রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব অন্তিম

0
2133

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৫২(অন্তিম পর্ব)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে এই,বাড়ি,গাড়ি,কম্পানি শখ আর ফিয়াজ ভাইয়াকে বুঝিয়ে দিয়ে।বাসা ত্যাগ করার নোটিশ নিয়ে এসেছি কোর্ট থেকে।বলল আয়ান।
–বাড়ি,গাড়ি ছাড়াতে হবে মানে।আমার বাড়ি,গাড়ি,কম্পানি আমি কেনো ছাড়তে যাব।বলল জান্নাত।
–এটা আপনার বাসা না জান্নাত চৌধুরী।এটা শখ আর ফিয়াজ ভাইয়ার বাসা।এটা আপনি ভালো করেই জানেন।বলল আয়ান।
–আয়ান আমি তোর বড় বোন এটা তোর কেমন ব্যবহার।
–হাহা হাঁসালেন।আপনি আমাদের কোনোদিন নিজের ভাইবোন মনে করছেন।যাদের জিনিস তাদের ফিরিয়ে দিন।সোজ পথে কথা না শুনলে।আঙুল কিভাবে বাঁকাতে হয়।তা আমার ভালো করে জানা আছে।এই দেখুন কোর্টের নোটিশ।আমি আগে থেকেই সবকিছু করে রাখছিলাম।আমি জানতাম আপনি সবকিছু এত সহজে মেনে নিবেন না।
সবকিছু দেখে জান্নাত রেগে আয়ানের দিকে তাকালো।
–তোমাকে আমি দেখে নিব আয়ান।বলেই রেগে গটমট করে চলে গেলো জান্নাত।
–কতদিন পরে আবার নিজের বাসায় আসলাম।এখানেই আমার ছোট বেলা কেটেছে।বাবা-মায়ের সাথে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে।বলতে বলতে-ই চোখে পানি চলে আসলো ফিয়াজের।আচ্ছা আমাদের বাসার নাম ছিলো শখের কুঁড়েঘর।চেঞ্জ করে ফেলছে জান্নাত আপু।বাবা শখের সাথে নাম মিলিয়ে খুব শখ করে নামটি রেখেছিলো।
–তুমি মন খারাপ করো না ভাইয়া।আবার সবকিছু নিজেদের মনের মতো করে নিবে।বলল আয়ান।
–ভাইয়া এটা আমাদের বাসা।এখানে বাবা মা থাকতো।শখ খুশি হয়ে পুরো বাসা ঘুরে দেখছিলো।শখের খুশি দেখে আয়ানের বেশ ভালো লাগছে।মেয়েটা কতদিন পরে এভাবে হাসছে।
এভাবে সুখে দুঃখে কেটে যায় চারটি মাস।বেশ ভালোই চলেছে সবার জীবন।সবাই আগের থেকে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।এর মধ্যে শখের এইচএসসি পরীক্ষা এসে হানা দিয়েছে।শখের সাত মাস চলছে।শখকে প্রতিদিন পড়াশোনা করতে হয়।আয়ান নিজে শখকে পড়াশোনা করায়।দু’দিন পরে শখের পরীক্ষা।আয়ান শখের যত্নের কোনো কমতি রাখে না।আয়ান রুমে এক গ্লাস দুধ নিয়ে প্রবেশ করলো।
–শখ এদিকে আসো।তাড়িতাড়ি খেয়ে পড়তে বসবে।
–প্রতিদিন দুধ খেতে আমার ভালো লাগে না।আমি খাব না।কেমন গন্ধ লাগে।বমি পায়।
–এমন করলে চলবে না বউ।তুমি যদি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করো তাহলে বাচ্চা সুস্থ থাকবে কি করে।শখের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল আয়ান।
–আপনার জন্য পারি না।সব সময় আমার পেছনে পরে থাকেন কেনো আপনি।শখ এটা খাও শখ ওটা খাও।করে করে সারাদিন পাগল করে দেন।
–আমি আমার বউয়ের পেছনে পেছনে ঘুরবো না।তাহলে অন্যের বউয়ের পেছনে পেছনে ঘুরবো।বউ বাচ্চা আমার।তাহলে তাদের দায়িত্ব আমার।তুমি বউ বউয়ের মতো থাকবে।একদম বেশি কথা বলবে না।আমার ওপরে।বেশি কথা হয়ে গেছে।
–আপনি বর বরের মতো থাকবেন।আপনি কেনো আমাকে এত জ্বালাবেন।
–আমাকে কপি করছো।নিজের যোগ্যতায় কিছু আবিষ্কার করো।
–সব জায়গায় টিচার গিরি আপনার।আমি মানেই বর আর বর মানে আমি।একি হলো।
শখের কথায় আয়ান হেঁসে দিলো।
–হয়েছে অনেক পাকা পাকা কথা হয়েছে।এবার খেয়ে না-ও তো পাখি।শখের কপালে চুমু খেয়ে বললো।শখ নাক চেপে ধরে খেয়ে ফেললো।তারপরে আয়ান বিছানায় বই নিয়ে বসে পড়লো।শখের পেট নিয়ে বসে থাকতে সমস্যা হয়।তাই বিছানায় আয়ানের বুকে শুয়ে শুয়ে পড়ে শখ।আয়ান শখের চুলে বিলি কেটে দেয়।এতে শখের বেশ ভালো লাগে।শখ গিয়ে আয়ানের বুকে মাথা রেগে শুয়ে পড়ল।আয়ান শখের হাতে বই ধরিয়ে দিলো।শখ বিরক্ত হয়ে পড়া শুরু করে দিলো।আয়ান শখের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।মাঝে মাঝে কপালে চুমু একে দিচ্ছে।এভাবে শখের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো।পরীক্ষার একমাস আয়ান শখকে খুব যন্তসহকারে নিয়ে গেছে।সঠিক সময়ে বাসায় নিয়ে আসছে।পরীক্ষার হলে শখকে রেখে আসার সময় পারসোনাল ভাবে হলের টিচারদের বলে আসছে।সকাল থেকে শখ জেদ ধরে বসে আছে।রহিম কাকার ফুচকা খাবে।আয়ান বলেছে এনে দিবে।কিন্তু তাতেও সে রাজি না।রহিম কাকার দোকানে গিয়ে খাবে।এই অবস্থায় আয়ান শখকে বাহিরে যেতে দিতে নারাজ।কিন্তু শখ যাবে-ই।
–শখ পাখি আমার।লক্ষি সোনা বউ আমার।পাগলামি করে না।আমি তোমাকে রহিম কাকার ফুচকা এনে দিব।দরকার পড়লে রহিম কাকা’কে এখানে নিয়ে আসবো।কিন্তু সন্ধ্যা বেলা তোমার এতদূর যাওয়া লাগবে না।
–কোথায় এতদূর বাসার কাছে।আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন না।আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।আমি যাব।কতদিন যাই নাই।আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন কি না বলেন।
–মেয়েটা যখন বায়না ধরেছে।নিয়ে যা না।যেতে কতটুকু সময় লাগবে।তাড়াতাড়ি গিয়ে।তাড়াতাড়ি চলে আয়।যদি-ও আমি এই সন্ধ্যা বেলায় যাওয়া পছন্দ করছি না।বললেন নিলিমা চৌধুরী।
কতদিন পরে নিলিমা চৌধুরীকে এভাবে কথা বলতে দেখলো আয়ান।আবরাহাম চৌধুরী যাওয়ার পরে সময় নিজের রুমের মধ্যে বন্ধি রাখতো।কারো সাথে খুব একটা বেশি কথা বলতো না।কিন্তু কিছু দিন হলো খুব হাসি খুশি থাকেন।শখকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ায়।আয়ান আর দেরি না করে শখকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।আয়ন শখের হাত ধরে আছে।শখ’ও আয়ানের হাত শক্ত করে ধরলো।তা দেখে আয়ান হালকা হাসলো।অবশেষে ফুচকার দোকানে এসে পৌঁছালো শখ আর আয়ান।
–আরে আয়ান বাবা তোমরা।কতদিন পরে আসলে।বউমা কি পোয়াতি নাকি।তা বউমা কয় মাসের পোয়াতি।
–হ্যাঁ কাকা অনেক দিন পরে আসা হলো।ব্যস্ততার জন্য সময় হয় না কাকা আসার।তোমার বউমার বাচ্চা পেটে আট মাস চলছে কাকা।কি জেদ ধরেছে।তোমার হাতের ফুচকা খাবে।বললাম আমি এনে দিব।শুনলো না।দোকানে এসে খাবে।
–এই সময়ে এমন একটু করবে যা খেতে চাইবে।বউমাকে খাওয়াবে বাবা।রাত করে বের হওয়া ঠিক হয় নাই।তাড়িতাড়ি চলে যাও বাবা।
–আমি’ও তাই বললাম তোমার বউমাকে কে শুনে কার কথা।তাড়াতাড়ি কয়টা ফুচকা বানিয়ে দিন।রহিম কাকা এক প্লেট ফুচকা বানিয়ে দিলো।শখ খাওয়া শুরু করলো।আয়ানকে দিলো না আয়ানের ঝালে এলার্জি।আয়ান যদি-ও রহিম কাকাকে ঝাল কম দিতে বলেছে।কিন্তু আয়ান একদম ঝাল খেতে পারে না।শখের খাওয়া শেষ হলে আবার বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো আয়ান আর শখ।অর্ধেক রাস্তায় এসে শখ বলে উঠলো।
–স্যার আমি আর হাঁটতে পারছি না।পেটে লাগছে।
–কেনো এখন কেনো।আমি তোমাকে বার বার বলেছিলাম রাত করে আসার দরকার নেই।আমার কথা শুনলে না।কোথায় লাগছে।আমাকে বলো বেশি কষ্ট হচ্ছে।হসপিটালে নিয়ে যাব।
–আপনি এত পাগল হচ্ছেন কেনো।আমার শুধু হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে।
–আমি পাগল হবো না তাহলে কে হবে।তোমার আরেকটা জামাই।
–একদম বাজে কথা বলবেন না।আমার আরেকটা জামাই কোথায় পাইলেন।আমাকে একটা প্রেম পর্যন্ত করতে দেন নাই।সব সময় আমার পেছনে লেগে থেকেছেন।
–বেশ করেছি।সারাজীবন পরে থাকবো।
–আমি’ও চাই আপনি সারাজীবন আমার পেছনে পড়ে থাকেন।অন্য কারো দিকে তাকালে আপনার চোখ তুলে ফেলবো।
–কি সাংঘাতিক বউ আমার।বউ থাকতে অন্য কারো দিকে তাকাইতে যাব কেনো।আমার বউ কি কোনো দিক দিয়ে কম নাকি।বলতে বলতে শখকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।
–কি করছেন।নামান আমাকে আপনার কষ্ট হচ্ছে না।
–কষ্ট হবে কেনো।আমি মনে হয় এর আগে কোনোদিন আমার বউকে কোলে নেই নাই।
–নিয়েছেন কিন্তু তখন আমি একটু শুকনা ছিলাম।এখন আগের থেকে অনেকটা মোটা হয়ে গেছি।সব আপনার জন্য হয়েছে আমাকে বেশি বেশি খাইয়ে এত মোটা বানিয়ে দিয়েছেন।
–বেশ করেছি।না হলে সবাই বলবে আয়ান তার বউকে খেতে দেয় না।না খাইয়ে রাখে।
–আপনি পারেন ও বটে।
–তুমি আমার মান সন্মান কিছু রাখবে না।দুদিন পরে বাচ্চার মা হবে।আর এখনো আমাকে আপনি,স্যার বলে ডাকো।
–আমার কি দোষ।আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।তাহলে কি করবো।
–কিছু করা লাগবে না।সুন্দর করে বলতো বউ আয়ান আমি তোমাকে ভালোবাসি।কথাটা শুনে দুই হাত দিয়ে গাল চেপে ধরলো।
–কি হলো গাল চেপে ধরলে কেনো।
–কারন এই কথা বলার জন্য আপনি আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন।
–সরি বউ আমি তখন বাধ্য হয়ে মেরেছিলাম।আমাকে মাফ করে দাও।তোমার বলতে হবে না।
পরে আর কেউ কোনো কথা না বলে বাসায় চলে আসলো।আয়ান ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেছে।শখ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত শহর দেখছে।বেলকনিতে থাকা ফুলের গাছে চোখ যায় শখের।সে,আবারো মনে মনে ঠিক করে দিলো।আজ আবারো আয়ানকে প্রপোজ করবে।ফুলটা ছিঁড়ে নিলো।আয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে।কারণ শখ ভালো করেই জানে তাকে খুজে না পেলে আয়ান বেলকনিতে আসবে।ভাবতে ভাবতেই আয়ান এসে শখকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো।
–আমার বউ টা এখানে একটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছে।
–আপনার বউটা এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আপনার জন্য সতিন খুজছে।
–শখ বলে-ই শখের ঘাড়ে হালকা করে কামড় বসিয়ে দিলো আয়ান।
–সাপের মতো কামরাচ্ছেন কেনো।
–কি বললে আমি সাপ।শখে ঘাড়ে চুমু খেতে খেতে বলল।
–তা নয়তো কি।আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।কিছুটা ভয় নিয়ে বললো।শখ এবার আয়ানের দিকে ঘুরে তাকাল।আয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে শখ কি বলবে,তা জানার জন্য।
শখ হাতে থাকা ফুলটা আয়ানের সামনে ধরে চোখ বন্ধ করে বললো।
–আমি তোমাকে ভালোবাসি আয়ান।শখ আয়ানের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে চোখ খুলে দেখলো আয়ান ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
–ওভাবে গরুর মতো হা করে তাকিয়ে আছো কেনো আমি কি কোনো জোকস্ বলছি তোমাকে।
–শখ তুমি বলছো।সত্যি আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।আমি কখনো ভাবি নাই।তুমি আমাকে আবার নিজে থেকে বলবে।
–কি নাটক শুরু করলেন।ফুলটা ধরবেন নাকি ফেলে দিব।শখের কথা শেষ হবার আগেই আয়ান তাড়াতাড়ি করে ফুলটা নিয়ে শখকে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে নিলো।
–শখ আরেকবার বলতে তুমি আমাকে ভালোবাসো।কথাটা শুনে আমার কি আনন্দ লাগছে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।
–আমি তোমাকে ভালোবাসি আয়ান।ভালোবসি।ভালোবসি।ভালোবসি।এত গুলা ভালোবাসি।
–আমি’ও তোমাকে অনেক ভালোবাসি বউ।ভিষণ ভালোবাসি।আমার সব অপূর্ণতার মাঝে তুমি আমার পূর্ণতা।
শখ হালকা হেঁসে আয়ানের ঠোঁটে চুমু খেলো।আয়ান বড় বড় চোখ করে শখের দিকে তাকিয়ে আছে।
–বউ তুমি আমাকে চুমু খেলে।আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।আরেক বার চুমু দিয়ে দেখাবে।না মানে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।আমার নিরামিষ বউ কবে থেকে এত রোমান্টিক হলো।
শখ আয়ানের এমন কথায় লজ্জা পেয়ে গেলো।
–আমার রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড হয়েছে সেদিন থেকে।
–তবে রে বলে-ই আয়ান শখের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।বেশ কিছুক্ষণ শখকে ছেড়ে দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।এভাবে কেটে গেলো আরো দু’টি মাস।কথায় আছে না।খারাপ সময়ের থেকে ভালো সময় দ্রুত চলে যায়।বেশ সুখেই কাটছিলো সবার জীবন।
–আয়ান দেখো বাবু কিক মারছে।বলল শখ।
আয়ান দৌড়ে শখের পেটে কান পেতে দেখলো সত্যি। দু’জন বেশ খুশি হলো।
–আমার বাবা খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবীর চলে আসবে।আর মাত্র তিন দিন।তারপরে আমার বাবা আমার কাছে চলে আসবে।বলেই শখের পেটে চুমু খেলো।
–তুমি ঘুমিয়ে পড়ো শখ।অনেক রাত হয়েছে।
–তুমি ঘুমাবে না।
–একটু পরে কথা কম বলো।তারপরে আয়ান শখকে ঘুমিয়ে দিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।আজ বাবার কথা ভিষণ মনে পড়ছে।উনি যতই খারাপ হোক না কেনো উনি আমার বাবা।কেমন আছে।ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গেলো আয়ানের।কেনো জানি ঐ বাজে মানুষটার জন্য চোখ ভিজে আসছে আয়ানের।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে,রাত অর্ধেক হয়ে গেছে।সেদিকে খেয়াল নেই আয়ানের।
শখের পেটে হালাক ব্যথা অনুভব হাওয়ায়।জাগা পেয়ে গেলো শখ।পাশে তাকিয়ে দেখলো আয়ান নেই।শখ ঘুম ঘুম চোখে উঠে বেলকনিতে গিয়ে আয়ানকে পেলো।কাঁধে কারো স্পর্শ পেতে-ই পেছনে তাকিয়ে শখকে দেখতে পেয়ে।শখকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো আয়ান।আয়ানের কান্না দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো শখ।অস্থির হয়ে বললো।
–কি হয়েছে তোমার কান্না করছো কেনো।আমাকে বলো।
–শখ জানো আজ বাবার কথা ভিষণ মনে পড়ছে।
–আচ্ছা এই ব্যাপার মন খারাপ করো না কাল গিয়ে বাবার সাথে দেখা করে এসো।
–কখনোই না।কোনোদিন ঐ লোকের মুখ আমি দেখতে চাই না।তুমি উঠে এসেছো কেনো।যা-ও ঘুমিয়ে পড়ো।শখের পেটের ব্যাথাটা সময়ের সাথে বেড়ে-ই চলেছে।নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না।অবশেষে ও-মাগো বলে চিৎকার দিয়ে নিচে বসে পড়লো শখ।আয়ান দ্রুত শখের কাছে আসলো।অস্থির গলায় বললো।
–কি হয়েছে,এমন করছো কেনো।
–পেটে ব্যাথা করছে।প্রচন্ড ব্যাথা করছে।সয্য করতে পারছি।মাগো মরে যাব মনে হয়।
–একদম বাজে কথা বলবে না।বলতে বলতেই শখকে কোলে তুলে নিলো তারপরে নিচে এসে তার মাকে ডেকে তুললো।
–আয়ান আমার মনে হয় শখের প্রসব ব্যাথা উঠেছে।দেরি না করে হসপিটালে নে মেয়েটাকে।
–এর আগেও তো ব্যাথা হতো মা।
–তুই আমার থেকে বেশি জানিস।তাড়াতাড়ি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বল।শখ এদিকে চিৎকার করেই যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করে শখকে হসপিটালে নেওয়া হলো।
–আমি মনে হয় আর বাঁচবো না।আমি ব্যাথা সয্য করতে পারছি না আয়ান।আমি যদি মরে যাই।তাহলে আমাকে তুমি মাফ করে দিও।
–একদম বাজে কথা বলবে না শখ।আমি আছি না।আমি থাকতে তোমার কিছু হবে না।আমি তোমার পাশে সব সময় আছি।ওটিতে যাওয়ার আগে আয়ান শখকে ভরসা দিলো।শখ বলেছিলো তুমি আমার সাথে যাবে।আমার না খুব ভয় করছে।কিন্তু ডক্টর এলাও করে নাই আয়ানকে।
আয়ান অস্থির হয়ে বাহিরে বসে আছে।পাগলের মত ছটফট করছে।তা দেখে নীলিমা চৌধুরী বললেন।বাবা এত চিন্তা করো না। আল্লাহ আছেন।ওনার ওপরে ভরসা রাখো।যদি পারো দু’রাকাআত নফল নামাজ পড়ে আসো।আর শখের জন্য দোয়া করে আসো।আয়ান মায়ের কথা মতো নফল নামাজ পরে আসলো।মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।প্রায় এক ঘন্টা পড়ে।ওটি থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো।তা দেখে আয়ান আরো অস্থির হয়ে পড়লো।একটু পরে একটা নার্স এসে আয়ানের কোলে বাচ্চা তুলে দিয়ে বলল।
–কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার চৌধুরী আপনি ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছেন।
–আমার ওয়াইফ কেমন আছে।ডক্টর এগিয়ে এসে বললো।
–চিন্তা করবেন না।আপনার ওয়াইফ আর বাচ্চা দুজনেই সুস্থ আছে।একটু পরে আপনার ওয়াইফ’কে কেবিনে দেওয়া হবে।দেখা করে নিবেন।ডক্টরের কথায় আয়ান কিছুটা শান্তি পেলো।বাচ্চা কে বুকে জড়িয়ে নিয়ে পুরো মুখে চুমু খাচ্ছে আয়ান।ছেলে পাগলামি দেখে নীলিমা চৌধুরী বলল।
–আমার নাতিকে আমাকেও একটু দিস।সবাই’কে খবর দে আয়ান।বাসায় গিয়ে সবাইকে মিষ্টি মুখ করাবো।আয়ান খুশি হয়ে তার বাচ্চাকে তার মায়ের কোলে তুলে দিলো।
শখকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে।আয়ান শখের কাছে আসলো।শখের পাশে বসে কান্না করতে শুরু করলো।হাতে গরম পানির স্পর্শ পেতেই শখ চোখ মেলে তাকালো।
–একি তুমি কান্না করছো কেনো।
–তুমি বাজে কথা বললে কেনো।জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।তোমার কিছু হলে আমি মরেই যেতাম।
–একদম বাজে কথা বলবে না।দেখো আমার কিছু হয় নাই।আল্লাহর রহমতে আমি একদম ঠিকি আছি।আয়ান শখের কপালে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
–বাচ্চাকে দেখছো।
–হুম দেখছি।
–কার মতো হয়েছে।
–একদম আমার শখ পাখির মতো হয়েছে।
–তাই বুঝি শুধু আমার মতো হয়েছে।তোমার মতো হয় নাই।
–হ্যাঁ আমার মতো হয়েছে কিছুটা।বলেই দু’জন হেঁসে দিলো।
সবাইকে খবর দিলে সবাই এসে শখকে দেখে যায়।সবার খুশির কোনো সীমা নেই।রাহেলা বেগম শখের কাছে থেকে মাফ চেয়ে নিয়েছে।মিহু আয়াশকে মেনে নিয়েছে।মিহুর মা মিহুকে বুঝিয়ে আয়াশের কাছে পাঠিয়েছে।মুনতাহা চার মাসের প্রেগনেন্ট।আয়েশা দুই মাসের প্রেগন্যান্ট।মিহু আর মিহুর মা মাফ চেয়ে নিয়েছে শখ আর আয়ানের কাছে থেকে।শুভ আর মুনতাহাকে নিজের বাসায় নিয়ে গেছে শুভর আম্মু।আজ শখকে হসপিটালে থেকে ছেড়ে দাওয়া হবে।রুহি,আয়ান,ফিয়াজ,আয়েশা এসেছে নিতে।আয়ানদের বাসায় সবাই অপেক্ষা করছে।
শখ বাসায় আসতেই সবাই বাচ্চা নিয়ে ভাগাভাগি শুরু করে দিয়ে।কার বেশি অধিকার।কার কম অধিকার।কে বেশি নিবে কে কম নিবে।সবাই মিলে বাচ্চার নাম রাখলো আদিল চৌধুরী।পরে হুজুর ডেকে ভালো নাম রাখবে।চৌধুরী পরিবারে খুশির মেলা বসেছে আজ।
এভাবে কেটে যায় আরো ছয়টা মাস।আজ আদিলের মুখে ভাত হয়েছে।ছেলেটা বড্ড তার দাদি ভক্ত হয়েছে।দাদিকে ছাড়া কিছু বুঝেনা।এতে অবশ্য নীলিমা চৌধুরীর জন্য ভালো হয়েছে।ওনার আর মন খারাপ থাকে না।নিজেকে একা লাগে না।ছেলেকে খাইয়ে দিয়ে তার দাদির কাছে রেখে এসেছে শখ।রাতে আবার নিয়ে আসবে।আয়ান সেই সকালে কলেজে বেড়িয়েছে।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আসার নামে কোনো খোঁজ নেই।সারাদিন খুব খাটাখাটুনি গেছে।শখ ফ্রেশ হয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে।এখনো কি আসা লাগে না।এখন আর বউয়ের কথা মনে পড়ে না।
আয়ান এসে সোজা তার মায়ের রুমে চলে যায়।বাচ্চাকে আদর করে মায়ের সাথে কথা বলে।নিজরে রুমে চলে আসে।
–আয়ান তোর কপালে আজ দুঃখ আছে।বউ খুব রেগে আছে।আয়ান কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে শখের পাশে বসলো।শখের হাতে হাত রাখতে শখ সাপের মতো ছ্যাত করে উঠলো।
–একদম ছুঁবে না আমাকে।যেখানে ছিলে সেখানে চলে যা-ও।আসলে কেনো।আজ রাতে থেকে আসলেই তো পারতে।
আয়ান শখকে জড়িয়ে ধরে বললো বাপ রে বউ আমার কি রেগে আছে।আরে শুনো না বউ কি হয়েছে।তোমার জন্য উপহার আছে।বলে-ই লাল টকটকে অনেক গুলো গোলাপ ফুল বের করে শখকে দিলো।শখ খুশি হয়ে বললো।
–এগুলো আমার জন্য। ওয়াও সত্যি তুমি অনেক কিউট।বলেই আয়ানের গালে চুমু খেলো।
–এই গালে আর কপালে দাও বউ।শখ আবার চুমু খেলো।
আয়ান শখকে কোনো কথা না বলে কোলে তুলে নিলো।
–আরে কি করছো।
–চুপ একদম কথা বলবে না।আয়ান শখকে ছাঁদে নিয়ে আসলো।কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে আজ আকাশে।চারিদিকে আলো ছরিয়ে দিয়েছে।খুব মনমুগ্ধকর পরিবেশ।আয়ান শখকে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষণ দু’জন দু’জনকে অনুভব করার পরে।আয়ান শখের কপালে চুমু খেয়ে বললো।দোলনায় বসবে বউ।আয়ানের কোথায় শখ সন্মতি জানাল।
দোলনায় বসে শখ আয়ানের কাঁধে নিজের মাথা রাখলো।আয়ান শখকে আরো নিজের সাথে মিলিয়ে নিলো।
–আমি তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি বউ।
–আমি’ও তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি আমার একটা মাত্রা জামাই।
–আমার ছেলের একটা বোনের খুব দরকার তাই না বলো বউ।আমার ছেলেটা ভিষণ একা।
আয়ানের কথায় শখ লজ্জা পেয়ে আয়ানের বুকে মুখ লুকালো।আয়ান হালকা হেঁসে শখের কপালে চুমু খেলো।শখ মাথা তুলে আয়ানের কাঁধে মাথা রাখে। আয়ান আর শখ চাঁদের সুন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো।তোমার সাথে হাজার বছর এই সুন্দর্য উপভোগ করলে’ও বিরক্ত লাগবে না শখ।বলেই শখকে নিজের সাথে মিলিয়ে নিলো আয়ান।
(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here