবো।আজকে কলেজে গিয়ে নোট নিয়ে আসতে হবে।বলে’ই রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।আহনাফ সাহেব একা ছাড়তে না চাইলে শখের রাগের কারনে ছাড়তে বাধ্য হলো।রেগে যদি মেয়েটা কিছু করে বসে।
শখ একটা সিএনজি ডেকে নিলো,গাড়ি চলতে শুরু করলো।পেছনে একটা গাড়ি শখের গাড়ি’টা ফলো করছে।শখ দেখতে না পরালে’ও যার দেখার সে ঠিকি দেখছে।
–না গাড়িটা-কে বেশি এগোতে দেওয়া যাবে না।শখের যদি কোনো ক্ষতি করে ফেলে।বলে’ই অর্ধেক রাস্তায় এসে নিজের গাড়িটি দাঁড় করিয়ে দিলো আয়ান।
–আবে কে রে,আমাদের গাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করাস।চিনিস আমাদের।তোর এত বড় দুঃসাহস।তোকে মেরে গুম করে দিব।একটা কাক পাখি’ও টের পাবে না।
হাতে থাকা সানগ্লাস ঘোরাতে ঘোরাতে আয়ান গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলো,এসে বলল।
–খুব শখ তাই না রে,আয়ান চৌধুরীর বউকে ফলো করার।এবার দেখবো কে কাকে গুম
করে।যে,যার মতো লুকিয়ে পড়।আমি খুঁজে পেলে,দেহ থাকবে কিন্তু প্রান থাকবে না।
আয়ানের কথায় লোকটি ভয়ে চুপসে গেলো।কপালে হালকা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে।ভয়ে ভয়ে বলল।
–স্যার,আপনি।আসলে স্যার।
–আবরাহাম চৌধুরীকে বলে দিস।আয়ান চৌধুরী যতদিন বেঁচে আছে।শখের শরীরে একটা ফুলের টোকা’ও সে দিতে পারবে না।যদি ভুলে’ও চেষ্টা করে,তার পরিণাম কি হবে।
–বুঝেছি স্যার আর বলতে হবে না।আমাদের ভুলে হয়ে গেছে।আজ-ই আমরা শহর ছেড়ে চলে যাব।শেষ বারের মতো সুযোগ দিন একটা।
–এমন করে বলছেন কেনো।আপনারা জানেন আমি কতোটা ভালো মানুষ।আমার দ্বারা এসব কাজ হবে।বলে’ই লোকটির বুকে নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে লাথি মারলো আয়ান।তাল সামলাতে না পেরে লোকটি মাটিতে পড়ে গেলো।আয়ান লোকটির হাতের ছুরি’টা নিয়ে লোকটির গলায় হালকা করে চেপে ধরলো।গলা কিছুটা কেটে রক্ত পড়তে শুরু করলো।
–তুই জানিস।তোরা কোথায় হাত দিতে যাচ্ছিলি।আয়ানের কলিজার দিকে।আর আয়ানের কলিজার দিকে যে,হাত বাড়াবে।আয়ান তার কলিজা বার করে নিবে।
–স্যার আমাদের ভুল হয়ে গেছে।বিশ্বাস করুন আমরা কাজ’টা করতে চাই নাই।কিন্তু আপনার বাবা আমাদের হুমকি দিয়েছে।আমরা যদি কাজ করে না দেই।তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়ে’দের মেরে ফেলবে।আয়ানের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।যে কেউ দেখলে ভয় পাবে।আয়ান শান্ত হয়ে বললো।
–তোদের যেনো আমি এই শহরে না দেখি।বলে’ই সানগ্লাস’টা ঘোরাতে ঘোরাতে চলে গেলো।
আজ’কে কলেজে সবাই বেশ খুশি।এতদিন পরে আবার তাদের প্রিয় স্যারের ক্লাস করতে পারবে।আয়ান বাহিরে যাওয়ার আগে পারসোনাল ভাবে কলেজ থেকে পারমিশন নিয়েছিলো সে,তিন মাস কলেজে আসতে পারবে না।কিন্তু সে,তার ক্লাস টাইমে অনলাইনে এসে লাইভে ক্লাস করাবে।এতদিন সে,অনলাইনে ক্লাস করিয়েছে।দেশে আসার পরে আবার কলেজ জয়েন করেছে।
শখ সবাই’কে বিষয়’টি বললে আয়েশার ওপরে সবাই রেগে যায়।কেউ আয়েশা’র সাথে কথা বলছে না।
–শেষে কি না আয়েশা আমাদের সাথে বেইমানি করলো।তিন বছর ধরে ফিয়াজ ভাইয়ার সাথে রিলেশন।আবার বিয়ে’ও করেছে। আর আমরা এতটুকু জানতে পারলাম না।বলল সিয়াম।
–বেশি বিশ্বাস করলে যা হয় রে।ভাবতে পারি নাই।আয়েশা আমাদের সাথে বেইমানি করবে।আমরা ওকে আপন ভাবছি।কিন্তু ও আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে গেছে।বলল আমান।
–আমরা ওকে নিজের বোন মনে করতাম।আর আমাদের সাথে থেকে তলে তলে এত কিছু করলো।আমরা জানতে পারলাম না।সেই বড় খেলোয়াড় আয়েশা।বলল স্নেহা।
–আমরা ওকে আপন ভাবছি।কিন্তু আয়েশা আমাদের কোনোদিন আপন ভাবে নাই রে।সবাই স্বার্থপর।বলল মেধা।
–আমি স্বার্থপর নারে।তোরা সবাই আমার কথা’টা আগে শুনবি।তারপরে আমাকে যা,খুশি শাস্তি দিস।আমি তোদের শাস্তি মাথা পেতে নিব।
পেছনে থেকে বলল আয়েশা।আয়েশা কে দেখে সবাই যে,যার মতো চলে গেলো।শখ নিজের মতো হাঁটা শুরু করলো।
–শখ বোন আমার প্লিজ একবার আমার কথা’টা শোন।সবকিছু না জেনে শুনে ভুল বুঝিস না প্লিজ।শখ আয়েশার কথার কোনো উওর না দিয়ে হেঁটে চলেছে।আয়েশা শখের পেছনে পেছনে যাচ্ছে।শখকে শাড়ি পড়ে কলেজে আসতে দেখে আয়ান রেগে শখের সামনে এসে দাঁড়াল।
–তোমাকে শাড়ি পড়ে কলেজে আসতে বলছে কে।এত সাহস হয় কি করে তোমার।তোমাকে এভাবে চলাফেরা করতে নিষেধ করছিলাম আমি।তোমার কি মনে নেই শখ।
–আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি পড়েছি।তাতে আপনার কি স্যার।আমার যেভাবে খুশি আমি যে ভাবে চলাফেরা করবো।আপনি স্যার স্যারের মতো থাকুন।একটা ছাত্রী কি পোশাক পড়ল এটা দেখার দায়িত্ব আপনার না।আপনার দায়িত্ব শিক্ষা দেওয়ার।আপনি বরং সেটা’ই বেশি করে দেন।
–বড্ড সাহস হয়ে গেছে তোমার।অনেক হয়েছে আর না ভাবছিলাম।তোমাকে বুঝিয়ে ভালোভাবে নিজের কাছে নিয়ে যাব।তুমি ভালো কথা শোনার মেয়ে-ই না বলে-ই শখের হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো।
–ছাড়ুন আমাকে।এটা আপনার কেমন ব্যবহার স্যার হয়ে ছাত্রী হাত ধরে টানেন।শখের কথা শুনে আয়ান দাঁড়িয়ে গেলো।
–তুমি যদি স্যারদের সহ সবাই’কে শরীর দেখিয়ে বেড়াতে পারো।আর কেউ হাত ধরে টান দিলে’ই দোষ।আবার আয়ান শখকে নিয়ে যেতে লাগলে শখ রেগে আয়ানের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।চিৎকার করে বলতে লাগলো।
–আমাকে কি আপনার লেজ কাটা কুকুর মনে হয়।যখন ইচ্ছে কাছে টেনে নিবেন।আবার যখন ইচ্ছে হবে ছুড়ে ফেলে দিবেন।আর আমি কুকুরের মতো বারবার আপনার কাছে ছুটে যাব।কি মনে করেন নিজেকে।আমি অনাথ হতে পারি স্যার নিজের আত্নসন্মান ভুলে যাই নাই।
সকলের দৃষ্টি আয়ান আর শখের দিকে।আয়ান রাগি চোখে সবার দিকে তাকাতেই সবাই যে,যার মতো চলে গেলো।কেউ কেউ হাসাহাসি করছে।কেউ বাজে মন্তব্য করছে।আয়ানের ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না।যে,যার মতো কাজে চলে গেলো।
–আস্তাগফিরুল্লাহ,তুৃমি আমার বউ লেজ কাটা কুকুর হতে যাবে কেনো।আমি জানি আমার বউয়ে অনেক আত্নসন্মান।সেজন্য আমি নিজে তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি যাবে চলো।
–আপনার লজ্জা করে না।
–বউয়ের কাছে কিসের লজ্জা।লজ্জা করলে কি বাবা হতে পারবো বলো বউ।আমাদের একটা ছোট রাজকুমারী আসবে।তুমি জানো,আমি কতকিছু প্লান করেরাখছি।তুমি কল্পনা’ও করতে পারবে না।আর রাগ করে থেকে না বউ।বাচ্চাদের পড়াশোনার দেরি হয়ে যাচ্ছে।মা হিসেবে তোমার একটা দায়িত্ব আছে না।
আয়ানের কথা শুনে শখে’র কলিজা কেঁপে উঠলো।আয়ানের থেকে সত্যি লুকিয়ে সে কোনো ভুল করছে না তো।আয়ান যদি আবার তাকে ভুল বুঝে।ভাবতে-ই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আমি এত সহজে হার মানবো না।ওনাকে ওনার শাস্তি পেতে-ই হবে।
–আপনার লজ্জা থাকা উচিৎ।একটু আগে আমি আপনাকে থাপ্পড় মারলাম।অন্য কেউ হলে কথা বলা তো দূর,নিজের আত্নসন্মান নিয়ে চলে যেতো।
–আমার সন্মান মানে তোমার সন্মান।তুৃমি যদি নিজে হাতে নিজের সন্মান নষ্ট করো তাহলে আমি কি করতে পারি।আয়ান মানে’ই বউ।আর বউ মানে-ই
আয়ান।আমাকে মেরেছো এখন বাসায় নিয়ে গিয়ে আদর করে দিবে চলো।
–বেহায়া লোক একটা।আপনার মতো বাজে লোক দুটো দেখি নাই।বলে’ই শখ হাঁটা শুরু কটলো।বাহিরে আসতে-ই আয়ান শখের হাত ধরে ফেললো।
–আজ’কে তোমাকে আমার সাথে-ই যেতে হবে।তারপরে দেখবো,শাড়ি পড়ে কি করে কলেজে আসো।
–আমি আপনার সাথে যাব না।দেখি আপনি কি করে আমাকে নিয়ে যান।আয়ান শখকে গাড়িতে বসিয়ে দিতে যাবে,তার আগে’ই ফিয়াজ এসে বলল।
–আয়ান তুমি এভাবে আমার বোনকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিয়ে যেতো পারো না।দেখছো তো ও যাবে না।তাহলে কেনো জোর করছো।ছেড়ে দাও বলছি।
–কিন্তু ভাইয়া।
–তোমার সাথে এমন কথা ছিলো না।আশা করি ভরসার মূল্য দিবে।আয়ান মাথা নিচু করে ফেললো।তারপরে শান্ত গলায় বলল।
–আচ্ছা ভাইয়া আমি চলে যাচ্ছি।মন খারাপ করে চলে গেলো আয়ান।শখের বেশ কষ্ট হচ্ছে।এর থেকে বেশি কষ্ট উনি আমাকে দিয়েছেন।এতটুকু কষ্ট পেতে-ই।এসব ভাবছিলো শখ।
ফিয়াজ আয়েশা’কে নিতে আসছিলো।আয়ান আর শখকে দেখে তাদের দিকে এগিয়ে আসে।আয়েশা শখের পেছনে-ই ছিলো।
–শখ বোন আমার চল,বাসায় যাবি।
–আমার কথা আপনার ভাবতে হবে না।আপনি আপনার বউয়ের চিন্তা করুন।বলে-ই রেগে চলো গেলো শখ।একটা সিএনজি ডেকে নিয়ে বাসায় আসলো শখ।প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। বাসায় এসে ড্রয়িং রুমে বসে আছে শখ।তখনি…..
চলবে…..